লেখক পরিচিতি:
মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার বাবার নাম আলীম উদ্দীন, মায়ের নাম মতিজান নেছা। ১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক সংবাদে পথ থেকে পথে শীর্ষক ধারাবাহিক রিপোর্টের জন্য তিনি খ্যাতি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাঁহাকে ১৯৯৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ছড়া-কবিতা-গল্প রচনা এবং সাময়িক পত্রিকার প্রচ্ছদ অঙ্কনে সুনাম অর্জ্জন করেন। তাঁহার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: সংবাদের নেপথ্য, কানসোনার মুখ, নিজস্ব রিপোর্ট, পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ, ছোট ছোট গল্প, লক্ষ্মীটারী, চিলমারীর এক যুগ ও তাঁহার রচিত একমাত্র নাটক “রাজা কাহিনী” ইত্যাদি। মোনাজাত উদ্দীন সংবাদ সংগ্রহ করিতে গিয়ে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েণ্টের ছবি তুলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে জলে পড়ে যান এবং জলে ডুবে মারা যান।
হিউম্যান স্টোরী করুণকাহিনীর খোঁজে একজন চারণসাংবাদিকের অগ্রযাত্রা। গ্রামীণ পরিবেশে মানুষের জীবন চরিত অঙ্কিত হৈয়েছে মোনাজাত উদ্দিনের “ছোট ছোট গল্প” গ্রন্থে। প্রতিটা গল্পের সাথে গড়ে ওঠেছে মানবজীবনের ট্রাজেডী। উত্তর জনপদে সাংবাদিকতার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন উত্তরের নানান প্রান্ত, দেখেছেন মানুষের করুণ জীবনের পরিণতি। গল্পের ছলে বলে গেছেন, কিছু সত্য ঘটনা। তিনি ভূমিকা লিখিতে গিয়ে বলেছেন, “এখানে যে-কটি গল্প পরিবেশিত হল, তা বানানো নয়, চরিত্রগুলো নয় কাল্পনিক। সাংবাদিকতার পেশা-জীবনে যেসব ঘটনার মুখোমুখি হৈয়েছি, দেখেছি যাদের কাছে থেকে, তাদেরই কিছু কথা-কাহিনী। তবে, ছোট ছোট গল্প বলতে পাঠক আবার এগুলোকে ছোটগল্প মনে না করেন। তেমন সাহিত্যরচনার সাধ্য আমার নেই।”
গ্রন্থের বিষয়ে এবার আসি। আঁধারে আচ্ছন্ন প্রচ্ছদ। উল্টোমুখী একজন মানুষের অন্ধকারের দিকে যাত্রা। দুর্বিষহ যাপনের নীরব দর্শক। প্রচ্ছদের কাল আবরণ জীবনের সেই মাত্রার কথা বলে, যেখানে মানুষিক সত্যের নেপথ্যে মিথ্যাচার।
গ্রন্থের নাম ‘ছোট ছোট গল্প’ না হৈয়ে হিউম্যান স্টোরী বা উত্তরের মর্ম্মান্তিক কাহিনী হৈতে পারি ত। কেন না লেখক যে দৃশ্যের বিবরণ দিয়েছেন, কান্নার সুর তুলে এনেছেন তাহাতে মর্ম্মান্তিক হিউম্যান স্টোরী নাম হতে পারত। প্রতিটি গল্পে তিনি বারবার বলতে চেয়েছেন মর্ম্মান্তিক হিউম্যান স্টোরী। মোনাজাত উদ্দিনের বিরবণ পড়ে হৃদয়ের কাছার ভেঙ্গে যায়। শুনতে পাই, তিস্তার ভাঙ্গনের সুর, ভূখা মানুষের হাহাকার। শোনা গেল, উত্তর জনপদের নিরন্ন মানুষের হাহাকারের প্রতিধ্বনি, বৌ পালানো, স্বামী নিরুদ্দেশের মত ঘটনার সম্মুখীন, ভূয়া সাংবাদিকতা, মারামারি, বট-পাকুড় গাছের বিয়ে, তিস্তা এক্সপ্রেসে যাত্রা, বারাঙ্গানার দুর্ব্বিষহ জীবন, অভাবের তাড়না এবং প্রেমের ফাঁদে বিয়ে। সাংবাদিকতার জীবনে লেখক যে ট্রাজেডীর সম্মুখীন হৈয়েছেন তাহা উঠে এসেছে এই গ্রন্থের পাঠে। উত্তরের গ্রামীণ বেদনার চিত্র প্রদর্শণ করেছেন। সহজ-সরল কথায় পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, গ্রামীণ মানুষের যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি।
