প্রবন্ধ বাঙ্গালা বনাম সংস্কৃত : কষ্টকল্পিত বৈপরীত্য

১—
সম্প্রতিকালে যাঁহারা বাঙ্গালার বানান ও ব্যাকরণ সংস্কারের চেষ্টায় তৎপর, এক হিসাবে তাঁহারা আমাদের উপকার করিয়াছেন। তাঁহারা আমাদের চিন্তাভাবনার শিকড় ধরে নাড়া দিয়াছেন। তাঁহারা শুধু বানান ব্যাকরণের থেমে যাননি, তাঁহারা বাঙ্গালাভাষার চালচলন পর্য্যন্ত শুধরে দিতে চাহিতেছেন। তাঁহারা বানান ও ব্যাকরণকে সংস্কৃতের (অর্থাৎ সংস্কৃত বানান ও ব্যাকরণের) অনুকরণ থেকে মুক্ত করিতে চান তাই নয়, শব্দব্যাবহারেও বাঙ্গালাকে স্বাবলম্বী করিয়া তোলা তাঁহাদের লক্ষ্য। তাহাদের নির্দ্দেশ এই যে, বাঙ্গালাতে তৎসম (অর্থাৎ সংস্কৃত) শব্দ যতদূর সম্ভব কম ব্যাবহার করিতে হৈবে এবং বাঙ্গালা ভাষাকে সংস্কৃতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করিতে হৈবে (১)। এতদিন চলিতেছিল নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা, বিশেষতঃ পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যপুস্তক নিয়ে।

এইবার আসিয়াছে চমকে দেওয়ার মত প্রস্তাব: ব্যাকরণ থেকে উত্তম পুরুষ, মধ্যম পুরুষ, প্রথম পুরুষ– এই শব্দ কয়টা বাতিল করিয়া দেওয়া হোক; তাহার বদলে ব্যবহার হোক অন্য তিনটা নাম— আমি পক্ষ, তুমি পক্ষ ও সে পক্ষ। শিক্ষিত সমাজের ব্যাপক অংশের টনক নড়িল। অনেকেরেই মনে হৈল, সংস্কৃত থেকে পাওয়া বিবিধ উত্তরাধিকারকে বাজিয়ে নিতে হৈবে, দেখিতে হৈবে সেই উত্তরাধিকারের কতটা বাদ দেওয়ার আর কতটা রাখিয়া দেওয়ার মত। এতদিন কী চলছিল? সংস্কৃত থেকে পাওয়া উপাদানকে কিছুটা ভক্তিতে আর কিছুটা অবহেলায় এক পাশে রাখিয়া দেওয়া হৈত। ব্যাবহারিক জীবনটা কাটিয়া যাইবে পশ্চিমী সভ্যতা থেকে পাওয়া নানান উপকরণ দিয়া, এইটাই ছিল মনের গভীরের বিশ্বাস। এইবার বোঝা গেল এমন আর চলিবে না।

ভাবনার কারণটা একটু তলিয়ে দেখা যাক। ব্যাকরণ থেকে ‘পুরুষ’ শব্দটা বাদ দিয়ে দেওয়ার সত্যি কি কোন দরকার ছিল? ‘কর্ত্তৃকারক’ শব্দটাকে যেমন সরানোর চেষ্টা হয়নি, তেমনি অন্তত পারিভাষিক শব্দ হিসাবে ব্যাকরণে ‘পুরুষ’ শব্দটাকে রাখিয়া দেওয়া যাইত। বিশেষ মুশকিল এইখানে যে, পুরুষ শব্দটিকে এইভাবে উৎখাত করিলে আমাদের ভাষার বহু শব্দকে আদি অনুষঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, বা অন্য কথায় তাহাদের তাৎপর্য্য ভোঁতা করিয়া দেওয়া হয়। কারণ, সাধারণভাবে পুরুষ শব্দটির অর্থ জীবনবিজ্ঞানের male-এর সমতুল্য নয়, তাহার থেকে অনেক বেশী।

