সমস্ত আশার আলো
বেদনার অশ্রুধারা অক্লান্ত হয়ে ঝরছে যখন
একজোড়া শালিকের চোখে প্রেমের বিলাস তখন।
জীবনের বিষন্ন নীরবতার সময় পাহাড় সমান ব্যথা,
ঠোঁট নেড়ে নেড়ে শালিক দু’টা শোনাল আশার কথা।
যুগ যুগান্তর এ’মন করে ব্যর্থতার ধুলা উড়েছে পথে,
তাই বলে কেউ হঠাৎ করে যায়নি থেমে এতে।
পৃথিবীর সকল অপবিত্রতা রাত্রি ঝেড়েছে শিশিরে,
সূর্য দিয়েছে শিশিরে আলো বেসেছে ভাল দিবসে।
মাথার ওপরে মেঘ জমেছে পায়ে জড়িয়েছে ধুলা,
মেঘ তাড়াতে এসেছে বাতাস উড়িয়ে শিমুলের তুলা।
অদ্ভুত আঁধার যখনি এসেছে এই পৃথিবীতে নেমে,
কোন না কোন উপায় হয়েছে আঁধারে গিয়েছে থেমে।
নিকষ আঁধারে ছেয়েছে দিক আজ আমাবস্যা বলে,
ক’দিন পরেই চাঁদ আসবে পূর্ণ জোছনা জ্বেলে।
দুঃখের ধারা নেমেছে যখন অগত্যা কোন প্রকোপে,
আনন্দ এসেছে পিছে পিছে তা’র শতাব্দীর সন্ধিপথে।
ভেব না ভেব না স্বপ্ন আশা ঢেকে কুয়াশার চাদরে,
ইতিহাস বলে ক্ষয় দিয়ে জয় লক্ষ আশা বন্দরে।
কখনো হঠাৎ আগুন লেগে জ্বলে যায় যদি কেহ—
হিমেল বাতাসের দমকা হাওয়া জুড়িয়ে দিবে দেহ।
রাত্রি গিয়ে প্রভাত হবে দিনের আলোর মত,
শালিক জোড়া নেচে নেচে বলে; কত কথা শত।
নিরাশ হ’য়ো না নিরাশ কর না আশারা থাকুক জেগে,
এক পৃথিবীর ভালোবাসা থাক সবার ললাট ভাগে।
তবুও বৃষ্টি হোক
তবুও এ’ শহরে বৃষ্টি নামুক,
ভিজা কাকগুলি উড়ে যাক এলোপাথাড়ি তারের ও’পারে, সুদূরে কিংবা অদূরে।
জাহাঙ্গীর নগরের গাংচিল উড়ে এসে জুড়ে বসুক ঢাকার মাথার ওপরে।
এ’ শহরে বৃষ্টি নামুক।
ঢাকার সব পশু-পাখী ভিজে যাক,
ভিজে যাক আমার সোহাগী-রুপালী প্রেমিক,
ভিজে যাক উর্ধ্বমুখী নগ্ন শাখা-প্রশাখা,
আরো ভিজুক আন্দোলনরত একদল উদ্যমী যুবক,
ভিজে যাক সব ষোড়সী নারী রুপী দেবীর সর্ব্বাঙ্গ,
ভিজে নাজুক হোক কলেজফেরত সব বালিকা,
বৃষ্টিতে ক্লেদিত হোক বটতলার সবকটা প্রণয়ীর বক্ষ,
তবুও এ’ শহরাঞ্চলে বৃষ্টি হোক।
আনাড়ি হোক সব ক’টা বালক,
কাঁদায় ভরে যাক অলিগলি,
ফুটবলের মাঠে ছ-ইঞ্চি জল জমুক,
পাড়ার ক্লাব গুলোর পর্দা ভিজে যাক,
ভিজে যাক শত শত নারীর আঁচল,
ভিজুক বালিকার রক্তিম ওষ্ঠ। তবুও এ’ শহরে বৃষ্টি হোক।
মন মাতানো বিকালবেলা
জানালার পাশে বসে একটা ডুবে যাওয়া বিকাল দেখছি, উপভোগ করছি বিকালবেলাটাকে, তেলাকুচি পাতার ফাঁকে ফাঁকে বিকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে অনায়াসে। খুব জোরে বৃষ্টি হয়েছে তা’ নয়, গুটি গুটি বৃষ্টি আর অল্পস্বল্প শীতল বাতাসে সবুজ পাতাগুলা দুলছে। ভোগ করছি বৃষ্টিটাকে, গিলে খাচ্ছি বাতাস।
এ’ভাবে আর কখনো এত সুন্দরভাবে উপভোগ-ভোগ করছি, এমনটা স্মরণে নেই। অবচেতন মনে করেছি আজ জাগ্রতচিত্তে, জাগ্রতমনে পুরা বিকালটা উপভোগ করলাম। নির্বিঘ্নে গিলে খাচ্ছে মৌরি ফুলের গন্ধ।
বেশ মিষ্টি বিকাল। এই জনবহুল ঢাকায় এইরকম একটা স্নিগ্ধতাপূর্ণ বিকালবেলা পাওয়া চারটিখানি কথা নয়। প্রেমের কীর্তনে কীর্তনে মনে জাগে শিহরণ।
আহা! মনোমুগ্ধকর বিকাল, আহা! শ্রান্তক্লান্ত বিকাল, আহা! নিদারুণ বিকাল। মলিন ঢাকার বুক ভালবাসা নিও।
রুদ্র সুশান্ত রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, তবুও বৃষ্টি হোক ও অন্যান্য কবিতা — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।