১.
নিরন্তর এক ব্যাধিচক্রে আটকে আছি। মহাব্যাধি এই বেঁচে থাকা কাল। জন্মমাত্র অধিকারে পেয়েছি যারে,
বিনাশ অবধি তার থেকে নেই কোন পরিত্রাণ। মহাকাল
চুমুকে চুমুকে পান করে ব্যাকুল পরাণ।
২.
অনেক হয়েছে ভাগ— এই প্রাত্যহিক সোনারোদ, পাতালপুরী ছেঁচা কনককুসুম, জমিনের বুক চিরে জড় করা বিপুলা মোহ কিংবা মানুষের মানচিত্র!
এস, মাটির উপরে এবার শুধু মৃত্যু ভাগাভাগি করি।
৩.
আমার জন্যই এ পৃথিবী ধ্বংস হতে পারছে না! কে তাকে রেখেছে ধরে? আমি তো এক উম্মাদ শিশুর ফুঁ থেকে উড়ে যাওয়া, উবে যাওয়া এক নিমগ্ন বাবল।
আমার মৃত্যুতে শুধু সাড়ে তিন হাত মাটি নড়ে যাবে।
৪.
আমি একটি পরিস্কার আলোকরেখায় শুধু অন্ধকার এঁকে যাচ্ছি। আর ঘনায়ে আনছি আমার মৃত্যুকাল। আমার মৃত্যুর পর পৃথিবীতে তোমরা সকলে অন্ধ হয়ে যাবে। অন্ধ তোমরা দেখবে আলোয় উদ্ভাসিত আমায়।
৫.
আমার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমি তোমাদের প্রত্যেকের ভেতরে ঢুকে যাব। জীবিত তোমাদের ভেতরে বাজতে থাকবে মৃত আমার গান। তোমরা তোমাদের মৃত্যু অবধি আমাকে বয়ে বেড়াবে।
৬.
বাবার কাছে শুনেছিলাম, আমার মায়ের চোখে তিনি কখনো জল দেখেননি, মায়ের চোখজোড়া ছিল জীবন্ত আগ্নেয়গিরি; যার উত্তাপটা টের পেয়েছিল সকলেই, শুধু টের পায়নি নীরব লাভা নিঃসরণের যন্ত্রণাটুকু।
৭.
আমার জন্মের আগে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুকালে তিনি তাঁর চোখজোড়া খুলে রেখে গিয়েছিলেন। সেই মৃত ও শুকিয়ে যাওয়া চোখ থেকেই আমার জন্ম। আমি বড় হয়েছি বাবার দুধে।
৮.
ঈশ্বর একবার আমার সম্মুখে দাঁড়ান তো, আরেকবার আমি ঈশ্বরের সম্মুখে। তারপর আমরা একে অন্যের ভেতরে ঢুকে যাই। পরস্পর ভেতরে ঢুকে আমরা একে অন্যকে দেখাই।
৯.
দেহ আমার! সোনা আমার! পরাণপাখী! ডুবে থাকে একা গোপন রোদ্দুরে; উড়ে যাও— ভেসে ভেসে— দূরে আমারই চোখের গোপন গহীন সমুদ্রে।
মাসুদ শায়েরী রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, দেহ আমার! সোনা আমার! পরাণপাখী! — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।