বানান নীতি

প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতি

“শিল্পসাহিত্য বিপ্লবকে দিক ভাষা, বিপ্লব শিল্পসাহিত্যকে দেবে মুক্তি।”

 

প্রকৃতিপুরুষ [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ক্রিয়াভিত্তিক বর্ণার্থবিধি (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন-এর বানান রীতিতে (যথাসম্ভবভাবে) সম্পাদিত— প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন-এর প্রকরণ বাঙ্গালা ভাষার আদি প্রকরণ, কিন্তু কালের আবর্ত্তে যাহা ক্ষয়িষ্ণু … এর নেপথ্যে রহিয়াছে ঔপনিবেশিক শাষন ও ঔপনিবেশিক শক্তির জ্ঞানকাণ্ডকে বাচবিচারহীন ভাবে গ্রহণ ও প্রয়োগ এবং আপন ভাষার প্রতি অমনোযোগিতা … যাহার সহ-যোগী ছিল/রহিয়াছে ঔপনিবেশিক শাষকদের বাঙ্গালাভাষাভাষী অ্যাকাডেমিক মানসসন্তানরা। যাহাদের বিচারের মাপকাঠি হৈল (ল্যাটিন Mode/সম্প্রতি থেকে জাত (মডার্ণ না) মডার্ণ লিঙ্গুইষ্টিক নামধারী অধিপত্যবাদী ইয়োরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গীর) মীনিং ইজ অ্যারবিটারী ‘তত্ব’। যাহারা মনে করেন, ভাষা শুধুই ফোনিম/ধ্বনি নির্ভর, প্রতীকী! … এবং এর কোন প্রাকৃতিক কার্য্যকারণ নেই! … এই (বাঙ্গরেজ) সম্প্রদায়টা জানে না, ধ্বনি কী ও এর উৎসের খবরাখবর! … ‘ধ্বনি’ শব্দটার বানান ‘ধ + ন্ + ই = ধনি’ না হৈয়া ‘ধ্ + ব + ন্ + ই = ধ্বনি’ হৈল কেন? …  ক্রিয়াভিত্তিক বর্ণার্থবিধি তাহা জানে, জানিতে চাহেন? তবে পাঠ করুন— ‘ধ্বনি’, ‘বর্ণ’ ও ‘বানান’ শব্দগুলির ‘ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক’ অর্থব্যাখ্যা ॥ কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তী।

আমাদের নৈতিক অবস্থান প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন-এর বানান রীতিতে। কারণ, আমরা মনে করি প্রতিটা ধ্বনির, প্রতিটা বর্ণের, প্রতিটা শব্দের (মহাজাগতিক/প্রাকৃতিক) ক্রিয়াময় অর্থ রহিয়াছে, যাহা আমাদের জীবনাচারের অর্থের সাথে সম্পর্কিত, তাই শব্দের বানানে কোন বর্ণের সংস্থাপণ যদি ভুল হয় তাহা হৈলে সেই শব্দের অর্থ পরিবর্ত্তন হৈয়া যায় … যাহার ফলে শব্দের অর্থবিজ্ঞান ভাঙ্গিয়া পড়ে … শব্দ অর্থহীন বর্ণের জঞ্জাল না … শব্দৈ পরম ব্রহ্ম, যেই নির্ম্মাণ করে বাক্ ও বাক্যের জগৎ … প্রত্যয় ও প্রকৃতির জগৎ … পুরুষ ও প্রকৃতির জগৎ … ভাষার জগৎ … পরমাপ্রকৃতির জগৎ … প্রকৃতিপুরুষ-এর জগৎ … এই জগৎ নীচক ভাষাতাত্তিক বাহাসের না, এর নেপথ্যে রহিয়াছে অন্য রাজনীতি— যাহার সন্ধানে পাঠ করা যাক,  বটতলার বয়ান— ভাষা ও সাহিত্য ।। আরণ্যক টিটো

প্রাকৃতিক কার্য্যকারণের ওপর নির্ভরশীল এই যে ভাষার জগৎ, যাহার মাঝে নিহিত রহিয়াছে পূর্ব্বপুরুষের (…) হাযার হাযার বছরের পথচলার ইতিহাস ও জ্ঞানকাণ্ড, যাহা আজো চলমান … কিন্তু অপদার্থ উত্তর পুরুষ তাহা জানে না এবং না জানার ফলে আজ আমাদের জীবনাচারের অনেক কিছুর প্রশ্ন আমাদের কাছে উত্তরহীন/অর্থহীন … যাহাকে আজ অনেকেই ভাবিতেছে কুসংস্কার! এইক্ষণে যাহার নূতন নাম/অভিধা হৈল “মিথলজী”— নামটিও (ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে) আনদানিকৃত, এই ভাবের কাছেই আমরা পরাজিত হৈয়াছি/হৈতেছি বারবার, যাহার সুযোগ লৈয়াছে/লৈতাছে ঔপনিবেশিক শক্তির জ্ঞানকাণ্ড, কিন্তু আর না … মিথলজী আসলেই কী? একটু অনুসন্ধান করা যাক—

