কবিতা (Page ৮)

প্রথম তুষার

আকাশ ভেঙ্গে রূপার গুঁড়ো, দিনভর শ্রবণাতীত তরঙ্গে অবিশ্রান্ত রূপা বৃষ্টি জমে উঠছে একটা রূপালী রূপকথা জানালায় তুষারবৃক্ষ, কী নামে ডাকি তোমায়? হিমাঙ্ককে পেরোয় অভিলাষী উল্টোরথ জলের ওপর অপরূপ ক্রিস্টাল ফুল! দূরে হ্রদের জলে সূর্য্যের প্রতিশ্রুতি, উষ্ণতার খোঁজে ডলফিনেরা জটলায় … দলছুট মীনশিশু সাঁতরায় সূর্য্য বরাবর

দূরভাষ

মৌতাত তোমার ফিকে হয়ে আসে ভোরের উজ্জ্বল রশ্মি চোখ ছুঁতেই সন্ধ্যে রাতের ঝুমঝুম মগ্নতার ভেতর ততোধিক মগ্ন স্মৃতিভ্রমণে কতটা মাখামাখি হয়েছিল ইচ্ছে পদক্ষেপগুলো, ভুলে গেছ বেমালুম! দূরভাষে দূরবর্ত্তিনী, বলে গেছ অতীত ছেঁকে এনে এক একটা উপকথা, নেশাঘোরে এক একটা কলি, চেনা সুর যেন হঠাৎ মনে

এরোমা থেরাপী

ঐ বরাবর দূরের হুইসেল, রঙীন পপলার অদেখা স্টেশন ছোঁয়া ঝাপসা রেললাইন সুখী মেঘেদের ক্লান্তিহীন নিঃসরণ… ডাক পাঠিয়েছিলে কাল, আজ ডুবসাঁতার এপাশে হাইরাইজের কাঁচে আকাশের আহাজারি কালকের চিরকুট আজ ঝড়ো হাওয়ায় ফেরার! সান্ত্বনা, পাইন অনুরাগমাখা পথ পুরাতনী, ফরাসী সৌরভ ছাপিয়ে প্রশ্বাস টুইটুম্বুর ফিরে আসি মন্থর পায়ে

দশ টাকা ও দৃষ্টিপাত

দশ টাকা মালিবাগে মালী নাই, ভাবলাম ঘরে ফিরে যাই— চালককে বললাম — বৌদ্ধ মন্দিরে যাবেন? — যাব — ভাড়া কত? — দিয়েন চল্লিশ — কম চাইলেন! চিনেন তো? — চিনি, সবার কাছে কি সমান চাওয়া যায়! ওইখানে মহামতি বুদ্ধের নিবাস চাতকের ভিড় খুঁজে ফিরে দর্শনের

তিনটা কবিতা

ক্ষত বিষয়ক সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা ভাবছি, ক্ষতটা সেলাই করে নেব; হাত দুখানি জুড়ে দেব আর দুখানি হাতে। ব্যাক্তিগত হতে হতে ক্রমান্বয়ে বিষিয়ে উঠছি নিজের কাছে— এপারের নুড়ীগুলো কান পেতে থাকে ওপারের বালিদের আলাপনে— হাত বাড়ালেই বুঝি লোপ পাবে দূরত্বটুকু— বেজে ওঠবে সমবেত কোলাহল— পলির কারুকাজে

গ্রহণ

ছয় ছয় শতাব্দী চলে যায় … ঘুম শহরে আজ দীর্ঘতম গ্রহণ! চাঁদের গায়ে পৃথিবীর ছায়া! গাড়ী পুল ওভার কর, মুগ্ধ মায়া! ‘হ্যালো, ব্যাকইয়ার্ডে যাও, এখুনি!’ ঘুমচোখ, পাইন ঝোপে শিরশির হাওয়া আকাশে গ্রহণের অর্দ্ধেক পূর্ণিমা … গ্রহণে ছায়াময়ী চাঁদ, সুবহেসাদেক! তুমি কি গ্রহণ আমার নাকি সূর্য

