কবন্ধ
মাথাটা গা বেয়ে যদি গড়িয়ে গড়িয়ে
দু’পায়ের কাছে নেমে আসে মাটির সকাশে
মানুষ কি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?
তবুও দাঁড়িয়ে থাকা আপাদগলা মানুষ
দেহের ভেতর থেকে
পাঁচটা তুখোড় চোখ জেগে ওঠে আর
মাথার তিনটা চোখে স্থির চেয়ে থাকে
পরষ্পরের বিস্ময়ে অপলক।
ভ্রু-মধ্যের চোখ হতে আলো আর অন্ধকার ঢেউ
চক্রাকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়
দূর পুকুরের মাঝে ঢিল ছোঁড়া ঢেউয়ের অবিকল
তখন মাথাটা তুলে নিয়ে
কবন্ধে স্থাপন করে নিলে মানুষ দেবতা হয়ে যায়।
ঘর
যে বাড়ি কোথাও নাই
সেখানে রয়েছি শুয়ে নিশ্চিন্তের ঘুমে
যে মানুষ কোনখানে নাই
সে মানুষ এসে ডেকে তোলে
বারবার বলে, কবেই হয়েছে ভোর
এখনো রয়েছ কেন শুয়ে?
তাড়াতাড়ি ওঠ, দিন বহে যায়
যাবে তুমি বহুদূর …
চলে যাই বাড়ি ছেড়ে
ঘরহীন কোন প্রান্তরের দেশে!
নির্বাণের মায়া
মৃত্যুর টিকেট কেটে বসে আছি জীবন ষ্টেশনে
জীবন-মৃত্যুর দিকে কতজন ছুটে যায় একা
উচ্ছল ও শ্রান্ত অবয়ব খেলা করে চারপাশে
অথচ মানুষ নয়, মুখর ষ্টেশন হয়ে আছি!
মৃত্যুর ষ্টেশনে যেতে হবে ভয় নাই কোন আজ
শুধু স্থির দাঁড়িয়ে দেখেছি মানুষের তাড়াহুড়া
কী এক প্রচণ্ড তাড়নায় অলক্ষ্যের লক্ষ্যে ছোটা
কেউ কেউ মৃত্যুর ষ্টেশন থেকে ফিরে ফিরে আসে
চুপচাপ, শান্ত ও নির্ভীক খাজুরাহোর ভাস্কর্য
না-বলেই বলে যায় কত জীবনের ইতিহাস
চান্দেলার আলো খেলা করে যায় চোখের ভেতর
দূর-প্রান্ত থেকে কা’রা যেন ছুটে ছুটে আসে কাছে
আবার নিমেষে ধায় চলন্ত ট্রেনের অবিকল
অথচ এখানে অসমাপ্ত কোলাহলের ভেতর
নির্বাণের মায়া নিয়ে বসে আছি মৃত্যুর ষ্টেশনে!
যে স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি নাই
পাখিদের স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি থাকে?
নাকি কোন ঠিকানা থাকে না পাখিদের!
পাখিদের গ্রাম-থানা-জেলা কি লাগে না?
যে গাছের ডালে পাখিরা বেঁধেছে ঘর
সে গাছ কি পাখিদের কথা ভুলে যায়?
কখনো ঝড়ের বেগে ভেঙ্গে গেলে গাছ
পাখিরা কি তাদের আবাস ভুলে যায়?
ঠিকানাবিহীন যাযাবর হয়ে ঘুরে?
মানুষের স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি লাগে
অথচ আমার বাড়ি নাই ঠিকানায়
পাড়া-প্রতিবেশীরাও চিনে না এখন
পাশে বয়ে যাওয়া ছড়াটা কি ভুলে গেছে
দারুণ দুরন্ত মায়াময় ছেলেবেলা?
মৃতপ্রায় পুকুরের টলমল জল
কখনো কি সাক্ষী দিবে আমার স্বপক্ষে?
কোলাহলরত বাজারের ডাকঘর
প্রযত্নের নাম দেখে বাড়ি খুঁজে পাবে?
বাড়ি নাই বলে জন্মগ্রাম-ও কি নাই?
মানুষের স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি থাকে
অথচ আমার স্থায়ী ঠিকানায় আছে
গ্রাম-থানা-জেলা, বাড়ি নাই কোনখানে
তাই গাছেরা পাখির কথা ভুলে যায়!
শেখর দেব রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, নির্ব্বাণের মায়া ও অন্যান্য কবিতা — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।