“বেদ পুরাণ রামায়ণ মহাভারত তন্ত্রাদি জয়াক্ষ গ্রন্থগুলাকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা ভারতের ইতিহাস রূপে স্বীকৃতি দেন না। তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা’ প্রবন্ধে ঐগুলিকেই ইতিহাসের মর্য্যাদা দিয়াছেন। তাঁহার সুস্পষ্ট উক্তি এই প্রকার যে, ‘আধুনিক পাশ্চাত্য সংজ্ঞা অনুসারে মহাভারত ইতিহাস না হৈতে পারে, কিন্তু ইহা যথার্থই আর্য্যদের ইতিহাস।’ আর, ইয়োরোপীয় চিন্তার ছাঁচে ফেলে আমরা যাতে এই সকল ইতিহাস গ্রন্থ না পড়ি, তাই তিনি পরিষ্কারভাবে নির্দ্দেশ দিয়াছিলেন, ‘‘ইতিহাস সকল দেশে সমান হৈবেই, এই কুসংস্কার বর্জ্জন না করিলেই নয়।’ ভারতের ইতিহাসের এইরূপ গ্রন্থনির্দ্দেশ ও গ্রন্থপাঠপদ্ধতির নির্দ্দেশ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ করে যাওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত রবীন্দ্রভক্ত ঐতিহাসিক সাহিত্যিকরা কেউই তাঁহার নির্দ্দেশ মান্য করেননি। এই ব্যপারে তাঁহারা প্রায় সকলেই রবীন্দ্রবিরোধী।” সূত্রধর: কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন ॥ কলিম খান।

পূর্ব্বপুরুষের (…) হাযার হাযার বছরের পথচলার ইতিহাস ও জ্ঞানকাণ্ডকে কুসংস্কার/মিথলজী বলার নির্ম্মম ট্রাজেডী থেকে উত্তরণে, বিনির্ম্মাণে, আবার নতুন করে পাব বলে একটু পিছাইতে চাই/ পরাণ কথার নীড়ে/ … গতির লালিত্যে/ ধনুক যেই ভাবে বাঁকিয়া যায়/ পিছনের দিকে/ …

যাহার নেপথ্যে রহিয়াছে—

‘শাস্ত্র’ শব্দের অর্থ ‘শাষনসাধন’, অর্থাৎ যাহার দ্বারা শাষন করিবার কাজটি সাধন করা যায়, অর্থাৎ কিনা ‘শাস্ত্র’ মানে শাষনের হাতিয়ার। ভারতীয় কোষকারগণ জানাইতেছেন, শব্দের এইপ্রকার অর্থ কাহারো স্বকপোলকল্পিত নয়, শব্দটির ভিতরেই তাহা পাওয়া যায়। যেই সকল বর্ণকে লৈয়া শব্দটি গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহারাই ঐরূপ অর্থ ধারণ করিয়া রাখিয়াছে। শব্দের ব্যুৎপত্তি থেকে সেই কথা আমরা জানিতে পারি। কোষকারগণ তাই শব্দের অর্থ প্রদান কালে প্রথমেই ব্যুৎপত্তি উল্লেখ করিয়া থাকেন। এইক্ষেত্রে যেমন ‘শাস+ত্র(ষ্ট্রণ্)ণ শব্দ থেকে অর্থ নিষ্কাশনের এই বিধি অতি প্রাচীন এবং ভারত যেইক্ষণে এই বিধি প্রয়োগ করিতে শুরু করিয়াছিল ইয়োরোপ তেইক্ষণে নোম্যাড রেস্ (Nomad)। সংস্কৃতের যোগ্য সন্তান হোয়ার/হ্ওয়ার সুবাদে কৃত্তিবাস কাশীরামের প্রাচীন বাঙ্গালাভাষাও এই বিধি দ্বারাই শাষিত ছিল। তাহা শ্রদ্ধেয় শ্রীহরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থে যথারীতি প্রথমে ‘শাস্ত্র’ শব্দের ব্যুৎপত্তি দেখিয়ে, তাহারপর ‘শাষনসাধন’ অর্থটি সরবরাহ করিয়াছেন। ব্যুৎপত্তির গোড়ায় থাকে একটা ক্রিয়া, এইক্ষেত্রে যেমন ‘শাস্’ ক্রিয়াটি, তাহারি ওপর ভিত্তি করে তিনি ঐরূপ অর্থ প্রদান করায় একে ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থ বলা যায়। ঐরূপ অর্থ নিষ্কাশন যে নতুন নয়, পূর্ব্বসূরীরাও এইরকম-ই করিয়া গিয়াছেন, তাহা দেখানোর জন্য অতঃপর তিনি পূর্ব্বসূরিদের মধ্যে ‘অমরকোষ’-এর উল্লেখ করিয়াছেন; উপরোক্ত ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ নিষ্কাশন বিধি যেইখানে সম্পূর্ণ মান্য করা হৈয়াছে।