বাঁক

আঁ-কা-বাঁ-কা সবুজ মাঠের পথ ধরে হেঁটেছি কেবল, উজান ভাটির ব্যাকরণে শুনি নাই জলের কাকলি। (…) এটুকু বুঝিনি, কতটা আঘাত পেলে বাঁক নেয় নদীটার মন, অভিমানে সরে সরে যায় নদীয়ার কূলে, জলজ ভাষায় ভেসে ভেসে যায় কাঁখের কলসী, কূলের কথণে ভেসে ভেসে যায় ঘাটের কাহন, মরমিয়াগাথা

বিদ্রোহ

হাতটী মাথায় রেখে আশীর্বাদ কর অবলীলা, আমাকে আরেকবার ছুঁয়ে যাও— কবী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার সারবত্তার ভিতর দিয়ে আমাকে হাঁটিয়ে আন স্পার্টাকাসের শরীর থেকে হাড় এনে শল‍্যচিকিৎসায় গেঁথে দাও মেরুদণ্ডে। আপোষকামিতার নির্লিপ্ত ঘেরাটোপে বন্দী ঘোর অমানিশা সময়ের অন্ধকারে মশাল মিছিল সত‍্য— বর্শাবিদ্ধকালে প্রতিবাদ ছাড়া অন‍্য কোন

নিজের তিরাসের কাছে

নিজের তিরাসের কাছে আমি তো নগন্য মানুষ একটা বুঝি বা না বুঝি তা’রি ইবাদত করি সকাল বিকাল মনে মনে বানানো সুরতের আদলে নিরাকার পাথর ভাঙ্গি চাইরদিকে উড়াই কা’র ছায়ারে কে ফালায়া যাইতেছে পথে দূরে যাইতে যাইতে ফসলের বাঁসে ফিরে যারা তারারেও দেখি চায়ের দোকানে বসি

পড়ে থাকা পাতা

পড়ে থাকা পাতা দেখে গাছ হলুদ শরীর কিছু পতনের চিহ্ন দুঃখের নিরালা এক ফোঁটা দীর্ঘশ্বাস বাকী সবুজ পাতার আগাম শুন্যের গান পাতাদের ডাক বেদনার ঘুমের আউলিতে কিছু কুঁড়ি মু‘ছতেছে পতনের আহাজারি বিচ্ছেদী টান ছিঁড়াবিড়া পাতা পইড়া থা‘কতেছে উ‘ড়তেছে, পু‘ড়তেছে না-দেখা আগুনে গাছ ফিরে গাছের ভিতর।

ক্লাইভের চেয়ারের নীচের রাইত

ক্লাইভের চেয়ারের নীচে জমছিল যেই রাইত দু্ইশত চৌষট্টি বছর আগে তা’র কতক আন্ধাইর আইজো আমাদের ‘একাডেমিক’ চেয়ারের পাছায় কলাভবনের খাঁজে লাইব্রেরির সেলফে ঝুল্লু খায় সে’ এক দেশী বিলাইর কালা মুখ নিরাকার ইঁদুর বিলাই খেলে সে’ চতুর আমাদের আম জাম কাঁঠালের উঠ্‌তি চারাগুলোর লগে সোনারইদে ঝলঝলা

আমার নাম ফিলিস্তিন

আমার নাম ফিলিস্তিন, আল-আকসা মসজিদ আমার লজ্জাস্থানের মত পবিত্র তবুও ইসরায়েলের হাত কমলার কোয়া থেকে রক্তজবা ফুল তুলে আর আপেলের শরীরে ভুল করে আঁকা শব্দের মত কাটাকাটির দাগ বসিয়ে দেয় পরম নিষ্ঠুরতায় … আমি ফিলিস্তিন, আকাশের তারায় আগুন জ্বলে; রাত হয়ে ওঠে কেয়ামত— তক্ষণ খিদের