আরণ্যক টিটো ১৯৭৭ সালের ৬ জুন জন্মগ্রহন করেন। কবিতা লেখেন দীর্ঘদিন ধরে। এখন পর্য্যন্ত তাঁর কোন বই প্রকাশ পায়নি। সাহিত্যের ছোটকাগজ, সাহিত্য ম্যাগাজিন, অনলাইন, সহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তাঁর কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ‘ফুলেরা পোষাক পরে না’ নামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।
বইনিউজ: আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার কী কী বই প্রকাশ পাবে?
আরণ্যক টিটো: আগামী মেলায় আমার কোনও বই আসবে না।
বইনিউজ: লেখালেখিতে আপনি কোন মাধ্যমে বেশি স্বস্তিবোধ করেন?
আরণ্যক টিটো: গুছিয়ে অধিক কথার ফুলঝুড়ি ফোটাতে পারি না বলে কবিতা বা অকবিতা এ একটা বিষয়েই আমার স্বস্তিবোধের কিংবা দুর্ব্বলতার জায়গা!
বইনিউজ: আপনার প্রকাশিত বই কয়টি? ও কী কী?
আরণ্যক টিটো: আপাতত কোনও বই প্রকাশ হয়নি আমার।
বইনিউজ: বই প্রকাশ করেননি কেনো?
আরণ্যক টিটো: দীর্ঘদিন ধরে লিখছি, যে পরিমাণ কবিতা জমা আছে তা দিয়ে চার থেকে পাঁচটি বই হবে, করা হয়নি। এই না হওয়ার পেছনে প্রকাশনা সংকট ও আমার নির্লিপ্ততাও কারণ! কবিতা লিখে ‘কৈয়ের তেলে কৈ ভাজা’ প্রকাশকের কাছে ধর্ণা দেওয়া, নিজের টাকা খরচ করে বই করা আমার স্বভাববিরুদ্ব। প্রতিমেলায় তো অনেক বই বের হয়, আর আমার একটি বই না হলে বা দেরীতে হলে কোন সমস্যা নেই! এও ভেবেছি, আমার বাক্যের শক্তি যদি থেকে থাকে তা অবশ্যই প্রকাশ হবে একসময়, যেমন ফুল ফুটলে মৌমাছিদের খবর দেওয়া লাগে না, মৌমাছিরা ঠিকই টের পায়, বাতাসের কানে কানে! এই ভাবনায় নির্লিপ্ততা আরো ঝেঁকে বসে আমার মন ও মননকাননে! গ্রন্থভুক্তির বাইরে তো পাঠক আমাকে পাঠ করতে পারছে, কি ছোটকাগজের ছাপায় কি ভার্চুয়াল অক্ষরে। তবে একটু আভাস দিই, আমার প্রথম প্রকাশিতব্য বইয়ের নাম, ‘ফুলেরা পোশাক পরে না! …’ শীগ্রই পাঠকের কাছে আসতে পারে, আমার অর্থনৈতিক মূলধন ছাড়া!
বইনিউজ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আরণ্যক টিটো: বইমেলা হল পড়ুয়াদের জন্য উৎসব, উৎসকে বহন করা মিলনের ক্ষেত্র! যার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক। যত মত তত পথবাদের পাঠকেরা এখানে আসে। একে অপরকে জানে। মিথস্ক্রিয়া হয় বহুরৈখিক সংস্কৃতির চর্চায়। আর একে ঘিরে গড়ে ওঠে পূজিঁ ও কানার হাটবাজার! নবীন পাঠকের কাছে বইয়ের বার্ত্তা দেওয়ার জন্য এই উৎসবের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক। প্রাকৃত ও প্রকৃত পাঠক বইকেনা ও পড়ার জন্য মেলার দিকে তাকিয়ে থাকে না। তবু উভয়েই আসে, মেলায়, মিলনে; আর এই মিলনের মেলা বিকশিত হোক, আমাদের মন ও মননের প্রতিবন্ধীতা দূরীকরণে, জয়তু!
