…পরাণপ্রিয়, হ্যাঁ হ্যাঁ পরাণপ্রিয়ই, অন্যরা হয়ত বলত ‘প্রাণপ্রিয়’, কিংবা ‘প্রাণের চেয়েও প্রিয়‘, কিংবা ‘প্রাণের মতো প্রিয়’, কিন্তু সেলিমিঞার কাছে তা ‘পরাণপ্রিয়’ই। এটা কিন্তু সে সচেতনভাবেই করে, সত্যি বলতে কি, আগাগোড়াই তার আনকমনে ভরা। নামেও ধাঁধা। সেলিম মিঞা নয়, সেলিমিঞা। হিরোর নামে নাম, তাতে কি, নাম ধুইয়া কি পানি খাইব সে, যদি ঠাটটাই না থাকে? দরকার পড়লে, একটা কেন, চৌদ্দটা ‘ম’ও বিসর্জন দিতে পারে সে। সূঁচবিদ্ধ রাজার সাথে কাজলরেখার সম্পর্ক— এর গভীরতা বোঝাতে গিয়ে সেলিমিঞা এই যে এখন ‘…পরাণপ্রিয়’র মতো শত শত শব্দের বীজ বুনছে, সেই বীজ থেকে বলতে না বলতেই চারা ফুটছে, রৌদ্রে ও ছায়ায় চিকচিক করছে পাতাবহুল গাছটা, চিকচিক না ছাই, আখিতারার তাতে একটুও মন ভরছে না, ভরবে কি, সে-লি-মি-ঞা, উফ! কি অদ্ভুড়ে নাম, সেলিম— কত সুন্দর না, বিলিভ মি সেলিমিঞা, নামটা আনকমন বটে, কিন্তু ভাল্লাগছে না, একটুও না, সেলিমের কারুকাজ করা গল্পের জমিনে আখিতারা এবার মনোযোগ দিতে চাইলো বটে, কিন্তু ভেতরটা তার একদমই সায় দিচ্ছে না, সে বরং বাসের জানালার ফাঁক গলিয়ে গাবতলির অপসৃয়মাণ মোড়ে জ্যামে আটকে পড়া সারি সারি বাস, বাসের ভেতর গাদাগাদি ভিড়, বেড়িবাঁধের উৎকট গন্ধ, ডিজুস রিংটোন, মিনিংলেস কথাবার্তা, আর পর্বত সিনেমা হল লাগোয়া ঐশ্বরিয়ার স্কুলগোয়িং হাসির বিজ্ঞাপনটা তলে তলে পড়ছে আর উপরে উপরে তাকে গল্প শোনার ভান করতে হচ্ছে, আসলে তা-ও না, সেলিমিঞাকে কিভাবে রাগিয়ে তোলা যায়, তার মহরত চলছে, কাজলরেখা তাপ্পর কি করল?
তাপ্পর মানে, এটা আবার…?
তেজের সংগেই হুংকারটা দিতে যাচ্ছিল সেলিমিঞা, কিন্তু মাঝপথেই খেয়াল হল যার সাথে তেজটা সে দেখাচ্ছে, অর্থাৎ তার পরাণপ্রিয় আখি, না না আখিতারা, জোনাক পোকার মতো জ্বলছে আর হাসছে, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে আর কেমন নদী হয়ে উন্মাতাল সমুদ্দুর হয়ে যাচ্ছে।
তাপ্পর কি করল কাজলরেখা? কি করল তাপ্পর?
এনি ট্রাবল? আর ইউ ইন ট্রাবল? ক্যান আই আস্ক ইউ সামথিং? মে আই আস্ক ইউ সামথিং?