এই পুরুষ শব্দটিকে পাওয়া যাইতেছে পুরুষকার-এ, যেই পুরুষকার নারী-ঔ দেখান দৈব-এর বিরুদ্ধে সচেষ্ট হৈলে। ‘পুরুষ’-এর ধারণাটা ব্যাপ্ত রহিয়াছে ভারতীয় দর্শনের ‘পুরুষ-প্রকৃতি’ তত্ত্বে পর্য্যন্ত। এই তত্ত্বের সঙ্গে মিল রাখিয়া অতীতে রাজ্যের প্রজাসাধারণের উল্লেখ হৈত ‘প্রকৃতি’ বা ‘প্রজাপুঞ্জ’ বলিয়া, আর তাহাদের ব্যাবহৃত ভাষাকে বলা হৈত ‘প্রাকৃত’। এর-ই জের টেনে এইক্ষণেও রাষ্ট্রপ্রধানকে বলা হয় রাষ্ট্রপতি এবং সভার প্রধান ব্যক্তিকে, সভাপতি। আবার কোন ব্যক্তির সচেতন চেষ্টা বা পুরুষকার ছাড়াই যদি কিছু সৃষ্টি হয় (যথা কোন অনুপ্রাণিত ব্যাক্তি বা সমষ্টির উচ্চারিত মন্ত্র বা শ্লোক), তবে তাহা হয় অপৌরুষেয়। অজ্ঞতাহেতু অবশ্য ‘বেদ অপৌরুষেয়’ কথাটার অর্থ করা হয়েছে বেদ মনুষ্যরচিত নয়। সুখের কথা, বেদ অপৌরুষেয় বলায় বেদকে নারীরচিত বলা হৈয়াছে, এমন কথা কাহারো মনে হয়নি।

‘পুরুষ’ প্রসঙ্গে যেই সব কথা বলা হৈল, তাহা কোন মহান আবিষ্কারের ফলে জানা গেছে, এমন নয়। এইসব তথ্য কম বেশী অনেক লোকেরেই জানা। তবু যাঁহারা এই রকমের ব্যাকরণ তথা ভাষা সংস্কারের কথা ভাবিতেছেন, তাঁহাদের এই সব কথা মনে পড়ে না কেন? বা মনে পড়িলেও তাঁহারা এইসব কথাকে গুরুত্ব দেন না কেন? গুরুত্ব দিলে এত অবলীলায় তাঁহারা এই রকমের নানা প্রস্তাব আনিতে পারিতেন না। এর জন্য দায়ী তাঁহাদের অজ্ঞতা, এমন মনে করিবার কোন কারণ নাই। বরং এর মূলে পাব সংস্কৃত সম্বন্ধে অবজ্ঞা আর বিরূপতা। এই অবজ্ঞা আর বিরূপতার অনেক কারণ, তাহাদের মধ্যে প্রধান হৈল তিনটা।

প্রথম হৈল, মানুষে মানুষে বৈষম্য ও নিম্নবর্গের বঞ্চনার ভিত্তিতে তৈয়ারী মনুবাদী সমাজব্যাবস্থাকে সৃষ্টি ও বজায় রাখিবার স্বার্থে অগণিত শতাব্দী ধরিয়া সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার। জাতিভেদ, ব্রাহ্মণ তথা অন্য উচ্চবর্ণের মানুষের বিশেষ অধিকার, নিম্নবর্ণের মানুষের বঞ্চনা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রভৃতি প্রতিটা অনাচারের সমর্থনে শাস্ত্রীয় বচন টেনে এনে সংস্কৃত ভাষাকে বরাবর জুজু হিসাবে ব্যবহার করা হৈয়াছে। যেন এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সংস্কৃতকে এমন সন্ধিসমাসকণ্টকিত করা হৈয়াছিল যে, সংস্কৃত ভাষা প্রীতি ও শ্রদ্ধার উদ্রেককারী না হৈয়া, হৈয়া যায় ভীতি ও ঘৃণার বস্তু।

