রুবি বিনতে মনোয়ার

নলখাগড়া ও কলম

চমৎকার একটা বিকাল। বাড়ীর বলতে গেলে সবাই উঠানে বের হয়েছে। ওদিকে ছোটচাচার ছেলে তপুকে নিয়ে তন্ময়ের বড় আম্মা আর আম্মা পড়েছে। প্রায় শুকনো উঠানের মাঝখানে ঝাঁট দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। তারই ওপর কাঠী দিয়ে দাগ টেনে অক্ষরের মত লেখা হচ্ছে, তপুকে শেখানো হচ্ছে কীভাবে লিখতে

পৎ থেকে পাতাল

মা এসেছিলেন, লকডাউন কিছুটা শিথিল হতেই তড়িঘড়ি চলে গেছেন, বাড়ী ছাড়া উনার ভাল লাগে না। রিণির তাই ভাল লাগছিল না, আজ অফিস বন্ধ, কিন্তু বাসায় বসেই অনলাইনে কিছু কাজ সারতে হবে। জানালার পাশে সেই কখন থেকে দুইটা টুনটুনী ওড়াউড়ি করছে, রিণি একমনে তাই দেখছিল। কলিংবেলের

রাঙা পথের ধূলায়

ধ্বনির থাকে প্রতিধ্বনি। অনেক সময় ঝগড়াঝাটিতে আমরা ব্যঙ্গ করি, ভেংচি কাটি। প্রতিধ্বনি ঋণী আছে ধ্বনির কাছে, সেটা অস্বীকার করতে গিয়ে সে ধ্বনির প্রতি মুখ ভ্যাংচায়, উপহাস করে যেন। এইজন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে / ধ্বনি কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে।’

শব্দের ইন্দ্রজাল : দেহ ও শরীর, দেহ ও মন

পথ চলতে কারো সঙ্গে দেখা হলে আমরা বলি, “কেমন আছেন?” ফোনকলে সালাম বিনিময়ের পর আমরা কুশলাদি জানতে বলি, “শরীর কেমন?” আমরা আলাদা করে জানতে চাই না মনটা কেমন আছে। তবে হুমায়ুন আহমেদ-এর এক নাটকে একটা সংলাপ ছিল এমন, ‘মনডা ভালা?’ দেহের খবর নিলে মনের খবর

নথ (ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শনের গল্প)

সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছিল, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি ধরে এল। তন্ময়দের হালট পর্য্যন্ত বর্ষার ঘোলাজল। বহুদূর পর্য্যন্ত দেখা যায় বারান্দায় দাঁড়ালে। কত ধরনের নৌকা যে কোথায় চলে যায়। তন্ময় গুনতে গুনতে খেই হারিয়ে ফেলে। আকাশে রোদ মেঘের খেলা চলছে যখন তখনই তাদের বাড়ীর

শব্দের উৎস কিংবা (ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক) অর্থ সন্ধান (পর্ব্ব— পাঁচ)

সূচী: ঢল ।। রক্ত ।। সৌদামিনী ।। মেদ, মেধ ।। নমস্কার ও প্রণাম     এই অতিমারীর কালে যখন বলা হচ্ছে, ঘরে থাকুন ঘরে থাকুন— রাস্তায়, শপিংমলে, যানবাহনে তখন মানুষের ঢল নেমেছে। ঢল তো নামে পাহাড় থেকে, অতিবৃষ্টির কালে পাহাড়ী ঢাল বেয়ে ঢলের পানী গড়িয়ে

(ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শনের গল্প) জল

চৈত্রের শুরু, বৃষ্টির দেখা নাই, আকাশেও মেঘের ছিটেফোঁটা দেখা যায় না। প্রচণ্ড খরা, মাঠ, ঘাট শুকিয়ে ঠনঠন। তন্ময়ের দাদুর বাড়ীতে সামনে যে পুকুরটা তাতে জল শুকিয়ে এসেছে, কামলারা আড় বেঁধে কুইন দিয়ে পাশের খালে জলসিঞ্চন করছে। খাল বেয়ে জলের ধারা গিয়ে ধান ক্ষেতে পৌঁছবে। পুকুরের

টক, টাক, টুকটাক

বৈশাখ মাস, গাছভর্ত্তি কাঁচা আম। তন্ময় আর তার চাচাতো ভাই তমাল এসেছে কাঁচা আম পাড়ার জন্য, বিজলী আপু কাঁচা আমের ভর্ত্তা খেতে ভালবাসে। কাঁচা আম কুঁচিকুঁচি করে কেটে রসুন কাঁচামরিচ লবন সর্ষে তেল মেখে এমন ভর্ত্তা বানায়, কেবল খেতেই মন চায়। পালদাদা কোথা থেকে আসছিল,

ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়

বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের এই গানটা কে না শুনেছে! আবহমান ভাটি বাংলার জীবনযাত্রা এই গানের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। একটা নৌকা— নদী বেয়ে চলে, সেই নৌকার শুরু থেকে শেষ পর্য্যন্ত যেন একটা জনপদেরই জীবনযাত্রার কাহিনী। ছোটবেলা আমরা রচনা লেখেছি নৌকা ভ্রমণ। না বুঝেই লিখেছি, মুখস্ত লিখেছি।

শব্দের উৎস কিংবা (ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক) অর্থ সন্ধান (পর্ব্ব-২)

[ আলোচ্য শব্দ: ভাস্কর্য্য। মূর্ত্তি। ভীম, রাগ ভীমপলশ্রী, ভীমরতি।  সন্ধ্যা। টিকটিকি। ]   ভাস্কর্য্য— কবি কল্পনা করেন তারপর কল্পনার ছবি আঁকেন বর্ণ দিয়ে কাগজের পাতায়। কেবল কবি-ই যে কল্পনা করেন, তা কিন্তু নয়। কল্পনা সবাই করে, কিন্তু কবিতা সবাই লিখতে পারেন না। তেমনি মনে মনে

শব্দের উৎস কিংবা (ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক) অর্থ সন্ধান (পর্ব্ব-১)

[আলোচ্য শব্দ: মর, অমর, গুণ, নির্গুণ, দগ্ধ, বিদগ্ধ, উত্তীর্ণ, অবতীর্ণ, উর্ব্বশী/ঊর্ব্বশী, মোঘ, অমোঘ, দৃষ্ট, অদৃষ্ট, জল, জলজ্যান্ত] মর, অমর— মর: সীমায়িত করে রাখা হয় যাহাতে। মরণশীল, মর্ত্ত্য, মানব, প্রাণত্যাগ করা, মৃতবৎ বা নির্জীব হওয়া, ব্যথিত হওয়া, কমিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মর শব্দের অর্থ হল ম (সীমায়িত)

গ ল্ প : জনন

“কিছু বলবি! বইটা কেমন লাগল বল্।” ছিপি জবাব দেয়, “ভয় লাগছিল। কয়েক পাতা পড়েছি। আচ্ছা, তুই কেমন করে লিখিস বল্তো! আমি তো পারি না”। “সবাই কি সব একই রকম পারে! এই যেমন তুই প্রশ্ন কর্‌তে পারিস, আমি পারি না। তোর জনন ক্ষমতা তোর কথায়, প্রশ্নের মাধ্যমে।