একই সেন্টেন্স একবারের স্থলে দু’দুবার ইউজ করছে সেলিমিঞা, বোঝাই যাচ্ছে, রাগে ক্ষোভে রীতিমতো টং, ফর্সা মুখটাও কেমন লালচে লাগছে, সেলিমিঞা এই যে এখন ভেতরে ভেতরে আউট অফ কন্ট্রোল, আহত বাঘের মতো তর্জনগর্জন করছে, আখিতারা আসলে এটাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চেয়েছিল।
কেন, তাপ্পর মানে তারপর, তারপরে আর কি, তারপরে কাজলরেখা কি করল, বল তো দেখি সোনা।
নেভার টক টু মি, নেভার। নেভার। নেভার ইউজ এনি ননসেন্স ওয়ার্ড।
আখিতারার এখন একটাই সমস্যা, মুখ খুললেই হাসি, কিন্তু সিচুয়েশন যা, হাসছ তো সুনামি হয়ে যাবে। তা তো হতে দেয়া যায় না। ফোঁসফোঁস একটু-আধটু হচ্ছে, হোক, দংশন না করলেই হয়, আখিতারা চোখেমুখে গাম্ভীর্যের পারদটা ছড়িয়ে দিয়ে কিছু একটা বলব বলব করছিল, তার আগেই ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে গেল, ডু ইউ হিয়ার মি, আর ইউ ইন ডিপ ট্রাবল?
ট্রাবল ট্রাবলই, তা ডিপ না লাইট, ডাজ নট ম্যাটার। ট্রাবল কি একটা সেলিমিঞা? হাজারটা। এই তো কিছুক্ষণ আগেও তোমার চোখমুখে আলোর উজ্জ্বলতা ছিল, এখন মেঘ, শুধু কি মেঘ, ননস্টপিং বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সেলিম মিঞা যদি সেলিমিঞা হয়, তারপর তাহলে তাপ্পর? এটাই তো নিয়ম, বরং উল্টোটাই ট্রাবল। মাত্র তো তিনটা অক্ষর, তাতেই দুনিয়াশুদ্ধ মাটি হয়ে গেল? নিজের বেলায় শুধু ‘ষোলআনা’, এটাও কি একধরনের ট্রাবল নয়? আবার দেখো, আলুভর্তার মতো কুঁকড়ে গেছে তোমার আখিতারা। এতই যদি, তাহলে আবার সিনক্রিয়েট করা কেন, আর করেছই যখন, কানে তুলো দিয়ে বসে থাকো না কিছুক্ষণ। না, মোমের মতো মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে দেখে আখিতারার ভেতরটাও যে মাম হয়ে গেছে— উফ না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে, ট্রাবল তো এখানেও না-কি? আমিনবাজার ক্রস করে ফেলেছে বাস, একথা সেকথা ভাবছে বটে, কিন্তু আখিতারা এখনও যুৎসই কোনো উত্তর খুঁজে পায়নি। ওদিকে সেলিমিঞাও কেমন চুপ মেরে আছে। হঠাৎই মোবাইলটা বেজে ওঠে আখিতারার, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একরাশ উদ্বিগ্নতা, ক্যাম্পাসে আসিস না, গোলাগুলি হচ্ছে। আইরিনরে চেনোস না, আরে নৃবিজ্ঞানের মাইয়াটা, তারে লইয়াই তো লংকাকাণ্ড। ডেটিং মারতে গেছিল ছাত্রদলের এক ক্যাডারের সাথে, সামনে পইড়া গেছে পুরানামাল, সে আবার ছাত্রলীগ, বোঝ এইবার, লাইগা গেল ফটাফট। তুই কোথায় রে?
আমরা তো সাভারবাজারের…। তুই কি ক্যাম্পাসে?
না, বাসায়। আবিদ হল থেকে ফোনে জানাল তো।
ওহ, আপনার যে ম্যাডাম আবার আবিদ আছে, তাতো জানতাম না, কবে থেকে? ইরফান প্রজেক্ট কি শেষ?
আজ আর টিউটোরিয়ালটা হল না রে।
খ.