তিনি গ্রাম সাংবাদিক ছিলেন। সহরেও কাজ করেছেন। গ্রন্থের জার্ণিটা সাংবাদিক জীবনের ভ্রমণের মর্ম্মস্পর্শী ঘটনা। তিনি যক্ষণ যাহা দেখেছেন, তাহাই কথার গাঁথুনিতে তুলে ধরেছেন। গ্রাম থেকে সহর, সহর থেকে গ্রামে সেসময়কার মানুষের সাথে কথা বলিতে এই গ্রন্থটা প্রয়োজন।
নুরুদ্দিনের আকাশ
__________________
এখানে যে-কটা গল্প তুলে ধরা হৈয়েছে তাহা অবশ্য আমার চিন্তাধারাকে নূতন দিগন্তের পথ খুঁজতে সাহায্য করিবে। মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আড়ালে যে নেপথ্য ঘাপটি মেরে বসে আছে তাহার কয়েকটা দর্শন পাওয়া যাবে। নিজ আত্মার বিরুদ্ধে মানুষ তক্ষণি দাঁড়ায় যক্ষণ তাহার মৌলিক দিকগুলি অপূর্ণ থেকে যায়। মোনাজাত উদ্দিন গল্পের শুরুতেই একজন ভূখা মানুষের হাহাকারের প্রতিধ্বনি তুলেছেন। তিস্তার ভাঙ্গনে যক্ষণ অতিষ্ঠ হৈয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষজন। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ী নিঃস্বতা যক্ষণ ঝেঁকে বসেছে। ক্ষুধা তক্ষণ আরো ক্ষিপ্র হৈয়ে উঠেছে। দুঃখী নুরুদ্দিন সর্ব্বস্বান্ত উন্মাদের মত এদিক-সেদিক ঘুরিতেছে। সাধারণত, যক্ষণ কেউ নিঃস্বতায় ভোগে তক্ষণ সমস্ত পৃথিবী তাহার কাছে দুঃখী মনে হয়। একজন মানুষের পেটের জ্বালা যে কতটুকু বিপৎ(দ) ডেকে আনে তা আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি। মানুষ অল্প কিছু খাবারের জন্য কত কিছুই না করিতে পারে। রফিক আজাদের ভাষায় “ভাত দে হারামজাদা তা না হলে মানচিত্র খাব।” নিঃস্ব হওয়ার পরে চিন্তায় চিন্তায় নুরুদ্দিনের মস্তিষ্ক বিভ্রাট হয়। পাগল হৈয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন রংপুর উপকেন্দ্রের পাঁচশ বিশ ফুট টাওয়ারের মাথায় উঠে পড়েন। শেষে পুলিশ এবং দমকল কর্ম্মী বহু চেষ্টার পরে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নামতে বলেন ঠিক তক্ষণ নুরুদ্দিনের ভূখা গলায় চা, বিড়ি, বিরিয়াণি খাওয়ায় কথায় নেমে আসেন। কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত কি হৈয়েছে, থানায় নেওয়া হৈয়েছে নুরুদ্দিনকে কিন্তু তাহার ক্ষুধা নিবারণের জন্য সরকার কিছুই করেনি। ক্ষুধা নিয়ে একজন পুলিশের হেয়ালিপনা উঠে এসেছে। নন্দিতরা এভাবেই নিন্দিতের আড়ালে ঠাঁই গুঁজে রয়েছেন। লেখক অবশ্য স্পষ্ট ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন, “যে সমাজ তার ব্যাধির চিকিৎসা করাতে পারে না, যে-দেশের সরকার ন্যূনতম মৌলিক চাহিদার একটাও পূরণ করতে ব্যর্থ, যে-দেশে পভার্টি মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে কাবু করে ফেলছে, সে দেশের মানুষ একজন অখ্যাত-অজ্ঞাত নুরুদ্দিনের আকাশছোঁয়া দুঃসাহসের খবর পড়ে শিহরিত কিংবা পুলকিত তো হতেই পারে।”
বড়ালব্রীজের সেই মেয়েটি