অবশ্য ইংরেজী গ্রীক জার্ম্মানী ইত্যাদি কোন ভাষাই এইরূপ ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির দ্বারা শাষিত নয়। আধুনিক ভাষাজগতে কনভেনশনাল, অ্যাকসিডেণ্টাল বা প্রতীকী শব্দার্থবিধি মান্য করা হয়। তাহাতে যেই কোন শব্দের অর্থ প্রথমবার কাহারো নিকট থেকে জানিয়া লৈয়া, তাহারপর সেই অর্থ স্মরণে রাখিতে হয়। শব্দের ভিতরে মাথা কুটিলেও সেইখান থেকে সরাসরি কোন অর্থ নিষ্কাশন করা যায় না। আধুনিক বাঙ্গালাসহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত ভাষাই এই প্রতীকী শব্দার্থবিধি মান্য করিয়া থাকে। কিন্তু প্রাচীন বাঙ্গালা ভাষার ক্ষেত্রে এই বিধি খাটে না। তাই বাঙ্গালা ভাষার বিশেষত্ব এই যে, সেই দৃশ্যত এক রকম হৈলেও দুইরকম শব্দার্থবিধির দ্বারা শাষিত।

ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির দ্বারা শাষিত হৈলে শব্দের ভিতর থেকেই তাহার বহুরৈখিক অর্থ বাহির হৈয়া আসে। এইক্ষেত্রে যেমন, যাহার দ্বারাই শাষন ক্রিয়াটি সাধন করা যাবে তাহাকেই বলা হৈবে ‘শাস্ত্র’। অর্থাৎ কিনা শাস্ত্র কোন নির্দ্দিষ্ট বস্তু নয়, উক্ত ক্রিয়াটি যেই সাধন করে সেই শাস্ত্র! সেইটি একটা বহী না লাঠি তাহা বিচার্য্য নয়। যাথাতথ্য নয়, যাথাতত্ত্বের ওপর এই বিধির নিষ্পলক দৃষ্টি। তাই যুগে যুগে ‘শাস্ত্র’ শব্দের উদ্দিষ্ট বদলে গেছে, শব্দার্থ-ও বহুরৈখিকতা থেকে ক্রমান্বয়ে একরৈখিকতায় অধঃপতিত হৈয়াছে। শ্রীযুক্ত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইতেছেন— শ্রীধর স্বামীর মতে শ্রুতি স্মৃতি পুরাণাদি, মেদিনীকোষ মতে আগম এবং অন্য একমতে সাংখ্য যোগ তর্কপূর্ব্বোত্তরমীমাংসা সূত্র স্মৃতি কামন্দকাদি নীতিগ্রন্থগুলি ‘শাস্ত্র’ পদবাচ্য; অর্থাৎ ঐগুলির সাহায্যে বিশেষ বিশেষ কালে শাষন করিবার কাজটি সাধন করা যাইত। এই নিরিখে পুরাণ কোরাণ সংবিধান সব গ্রন্থৈ শাস্ত্র পদবাচ্য সন্দেহ নেই।

শাষনের হাতিয়ার জিনিসটা, ব্যবহৃত হৈবার আগে, কমপক্ষে দুইটা পূর্ব্বশর্ত্ত দাবী করে। তাহার চাই শাষক ও শাষিত অর্থাৎ ঐ হাতিয়ার যিনি প্রয়োগ করিবেন তাঁহাকে এবং যাঁহার ওপর তাহা প্রযুক্ত হৈবে তাঁহাকে। আপনার আত্মশক্তি যদি বলবান হয়, আর সেই যদি আপনার প্রবৃত্তির স্বভাববিরোধী হয়; অর্থাৎ আপনার অসংখ্য দেহকোষের দাবী-গুলিকে শাষন করিতে চায়, সেই ক্ষেত্রে আপনি শাস্ত্রের প্রয়োগ করিতে পারেন। আবার কোন সমাজদেহের আত্মশক্তি (জাতীয়তাবোধ ও তাহার মোড়লগণ যদি বলবান হয় এবং সেই যদি অসংখ্য সমাজ দেহকোষের (জনসাধারণের) দাবী-গুলিকে শাষন করিতে চায়, সেই ক্ষেত্রেও শাস্ত্রের প্রয়োগ করা যাইতে পারে। তাহা হৈলে দেখা যাইতেছে, দৃষ্টিভঙ্গিটাই একরৈখিক নয়, বহুরৈখিক। মানবদেহ হোক আর সমাজদেহৈ হোক, তাহাদের শাষন করার ব্যপার শাস্ত্রের প্রয়োগ প্রশস্ত। এক শাস্ত্রের সাহায্যে সকল দেহৈ শাষন করা যায়। যায় বলেই, ভারতবর্ষ বহু প্রাচীনকাল থেকে এক ঢিলে দুই পাখী মারিয়া আসিতেছে।