কাইযুম চৌধুরীর পাতার প্রতিকে আঁকা প্রচ্ছদের নিচে ঢাকা শহর প্রায় আটকে আছে, সিটিজেনদের যেখানে প্রতিদিন ‘আজ পানি নেই তো কাল গ্যাস সংকট’ নিয়ে আন্দোলন করার কথা, সেখানে এমন একটা সিলি বিষয় নিয়ে আনন্দর্যালি, র্যালি না কচু, অস্থিরতা, আসলে অস্থিরতাও না, স্থূলতা, স্থূলতাই তো, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ, দিয়েছে তো কি হয়েছে, বিশ্বকাপ তো জেতেনি, আর জিতলেই-বা কি, এরকম পাগলামি করতে হবে, তাও আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এ মায়ের কোলেই তার জন্ম, এখানকার মাটিই কোনো একদিন তার দেহের সারে আরো উর্বর হবে, র্যালির ফাঁদে আটকে পড়া বাসের ভেতর গরমে সিদ্ধ হতে হতে ব্যাপারটা সেলিমিঞার কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগছে। কি একটা জরুরি কাজে তিনদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিল সে, দুইদিন না থাকতেই আকুপাকু, ব্যাপারটা আসলে কিছু না, একটা থিম ঢুকেছে মাথায়, তাই তড়িঘড়ি ফেরা, আর ফিরেই কি-না পড়ল সে মালির ঘাড়ে, কে জানে, বাসায় ফিরতে কতক্ষণ লাগে। আর নপুংসক সাংবাদিকদের দেখো, হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, যেন খেয়ে ফেলবে মেয়েটাকে, আরে বাবা ক্যামেরাটা আগে সামলাও, ভেংগে গেলে তো বাপদাদার জমাজমিতেও কুলাবে না, বংশাল থেকে একটা ট্রাক দুলতে দুলতে আসছিল এদিকটায়, কাউকেই আর চেনার উপায় নেই, যেন রঙের কৌটা, রঙ কোম্পানিগুলোর আবার ইন্ধন নেই তো, কত টন বিক্রি হতে পারে আজ-আনমনে হিসাব করতে করতে সেলিমিঞা আসলে মেয়েটার দিকেই বেশি করে নজর রাখছিল, ক্যামেরা দেখেই মেয়েটা এবার সাপের ফনার মতো নাচতে শুরু করে দিয়েছে। বাপরে বাপ, সাম্বাও দেখি জানে। শিখল কোথা থেকে, আলিয়ঁসে? আখিতারাকে একটা ফোন করতে গিয়ে সে আবারও সামনের সিটের ব্যাককাভারে বহু ব্যবহারে বিবর্ণ নানা আঁকিবুকি পড়তে থাকে। ছন্দই বেশি। কোনোটা বেশ সুন্দর হাতের লেখা। কোনোটা পড়া যাচ্ছে আবার কোনোটা পড়তে কষ্ট হচ্ছে। মোবাইল নম্বরের সাথে কারো ডিটেইলস এ্যাডড্রেস দেয়া। কারো আবার শুধু মোবাইল। বাঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা একটা ছন্দ সেলিমিঞার খুব ভাল লেগে যায়। মা গেছে কাজে, বাবা এখন ঢাকায়, বাড়ি তাই ফাঁকা, কুবা সামছু কুবা…। ব্যাটার প্রতিভা আছে। সুযোগ পেলে অনেক দূর যাবে। সেলিমিঞাদের বাসটাও একটু একটু করে এগোতে শুরু করেছে। কিন্তু সেলিমিঞা বেশিদূর এগোতে পারছে না, বরং বাসের ভেতরে আহ্লাদিত মানুষজনের কথার তোড়ে তার চিন্তার সুতা পটাপট ছিঁড়ে যাচ্ছে। লাইনটা পেলেও হত। না, আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এ মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব না। সম্ভব না হলে ব্যবসাও সম্ভব না, তা তো না, বরং আলু পটলের দোকানেও এখন সিম পাওয়া যায়, মোবাইল কোম্পানিগুলোর এইসব ফাজলামো নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখতে পারলে ভাল হত, কিন্তু ছাপবে কে, বিজ্ঞাপনে যত টাকা ঢালে, পত্রিকাগুলো রিস্ক নেবে কেন? বিরক্ত হয়েই হয়ত, একজন যাত্রি হঠাৎ বলে ওঠল, বাংলাদেশ জিতেছে, মোস্ট ওয়েলকাম, কিন্তু এটা তো স্বীকার করতে হবে যে এটা একটা আপসেট।
কি কন মেঞা, না না এডারে আফনে আফসেট বইলতে পারেন না?