______________
সিরাজগঞ্জ ঘাট এবং ঈশ্বরদী যংশন পর্য্যন্ত রেলপথের মাঝামাঝি পয়েণ্টে বড়ালব্রীজ ষ্টেশন, ঘটনাটি সেখানকার। একাত্তরের ভয়াবহ দুর্ব্বিষহ যাহার জীবন তছনছ করে দিয়েছিল। মেয়েটা বারাঙ্গানা। মস্তিষ্ক বিভ্রাট। বড়ালব্রীজের ওপর উলঙ্গ মেয়েটিকে দেখে লোলুপ দৃষ্টিতে কিছু লোক তাহার চরিত্রের প্রদর্শণ করিতেছে। এ’দেশে মেয়ের স্তনের দিকে পুরুষের দৃষ্টি যক্ষণ তীক্ষ্ণ; কাম বাসনায় প্রবৃত্তিগুলি প্রখর হৈয়ে ওঠে! তক্ষণ পুরুষ চরিত্রকে কলঙ্কিত আখ্যা দিয়ে কিছু লোক মুর্চ্ছা যান। বড়ালব্রীজের ঘটনায় লেখক সঙ্গী সেকেন মাঝি ছাড়া অন্য কাউকে এর প্রতিবাদ করিতে দেখা যায়নি। সবাই তাকিয়ে ছিল লোলুপ বাসনায়। সেকেন প্রতিবাদ করে সেই উলঙ্গীনীর দিকে তাকিয়ে মানুষগুলোর দিকে থুথু দিয়ে পাগল বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এখানে লেখক সেই দোষকে নিজেও বরণ করে নিয়েছিলেন। সেকেন যে থুথু ছুড়লেন প্রসঙ্গে লেখক বলেন, “চৈত্রের ঝাপটা বাতাসে সেই থুথুর একটুখানি আমার মুখেও এসে পড়ল।” নিজের প্রতি যে আক্ষেপ তা অবশ্য লেখকের নীরবতার প্রতি স্ব-আত্মার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মানুষের মনুষ্যত্ব যক্ষণ লোপ পায় তক্ষণ পশুচরিত্রের কাছেও হার মানিতে হয়। এই গল্প লেখকের একার নিজের প্রতি প্রতিবাদ নয়, পুরা মানবসমাজের প্রতি জলন্ত উদাহরণ।
সেকেন মাঝির নিমন্ত্রণ
____________
আগেই বলেছি, সাংবাদিকতার জন্য লেখক ছুটে বেরিয়েছেন উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্ত। সংগ্রহ করেছেন হিউম্যান স্টোরী। মানুষের জীবনকে ধারণ করেছেন নিষ্ঠার আবর্ত্তনে। সেকেন ওরফে সেকেন্দার মাঝির কথা পূর্ব্বে আলোচিত হৈয়েছে, তাহা যৌবনের প্রবল প্রতাপের ধী-শক্তির কথা। এক্ষণ বৃদ্ধ সেকেন মাঝির কথা শোনা যাক, বিনয়ী এই লোকটা মানুষের সেবা করে গেছেন আজীবন কিন্তু নিজে যক্ষণ নিঃস্ব হৈলেন তক্ষণ কেউ এগিয়ে আসল না। লেখক এখানে যে চরিত্র এঁকেছেন তাহাতে আমাদের সমাজের ছাপ স্পষ্টৈ পাওয়া যাচ্ছে। লোকে বলে, “উপকারী গাছের ছাল থাকে না।” সেকেন মাঝির কাহিনীও এর ব্যাতিক্রম নয়। তাঁহার নৌকায় পুলিশ চাঁদা দাবী করে। একজন খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এই দাবী নীরহ মানুষের ওপর অত্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। পরে, শোনা যায় সেকেন মাঝির একখানা নৌকা চুরি হৈয়েছে, অভাবের তাড়নায় বাকিগুলা বিক্রি করে দিয়েছে কিন্তু তাহাতে কি অভাব ঘুচেছে? নাকি বৃদ্ধ মাঝির সংসারের কোন উন্নতি ঘটেছে? না। লেখকের সাথে যক্ষণ পরবর্ত্তীতে দেখা হয়, তক্ষণ খেতে না পাওয়া মাঝি মোনাজাত উদ্দিনকে নিমন্ত্রণ করে কিন্তু তাহার বাড়ীর হাহাকার দেখে গ্রাম বাঙ্গালার মানুষের অভাবের যে চিত্ররেখা ফুটে ওঠেছে থালা, বাটী, গ্লাস দেখলেই বোঝা যায়। সেই অভাবকে লালন করেই মাঝির সংসার কোনমতে যায়। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হৈল, সেকেন মাঝির নিমন্ত্রণে এসেছে তাহার কিশোর বেলার হাইলা আব্দুস সামাদ, যে কিনা এক্ষণ নৌকার মালিক। কাজী নজরুলের ভাষায় “চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়/ আজকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়” জীবনের এই ট্রাজেডী নিয়েই বেঁচে ছিলেন সেকেন। খাবার খেতে ডেকেছেন, সামাদকে কিন্তু কেন এই আয়োজন অভাবী সংসারে তাহার ইয়ত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অভাব যে মানুষের সর্ব্বস্ব লুটে নেয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে, সেকেন।
