উত্তর-পূর্ব্বাঞ্চল
ছিল এক বালকজীবন, পাহাড় চুম্বক
শিশিরের রঙে ডুগডুগ
বিক্ষিপ্ত স্বপ্নেরা
জমে হয়েছিল বটে রহোস্যপন্যাস ও মাসুদরানা
হাতের মুঠোয় রক্ত প্রজাপতি
নির্ব্বাচিত আয়ু পেয়ে দেখে
জমীনে শিল্পের ঘোর … রজতধারা সে কি তিয়াসা!
ভাটির কালনী নদী
সুরের আগুনে ঢেলে দেয় মোহমায়া
চাঁদের আলোয় কক্ষপথে পৌঁছেছেন
হাছন-করিম-হেমাঙ্গ বিশ্বাস-দূরবীন শাহ!
উত্তর-পূর্ব্বাঞ্চলে একান্ত একাকী
ছিল যা’র নির্জন চৌহদ্দি
ঘুরঘুর করে তা’দের সময়
চিনিয়েছে আলী আমজাদ সাহেবের ঘড়ী
সুরমার স্বচ্ছ জলে জলকেলি
তিমির বিলাসে দেখি
নদীতে ভাসছে আজ
রাজা গৌড়গোবিন্দের কূটনীতি!
রিকশার দুল দুল দুলুনিতে
গভর্ণর মাইকেল কীন ব্রীজে উঠি;
লৌহ পাটাতন কাঁপে: আর ফিসফিস কে যে বলে
কক্ষণো ভুল না তুমি— সুফী শাহ্ জালালের কেরামতি!
চা-বাগানে নতুন কুঁড়ির হাসি
দেশভাগে ছিল দীপ্তিময়
শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তখানি
লালাখাল থেকে তাকালেই মেঘালয়
সুখপ্রদ যাতায়াতে
আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকেই খুঁজি!
সমর্পিত স্কেচ
বেদনার রঙ দিয়ে আমাদের তাড়া করে
বিষাদময় এক উন্মত্ত রাত্রি,
প্রেমিকের মোহ ভুলে
ইনটু দ্য পাওয়ার অব স্যাক্রেড ফেইথ
অন্তরে প্রভুর মুখ আঁকি;
চতুর্দ্দিক তাকানোর পরে
শ্বাস নিই, দোদুল্যমানতা-দ্বন্দ্বে পথ হাঁটি …
সহস্র বাধার ধাঁধাঁ ঠেলে ঠেলে ভাবি
কাঠের মিনার থেকে স্বয়ং প্রভু যিশু
এসে উঁকি দিয়ে গেলে কার বা কী ক্ষতি?
আমাদের উদ্বেগের মর্ম্মমূল জানে
অন্তর্যামি
এ’ আঁধারে বড় মুখর আমরা
আমাদের অভিভাবকত্ব নিয়ে
ফেঁসে যায়
আকাশে হেলান দেয়া নৈঃশব্দরা!
যংশন ষ্টেশনে হুইসেল
ইন্টার্সিটী ট্রেন ছুঁয়ে আসে বিশাল ধোঁয়ার মেঘ
দেখি অন্ধকারে নড়ে
সেই ইঞ্জিনের দীর্ঘ কাল লেজ!
মৃতপ্রায় মানুষের মত জগৎটাকে
শেষ ঘৃণা ছুঁড়ে টা-টা বাই-বাই
জানাব আমরা; আমাদের
অনুভুতি, অভিজ্ঞান, চিন্তা
মিলমিশে যেন
রহস্যময় মহিমান্বিত ধোঁয়া;
স্ফীত স্নায়ুকোষ জুড়ে কেবলি ঘুমমগ্ন বিবিধ এষণা
আনুগত্য কেনাবেচা
শীতল আবেগ হিম হয়ে খুন করে
মাটীর অতল গহ্বর-ও টেনে নিতে চায় কাছে
ভাসি পলায়নপর মানুষের যৌথস্বরে
নেতার নেতৃত্বে …
অতঃপর ডিজিটাল সন্ধ্যা নামল তোমার বুকে
ঝপ্ করে, নীল দহরমে খুলে ভোদকার ছিপি
উপদল-স্তবগানে আলোড়িত ঝড়
আশঙ্কার মেঘ তাড়ায় গানের পাখী!
আর মন জানে, আমাদের ছিল
সবুজ-অবুঝ কোলাহলপ্রিয় দুই সাথী
দলপ্রিয় রণকৌশলের নীচে চাপা পড়ে
বিগত বছরে যে’ভাবে হয়েছে বলি!
ছায়াগুলা যেন সরীসৃপ বুকে ভর দিয়ে
অন্ধকারে গ্রেটলীগ বলে তোমার খাটের প্রান্ত খুঁজে
তুমিও পড়েছ ধরা অবশেষে, যে’ভাবে যে’ভাবে
একটা নেকড়ে তাড়া করে যায় তার ভীত শিকারকে
পৃথিবীকে প্লেগ্রাউণ্ড ভেবে
বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে
নেতার তকমা দৃঢ় হয়
নিহত লাশের সাথে মধ্যবর্ত্তী দূরত্ব বাড়াতে হবে
ভারী শিল্প— মেহনত— উৎপাদন
কোনটাই নেতার ভাবনা নয়
তাজা রক্তের তামাটে শিল্প কিন্তু মেকী নয়
কর্ম্মীর আবেগ ছুঁয়ে রক্তের সমুদ্রে আল্পনা কথা কয়!