ইয়োরোপ এই জিনিসের সঙ্গে পরিচিত নয়। যাথাতথ্য তাহাদেরকে যতখানি গর্ব্বিত করিয়াছে, ততখানি ধীমান করেনি। তাই মানবদেহ ও সমাজদেহকে এক সঙ্গে দেখিবার কৌশল তাহাদের অজানা। সেই কারণে সমাজদেহকে শাষন করিবার ব্যপারে তাহারা প্রধানত অস্ত্রের ওপরেই নির্ভরশীল। আমাদের ‘অস্ত্র’-এর পাশাপাশি ছিল ‘শস্ত্র’, যাহার যথার্থ প্রতিশব্দ পর্য্যন্ত তাহাদের ভাষায় নাই, আর ‘অস্ত্রশস্ত্র’ আমাদের এমন উত্তরাধিকার যে, আমরা কথায় কথায় শব্দটি ব্যবহার করিয়া থাকি। ‘শস্ত্র’বিদ্যা আমাদের অধ্যয়ণেরেও বিষয় এবং তাহা বহু প্রাচীনকাল থেকেই। আর সেই সকল শস্ত্রের আধার বলেই উল্লিখিত গ্রন্থগুলিকে ‘শাস্ত্র’ বলা হৈয়া থাকে। আমাদের প্রাচীন ভারতীয় মন্দিরকেন্দ্রিক সভ্যতার আদি আই-সি-এস প্রশাষকগণ ঐ গ্রন্থগুলির ওপর নির্ভর করে যেই শাষন চালাতেন, তাহা জনসাধারণের দেহের চেয়ে তাহাদের মনের ওপর অনেক বেশী কড়া হৈয়া এঁটে বসিত, কাজটা হৈত পাকা। অস্ত্রের শাষনে যদি পাকা করা হৈত তাহা হৈলে তাহার মধ্যে দাসত্বের অবমাননা থাকিত এবং ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহের চেষ্টা কোনক্ষণেই থামিত না।[1], যাহা ইয়োরোপের বৈশিষ্ট্য। আধুনিক ভারতে দেরাদুনে আমাদের হবু সিভিল সার্ভেণ্টগণ যেই সকল গ্রন্থের ওপর নির্ভর করিয়া ভারতের জনসাধারণকে শাষন করিবার কৌশল রপ্ত করেন, সেইগুলিই এই যুগের শাস্ত্র বা শাষনের হাতিয়ার। সেইখান থেকে শস্ত্র চালনার কায়দা-কসরত শিখে, তদনুযায়ী তাঁহারা তাঁহাদের কলম চালান; কেমন চালান সেই কথা আমরা সবাই জানি; আর কে না জানে কলম তরবারির চেয়ে বেশী শক্তিশালী? ভারত একটা প্রাচীন দেশ, অসংখ্য মৌলিক আবিষ্কারগুলির পাশাপাশি, কলম দিয়া নিঃশব্দে খুন করিবার বিদ্যাও সেই আবিষ্কার করিয়াছিল বহু প্রাচীনকালে এবং সেই বিদ্যাও হৈয়াছিল শাস্ত্র পদবাচ্য। আর ঐরূপ শাষনের হাতিয়ার বলেই জনসাধারণ ওইগুলিকে কোনক্ষণে সৎ-শাস্ত্র বলেনি। ‘সচ্ছাত্র’ বলেছে ‘শ্রুতিস্মৃতিবিরোধী শাস্ত্র’[2]-কে। সেই সচ্ছাত্রের ‘দদাতি প্রতিগৃহ্ণাতি’[3] [ = to the people and from the people[4] = দিবে আর নিবে ] নির্দ্দেশ যদি মান্য করি, তবে এইকথা বলিতেই হয় যে, জনসাধারণের মতে বেদবিরোধী শাস্ত্রই যে সৎ শাস্ত্র হয়, এতদিন সেই কথা আমরা খেয়াল করিনি।