নিরুদ্দেশ ১/৪
________
নিরুদ্দেশ নামে যে চারটা গল্প পরিবেশিত হৈয়েছে তাহার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে সমসাময়িক ঘটনার কিছু স্থির চিত্র। প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ইতিহাসকে কলমের খোঁচায় খোঁচায় গড়ে তুলতে লেখকের হয় ত বা মনে হৈতে পারে, উত্তরাঞ্চলের জনজীবনের এই লজ্জাকর অবস্থার মুখে থুথু দেই। এইটা অবশ্য উত্তরের ঘটনা নয়, সবখানেই এই ঘটনার অদ্যপ্রান্ত খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘটনাটা ভিন্নরকম বৌ পালানোর ছবি খবরের কাগজে ছাপানোর জন্য লেখকের কাছে আবেদন। বুঝতে পারিতেছেন মানুষ কতটা আবেক প্রবণ হৈলে এই কাজ করার জন্য পত্রিকার লোকদের খুঁজে বেড়ায়। সাংবাদিকের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা। ভাবতেই যেন নিজেকে লজ্জায় মাথানত করিতে হয়। বৌ পালানোর ঘটনা এদেশে নূতন নয়। কিন্তু এখানে যেই ঘটনা ঘটেছে তা অবশ্য ভিন্ন কিছু জানান দেয়। বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেছে তাহার বৌ পরবর্ত্তীতে সে তাহার বন্ধুর বৌকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। বলা চলে, বৌ অদল-বদল। কেউ বৌ অদল-বদলের কথা আগে শুনেছেন কি না আমার জানা নেই।
দ্বিতীয় ঘটনাটা, একৈ রকমের হৈলেও একটুখানি থমকে যাওয়ার মত। যেখানে যুবক-যুবতীর কাহিনী নিয়ে অবাধ মেলামেশা। ঠিক সেখানে, পঁয়তাল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের এক বৃদ্ধের ভাতিজীকে নিয়ে পালানোর ঘটনা। মেয়েটা বিবাহিত। তাহার স্বামীও লেখকের কাছে বৌ পালানোর ঘটনা পত্রিকাতে ছাপানোর জন্য ব্যাকুল হৈয়ে পড়েন। লেখক অবশ্য এ’সব কাহিনী ছাপাতে রাজি নন। বৌ নিরুদ্দেশ কাহিনী মেয়েদের যে প্রবৃত্তিগুলোর যোগান দেয় তাহার অবশ্য সুরাহা পাওয়া যায়নি।
তৃতীয় ঘটনায়, উঠে আসে নিরুদ্দেশ স্বামী হারানোর কথা। যেখানে পূর্ব্ববর্ত্তী গল্পে নারী পালানোর দৃশ্য পরিবেশিত হৈয়েছে, সেখানে স্বামী পালানোও কিন্তু নূতন কিছু নয়। সংসারে হালকা একটু ঝামেলার কারণে অন্য মেয়ের ফাঁদে পড়ে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ফেলে চলে যাওয়ার নেপথ্য উঠে এসেছে।
চতুর্থ ঘটনা সম্পর্কে লেখক প্রথমেই জানান দিয়েছেন, অভাবে পড়ে মানুষের নিরুদ্দেশ হওয়ার এক করুণ পরিণতি। এখানে নিরুদ্দেশের বিষয়টা ভিন্ন মাত্রায় স্থান পেয়েছে। ইতিপূর্ব্বে, আমরা জেনেছি নারী-পুরুষের প্রেমের পাঠের জন্য নিরুদ্দেশ কাহিনী। কিন্তু এক্ষণ নিরুদ্দেশের পথে অভাব এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। লেখক বলেছেন, “উত্তর জনপদের অতি-অভাবী কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এলাকায় আশ্বিন-কার্তিকের মংগার সময় নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার