তানভীর আকন্দ

হাওয়াকলের ঘূর্ণনগতি

চেতনার ভারবিন্দু হতে ছুটে গেল সময়ের দুর্বিনীত শিখা, সেইসব আদিম অভীক্ষা জড় ও জীবনের মাঝে ঘুচিয়ে দিচ্ছে ব্যবধান, তবু এক কণ্ঠস্বর হাওয়ায় ঘূর্ণি তোলে-চাকা ঘোরে, গম পেষবার কলে পিষে যায় সমস্ত তিতীক্ষা হৃদয়ের। আমরাও আমাদের তাবৎ ইন্দ্রিয় দিয়ে ঠেকিয়ে রাখি নিজের সাথেই নিজের পরম দূরত্বটুকু…

ঝরনাধারার হাসি

মৌন নিশিথে ফুটেছে হাস্নাহেনা ঘুমজড়ানো আঁধারের মৌতাত অসহ্য এ উপেক্ষা যন্ত্রণা কতোদূর আর ইপ্সিত প্রতিঘাত? এই তবে ভালো দূরে দূরে ফুটে থাকা বিপরীত ফুল, রৌদ্রের স্নেহে মাখা কতোটুকু আর বিকেল রয়েছে পড়ে? তবুও তোমার পালকের কম্পনে ফিরে ফিরে আসে মোহমৃত সাম্পান ব্যর্থ জীবনে নির্মোহ স্পন্দনে

ইকারুস

পতঙ্গ অভিলাষ আমাদের খুব চেনা, বহুবিধ রঙে মুছে গেছে দৃষ্টির সমস্ত আলো; তবু এই ডানা, এই মোমের আরক, তুলে নিয়ে যাবে সেই প্রজ্জ্বলিত মোহরের টানে? বহুদূর প্রসারিত সাগরের জল- নীলাভ, কোমল-বুক পেতে আছে। বারবার ফিরে আসি তাই গোলকধাঁধার পথে, আমাদের করপুটজুড়ে প্রসারিত সর্পিল পরিহাস- সেওতো

ভেনাসের স্তন

যে ফুল ফোটে নি কখনোই, রাতের রহস্যে ঘেরা পাখা আর পালকের কোমলতা, সুপ্রাচীন গ্রন্থের মতোই কুমারী গোলাপ! সাগরের নোনা জলে পুঞ্জীভূত ফেনায় ফেনায় ভেসে আসে ঝিনুকের খোলসে আবৃত দেহ, জীবনের অসীম ব্যাসার্ধ ঘিরে জেগে থাকে ক্ষুধা আর প্রেমের পরিধি, আর তার সব সুর পেরিয়ে গেলেই

সিন্ধু ভৈরবী

ঘরের ভেতরে আমি অন্য এক আকাশের ছবি দেখি, জানালার পর্দাগুলো চিরকাল গোপনতা খুঁজে, জানি, সমুদ্রশৈবাল কোনোদিন নিজের দেহের ভাঁজে সমুদ্র খুঁজে না, তবু ধ্বসে পড়ে বালিয়াড়ি, চকমকি ঠুকে কেউ আগুন জ্বেলেছে তবে? কারা আজ জলের গভীরে দিলো ডুব, তুলে আনে শঙ্খের গুঞ্জন, তবু দিগন্ত প্রসারিত

নাবিক

এইসব অন্বিষ্ট ভুলে, আমার দিকে ফেরো হে দিগভ্রান্ত নাবিক, তোমার জাহাজ কতো সমুদ্রে, কতো ফেনায়িত তরঙ্গ ভেঙে হরেক মশলার ঘ্রাণে আধেক বোঝাই- কখনোবা স্বপ্নের মতো সেই দেশ, কখনো দূরে দিগন্ত ঠেলে দিয়ে, ভেসে ভেসে কতদূর, নামহীন কত বন্দরে বন্দরে ফেলেছে নোঙর, মানুষের ভীড়ে তুমিও নিজেকে

প্রস্থান

সামান্য মুখরতা তবে আমাকেও করে নেয় বশ, এই ভ্রান্তি, এই রাতের আবেশ- কতোদূর উড়ে যাবে তবে শঙ্খচিলের ডানা? আমরাও নেমে যাই বণিক জাহাজে, পাল তোলো, বাতাস হাঁকিয়ে নেবে মাস্তুল ভরা মেঘে। বালিশের কোমলতা আজ বড়ো বেশি বেমানান মনে হয়, একগ্লাস জলের তারল্য আর কতোবার পান

অধিচিন্তাপ্রবাহ

যেই মুখ দেখে মনে আসে সুনিপুণ সেই চারুপরিহাস, শিল্পীর উন্নাসী চোখ খুঁজে ফেরে যেইভাবে নিরেট পাথরে শিল্পের অনাম্নী প্রতিমা, কতোটা সখ্যতা আছে সেইসব স্মৃতি বা স্বপ্নের বল্কলে? পাখি ও পতঙ্গের কথা বলি, বলি ফুলের সুবাস- দৃষ্টির সীমানায় কতোদূর গেলে তাকে দিগন্ত বলা যায়? আকাশ কতোটা

তমসাপ্রবঞ্চনা কাব্য থেকে নির্ব্বাচিত কবিতা

জ্যোৎস্না দর্শন এলাচের সুঘ্রাণ নিয়ে মাঠে-ইঁদুরের দেহের মতন আর্দ্র মাটীতে হেলে পড়ে চাঁদ, শীর্ণ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ভেসে যায় পরিযায়ী মেঘ, বাতাসের সেকি আর্ত্ত-করুণ সুরে সুরে আমাদের অস্থী ও ত্বকে আঙুল বুলিয়ে যায় স্মৃতি, কাকে আর ডাকব বল? বহুদিন আগে মরে গেছে, শুকনা ঘাসের ওপর

নাচো হে ঘুঙুর জড়ানো সন্ধ্যা

নাচো হে ঘুঙুর জড়ানো সন্ধ্যা-নাচো সারসের চঞ্চুতে-সময়ের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে মলিন হয়েছে চিঠি-কৃষ্ণআখর, যতোগুলো ধ্বনি আছে ধাতুর ঝংকারে, আছে ততোগুলো সুর, তবু কেনো থেমে আছে গান? ভেঙেছে সেতার? একেকটা তারা যেনো সরে যায় একেকটা চুম্বন থেকে দূরে, একেকটা যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে থাকে ঘোড়াদের মৃত চোখে ফুলের