ভাসি পলায়নপর মানুষের যৌথস্বরে
নেতার নেতৃত্বে… নেই মনুষ্য-ভাবনা
নেই ভালবাসা— প্রণোদনা
চেতনার রাজ্যে জেগে আছে এক হাঁট
দেখি, নিরবধি যে হাঁটে চলছে …
ভ্রাম্যমাণ আনুগত্য কেনাবেচা!
ঘুরতি পথের যাত্রা
উদ্বিগ্ন-নাকাল বালকের মত শীত এল তাড়াতাড়ি। রোমাঞ্চ শেষের রাত; জোর বাতাসের সঙ্গে খেলেছে পলকা বৃষ্টি, বরফের কুচি। উদ্ভিদবিদ্যার প্রস্ফুটনে হলুদ সরিষা ফুলের মাঝারে এসে মিশে গেল অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস। ছিল মিশরের গোলকধাঁধার মত এমন সে’ রাত; সেই রাতে তথ্যপূর্ণ ভদ্রমহিলার সাথে জমেছিল আন্তরিক হ্নদিবাস। ভেঙ্গেচুরে ধ্বংসস্তুপে; শান্তি ও স্থিতির অনুভূতি দিল স্পর্শে। ফুলেল যাত্রার পথ বিভাজন: অভ্যর্থনা জানাল উচ্ছ্বাসে ভেসে ক্রিসেনথিমাম ও গ্লাডিওলাস। পথ পারাপারে জেব্রাক্রসিং, মনে হৈল জীবনে কক্ষণো থামাটা কাজের চেয়েও জরুরী; হয় ত বা তা’তে রক্ষা পাবে অধিকতর জীবনীশক্তি। কেউ একজন সম্মুখে মুহূর্ত্ত আগলে দাঁড়ায় পা দু’টা আলম্ব করে, হাত কোমরের পেছনে সেঁধিয়ে; যেন ঝকঝকে আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। দৃষ্টি যত দূরে প্রসারিত হয় জলবায়ু বিপর্য্যয়ে কাঁদে অন্তরাত্মা; ফিসফিস পাশে কে যেন জানায়: চোখের স্নায়ুর অসুখের অন্য নাম গ্লুকোমা! ধ্বনি ও স্মৃতিতে মর্ম্মপীড়া; অসন্তোষে ভরা একটা জীবন— পালিয়ে যাবার জন্য খুঁজে শর্টকাট রাস্তা! বসুধা তোমার; সংকীর্ণ ঘুরতি পথের সবি এখন মস্তিস্কে মানচিত্রেরেই মত আঁকা।
বর্ষার বনজ ঘ্রাণ
লালিমার লাল। বাসায় টিণের চাল। টুপ্ টাপ্ শব্দ। ঝিরঝির সুরাচ্ছন্ন। বৃষ্টির পাণিতে ভিজে যাচ্ছি বাতাসের দাবড়ানি খেয়ে। তুমুল বর্ষণ! যানেলাটা আলগোছে খোলে। বাঁধ-ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস-সুরভি ধীরে বয় আবারো ফণা তুলে! পরিমিত ঝরঝর …। অনুমান : রাত্রি দ্বিপ্রহর। কথাশূন্যতায় চলে শরীরের এবাদত। চমকানো বিজলির মত চকিতে জেগেই পুনরায় গেল ডুবে। সৌন্দর্য্য-মুখোসে মৃত প্রতিবেশীর টব থেকে কড়া-মিষ্টি ঢেউ আসে। ওহে স্পাইডার লিলি! এ বর্ষায় মঙ্গলসুধায় ডেকে আন; মারিয়াম্মান দেবী! পৃথিবীর শেষ রাস্তা চেনার আগেই; তার কাছে চাই উঁচু-উঁচু পাহাড়-পর্ব্বত ডিঙ্গানোর মেঘ-নির্ঘোষ নির্দ্দেশাবলী। পৃথিবী বদলে নিতে পরিযায়ী এক মেঘের ভেতর দিয়ে উড়ে যায় আকাশযানের ঈথার ম্যাজিক। দু’চোখের আন্দোলনে দৃশ্যটাকে গ্রাস করে— কে কবে হৈয়েছে বল এমনতর হ্নদয়হীন? শূন্যতায় ঠাসা সাম্রাজ্যে নাড়ালে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি, আকাশো আর থাকে না ধ্রুপদী নীল।
মাটীর বনজ ঘ্রাণ জানে; ক্ষণ গণণার পরে সুন্দরী স্ত্রী শরীরে নিবিষ্ঠ হওয়ার জন্য কয়েদীও আজ হৈতে চায় সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ফড়িং!
মোস্তফা মহসীন রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, বর্ষার বনজ ঘ্রাণ ও অন্যান্য কবিতা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।