মতো শত শত ঘটনা ঘটে থাকে।” এ ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। যদিও এখানে লেখক খুব জোড় দিয়ে বলেছেন বহু লোকের কথা, আমি অবশ্য কোথাও এরূপ লক্ষ্য করিনি। হয় ত কয়েকজন পালিয়ে গেছে। তবে আশ্বিন-কার্ত্তিক মাসের অভাবের কথা এই জনপদে সর্ব্বজন সিদ্ধ। উত্তরের মানুষজন আবাদ তুলনামূলক ভাবে করলেও আশ্বিন-কার্ত্তিকের অভাব যে দ্বারে কড়া নেড়ে থাকে সে কথা নূতন করে বলে মনের দুঃখকে জাগিয়ে তুলতে চাই না। এ গল্পে মেয়ে পালানোর ঘটনা ঘটেনি, খাদ্যের অভাবে স্ত্রী, পুত্র ছেড়ে দূরে ঠাঁই নিয়ে একা থাকার কথা উঠে এসেছে। যে সমাজ ব্যবস্থার সম্মুখীন হৈয়েছি, সেখানে এই দুই মাস কাজের অভাব, টাকা-পয়সার অভাব। পেটের জ্বালায় নিজের অস্তিত্বের বিসর্জন দেয় কেউ কেউ। নিজের আত্মার বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়।
রাজশাহীতে নিরুদ্দেশ যাত্রার অবস্থা একটু ভিন্ন। সীমান্তবর্ত্তী লোকজন অর্থাভাবে ভারতে কাজের জন্য আশ্রয় নেয়। কিন্তু স্ত্রীরা একথা জেনেও কাউকে বলতে পারে না, কারণ অবৈধভাবে ভারতে ঢোকা অপরাধ। যদি কেউ বলে দেয় তো ঝামেলা হৈতে পারে। তাই নিরুদ্দেশ কাহিনী মেয়েদের অন্তরে চাপা পড়ে থাকে। স্বামীরা অবশ্য কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসে। প্রত্যেক এলাকার নিরুদ্দেশ যাত্রা ভিন্ন হৈতে পারে কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলেমিশে দুঃখ ভাগ করে নেওয়া এবং নিরুদ্দেশ যাত্রাকে বিরত রাখা আমাদের চেতনার সুদৃঢ় অঙ্গীকার হোক।
নৌকাডুবি
______
মিথ্যা সাংবাদিকতায় অবহেলিত কুড়িগ্রামের এই জনপদকে অসহায় এবং দ্বিতীয় পেটের জ্বালা নিবারণের জন্য নৌকাডুবির মতো মিথ্যা ঘটনায় জর্জ্জরিত করেন। মোনাজাত উদ্দিনের সৎ সাহসিকতায় এখানে সেই ভ্রান্তি দূরীকরণের প্রচেষ্টা চালানো হৈয়েছে। হ্যাঁ, আমরা কুড়িগ্রামকে অবহেলিত ভেবে সবসময় স্বার্থ সিদ্ধির আশায় আমাদের চিত্তের ভাল দিকগুলির সর্ব্বনাশ করেছি। গল্পে সাংবাদিকের প্রতি বার্ত্তা বিভাগ থেকে ফোন আসে খবর পাঠানোর জন্য নয়তো চাকরী থাকিবে না। তাই মিথ্যা খবর প্রচার করিতে শুরু করেন। এর হাত থেকে নতুনের পথে নিয়ে চলেন মোনাজাত উদ্দিন এবং তাঁহার সৎ সাহস।
সাংবাদিকের ভাগাভাগি
_____________
যক্ষণ নিজেদের মধ্যে কলহ থাকে তক্ষণ সেই কলহের দায়ে কিছু মানুষের অপকারিতা যে ক্রমে বৃদ্ধি পায় তাহা আমরা সকলেই জানি। প্রত্যেক সাংবাদিক তাহার নিজ স্বার্থের জন্য নিজেকে ব্যাতিক্রম করে রাখে। এখানে উঠে এসেছে, দুইটা প্রেস ক্লাবের কথা একটা ‘প্রেসক্লাব রংপুর’ অপরটি ‘রংপুর প্রেসক্লাব’ দুইটা প্রেসক্লাবের দুই দল সাংবাদিকের ভাগাভাগি। তক্ষণ লেখক, মিলেমিশে থাকার আর্তি পেশ করেন।
মারামারি ১/২
