গতকাল (টিএসসি) শাহবাগে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক ছাত্রের উদ্যোগে আয়োজিত কাওয়ালী কনসার্টে হামলায় যতদূর বুঝতে পারছি এটা ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা ছিল ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গণসংযোগ এড়াতে।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্য্যন্ত তৎকালীন পূর্ব্ব বাংলায় (বর্ত্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। আমাদেরকে বুঝতে হবে ভাষার স্বাধীনতা রক্ষার্থে হয়েছিল আন্দোলন, সংগ্রাম। আন্দোলনের মূল হল তৎকালীন পূর্ব্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লোকের ভাষা ছিল ‘বাংলা’। সংখ্যা গরিষ্ঠতায় বাংলাভাষাই স্থান পাওয়ার কথা। কিন্তু পাক-পশ্চিমারা এটা মানেনি এবং তারা বাঙালীর প্রধান মৌলিক অধিকার থেকে বাঙালীদের বঞ্চিত করতে চেয়েছে। যার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভাষা সৈনিক বরকতেরা।
আমার পয়েন্ট হল : সঙ্গীতের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, তার মধ্যে কাওয়ালী একটা ধরণ। বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই কাওয়ালী তথা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শুনে অভ্যস্ত এবং আমি নিজেও কাওয়ালী শুনি খুব ছোটবেলা থেকে। সকালবেলায় এখনও বহু সঙ্গীতপ্রেমী শ্রোতারা কাওয়ালী শোনেন। ভাললাগা থেকেই শোনেন৷ উচ্চাঙ্গসঙ্গীতেকে আমি মনে করি সঙ্গীতের সবচেয়ে কঠিন ষ্টেপ। সারগমের ব্যাবহার সবচেয়ে বেশী কাওয়ালীতে হয়। আমাদের জাতীয় কবী নজরুলের লেখা বেশকিছু গানও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অন্তর্ভুক্ত। কাওয়ালী শুনলে কখনও আমাদের বাঙালী সংস্কৃতিতে প্রভাব পড়ে না যেটা আমি বিবেচনা করি।
বাংলাদেশকে সংস্কৃতির চর্চ্চার ভাণ্ডার বলত একসময়, এখনও বলে। তবে সম্প্রতি প্রায়ই ভাষা নিয়ে আমাদের খুব দ্বিমতের দৃশ্য দেখা যায়, যার কারন আমাদের সমাজে বরাবরই একটা পক্ষ কাজ করে। যেটা গতকালের ঘটনার পর আজকে সারাদিন এবং বিগত সময়েও আমরা এসব দেখেছি সেটা হল কিছুসংখ্যক লোক মনে করে বাংলাভাষা হিন্দুদের ভাষা। তারা ভুলে যায় বাংলা তাদের মাতৃভাষা। জন্মের সময় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই আমাদের মায়েদের মুখে এই ভাষা শুনতে পাই। মূলকথা হল বাংলা ভাষা ত্যাগের বিনিময়ে অর্জ্জিত, আবার উর্দুও কেবলমাত্র পাকিস্তানের ভাষা নয়। পাকিস্তান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সেটা অবশ্যই আমাদের মানতে হবে আর অবশ্যই বাংলাদেশের ষ্টেডিয়ামে বাঙালী হয়ে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানোটা অবশ্যই বাংলাদেশকে অপমান করেছে। লাল সবুজের পতাকাকে অপমান করেছে, যেখানে খেলার মাঠে পাকিস্তানের বিপরীতে ছিল বাংলাদেশ। আর যারা ছাত্রলীগ করে বঙ্গবন্ধুর নীতি নৈতিকতাকে মুখে একরকম বলে কাজের বেলায় উল্টা পথে চলে ভাষাপ্রীতি দেখাতে আসেন তারা সত্যিকারের মুজিবপ্রেমী নন।
আমাদের একটা সমস্যা হল, একটা ঘটনা ঘটলে তাকে নানা রকমভাবে প্রচার করা হয় যার ফলপ্রসূ আমরা মূল আলোচ্য বিষয়কে ঢেকে দিই। গতকালের টিএসসির হামলা যদি ভাষাগত তথা সংস্কৃতি বৈষম্যের জন্য হয়ে থাকে তবে সেটা ভুল। আর যদি ওমিক্রনের শঙ্কা থেকে হয়ে থাকে তাও ভুল, কারণ ওমিক্রন পরিস্থিতিতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন রয়েছে। সরকারের প্রশাসন দেখবে সে বিষয় সর্ব্বসাধারণের হস্তক্ষেপ সেখানে কাম্য নয়। যারা হামলা চালিয়েছে তারা নিঃসন্দেহে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিৎ।
রাব্বীর নাহিয়ান অপু রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত সমসাময়িক, ভাষা, সংস্কৃতির বৈষম্যে সমাজের অবক্ষয় — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।