বস্তুত আদিম সাম্যবাদী সমাজের হাত ধরিয়া যেই বহুরৈখিক প্রাচীন সংস্কৃতের উদ্ভব, পণ্যবাহী সমাজের হাত ধরিয়া সেই ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছিল একরৈখিক আধুনিক বাঙ্গালা ভাষার দিকে। আর সেই সময়, একদিন ব্রিটিশের আগমন ঘটে ও বাঙ্গলির ভাষার ভিতরেও সেই উপনিবেশ স্থাপণ করে, যাহার অনিবার্য্য ফলশ্রুতি ঘটে বাঙ্গালা ভাষার আত্মাবদলে। সেই জন্যেই কেরী সাহেব থেকে সুনীতি চাটুজ্জে সাহেব পর্য্যন্ত ইয়োরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত সাহেবদের কাছ থেকে আমরা যেইক্ষণে বাঙ্গালা ভাষাটা নতুন করিয়া শিখিলাম, ততক্ষণে সেই অফিসিয়াল সাহেবী বাঙ্গালার আত্মা বদলে গেছে এবং শরীরেও হাত পড়িয়াছে, প্রায় সমস্ত ভারতীয় ভাষার মত বাঙ্গালা ভাষার ভিতর থেকেও ভারত-আত্মার বিদায় পর্ব্ব সমাধা হৈয়াছে এবং ইয়োরোপীয় আত্মার অনুপ্রবেশ ও অধিষ্ঠান সাঙ্গ হৈয়াছে। অর্থাৎ কিনা, ইয়োরোপ কেবল ভারতেই উপনিবেশ স্থাপণ করেনি, ভারতীয়ের জীবনের সর্ব্বত্র, তাহার ভাষায় আচারে ব্যবহারে জীবিকায় মনে শিল্পে সাহিত্যে এককথায় সমগ্র জীবনযাত্রায় উপনিবেশ স্থাপণ করিয়াছিল।

বাঙ্গালা ভাষার দেহে ইয়োরোপীয় আত্মা ঢুকে পড়িবার পর বাঙ্গালা শব্দাবলির ভিতর তাহাদের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থগুলিকে অর্থাৎ ভারতাত্মাকে আর খুঁজিয়া পাওয়া যায়নি। তাই ‘শাস্ত্র’-এর ভিতর ‘শাষনসাধন’কেও পাওয়া যায়নি; পাওয়া গিয়াছে ‘স্ক্রিপচার’রূপে ইয়োরোপীয় আত্মাকে; অর্থাৎ কিনা আমরা ইয়োরোপীয় ‘স্ক্রিপচার’ বা ‘রিলিজিয়াস বুক’-এর বাঙ্গালা প্রতিনিধিরূপে অতঃপর ‘শাস্ত্র’কে পাইয়াছি। মাঝ থেকে শাষনসাধন বা শাষনের হাতিয়ার যেই শাস্ত্র, সেই হৈয়া গেল আরাধনার হাতিয়ার বা ধর্ম্মপুস্তক। এইভাবে প্রায় প্রতিটি শব্দের ক্ষেত্রে, সমগ্র বাঙ্গালাভাষার ক্ষেত্রে আত্মাবদল প্রক্রিয়া সাঙ্গ হৈল।  কলিম খান। [সূত্রধর —> ভাষায় ঔপনিবেশিকতা : প্রাচীন ভারতে ম্যানেজমেণ্ট ও বাৎস্যায়ণের কামসূত্র ।। কলিম খান।

 

আমরা উচ্চারণ করিতেছে  >—————————– > > >

“(১৬) শপথ
সন্ধ্যাকালীন রক্তিম আভার, (১৭) এবং রাত্রির এবং তাহাতে যাহার সমাবেশ ঘটে— তাহার, (১৮) আরো শপথ (ঐ) চাঁদটির, যেইক্ষণে তাহা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ চাঁদে পরিণত হৈয়া যায়, … [ছুরা আল্ ইনশিক্বাক্ব]

“(১) নু-ন, শপথ (লেখার মাধ্যম) কলমের, আরো শপথ (এই কলম দিয়ে) তাহারা যাহা লিখিয়া রাখিতেছে তাহার …” [ছুরা আল্ কলম]

শপথ
অষ্টমূর্ত্তি, পঞ্চানন (চিন্ময়ের) …

(‘একান্নবর্ত্তী’ বার্ত্তাবাহী/বরবাহী অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দুর (ত্রিমাত্রিক) দেশে) প্রাচ্যের পঞ্চভূত/পঞ্চভিত্তির আমির প্রকাশে (আ থেকে ৎ) পঞ্চাশটা বর্ণ যাহা আমাদের (আ-ৎ-ম) আত্ম-জ্ঞান/আলোময় এবং অ (অজ্ঞান/অস্তিত্বন/অন্ধকার) একটা বর্ণ লৈয়া সর্ব্বমোট ৫১টা বর্ণের এ কা ন্ন ব র্ত্তী ভাষাতত্ত্বকে বুঝিতে হৈলে (হাত দিয়ে দেখুন) আমাদের শরীরের পঞ্চভিত্তিকে বুঝিতে হৈবে, আরো বুঝিতে হৈবে আমরা কেন পঞ্চেন্দ্রিয়, পঞ্চতন্ত্র, পঞ্চশীল, পঞ্চপাণ্ডব, পঞ্চপিতা, পঞ্চায়েতের দেশের মানুষ এবং এইখানে কেন পঞ্চের ব্যাঞ্জনে রসনাবিলাস করি, যেথায় পঞ্চভিত্তির (সমাজকাঠামোর) পঞ্চওয়াক্ত আযান শোনা যায়, সন্ধ্যায় পঞ্চপ্রদীপ জ্বলে, জীবনের পঞ্চ-মৌলিক অধিকারে জন্য লড়াই করিতেছি, সর্ব্বত্র কেন  ঞ্চে র কী র্ত্ত ন করিতেছি … কেন আটকুঠুরী নয় দরযার দেশে (প্রকৃতিপুরুষে …) স-হ-জ মানুষ খুঁজিয়া বেড়ায় আর্শিনগরের একতারা! …

