ভাষা
শব্দের ভেতর কোন্ ভাষা খুঁজছ তুমি!
শব্দে শুয়ে আছে তার শবদেহ,
যে বর্ণের ভেতর তোমাকে টানছি সেখানেই তুমি সবচেয়ে বেশি বিবর্ণ।
এরচেয়ে
বৃক্ষের পাতায় পাতায় আছে শোন,
সবুজ ক্লোরোফিলের ভাষা।
সমুদ্রের বুকে জাগে যে ঢেউ,
উত্তাল করে মানুষের মন
এমন একটা ভাষা আমাকে দিতে পার?
কিংবা অসংখ্য নদী একসাথে মিশে যেভাবে সমুদ্রের বুকে তৈরি করে এক বিভক্তিহীন সমাসবদ্ধ পদ।
এরকম একটা বিশ্বায়ণের ভাষা কি তুমি দিতে পার আমাকে?
অথচ
তুমি অযথাই শব্দের তিমিরে ডুবে মরছো।
ওই চাঁদটা দ্যাখো জ্যোৎস্নার আলো ছড়াচ্ছে প্রাসাদে ও জীর্ণ কুটীরে
সমানভাবে।
তুমি এরকম একটি সাম্যবাদী ভাষার কথা বল আমায়।
মেঘ ও বৃষ্টির বায়োডাটা
বৃষ্টি আসে বোদলেয়ারের জেলখানা হয়ে,
বিষণ্ণ, ভাবুক পাখিদের বন্দি করার জন্য।
আহা কী বিষণ্ণ বর্ষা!
কোন সে উপনিবেশিক মেঘদূত
কেড়ে নেয় মায়া সভ্যতার ঘুম।
শূন্য করে যায় হৃদয়।
মনের ভেতর জাগিয়ে তুলে বাউল—
শব্দের পলিমাটি দিয়ে গড়ে বিরহের ভূগোল।
পুরো প্রকৃতি জুড়ে শুধু সবুজ সন্যাস।
অথচ
‘প্রকৃতি শূন্যতা পরিহার করে।’
তাই
বহুদিনের ধূলোপড়া
সবুজ কিতাবের ভিতর উঁকি দেয়
তার প্রাক্তন অধ্যায়।
মেঘের বায়োডাটা ঘেটে দেখা যায়
সবুজ ঘাসের পৃথিবীতে
শিশিরের উপর পর্য্যটক রোদের আগ্রাসন।
যাযাবর মেঘ জানে বসতভিটা থাকার পরও সব মানুষই এক
ঠিকানাবিহীন পাখী।
আকাশের নীলে তাকিয়ে তাকিয়ে
মানুষ জীবনভর বুকের নীলই বাড়ায়।
আহা কী বিষণ্ণ সুন্দর মেঘ!
মৃত্যুর মৌচাক যেন।
কে যেন খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে
চোখের ভেতর আঁকা বহু পুরোনো
প্রত্নবিষাদ।
গ্রন্থপাঠ
মেঘ ও সবুজ পৃথিবীর সামনে দাঁড়িয়ে জানলাম,
এতদিন যে কিতাব পড়েছি,
সবই ভুল বানান ও বাক্যে ভরা।
অথচ
সবুজ অভিধান খুলে দেখি,
এর ভেতর লেখা আছে
জীবনের প্রকৃত অর্থ।
পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে আছে বুনো আঙ্গুলে লেখা সুখ দুঃখের মহাকাব্য।
শুকিয়ে যাওয়া কিছু মাটির অশ্রু
আর ধানপোকার নির্জন রাত ব্রেকেট বন্দী হয়ে আছে।
জলের হরফে রিভিউ করছে মেঘ
এইসব দিনরাতের ভাষা।
তবে,
এ্যান্ডনোট আর ফুটনোটে ভাষা ইচ্ছেমত তর্জ্জমা করছে পূজিবাদী মোড়লরা।
মাহবুবুল ইসলাম রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, মাহবুবুল ইসলামের তিনটি কবিতা