আপসেট! বললেই হল, ওয়ানডে-র সব আপসেটগুলো দেখুন কোনোটিতেই দুর্বলতর দল পরে ব্যাটিং করে জেতেনি, বাংলাদেশ তো সেটাও করল।
আখিতারার লাইনটা এখনও পায়নি সেলিমিঞা, সেই একই গীত। আপনার ডায়ালকৃত… ওহ গড। কিন্তু গড বোধহয় ডোন্ট বদার হিম।
আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার কোথাও একটা সুর কেটে গেছে। আগের সেই ধার নেই।
মানুষজন যা শুরু করেছে, এদের সবাইকে সেলিমিঞার এখন গাভাস্কার গাভাস্কার মনে হচ্ছে। ইমরান খান না হলেই হল, যখন তখন এখানে আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে যাচ্ছে, তার ওপর যদি লন্ডন থেকে জেমিমারা উইড়া এসে জুইড়া বসে, তখন তো পুলিশবাবাদের আবার চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে যাবে। তারচেয়ে গাভাস্কারই ভাল। হঠাৎই লাইনটা পেয়ে গেল সেলিমিঞা। রিং হচ্ছে…। রিসিভও করল আখিতারা, কিন্তু কোনো কথাই বোঝা যাচ্ছে না, যাবে কি করে, পেছনের সিটের লোকটা দেখছি ভদ্রতার মাথামুণ্ডু খেয়ে চেঁচাতে শুরু করেছে।
ইংল্যান্ড ট্যুরে তারা তো জিততেই ভুলে গেছে। ৩৪২ করেও যখন ইংল্যান্ডের সংগে জিততে পারল না, তখনই বোঝা হয়ে গেছে বুড়োদের বোলিংয়ে বিষ নাই। আশরাফুলের সেঞ্চুরিটা তো এক্সিলেন্ট। ১০০ বলে ১০০ রান, ভাবা যায়!
শেষ ওভারে ৭ রান। প্রথম বলেই আফতাব সিক্স মারল। বাপরে বাপ। জিম্বাবুয়ের এনকালা না ফানকালা, তার এক ওভারে তো নিয়েছিল ২৬ রান, মনে আছে?
থাকবে না আবার, চাঁটগাইয়া পুলা না।
ব্যাগ থেকে পুরোনো একটা সংখ্যা বের করে সেলিমিঞা এবার ডুবে থাকতে চাইল।
গ.
দৃশ্যপট-১ এর শুরুটা হতে এমন, যেন চমকে যায় দর্শক।
অথচ, ক্ষিরের মতন গাঢ় নরম মাটিতে ধানের চারা রুয়ে দিতে দিতে আতংকে লাফিয়ে উঠবে আলকাতরার মতো কাল কুচকুচে কৃষক, এ পর্যন্ত লিখেও, সেলিমিঞা আর এগুতে পারছে না। থিমটা যখন মাথায় আসে, তখন তো সহজই মনে হয়েছিল, কিন্তু স্ক্রিপটা করতে বসেই কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। এমনকি ঐ যে ‘আলকাতরার মতো কাল কুচকুচে’ শব্দসমূহও এখন বাধো বাধো লাগছে। যাদের চোখে মুখে বৃষ্টির সাদা কুয়াশা লেগে অবিশ্বাস্য যাদুমন্ত্রবলে অকস্মাৎ জমির আইল পাল্টে যায়, তাদের বিশেষণ আলকাতরা, তার ওপর লেখক স্বয়ং সেলিমিঞা, উফ, আনভিলেবল। উপায়ান্তর না দেখে এবার মূল বই বের করে সেলিমিঞা, ‘গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিম্বা সূর্যাস্তের/ জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/ উড়ছে হাওয়ায়, নীলিমায়/ বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে/ নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম…’ ‘বোতাম’ পর্যন্ত এসে সেলিমিঞা বারবারই আটকে যাচ্ছে, ছোটখাটো দুয়েকটা চিত্রকল্প যে উঁকিঝুঁকি মারছে না, তা নয়, কিন্তু জোড়া