দ্বিতীয় কারণ হৈল এই যে, বহুকাল ধরে সংস্কৃত চর্চ্চার ভার যাঁদের ওপর ন্যস্ত ছিল, তাঁহাদের অধিকাংশের জীবনচর্য্যা ছিল সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন। সংস্কৃত থেকে উজ্জীবন খোঁজার চেয়ে তাঁহাদের বেশী ভাবনা ছিল সমাজের মনুবাদী বা বর্ণাশ্রমী কাঠামো বজায় রাখা। বিংশ শতাব্দীতেও তাঁহাদের শিক্ষণধারা এমন ছিল যে, তাহাতে এটা মনে হ্ওয়াই স্বাভাবিক যে, সংস্কৃত ভাষায় আধুনিক সংস্কৃতি তথা আধুনিক বিজ্ঞানের কোন সংবেদন বা স্পন্দন আনা সম্ভব নয়।

 

টীকা—
(১) পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের প্রস্তাবিত মাধ্যমিক স্তরের Curriculum ও Syllabus-এর ভাষ্য অনুযায়ী “Bengali has to sever all connections with Sanskrit, and tatsama words (that is, in unchanged form) have to be abjured as far as possible”। দ্রষ্টব্য— কলিকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ষ্টেট্সম্যান কাগজের 13 May 2004 সংস্করণের Playing havoc with Bengali শিরনামের প্রবন্ধ। লেখকের নাম শ্রী অশোক সেন।

 

২—
সংস্কৃতের প্রতি বিরূপতার তৃতীয় কারণ আর একটু সূক্ষ্ম। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয় প্রধানত পশ্চিমী সভ্যতার ধ্যানধারণায় পালিত। বৃটিশ চালিত সরকারের উদ্যোগে বা আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজে যেই ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান চর্চ্চা শুরু হৈয়াছিল, তাঁহার উপজীব্য ছিল বহু শতাব্দী ধরিয়া ইয়োরোপে বিকশিত নানান বিদ্যা। আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত ভারতীয়ের মনে এই বিশ্বাস দানা বাঁধে যে, প্রতীচ্যের উপলব্ধিগুলি সর্ব্বত্র প্রযোজ্য।

স্বভাবত গ্রীক ভাষা ও রোমের ভাষা ল্যাটিনের সঙ্গে সংস্কৃতের অবস্থানের তুলনাও তাঁহাদের মনে আসিয়া যায়। তাঁহারা দেখেন যে, যদিও ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দির রেনেসাঁসে গ্রীক ও ল্যাটিন সাহিত্যের প্রেরণার এক মুখ্য ভূমিকা ছিল, অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবের কালে ল্যাটিনকে (আর গ্রীককে) মনে হৈয়াছিল বোঝা বা শৃঙ্খল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পশ্চিম ইয়োরোপ ল্যাটিনের আঁচল থেকে বাহির হৈয়া আসে আর ঘোষণা করে নিজের সাবালকত্ব।

নব্যশিক্ষিত ভারতীয়েরেও মনে হৈল যে, আধুনিক ভারতবর্ষের কর্ত্তব্য হৈল দ্রুত সংস্কৃতের আওতা থেকে বাহির হৈয়া নিজের পায়ে দাঁড়ানো। ভারতে সংস্কৃত এইক্ষণেও কতটা বাঁচিয়া রহিয়াছে তাহা তাঁহারা খেয়াল করিলেন না। উপরন্তু তাঁহারা ভুলিয়া গেলেন একটা গুরুতর কথা। অবিচ্ছিন্নভাবে পাঁচ-ছয় শতাব্দী ধরিয়া ইয়োরোপ তাহার বিজ্ঞান, দর্শন ও বিবিধ বিদ্যার পরিভাষা তৈয়ার করিয়া নিয়াছিল গ্রীক ও ল্যাটিনের পাঠশালায়। তাহারপর, আজ থেকে মোটামুটি একশ বছর আগে, ল্যাটিন ও গ্রীকের কব্জা থেকে নিজেকে মুক্ত করিয়াছিল। ল্যাটিনকে আর বিদ্যালয়ের বাধ্যতামূলক চর্চ্চার জিনিস করিয়া রাখেনি।