এইসব না বুঝিয়া, পাশ্চাত্যের অর্দ্ধবিকশিত জ্ঞান(?) লৈয়া (অর্দ্ধেকের আরো-অর্দ্ধবিকশিত) আপনি এইখানে ভাষাতত্ত্ব/ধ্বনিতত্ত্ব আওড়াতে আসিবেন না … যাস্কপাণিনির দেশে (ভাষাতত্ত্ব অর্দ্ধ-জানা) ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুর শিখাইতে আসিবেন না, (তাহার পরবর্ত্তী জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রজন্ম দূরের ব্যপার) …

অন্নদাশঙ্কর রায় উচ্চারণ করিয়াছেন—
গুণগত আধুনিকতা প্রাচীন সংস্কৃতিকেও সম্মান করে। মধ্যযুগের সংস্কৃতিকেও শ্রদ্ধা করে। পুরাতন ক্লাসিক বা পুরাতন ক্যাথিড্রাল বা পুরাতন মন্দির বা পুরাতন মসজিদ আধুনিকতাবাদীদেরেও প্রিয়। মানবতাবাদীদের যে ভাগটি নিরিশ্বরবাদী সে ভাগটিও পুরানো মদ ভালবাসে। সেই সঙ্গে পুরানো ছবি বা মূর্ত্তি। এমন কালাপাহাড় একালের কেউ নেই যে অসত্য বা অশুভ বলে কীর্ত্তি ধ্বংস করবে। মানব বিবর্তন একের পর এক যেসব অতিক্রম করে এতদূর এসেছে তার প্রত্যেকটি অধ্যায়ের ধ্বংসাবশিষ্ট সম্পদ সযত্নে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ভাবীকালের জন্যে। উত্তর পুরুষ যাতে পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কচ্যুত না হয়। মাঝে মাঝে ধারাভঙ্গ ঘটেছে। তা স্বত্বেও ধারাবাহিকতার সন্ধান চলেছে। সেটা হয়তো পাওয়া যাবে কারিগর শ্রেণীর কারুশিল্পে। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত এ দেশের প্রধান উপজীব্য কৃষি ও কারুশিল্প। এই লৈয়া যাহারা ছিল ও রহিয়াছে তাহাদের সৃষ্ট লোকগীতি, লোকগাথা, রূপকথা, কিংবদন্তী, প্রবাদবচন প্রভৃতির মধ্যে কি একটি ধারাবাহিকতা মেলে না? আমার ত মনে হয় মৃৎশিল্প কারুশিল্প ও শিলাশিল্পের মধ্যেও তা মেলে। আমাদের দৃষ্টি সাধারণত লোকসংস্কৃতির বা লোকশ্রুতির ওপর পড়ে না। তার সম্যক চর্চা থেকেও নতুন একটা রেনেসাঁস ঘটতে পারে। সেটা জনমানসের রেনেসাঁস।
সম্ভবত সেই নতুন রেনেসাঁস বাইরে থেকে নয়, ওপর থেকে নয়, অতীত থেকে নয়, তল থেকে আসবে। তল থেকে আসাও ভিতর থেকে আসা। তার দিকে আমি তো হাত বাড়িয়েই রেখেছি।
[সূত্রধর —>
পৃষ্টা: ৬২| বাংলার রেনেসাঁস— অন্নদাশঙ্কর রায়।

লড়াইয়ের মন্ত্রণায় (এইবার) দর্শন করা যাক, সহিত হোয়ার/হ্ওয়ার সাহিত্যে শব্দের (প্রকৃতির) অর্থ (প্রত্যয়/পুরুষ) দর্শনে প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শনের ব্রহ্মাস্ত্রসমূহ

বাঙ্গালা বর্ণমালা:

রহস্যবর্ণ :
ং  ঃ   ঁ
= ৩টা।

স্বরধ্বনি/বর্ণ:
অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ ঋৃ (৯, ৯৯) এ ঐ ও ঔ
= ১৪টা।

* পুরুষ/প্রত্যয়/আধেয়— অ, ই, উ, ঋ, [৯], এ, ও।

* প্রকৃতি/আধার— আ, ঈ, ঊ,  ঋৃ, [৯৯], ঐ, ঔ।

ব্যাঞ্জন ধ্বনি/বর্ণ:
বর্গীয় ধ্বনি/বর্ণ:
ক খ গ ঘ ঙ
চ ছ জ ঝ ঞ
ট ঠ ড ঢ ণ
ত থ দ ধ ন
প ফ ৰ ভ ম
= ২৫ টা।