লাগছে না। জোর করে তো কিছু হয় না— এরকম একটা বোধ নিয়ে সেলিমিঞা এবার উঠে পড়ল। খাতাপত্তর যেখানে যা ছিল, এ্যাজ-ইট তাই রইল। ৩৪২ নম্বর রুমটা ক্রস করতেই, ৪৩-র ভেতর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের মতো কলকল করতে থাকা মেয়েটাকে আড়চোখে দেখতে পেয়ে একটু ভড়কেই যায় সেলিমিঞা। ট্যাঙট্যাঙারও দেখছি মরদ আছে। ভালো, মর্দামি থাকা খুউব ভাল, ক্যামেরা নেই তো, থাকলেই-বা কি, মাসখানেক পরে রাষ্ট্র হয়ে সবার বেডরুমে যাবে তো যাবে, তাতে লাভই, আফটার অল মেয়েটার দেশজুড়ে পরিচিতি বাড়বে, ইউনিভারসিটিরও সুনাম, এই কর ওই কর, তদন্ত কমিটি তো মাস্ট, তারপর সেই কিচ্ছার মতোই চিৎ করলে নুনু, উপুড় করলে ফুটকি.. এই আর কি। ব্লুফিল্ম করার আগে কেন যে পোলাপানগুলান মার্কেটিংটা শেখে না, হাঁটতে হাঁটতে ব্যালকনির শেষ মাথায় এসেও সেলিমিঞার বোধগম্য হচ্ছে না। কামব্যাক করতে এখন কিছুটা আনইজি লাগছে তার। এদিকে মাথায়ও কিছু ঢুকছে না। তারচেয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে চা-ঠা খেয়ে আসলেই হয়। ক্যান্টিনে এসে সেলিমিঞা তো অবাক। এ তো দেখছি নো ম্যানসল্যান্ড। হুমায়ুন আহমেদ হলে তো এ নিয়ে আরেকটা এপিসোড লিখতে পারত। বাকের ভাইয়ের ডুপ্লিকেট বলে ছাত্ররা যাকে সময়ে অসময়ে মস্করা করে থাকে, সেলিমিঞা এবার তাকে পুবকোণের একটা টেবিলে পা দু’টো ছড়িয়ে দিয়ে বসতে বসতে ইশারায় এক কাপ চা দিতে বলল। উফ! অনেকক্ষণ সে ট্রাকলেস হয়ে আছে। কই, স্ক্রিপটা ডেভেলপ করবে, তা না, খিস্তিখেউড়, ধ্যাৎ কিচ্ছু হবে না। সুজনকে দেখো, কত জুনিয়র একটা ছেলে, সুজন যে আজ আশুতোষ সুজন, ফারুকির ডানহাত বামহাত, এমনকি গ্রামিন ফোনের বিজ্ঞাপনটায় লঞ্চের ডেকে বসে গিটার বাজিয়ে অমন স্মার্ট ভঙিতে গান করল, খুঁজলে তার পেছনেও সেলিমিঞার কমবেশি ভূমিকা রয়েছে, অথচ সে তো সেই সেলিমিঞাই রয়ে গেল। স্ক্রিপটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবার আর হাল ছাড়ছে না সে। এত চমৎকার একটা থিম, তা-ও যদি ফেইল করে, নাহ, নেগেটিভ কিছু এখনই মাথায় আনা ঠিক না। শেষ করতেই হবে। মাস্ট বি। কিন্তু কিভাবে, শুরুটাই তো হচ্ছে না। আচ্ছা, ফার্স্ট সিনে গ্রামের একটা দৃশ্য আনলে কেমন হয়। তারপর একটি বাড়ি, আর সেই বাড়ির কোনো একটি ছোট্ট ঘরে বোন সূচিকর্ম করছে, এর পরের দৃশ্যে থাকবে ঘর থেকে খুকখুক করতে করতে বয়সি মা’র উঠোনের দিকে বেরিয়ে আসা, ততক্ষণে বোন তার ভায়ের শার্টে বোতাম লাগিয়ে ফেলেছে, এবার মা শার্টটি রৌদ্রে ঝুলিয়ে দেবে… দৃশ্যগুলো পরপর এভাবে সাজিয়ে সেলিমিঞা এবার চায়ের কাপে চুমুক দিল। কিন্তু নাহ, গ্রাম… গ্রামের বাড়ি… মানুষজন… এসবে তার মন ভরছে না। এর জন্য সেলিমিঞা কেন, ছলিমুদ্দি কলিমুদ্দিরাই তো এনাফ। কিন্তু গ্রাম তো লাগবেই, বাড়িও মাস্ট, তাহলে…?