অপরপক্ষে আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানে আমাদের প্রবেশ ঘটিয়াছে আজ থেকে মোটে দেড়শ, পৌনে দুইশ বছর আগে। এরিমধ্যে সংস্কৃত থেকে উপাদান দিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পরিভাষা তৈয়ার হৈয়া গেছে, এটা কি খুব সম্ভব? এইছাড়া এইটাও ভাবা উচিৎ যে, আপেক্ষিক সব সম্পর্কের দিক থেকে সংস্কৃত ত ল্যাটিন-গ্রীকের সমতুল্য নাও হৈতে পারে।

উত্তরভারতীয়, এমনকি দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগুলার মধ্যে সংস্কৃত এইক্ষণেও যেই মাত্রায় জীবিত রহিয়াছে তাহার তুলনা অন্তত ইয়োরোপের ভূখণ্ডে নাই। কম করিয়া দেড়-দুই হাজার বছর আগে লেখা ভগবদ্গীতা গ্রন্থে ডজনে-ডজনে-শত-শত-ও হৈতে পারে— শব্দ পাওয়া যাবে, যেইগুলি আজকের সাধারণ ভারতীয় বোঝেন এবং ব্যবহার করেন। ইয়োরোপের কোন ভাষায় এত পুরান গ্রন্থ পাওয়া যাইবে না, যাহার এত অধিক-সংখ্যক শব্দ এক বানান, প্রায় এক উচ্চারণ ও প্রায় এক অর্থে সাধারণের জীবনে বাঁচিয়া রহিয়াছে। এমন কি ‘তৃ’, ‘বৃৎ’, পৃ, ক্ষিপ্ ইত্যাদি বহু সংস্কৃত ধাতু থেকে তৈয়ারী অগণিত শব্দ গ্রামের কথ্য ভাষার মধ্যে এমন বাসা করিয়া রহিয়াছে যে, তাহাদের পরিচয় জানিলে পর চমকিয়া যাইতে হয়।

এই তিনটা ছাড়া সংস্কৃত বিরোধিতার আর একটা গুরুতর কারণ রহিয়াছে। ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ ভারতীয়ের মনের গভীরে রহিয়াছে ইয়োরোপীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা। তাঁহাদের অন্তরের বিশ্বাস, ঐ যে ইয়োরোপ তাহার বিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজনীতি নিয়ে মানবজাতিকে পথ দেখাবে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯) দেখিয়ে দিল লিবারাল (=বুর্জ্জোয়া) গণতন্ত্রের দেউলিয়াপনা আর বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্দ্ধে একটু একটু করিয়া সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন চূর্ণ হৈয়া গেল। বিশ্বের রঙ্গমঞ্চে মুখ্য নায়ক হ্ওয়ার দাবী নিয়ে তেইতক্ষণে উঠিয়া আসিল নানান গোষ্ঠী, যাহাদের অধিকাংশকে সাধারণভাবে বলা হৈয়া থাকে মৌলবাদী।

এই মৌলবাদিরা মধ্যযুগে বা আরো প্রাচীন কালে উদ্ভূত ধর্ম্মীয় তথা সামাজিক আদর্শের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখিয়ে নানা দেশের জনমানসকে উদ্বুদ্ধ করিবার চেষ্টা করিলেন। এর সুযোগ নিতে ছাড়িল না বিভিন্ন দেশের শোষণপন্থী গোষ্টিরা। তাহাদের উদ্দেশ্য একটাই— তাহা হৈল, নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করা। মোটের ওপর, গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের আতঙ্ক হৈয়া দাঁড়াইল পৃথিবীজোড়া মৌলবাদ।