আবর্ত্তক ধ্বনি/বর্ণ:
য র ল ব শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ
= ১২টা।

 

বাঙ্গালা বর্ণমালার বর্ণার্থ:

রহস্যবর্ণ:

ং = রহস্য [অনুস্বার = অ/অস্তিত্বন + ন্/নাকরণ-অনকরণ + উ/(নবরূপে) উত্তীর্ণন +
স্/একরৈখিক শক্তিযোজন + ব/অন্তস্থ-বহন + আ/অস্তিত্ব + র/রক্ষক]

ঃ = রহস্য [ৰি্সর্গ = ৰ্/বহন + ই/সক্রিয়ণ +
স/একরৈখিক শক্তিযোজক + গ্/ গমন + ঋ/আবর্ত্তন]

ঁ = রহস্য [চন্দ্রৰি্‌ন্দু = চ/চায়ী + ন্/নাকরণ-অনকরণ + দ্/দানন + ঋৃ/আবর্ত্ত
ৰ্/বহন + ই/ সক্রিয়ণ + ন্/নাকরণ-অনকরণ + দ্/দান + উ/(নবরূপে) উত্তীর্ণন]

স্বরবর্ণ:
* পুরুষ/প্রত্যয়/আধেয়— অ, ই, উ, ঋ, [৯], এ, ও।
অ = অস্তিত্বন, ই = সক্রিয়ণ/গতিশীল, উ = (নবরূপে) উত্তীর্ণন, ঋ = আবর্ত্তন, [৯ = ] এ = দিশাগ্রস্তন, ও = অস্তিত্বাদিকরণ।

* প্রকৃতি/আধার— আ, ঈ, ঊ, ঋৃ, [৯৯], ঐ, ঔ।
আ = অস্তিত্ব, ঈ = সক্রিয়/গতিশীলতা, ঊ = (নবরূপে) উত্তীর্ণ, ঋৃ = আবর্ত্ত, [৯৯ = ] ঐ = দিশাগ্রস্ত, ঔ = অস্তিত্বাদিকর।

ব্যাঞ্জন বর্ণ:
বর্গীয় ধ্বনি/বর্ণ:
ক বর্গ:
ক্ = করণ্ (ক = কারী), খ্ = করণস্থিতি/করণথিতি (খ = করণস্থিত/করণথিত), গ্ = গমন্ (গ = গামী), ঘ্ = গমনস্থিতি/গমনথিতি (ঘ = গমনস্থিত/গমনথিত), ঙ = কারীরহস্য।

চ বর্গ:
চ্ = চয়ণ্ (চ= চয়ণকারী/চায়ী), ছ্ = চয়ণস্থিতি/চয়ণথিতি/ছাদন্ (ছ = চয়ণস্থিত/চয়ণথিত/চয়ণিত/ছাদিত), জ্ = জনন্ (জ = জাত), ঝ্ = জননস্থিতি/জননথিতি (ঝ = জননস্থিত/জননথিত), ঞ = চায়ীরহস্য।

ট বর্গ:
ট্ = টঙ্কারণ্ (ট = টঙ্কারী), ঠ্ = টঙ্কারস্থিতি/টঙ্কারথিতি (ঠ = টঙ্কারস্থিত/টঙ্কারথিত), ড্ = গড়ান্ (ড = গড়ায়িত), ঢ্ = গড়ানস্থিতি/গড়ানথিতি, (ঢ = গড়ানস্থিত/গড়ানথিত), ণ্ = অণকরণ্/টঙ্কার-রহস্যন্ (ণ = অণকৃত/টঙ্কার-রহস্য/)।

ত বর্গ:
ত্ = তারণ্ (ত = তারী), থ্ = তারণস্থিতি/তারণথিতি (থ = তারণস্থিত/তারণথিত), দ্ = দানন্ (দ = দাতা), ধ্ = ধারণ্ (ধ = ধারণকারী/ধারী), ন্ = নাকরণ্-অনকরণ্ (ন = নাকৃত-অনকৃত)।

প বর্গ:
প্ = পালন্-পাণ্-প্রাপণ (প = পালক-পায়ী-প্রাপক), ফ্ = পালনস্থিতি/পালনাদিস্থিতি (ফ = পালনস্থিত/পালনাদিথিত), ৰ্ = ৰর্দ্ধন্-ৰহন্ (ৰ = ৰর্দ্ধক-ৰাহক/ৰাহী), ভ্ = ৰহনস্থিতি/ৰর্দ্ধনথিতি-ভরণ্-ভক্ষণ্ (ভ = ৰহনস্থিত/ৰর্দ্ধনথিত-ভরক-ভক্ষক), ম্ = সীমায়ণ্/মিতি (ম = সীমায়িত/মিত)।

আবর্ত্তক ধ্বনি/বর্ণ:
য্ = যাওয়ণ্ (যাওয়া) (য = যায়ী),
র্ = রহণ্-ভক্ষণ্-রক্ষণ্ (র = রহক-ভক্ষক-রক্ষক),