_______
প্রথম ঘটনা, ভুয়া সাংবাদিকতার প্রতিচ্ছবি। এইটা কুড়িগ্রামের উলিপুর নিয়ে মিথ্যাচার। দেখানো হৈয়েছে, ঝড়ের তাণ্ডবে হাজার দুয়েক ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত, পাঁচজন নিহত ইত্যাদি। এইটা ছিল নিজের স্বার্থ আর প্রভাবের হাসিল করা। রিলিফ বরাদ্দ করে আনার পায়তারা। কিন্তু মোনাজাত উদ্দিন সেখানে গিয়ে নিজে সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। কুড়িগ্রাম জেলাকে ছোট করে তুলেছিল কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। এমন কি নেতাদের মিথ্যা প্রলভনে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। লেখক স্পষ্টভাবে বলিতে চেয়েছেন, “এরশাদ আমলে কুড়িগ্রাম এলাকার দুর্ভিক্ষ এবং অনাহারে মৃত্যুর সরজমিন প্রতিবেদন ‘সংবাদে’ ছাপা হবার পর প্রকাশ্যে জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘মোনাজাতউদ্দিন আমাকে ড্যামেজ করে দিয়েছে, আমি তাকে দেখে নিব।’” অনাহারে মারা যাওয়ার মিথ্যা ঘটনা ব্যাক্ত করার মত ঘটনা ঘটে। মনুষ্যত্ব বোধকে বিসর্জন দিয়ে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কত মানুষ যে বিপাকে পড়ে তাহা মোনাজাত উদ্দিনের সৎ সাহসের কথা না পড়লে বুঝবেন না।
দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা। নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা নয়। ৯২-য়ে রংপুরে দুর্ভিক্ষ, ডায়রিয়া, ঝড়, শীতে পত্রিকাতে ছাপানো হচ্ছে মারা যাওয়ার ঘটনা এইটা অবশ্য সাংবাদিকদের মিথ্যা প্রবঞ্চনার কথা। ০৫ জন মারা গেলে ১০ জন ছাপানোর ঘটনা। যাহারা সৎ সাংবাদিক ছিল তাহারা একটু বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। চারদিকে যক্ষণ মিথ্যার হৈ চৈ, তক্ষণ ভাল মানুষেরা পড়ে যায় বিপতে(দে)। আবুল কালাম সৎ সাংবাদিক; তিনি চেয়েছেন হলুদ সাংবাদিকদের রুখে দিতে কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত ওপর মহলের চাপে চাকরী চলে যায়। মোনাজাত উদ্দিন এখানে যে সৎ সাহসীকতার সংজ্ঞা এঁকেছেন তা সাংবাদিক জগতের উজ্জ্বল দিক নির্দ্দেশনা। একটা লোক ঘরে বসে না থেকে নিজের বিপৎ(দ)কে তোয়াক্কা না করে ছুটে চলেন অবিরাম। নিজে সাংবাদিকতা করেছেন, পটু লোকের ফাঁদ পাতা দেখেছেন। কিন্তু মনের গভীরে থাকা সৎ সাহসের বলিদান দেননি।
বাহক ১/২
______
একটা সংবাদ ছাপানোর জন্য একজন সাংবাদিকের ছুটে চলার গল্প উঠে এসেছে এখানে। ‘৮৭ এর বন্যায় যক্ষণ সব তলিয়ে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে, সেই সময় ঢাকায় সংবাদ পৌঁছানো দূরহ ব্যাপার ছিল। চারদিকে শুধু হাহাকার। ডায়রিয়ায় মারা পড়ছে অনেকে। কি ভয়ংকর চিত্র ভাবতেই হৃদয়টা কেঁপে ওঠে। রাস্তাঘাট থেকে গাড়ী চলাচল আরো সঙ্কট প্রবণ হৈয়ে ওঠে! অন্যকে দিয়ে ঢাকায় সংবাদ পাঠানোও অনেকটা কঠিন ব্যাপার।
জয় নারায়ণের গাছ
___________
গাছের বিয়ে। কথাটা শুনতে বেমানান লাগছে তাই না? দিনাজপুর অঞ্চলে এইটা কোন নূতন বিষয় না। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছি, বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ের কথা। এই বিয়ে অবশ্য বৃষ্টির জন্য নয়। সন্তান লাভের আশায়। জয়নারায়ণ নামে সেই ব্যক্তি বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দিয়ে মানত করেন। কিন্তু তাহাতে কোন লাভ হয় না। এই প্রথাকে বিশ্বাস করে আসিতেছে কিছু মানুষজন। আসলে এইগুলোতে যে কোন ফলাফল পাওয়া যায় না তাহা লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন। সন্তানহীন দম্পতির তীব্র হাহাকারের ছবি ভেসে ওঠেছে। সন্তান লাভের জন্য কত কিছুই না করিতে পারে লোকে, এই গল্প না পড়িলে জানিতাম না। একদিকে এখানে যেমন গাছের বিয়ে প্রথাকে ভুল প্রমাণ করা হৈয়েছে ঠিক তেমনি তীব্র বেদনার চিত্র উঠে এসেছে।
‘তিস্তা’ এক্সপ্রেস যাত্রী
____________
ট্রেন যাত্রার কাহিনী নিয়ে এই গল্প রচিত। কিছু মানুষ বিনা টিকিটে ট্রেণ যাত্রা করে থাকেন। কিন্তু এখানে উঠে এসেছে একজন সৎ গার্ডের নিষ্ঠার প্রতিচ্ছবি। ফাষ্টক্লাসের কোন আসনে ঠাঁই পাননি সুলভ শ্রেণীর যাত্রী। কিন্তু টিকেট ছাড়া যারা ট্রেণে উঠেছিল, তাহাদের টিকেট চেক করবার সাহস পায়নি কেউ। এই গল্পকে লেখক ধাঁধায় ফেলে শেষ করেছেন। বিস্তারিত বলিতে গিয়েও এক পর্যায়ে এসে হঠাৎ করেই একটা ধাঁধায় ফেলে চলে গেলেন। পরে, কোথায় কি হৈল কেউ জানতে পারল না।
আয়েশার ছবি
________
মর্ম্মস্পর্শী হিউম্যান স্টোরী এ ঘটনার বিষয়। সন্তান চুরি হওয়া এক মায়ের তীব্র হাহাকার। লেখক এখানে যে ফটো তোলার কাহিনীটা শুরু করেছেন তা অবশ্য আমার ভাল লাগেনি। কারণ একজন মা যিনি সন্তান হারানোর শোকে কাতর হৈয়ে কাঁদছেন সেখানে সাংবাদিক ফটো তোলা নিয়ে ব্যস্ত; কাল সকালে এইটা হিট খবর হৈবে, এই আশায়। এইটা মেনে নিতে কষ্ট হয়, কি করে একজন লোক অপরের দুঃখ দেখেও নিজ স্বার্থের আনন্দে আড়ালে হেসে চলিতেছেন। সন্তানের খোঁজে মায়ের আর্ত্তনাদে হৃদয়টা মোচড় দিয়ে ওঠে! একজন মায়ের চেয়ে কেউ বেশী ভালবাসে না সন্তানকে। মোনাজাত উদ্দিন অবশ্য নিজের আহাম্মকির ব্যাপার বুঝতে পেরে নিজেকে ধিক্কার দেন।
জরিফ স্যারের টাকা
___________
অর্থকষ্ট মানুষের স্বভাব নষ্ট করে দেয়। অর্থের অভাব জিনিসটা কতটা দুঃখকর তাহার সম্মুখীন না হৈলে কেউ বুঝবে না। মোনাজাত উদ্দিনের শিক্ষক ছিলেন জরিফ স্যার। পেনশনের টাকা আটকে যায়, অফিসে সমাধান করিতে গেলে ঘুষ চায়। শেষ পর্য্যন্ত তিনি সাংবাদিকের দ্বারস্থ হন, সংবাদ ছাপানোর জন্য। স্যারের আকুতির কথা শুনে কোন কথা মুখ থেকে বেরুচ্ছিল না। চলে যাওয়ার সময় দশটাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। স্যারের মুখের ওপর কথা বলার সাহস তাহার ছিল না। সেই দশ টাকা হাতে নিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করেন মোনাজাত উদ্দিন। কারণ তিনি সাংবাদিক জীবনে কাহারো কাছ থেকে ঘুষ নেননি। স্যারের টাকা ফিরিয়ে দিতে চেয়েও পারেনি। অগত্যা ফাইলে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন।
বিউটির ফলো-আপ
___________
ঢাকার জিনারদী গ্রামের ন্যায্য মজুরি-বঞ্চনা, নারী-নির্য্যাতন, অসহায়ত্বের আর্ত্তনাদ, বেকারত্বের হতাশায় জর্জ্জরিত গ্রামের চারদিক। জন্মহার ক্রমাগত বাড়ছে। রোগবালাই দমনের কোন উদ্যোগ নেই । এরকম একটা গ্রাম ভাবতেই অবাক লাগে। সেখানে দশ বছরে তিনশতের বেশী প্রতিবেদনের ফলো-আপ করেন।
রাজনীতি নিয়েও তথ্য বিভ্রান্তি করেন কিছু লোক। গ্রামের লোকজন যাহা শোনেন তাহাই বলেন। অভাব যক্ষণ পাছ ছাড়ছে না, জন্মহার তক্ষণ বেড়েই চলছে। এই অবস্থা বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পঙ্গু বিউটিকে নিয়ে এই গল্প। অভাবী সংসারে চিকিৎসা বাবদ টাকা জোগাতে পারে না পিতা। যদিও ধার-দেনা করে চিকিৎসা করেছেন কিন্তু ধার শোধ করিবার মত ক্ষমতা নেই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পরে কি হৈয়েছিল তা আর জানা যায়নি।
ফাঁদ
___
যুবক-যুবতীর প্রেমের কাহিনী আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু প্রেম যক্ষণ ফাঁদ হৈয়ে ধরা দেয় তক্ষণ জীবনের অন্ধত্বকে বরণ করে নেয়া হয়। এই প্রেম ফাঁদের সাথে যুক্ত থাকে পরিবারের সদস্যরা। বিকলাঙ্গ মেয়েকে কিংবা ভাল পাত্রের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়েকে ঘরের মধ্যে পাঠিয়ে ফাঁদ পেতে ধরে-কষে বিয়ে দেওয়ার হয়। তারপর চলে জীবনের অনটন। এই গল্পে ষড়যন্ত্র করে শিক্ষকের ঘরে ছাত্রীকে ঢুকিয়ে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে বিয়ে দেওয়ার কাহিনী বর্ণিত হৈয়েছে। বিয়ে না করলে হুমকি দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। অগত্যা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এই গল্পগুলার মাধ্যমে আমাদের মনোজগতে চিত্রায়ণ হৈয়েছে সমাজের ভয়াবহ রোগ। এই রোগ থেকে বেরোনোর কায়দা ক’জন করিতে পেরেছি। মানুষের চরিত্রকে কলঙ্কিত অধ্যায়ে পূর্ণ করেছে। মোনাজাত উদ্দিনের ‘ছোট ছোট গল্প’ পড়িতে গিয়ে আপনার মনে হৈতে পারে, এই ঘটনাগুলা হয় ত আমার সাথেই কোনদিন ঘটেছে কিংবা ঘটার সম্ভাবনা। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্য্যন্ত শুধু বিরহের পাতা, জীবন সংগ্রামের কথা। এই সত্য ঘটনাগুলার পিছনে রয়েছে পশুদের হিংস্রতা। এখানে লেখক সেই মানুষদের মুখোস খুলে দিয়েছেন। সাহসের সাথে উন্মোচন করেছেন প্রতিটা অন্যায়ের দৃশ্য। গ্রামের যেই দৃশ্য পরিবেশিত হৈয়েছে তাহা মানুষের হৃদয়ের কাছার ভাঙার আওয়াজ। চারিদিকে শুধু হাহাকার, ক্রন্দন, স্বার্থান্বেষী মহলের চত্ত্বরে ডুবে যাচ্ছে ভবিষ্যতে প্রত্যাশা। বেঁচে থেকেও হাহুতাশে যাপন করতে হয়। কোথাও সুখের লেশ মাত্র নেই। আমাদের চলার পথকে আরো সুদৃঢ় করিতে হৈবে। মোনাজাত উদ্দিন প্রত্যেক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ঝঙ্কার তুলেছেন। আর আমাদের স্বপ্নকে বিফল হওয়ার আগে সেই আসুরিক প্রবৃত্তিগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেনি। সাংবাদিক জীবনের সেরা ঘটনাগুলো তিনি এখানে তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটা পড়ে আমার ভাবনায় যে মহত্ত্বের জাগ্রত হৈয়েছে তাহা মোনাজাত উদ্দিনের সংগ্রামের সুমিষ্ট ফল। উত্তর জনপদের করুণ হিউম্যান স্টোরী।
গ্রন্থ: ছোট ছোট গল্প ।। লেখক: মোনাজাত উদ্দিন ।। প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স ।। প্রথম প্রকাশ: এপ্রিল ১৯৯৩ ।। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ ।। দাম: একশত টাকা মাত্র ।। ISBN 984 410 024 0
অন্তর চন্দ্র রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত হিজিবিজি, মোনাজাত উদ্দিন এবং উত্তর জনপদের মর্ম্মান্তিক ঘটনা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।