আমাদের দেশের প্রগতিবাদিরা চারিদিকে দেখিতে লাগিলেন হিন্দু মৌলবাদের বিভীষিকা। বিভীষিকার আরো কারণ এই যে, হিন্দু মৌলবাদের মোকাবিলায় নামার ক্ষমতা তাঁহারা কোন দিন অর্জ্জন করেননি। অনেক আগেই সংস্কৃতের অবমাননা শুরু হৈয়াছিল। আর প্রায় অর্দ্ধশতক ধরে চলিয়াছে সংস্কৃতকে অপ্রয়োজনীয় বস্তু হিসাবে দূর থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া।

অথচ, ভারতীয় হিন্দুর মানসলোক ধরা রহিয়াছে যেই সব গ্রন্থে— রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ— ইত্যাদির মহারণ্যে প্রবেশ হৈবে কী করিয়া, সংস্কৃত ছাড়া? বেতন বাড়ান, চাকরী পাওয়া, চাকরী রক্ষা, জমী বা ব্যবসায়ে সুযোগ সৃষ্টি বা রক্ষা— এইসব কাজে যতদিন অল্পস্বল্প সাফল্যের মুখ দেখা যেত, ততদিন না হয় জনগণকে কাছে টানা গিয়াছিল। কিন্তু তাহাদের মনের মধ্যে পুরাতনের বাসা ভাঙ্গেনি আর নতুন যুগের কোন জীবন্ত সংস্কৃতির পত্তন-ঔ হয়নি।

সুতরাং ভয় রহিয়া গেল, সংস্কৃতকে অবলম্বন করিয়া হিন্দু মৌলবাদিরা এক কাল্পনিক হিন্দু অতীতের উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর স্বপ্ন আনিয়া দেবে মানুষের মনে, যেমনটা হৈয়াছিল আশির দশকে দূরদর্শনে রামায়ণ ও মহাভারতের সিরিয়াল চিত্ররূপের সময়ে। আর এইভাবে তাহারা মানুষের মন জয় করিয়া নেবে। সুতরাং এই পথ বন্ধ করিবার জন্যে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সংস্কৃতকে যদি আস্তে আস্তে পাঠ্যসূচী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, তবে নির্ব্বিঘ্নে সেই কাজ সম্পন্ন হৈবে। ভারতের অতীত সাহিত্য বা সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোন আগ্রহৈ থাকিবে না ভারতীয়ের মনে, আর যদি বা কোনক্ষণে আগ্রহ আসে, তবে সংস্কৃতে কোন অধিকার না থাকায় সেই উৎসাহ অচিরেই নিভিয়া যাইবে।

এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শ্রী অশোক মিত্রের স্বীকারক্তি পাওয়া যাইবে তাঁহার ‘আপিলা চাপিলা’ গ্রন্থটিতে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে অশোক মিত্র কমিটির সুপারিশ ছিল বাংলাভাষা শিক্ষার স্বার্থেই কোন না কোন আকারে সংস্কৃতকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অবশ্যপাঠ্য করা হোক। কিন্তু নেপথ্যে সেই প্রস্তাব খারিজ হৈয়া যায়। অশোক মিত্রের কথা অনুযায়ী, দেশে ক্রমবর্দ্ধমান হিন্দুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে, সেই খারিজ হ্‌ওয়াটাকে তিনি নিজেও সমর্থন করিয়াছেন (২)।

 

টীকা—
(২) দেশ পত্রিকার ১৯ আষাঢ় ১৪০৯, ৪ জুলাই ২০০২ তারিখে প্রকাশিত ৬৯ বর্ষ ১৬ সংখ্যার ৪৪ পৃষ্ঠায় তথ্যের উল্লেখ আছে।

 

[চলিবে…]

রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত প্রবন্ধ, বাঙ্গালা বনাম সংস্কৃত : কষ্টকল্পিত বৈপরীত্য — তে সম্পাদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *