২৮
উঁচু উঁচু পর্বত, ধূঁধূঁ করছে, ওখানেই থাকে এক বালিকা
সস্নিগ্ধ শরীরে ময়ুরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জাফুলের লালচে শিখা
শবর, একটুকরো মত্ততা, অত অস্থির হয়োনা
সহজিয়া এই ঘরণীই স-ব, দুঃখ করো না
বনজুড়ে ফুলের গুঞ্জরণ, আকাশে ডালপালা মেলে ধরেছে
কর্ণকুণ্ডলবজ্রধারী উদাসীন শবরী একা একা হাঁটছে
পাতার অলংকারে তৈরি তিন ধাতুর খাটে বাসর সাজালো
নৈরামণির বাহুডোরে শবরের রাত কেটে ভোর হলো
হৃদয়ের পানপাতা চিবিয়ে খায় কর্পূরের মত
নৈরামণির সুখস্পর্শে শবর সে-কি রোমাঞ্চিত
গুরুর কথা ধনুকসমান- বিদ্ধ করো আপন মন
তীর ছূঁড়ে তুমি লাভ করো লাভ করো পরম ধন
শবর আমার, কোথায় লুকিয়েছে এ আলো-অন্ধকারে
খুঁজবো তোমাকে কোন গিরিশিখরে, কোন দূর পাহাড়ে?
২৯
ভাবও নাই, অভাবও নাই
এমন তত্ত্বে কি করে মন বসাই!
ওরে মূর্খ, কিছুই এত সহজ না
ত্রিধাতুতে মিলেমিশে দিশা পাবি না
রঙে ও রেখায় যারে কখনও দেখিনি
বেদ-পুরাণের ব্যাখ্যা দিয়ে লাভটা কী?
কাকে কী বলে দেবো পরিচয়
জলের চাঁদ জলেই মিশে যায়
লুই বলে, আমি আর কী ভাববো
আমার এ পৃথিবী কোথায় হারালো?
৩০
আকাশে ভাসে করুণার কালো মেঘ
ভাব-অভাবের পা দুটো ভেঙেচুরে নিস্তেজ
ফুটে উঠছে ক্রমশ এক অদ্ভুত আয়না
একেই কি বলে স্বরূপের সহজ সাধনা?
ইন্দ্রিয়ের ফাঁদ কেটে ধরো এবার গান
মনের গহীনে নিয়ে চলো, হবো সপ্রাণ
কোথাও আজ মন বসছে না, ফিরব ঘরে
আমার এ শ্যামলদেশে চাঁদ ঝলমল করে
এ বিহ্বল আলো-ই সবকিছুর সার
ভুসুকু যদি জাগে, ঘুচবে দূর-অন্ধকার
৩১
মন পবনের নাও, কোথায় গিয়ে ঠেকলি
আত্মার ঘুড়ি, সূতা ছিঁড়ে কই রে হারালি
করুণার অবাক বাজনা বাতাসে বাজে
আর্যদেব ঘাপটি মেরে বসে আছে
চাঁদ অস্ত গেলে আলোর সুরমা যেমন
চিত্তহীন চিত্তের বিকারও তেমন
লজ্জা, ভয়, লোকাচার- স-ব ছেড়েছি
শূন্যতাময় পথের ডাকে বের হয়েছি
পথে পথে বাঁধা, ফাঁদ, সমূহ শিকল
এ শিকলের যন্ত্রপাতি করবই বিকল
৩২
শব্দ, বিন্দু, চাঁদ, সূর্য নয় তো বাহক
আমার চিত্ত সত্যিই এক মুক্ত জাতক
সোজা তো সোজাই, বাঁকা পথ নিওনা
কাছেই বোধি, ওরে মূর্খ, লঙ্কায় যেও না
চূড়িপরা হাতের শোভা আয়না কি বোঝে
আপনাআপনি বের হ আপনার খোঁজে
বোকা রে, যেতে চাস যদি নদীর ওপার
অসৎসঙ্গ ছাড়, নচেৎ যেতে পারবি না আর
ডানে-বামে, এদিকওদিক নালা-ডোবা-খাল
সরহ বলে, বাজান রে, সোজা পথেই চল
মজিব মহমমদ রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, চর্যাপদের কবিতা (পঞ্চম কিস্তি) — লেখক নির্দ্ধারিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।