প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতি (Page ৪)

নীরবতার সঙ্গীত

জলের নিপুণ থৈ থৈ হতে তুমি হে জলের দেবতা কোন্ সে নবীন সঙ্গীত বাজালে সমুদ্রবেহালায়? আমি তারই অন্ধ অনুচর, রাতভর তাই এই নক্ষত্রবিভূতি? এককোটি আলোকবর্ষ দূরে অবশেষে নিঃশেষ হয়ে যেই তারা নিজের আকর্ষণে কেবল নিজেরই ভেতর গুটিয়ে যাবার ভান করে, তার কাছে আরও কিছু অনর্থক

অনুভয়

আমাকেও লুকিয়ে রাখ, সময়ের ক্ষুব্ধ পরম্পরায়, তারই ঘূর্ণন পথে কেন্দ্রগামী ত্বরণের টানে যেই ব্যাসার্দ্ধ ধরে রাখে বৃত্তের প্রকৃত চারণভূমি- তারই মাঝে আরও কিছু অনর্থক নৃত্য দেখি, দেখি চক্রাকারে ফিরে আসে রাত্রি ও দিন, অথবা ঘড়ীর ডায়ালে কেউ রেখে দেয় বিভাজন! তবু তারওতো আবর্ত্তন আছে, আছে

গমন

কী গভীর মন্থর এই চলা- বেড়ালের মত অলস ও দাম্ভিক, যতটা নৈঃশব্দ্য ধরে এই পদচারণায়, তার চেয়ে বেশী স্থিতির গিমিক, অবলা-অচল অহঙ্কারে ভেঙে পড়তে চায়; সাবধানে প্রসারিত হয় পথ, যেন প্রতিটি পায়ের আঘাতে মেপে দেখে, কতদূর স্পর্ধা পৃথিবীর নির্জন আহত বুকের ওপর নির্দ্বিধায় বয়ে যেতে

আহ্নিক জীবনের গতি

এই ধাবমান তারকার পিছে যতগুলো প্রার্থনা জুটে তুমি তার অধিক ঈর্ষা নিয়ে ছুটে এলে, জন্মবিন্দু হতে জীবনের অসীম পরিধি ঘুরে, অবশেষে কাকে তুমি কেন্দ্র বলে মেনে নিলে … হে আহ্নিক জীবনের গতি, কোথায় রেখেছ তবে তোমার সে একান্ত কৌণিক পরিসর? প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ থেকে —

নদী

নদী পেরোলেই স্মৃতিগন্ধময় জমাট আঁধার, সৌরকরোজ্জ্বল এই হাতছানি, পাঁচটি আঙুল শুধু কার কথা বলে? ক্ষুধার্ত্ত চিৎকারে মিশে যায় আমাদের স্পর্শের মর্ম্মর ধ্বনি- বায়ু আর বায়ুহীনতার কূটাভাস, তরঙ্গমথিত দেহে ফিরে আসে। এই ঘুম, কবে আর চেনা হল সময়ের উদ্ভ্রান্ত চোখের! ভ্রান্তির আজন্ম পরবাসে তাই গুম হয়ে

নস্টালজিয়া

গোলাপের নির্জনতা বুকে টেনে নাও, পাহাড়ী ঝর্ণার সুরে, সিক্ত হাওয়ায় ভুলে যাওয়া গানে আর অশ্রুজলে বিশ্রুত জীবনের কথকতা … যে রাতে স্বপ্ন দেখ তুমি, সেইসব অরণ্য আর পথের ইশারা ডেকে ডেকে চলে যায় দূরে, ফিরে আসে পিঁপড়ের ঢিবি আর বাতাসে দুলতে থাকা আঙুর লতায় মিশে

প্রেম

জেগে আছি শুধু এইটুকু জেনে। মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখে অলীক পরশে, হা হা শূন্যতায়! যে মুখে দেখেছি আমি নিজেরই মুখের ছায়া, তাতেও ভ্রান্তি ছিল যতটুকু, কতটুকু ছিল নীড়-নির্জনতা? ছুটছে সমস্ত কিছু, ছুটে যাচ্ছে ঢেউ জল- বাষ্পফেনা, মেঘ আর মেঘের সকাশে এসে পাখিগুলি! এমন সহাস্য বেদনায় তুমিও

স্বপ্নের গভীরে এক স্বপ্ন

Is all that we see or seem But a dream within a dream? — Edgar Allan Poe তবু তুমি এসেছিলে স্বপ্নের গভীরে আরও এক স্বপ্ন হয়ে গাঢ় নীল অন্ধকারে ময়ূরের ডানা তুমি তার অপর ঠিকানা। অলস রোদের থেকে ধীরে- পৃথিবীকে গ্রাস করে নিল কেউ, জানি,

হাওয়াকলের ঘূর্ণনগতি

চেতনার ভারবিন্দু হতে ছুটে গেল সময়ের দুর্বিনীত শিখা, সেইসব আদিম অভীক্ষা জড় ও জীবনের মাঝে ঘুচিয়ে দিচ্ছে ব্যবধান, তবু এক কণ্ঠস্বর হাওয়ায় ঘূর্ণি তোলে-চাকা ঘোরে, গম পেষবার কলে পিষে যায় সমস্ত তিতীক্ষা হৃদয়ের। আমরাও আমাদের তাবৎ ইন্দ্রিয় দিয়ে ঠেকিয়ে রাখি নিজের সাথেই নিজের পরম দূরত্বটুকু…

ঝরনাধারার হাসি

মৌন নিশিথে ফুটেছে হাস্নাহেনা ঘুমজড়ানো আঁধারের মৌতাত অসহ্য এ উপেক্ষা যন্ত্রণা কতোদূর আর ইপ্সিত প্রতিঘাত? এই তবে ভালো দূরে দূরে ফুটে থাকা বিপরীত ফুল, রৌদ্রের স্নেহে মাখা কতোটুকু আর বিকেল রয়েছে পড়ে? তবুও তোমার পালকের কম্পনে ফিরে ফিরে আসে মোহমৃত সাম্পান ব্যর্থ জীবনে নির্মোহ স্পন্দনে

ইকারুস

পতঙ্গ অভিলাষ আমাদের খুব চেনা, বহুবিধ রঙে মুছে গেছে দৃষ্টির সমস্ত আলো; তবু এই ডানা, এই মোমের আরক, তুলে নিয়ে যাবে সেই প্রজ্জ্বলিত মোহরের টানে? বহুদূর প্রসারিত সাগরের জল- নীলাভ, কোমল-বুক পেতে আছে। বারবার ফিরে আসি তাই গোলকধাঁধার পথে, আমাদের করপুটজুড়ে প্রসারিত সর্পিল পরিহাস- সেওতো

ভেনাসের স্তন

যে ফুল ফোটে নি কখনোই, রাতের রহস্যে ঘেরা পাখা আর পালকের কোমলতা, সুপ্রাচীন গ্রন্থের মতোই কুমারী গোলাপ! সাগরের নোনা জলে পুঞ্জীভূত ফেনায় ফেনায় ভেসে আসে ঝিনুকের খোলসে আবৃত দেহ, জীবনের অসীম ব্যাসার্ধ ঘিরে জেগে থাকে ক্ষুধা আর প্রেমের পরিধি, আর তার সব সুর পেরিয়ে গেলেই