চা পর্ব শেষ করে সেলিমিঞা এবার উঠে পড়ল।
ঘ.
ছুটি আর হরতালের গ্যাড়াকলে পড়ে টিউশনিতে ৩ দিন না গিয়েও পার পেয়ে গেছে সেলিমিঞা। অবশ্য আজ না গেলেও হয়, তবে তাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের গার্ডিয়ানদের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা যা তা তার নিজেরই। এক বিকেলের নাস্তাতে যে পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায়, সেলিমিঞার পুরো পরিবার তা এক মাসেও খরচ করে কি-না সন্দেহ। আসলে আলু আর পটল ভাজিতে কতই-বা খরচ! তাছাড়া আজ যেহেতু ফার্স্ট উইক, একটা সাদা খামে ভরা চকচকা ৫০০ টাকার ৫টা নোট, উফ! কত দিন যে আখিতারাকে ফোন করতে পারছে না সে। আচ্ছা, বাবুই পাখিটার সংগে কতদিন হবে যোগাযোগ নেই? ৪ না ৫? সোমবার বিকেলেই তো, হ্যা সেই যে একটা ফোন করেছিল, তারপর আর খোঁজ নেই কেন, কি হয়েছে, কি হয়েছে…, কি হয়েছে কলমিলতা, উহ, ঝরনা বেগম দেখছি রাগ করেছে, ঝরনা, ওগো ঝরনা বিবি, করে না করে না, ওগো রাগ করে না। কি যে ব্রিলিয়ান্ট একটা স্ক্রিপ্ট হয়েছে, না দেখলে, বিলিভ মি আখিতারা, তোমার বারো আনাই বৃথা। ইটস নট মেকিং এ জোক। কিন্তু কি হয়েছে আখিতারা, কোনো অসুখবিসুখ? এই যে প্রায় সপ্তাহ খানেকের মতো ডিসকানেক্ট, ফোন তো দূরের কথা, একটা মেসেজও না, টাইপিংয়ে আঙুল ব্যথা করে, ও কে, নো নিড টু সেন্ড এনি মেসেজ, রিয়েলি নো নিড। একটা মিসকল তো দেয়া যায়? আখিতারার ওপর তো বটেই, সেলিমিঞার এখন নিজের ওপরেও রাগ হচ্ছে। কেন যে সে নিজেও যোগাযোগ করে নাই। স্ক্রিপ্ট নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক আছে, কিন্তু যে রাধে সে কি চুল বাঁধে না? ফিল্ম বানাইবা ভাল কথা, সেজন্য অন্যসব নিলামে তুলবা, ইটস নট এ গুড জব। আচ্ছা ওটা কি ফিল্ম, না ফিলিম হবে? সেলিমিঞার এখন রাগও হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে। কালিদাস ব্যাটা সেই কবে প্রেয়সির কাছে মেঘকে দূত করে পাঠাইয়াছিল…, আর এ গণ্ডমূর্খটা ইউনিভারসিটির হল থেকে গেণ্ডারিয়ার লোহার পুল হয়ে দীননাথ সেন রোড যাবে, তা পারছে না, দুধু খাও, দুধু, সাতসমুদ্দুর তের নদী তো না যে হেঁটে যাওয়া যায় না। অধঃপতন, এরই কয় অধঃপতন। সত্যিই পতন হয়েছে সেলিমিঞার। তবে এটাও ঠিক যে গত ৪/৫ দিনে স্ক্রিপ্টটা যে শেপ নিয়েছে, তা তুলনারহিত। অবশ্য আখিতারা এখনও তা জানে না। জানার কথাও নয়। সেলিমিঞা এবার যতটা সিরিয়াস, আর