ল্ = লালন্-লোপন্ (ল = লালক-লোপক),
ব্ (অন্তস্থ-ব্) = অন্তস্থ-বহন্ [ব (অন্তস্থ-ব) = অন্তস্থ-বাহী],
শ্ = শক্তিযোজন্ (শ = শক্তিযোজক) [শ্ = অসীম-শক্তিযোজন্ (শ = অসীম-শক্তিযোজক), শ = ০]
ষ্ = দিশাগ্রস্ত শক্তিযোজন্ (ষ = দিশাগ্রস্ত শক্তিযোজক) [ষ্ = ষট্-শক্তিযোজন্ (ষ = ষট্-শক্তিযোজক), ষ = ষড়ায়তন (১-৬)],
স্ = একরৈখিক শক্তিযোজন্ (স = একরৈখিক শক্তিযোজক) [স্ = সত্-শক্তিযোজন্ (স = সত্-শক্তিযোজক), স = ৭],
হ্ = হ্‌ওয়ণ্ (হ = ভূত, হ্‌ওয়া),
ড়্ = উড়ান্ (ড় = উড্ডীত),
ঢ়্ = উড়ানস্থিতি/উড়ানথিতি (ঢ় = উড়ানস্থিত/উড়ানথিত),
য় = যাওয়ণ/যায়ীর রহস্য
ৎ = উল্লম্ফন,

সূত্রধর : ক্রিয়াভিত্তিক বর্ণার্থবিধি— কলিম খান-রবি চক্রর্ত্তী।

* পর্ব্ব বিভাজন ** রহস্যবর্ণসমূহের অর্থ *** ঋৃ-বর্ণের অর্থ **** শ, ষ ও স এর পরিবর্দ্ধিত [শ্ = অসীম-শক্তিযোজন্ (শ = অসীম-শক্তিযোজক), শ = ০], [ষ্ = ষট্-শক্তিযোজন্ (ষ = ষট্-শক্তিযোজক), ষ = ষড়ায়তন (১-৬)] ও [স্ = সত্-শক্তিযোজন্ (স = সত্-শক্তিযোজক), স = ৭],] বর্ণার্থ নিষ্কাসন আরণ্যক টিটো কর্ত্তৃক সম্পাদিত।

বাঙ্গালা ভাষায় ঋৃ-বর্ণের শব্দসমূহ হৈল √ক্ + ঋৃ + ষ্ + ই = কৃষি, √ক্ + ঋৃ + ষ্ + ক = কৃষক, √ক্ + ঋৃ + ষ্ + ট্ + ই = কৃষ্টি, √ক্ +ঋৃ + ষ্ + ণ = কৃষ্ণ, √দৃ + ঋৃ + ষ্ + ট্ + ই = দৃষ্টি, √ব্ + ঋৃ + ষ্ + ট্ + ই = বৃষ্টি, √স্ + ঋৃ + ষ্ + ট্ + ই = সৃষ্টি … স্ + ঋৃ + ষ্ + ট্ + আ = স্রষ্টা, গ্ + ঋৃ  + হ = গ্রহ, গ্ + + ঋৃ  + হ = গ্রহ, গ্ + ঋৃ  + হ + ণ = গ্রহণ, প্ + ঋৃ  + ক্ + ঋৃ  + ত্ + ই = প্রকৃতি …

 

প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন-এর বানান রীতির সম্পাদনা ক্রিয়া ও প্রক্রিয়ায় আমরা নিবেদিতপ্রাণ, আবারো বলিতেছি, প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন-এর অনেক কিছুই হারাইয়া ফেলিয়াছি আমরা, কালের আবর্ত্তে … তাই অনেক কিছুর উত্তর খুঁজিতে হৈতেছে অতীত খনন করিয়া … এই খননকাজে চ্যুতি-বিচ্যুতির সম্ভাবনা থাকে … যদি চ্যুতি-বিচ্যুতি থাকে তবে তাহা পরবর্ত্তীতে সম্পাদনার্হ … ’৯, ৯৯’ এই  দুইটা বর্ণের অর্থ  আপাততঃ আমাদের কাছে নাই… যাহাদের অর্থের সন্ধান আগামীই বলিয়া দেবে …. পাঠক, আপনাকে আমন্ত্রণ; পাঠে … গ্রহণে … কিংবা বর্জ্জনে …

 

কবি বলিতেছেন “সুরু হৈল স্বপ্ন বপণের দিন, কলোনিয়াল ইণ্টারভিন।”

 

জয় বাঙ্গালা …

প্রমিত বানান রীতি


প্রমিত বানান রীতিতে প্রকাশিত।

লেখকের নিজস্ব বানান রীতি


লেখক যেইভাবে বানান করিয়াছেন, হুবহু সেই বানান অনুসরণ করা হৈয়াছে।