বইনিউজ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা আরো আকর্ষনীয় করতে আপনি কি পরামর্শ দিতে চান?
আরণ্যক টিটো: একাডেমিকে পরামর্শ দিতে হলে একাডেমির আয়নামহলে প্রবেশ করতে হয়, আয়নামহলের বাহিরের কথা একাডেমি কখনো গ্রহন করে না। আর আমিই বা কে?! তবে মেলায় যেহেতু বহুরকমের পাগল আসে, সেখানকার একজন পাগলের প্রলাপ, আশা হল, বইয়ের পাতায় পাতায় যে সুর ও প্রতিসুরের আগুন আছে, তাকে সবখানে ছড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন (এই মেলা) যেন গোছানো ও পরিপাটি হয়, প্রত্যাশা করি, একাডেমস’রা সেদিকে নজর দেবেন!
বইনিউজ: পাঠক আপনার লেখা কেন পছন্দ করে?
আরণ্যক টিটো: আমার যেহেতু কোন বই নেই, সুতরাং বইকেন্দ্রিক আমার পাঠকপ্রিয়তা ধারণার বাহিরে। তবে এটুকু জানি, আমার পাঠক আছে! এই জানাটা আগে ছিলো না, সাহিত্যের ছোটকাগজে লিখতাম, আমার অধিকাংশ লেখা ছাপা হতো ‘চারবাক’ ও ‘বিন্দু’ নামক ছোটকাগজে, (এখন আমি অন্যান্য ছোট কাগজেও লিখছি) বৎসরে একটি কি দুইটি সংখ্যা প্রকাশিত হতো, সেখানেই প্রকাশ হতো গুচ্ছকবিতা। যেহেতু পত্রিকায় অনেকের লেখা ছাপা হতো, সেখানে বোঝা যেত না সেই ছোটকাগজ প্রিয়তার পিছনে একজনের লেখা কতোটা অনস্বীকার্য! এখন ইন্টারনেট/ভার্চুয়াল জগতের আয়নায় যারা আমাকে দেখছেন, পাঠ করছেন, তাদের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় বুঝতে পারি, আমার বিনির্মিত জগতের নবী-ন কথার তরবারির ঝংকার কতোটুকু ধারবহ! “পছন্দ” এর মাপকাঠিতে ক্রিয়ার মূল্যায়নে আমার একক আস্থা নেই, “অপছন্দ” এর মূল্যায়নও অধিক গুরুত্ববহ। এখানেই দেখা যায়, প্রচলিত কাঠামোর মন ও মননে কতোটুকু রাঙাখুনময় পরম ব্রহ্মময় জয়তু শব্দাস্র!
বইনিউজ: আপনার লেখার মূল সুর কী?
আরণ্যক টিটো: মূলসুর? কথা হলো আমি(!) লিখি, আমি বলতে চাই। তাই যাপিত জীবনের আনন্দবেদনাকে রাগে-প্রতিরাগে, বাদে-প্রতিবাদে, শিল্পে-প্রতিশিল্পে ভাষা দিই, ভাষার মর্ম্মরে বেজে ওঠে সময় ও মেজাজ। আর এই মেজাজের মর্ম্মে লুকায়িত রাখি কাউন্টার ডিসকোর্স! এরমাঝে থাকে, ব্যক্ত ও ব্যক্তি আমির নৈরাশ্য চিন্তার বিপরীতে যৌথআমির সমাজচিন্তার মর্ম্মে উত্তর বয়ান, বিনির্মাণের সুর! বাকীটা পাঠক বলবেন, বর্জ্জন কিংবা গ্রহনের ভাষায়!
বইনিউজ: বইনিউজ এর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
আরণ্যক টিটো: বইনিউজকেও ধন্যবাদ।
বইনিউজ রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, আরণ্যক টিটোর সাক্ষাৎকার — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।