কখনই এমনটা ছিল না। যতবারই নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ দুয়ারে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তার, ততবারই দুমড়ে মুচড়ে ভেংগে দিয়েছে; এমন কত আইডিয়াই তো সেলিমিঞা শুনিয়েছে আখিতারাকে, কিন্তু ওই পর্যন্তই, নেভার দ্যাট কাম টু ট্রু, বলা শেষ তো ওখানেই শেষ, তার আর পর নেই, পরের আর ঘর নেই। সেলিমিঞার লালশাকের মতো কোকড়ানো আর্মিকাট চুলের গোড়ায় গোড়ায় মনে হয় গিজগিজ করে নতুন নতুন আইডিয়া। কিন্তু এবার সে সিরিয়াসই। এ ক’দিনে যেভাবে ধৈর্য ধরে স্ক্রিপ্টটা সে একটু একটু করে ডেভেলপ করেছে, তাতে সে নিজেই অবাক, শুধু অবাকই নয়, মুগ্ধও। আখিতারাও মুগ্ধ হয়ে যাবে। গ্রাম শুধু গ্রাম থাকেনি, রূপ থৈ থৈ করছে, গ্রামীণ প্রকৃতির নামে যারা এতদিন কান্না, অনাহার, আর ক্ষুধার গদ্য দেখিয়ে এসেছে আর যারা ঐসব ছাইপাশ দেখে কল্পনাশক্তি ক্ষয় করে ফেলেছে, তারা অবশ্য হতাশই হবেন, আখিতারা অফ কোর্স সে দলের নয়, ফার্স্ট সিনটায় সে যখন বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা একটা পুরোনো কবর পেছনে ফেলে ছেলেটাকে কুয়াশার সাদা পর্দা দোলাতে দোলাতে ঘরে ফিরতে দেখবে, তারপরই আবার যখন ক্লোজ শটে দেখানো হবে শিশিরে ছেলেটার পায়জামা ভিজে যাচ্ছে, তখন কি আর মুগ্ধ না হয়ে পারবে? এরপরই হঠাৎ নির্লজ্জের মতন উঠে আসা লাল সূর্যটার দিকে ক্যামেরা কাট করা হবে। চোখের সামনে ছেলেটা এবার খুউব মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকবে মেয়েদের পায়ের অলংকারে মুখরিত তাদের পরিচিত সেই নদী, একটা দড়ি-ছেঁড়া হারানো বাছুর একবার তাকে ক্রস করছে তো পরক্ষণেই আবার সামনে এসে হাম্বা হাম্বা করছে, এবার পা থেকে ধীরে ধীরে ক্যামেরা উঠে যাবে ছেলেটার মাথার উপর, সেখানে তখন গুনগুন করছে কালো সবুজ ফড়িংয়ের দঙ্গল। পরের সিনেই গ্রামিন একটা বাড়ি; সেখানেই এক বয়োবৃদ্ধ মা তসবির দানায় আঙুল রেখে, ঘরের দেয়ালে টাঙানো ছেলের ছবিটার দিকে অখণ্ড মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে, আর সেইসব ধূসরস্মৃতির টানাহেঁচড়ায় জলভরভর চোখে তার দাউদাউ করছে ৬৯-র সেই অভ্যুত্থানের ছবি, এ পর্যন্ত এসে সেলিমিঞা এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এতটা সে নিজেও ভাবতে পারেনি। ভালই লাগছে। সত্যিই ভাল লাগছে। আনন্দ আর খুশিতে ঝকমক ঝকমক করছে সে। নেশা ধরে গেছে। এরকম