সময়ের ষড়স্তর
তথ্য—
জীর্ণ অন্ধকারের নির্ম্মল আলো, ধ্রুবজ্ঞান;
শিশিরের শব্দের মত নির্ঝর বিন্দু বিসর্গ!
কবিতা—
চৈতন্য বিভোর অলীক ঘোর
তানপুরায় বাজা নৈবদ্য সুর ও স্বর
প্রেম—
অভিন্ন আত্মার নৃত্য ঝঙ্কার, ঘুঙ্গুর পায়ে
বেরিয়ে আসা সঞ্জীবিত প্রাণেশ্বর!
বিরহ—
অকুণ্ঠ হৃদয়ের আরাধ্য দাবানল, নিমিত্ত অঙ্গারে
জ্বলেপুড়ে বিশুদ্ধ তাম্রলিপির কণ্ঠাহার!
প্রণয়—
প্রলয় ক্লান্ত বিহঙ্গম জীবনের লুকায়িত তৃষ্ণা
অধরে উঁকি দেওয়া জৈবিক নেশা!
মিলন—
মৃত পাজর নিংড়ে বেরিয়ে যাওয়া আত্মা
পরমাত্মার সান্নিধ্যে একাকার সত্তা…
জ্যোতির্ময় স্ফুরণ!
বেনামী জীবন
সে কি প্রকাণ্ড বজ্রপাত! বেদম নিনাদে
রুদ্ধশ্বাস অসহায় দৃষ্টি—
আমরা পৃথিবীতে এসেছি মৃত্যুর নৃত্য দেখিতে;
নাকি নৃত্যের ঘোরে মৃত্যুর স্বাদ পেতে?
কান্না আর বিষাদ উত্তীর্ণতার পর
পুনরায় খসে যাই, মিশে যাই অন্ধ-অহমিকায়
সত্যাসত্য বুঝতে শেখার আগে
আমাদের চোখে ওঠে সীসার চসমা! …
কেবলি আকাশকুসুম স্বপ্ন বোনা, মধ্য-দুপুরে রাত্তির জ্যোৎস্না…
অন্তহীন ব্যাকুলতায় দৌড়াতে দৌড়াতে
দিশাহারা ভ্রমরের মত অন্ধ-টানেলে ঢুকে পড়া।
পবিত্র সম্ভাষণ
বিস্মৃত অরণ্যে
বিষাদিত মন, কিঞ্চিৎ মুক্তির জন্যে
বিদায় নেয় গোধূলী …
পরাভূত ক্রান্তির বিবমিষায় মিনার হৈতে
ভেসে আসে পূণ্যের ডাক … হাইয়া আলাস সালাহ্ … হাইয়া আলাল ফালাহ্ …
সনাতনী কাসার নৈবদ্য … শঙ্খের ধ্বনি …
ঝুঁকে আসে ঈশাণ অগ্নি নৈঋত … তাবৎ কলতান
ঝুঁকে আসে বৃক্ষরাজি
মেঘের পাহাড়
নিবিড় স্থিতির বুকে নেমে আসে
দীপ্যমান অক্ষী, ঘনীভূত মায়া, নৈঃশব্দের গান!…
সন্ধ্যা লগ্ন পেরিয়ে
আমি ফিরে আসি আমার ভেতর
প্রিয় নিঃসঙ্গতাকে বরণ করি পবিত্র সম্ভাষণে
প্রবেশ করি আত্মায়, হেরেমের গহীনে…
নির্জন মৌন পিঞ্জরে
বর্ষার ঝাকড়া চুলে ভর করেছে
কৃষ্ণাভ অভিমান,
উদাসী মাস্তুলে নীল পাপ, সর্পিল ফনা তুলে
ঢেউয়েরা ছোবল মারে কবিতার উষ্ণ পাজরে…
শব্দের পেখম মেলে উড়ে যায় দীর্ঘশ্বাস;
মুহুর্মুহু ঘাসফড়িং …
তারপর থেকে বৃষ্টিস্নাত নির্জন মৌন পিঞ্জরে
বাস করে ধ্যানমগ্ন নীল পারিন্দা… একাকী প্রহরে
যা’র তপ্ত নিঃশ্বাস বেরোয় ভ্রমণ করিতে দূরে …
অঝর শৈলপ্রপাতে স্নান সারে বিশুদ্ধ চিত্তে!
এখানে উল্কা নামে অক্লান্ত অন্ধকারে
দীঘল ঝড়োমেঘের চুলে, তীব্র সুগন্ধী ছড়ানো
কামিনী ফুলের থোকা থোকা রহস্যময় হাসি
টেনে নেয় বৃন্তের দিকে
উন্মাদনা ঝেঁকে বসিলে খুলে দেয় পাপড়ির আগল
মঙ্গল চুম্বনে খসে পড়ে গরিমা
অমৃত ঝরে পিঙ্গল স্তনে, শামুকের চরণ মহিমায়
খুঁজে নেয় গহীন সমুদ্দুর … ঊর্মির জঙ্গল! …
পিঞ্জিরার সাম্রাজ্য
প্রিয়
অন্ধকার
রাত আমার
প্রজাতির ডানায় লিখে রাখিব
অন্তিম কবিতাখানি;
মাকড়সার
ধূসর
বাসরে
সাজিয়ে রাখিব উষ্ণ অভ্যর্থনা!
আঁকিব
কৃষ্ণের বাঁশী
আজন্ম তৃষ্ণ রচনা! …
হে অন্ধকার
হে রাত
তুমি
আরেকটু
দীর্ঘতর… আরেকটু গাঢ়তর হও …
আমার
বিষাদের নদীটা বহিতে দাও
নিরবধি ঝর্ণার চিত্তে!
নষ্টালজিক
স্মৃতিতে
দিকভ্রান্ত
হ্রেষা ধ্বনি—
অবিরাম প্রকম্পনে
চুরমার করুক পিঞ্জিরার সাম্রাজ্য! …
বিবর্ণমুখ ভোরের চেয়ে অন্ধকার রাত
ঢের ভাল! …
দাউদুল ইসলাম রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, সময়ের ষড়স্তর ও অন্যান্য কবিতা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।