কাব্যিক একটা স্ক্রিপ্ট, ওহ, ইট’স এ আনপেরালাল। টুনটুনি বেগম আবার রাগ করেনি তো? একটুআধটু হয়ত করেছে, হয়ত তা-ও না, করলে ঐ অভিমানই। অভিমান করলে মেয়েদের সৌন্দর্য কি কয়েকগুণ বেড়ে যায়? শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বোনটির তিল শোভিত মুখাবয়ব জুড়ে একটু অভিমান একটু øেহ যদি ছড়িয়ে দেওয়া যায়, কেমন হয়! পিঠের উপর ছড়িয়ে থাকা কাল চুলের ঘন মেঘের বিলি কেটে ছোটভাইটি তখন ঘষে ঘষে অভিমান তুলে ফেলবে, আর ভাইবোনের এরকম দৃশ্যের অবতারণা দেখে মা বেহুঁশ হয়ে যাবেন অতিশয় আনন্দে, দৃশ্যটা নাড়াচাড়া করতে করতে সেলিমিঞার মনে হচ্ছে সে আসলে হাঁটছে না, বাতাসে ভেসে ভেসে উড়ে চলছে। না হলে সে যে এখন পুরোনো ঢাকার সবচেয়ে ঘিঞ্জি একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, তা তার মনে থাকবে না কেন? উফ! বামপায়ের পাতাটা রিক্সার নিচে থেঁতলে যেতে যেতেও যে গেল না, নেহাৎই ভাগ্যটা ভাল বলে, এদিক সেদিক হলেই হত, সোজা ঢাকা মেডিকেল। আখিতারা নিশ্চয় তার জন্য ফুলের সৌরভ নিয়ে হাজির হত। শাঁখারিবাজার মোড়ে চলে এসেছে সে, আর ৫০ গজ গেলেই বাঁদিকে পুরোনো আমলের নকশাকরা সেই পাঁচতলা বাড়িটা, অনার্সে ভর্তি হওয়ার পরপরই টিউশনিটা হয়ে যায়। নিচতলার বিশাল লোহালক্কড়ের দোকানের গদিজুড়ে ছাত্রের বাবা কি ঝিমুচ্ছে এখন? ঘুমালেই ভাল, আংকল কেমন আছেন, ভাল, তুমি বাবাজি, আমিও, ভাল না থাকলেও ভাল, থাকলেও ভাল, মধু মধু, কি যে একটা কালচার রে বাবা। দোকানের সামনে আসতেই বকের মতো গলা-লম্বা পিয়নটা হৈচৈ করে উঠল, ছার, ও ছার, আফনি আইছেন, আছেন, আছেন ভেতরে আইছা বছেন… বড় ছাবের তো অবস্থা বেগতিক। হার্ট এ্যাটাক হইছিল, হসপিটাল লইয়া গেছে, ১২২ নম্বার কেবিন। অবস্থা আর কতটুকু বেগতিক বড়ছাবের, তারচেয়ে সেলিমিঞার কি কম? বড়ছাব তো নব্বই বছর বেঁচে আছে, সেলারিটা আজ না পেলে সে তো এক সপ্তাহও বাঁচবে না আর, মেসের ভাড়া, বুয়ার ট্যাকা, পরশুর পরেরদিন থেকে বাজার, ফোনকার্ড, কম করে হলেও ১৫০০ টাকার ঠেলা, টিচার না হলে ছোকরাটার হোগায় সত্যিই একটা লাত্থি দিয়ে বসত সেলিমিঞা।
কোন হসপিটালে এ্যা?
জবাবে কয়েক ডজন দাঁত দেখা গেল ছেলেটার, তা তো জানি না ছার। শুধু শুনতাছি ১২২ নম্বার।
দোকানের পেছনের সরুসিঁড়ি বেয়ে সেলিমিঞা ৪ তলায় উঠে বেল টিপতেই মোটাসোটা বুয়াটা দরজা খুলে দিল, আংকল তো হাড এ্যাটাক কোরছিলো, তারে লইয়া তো হুলস্থূল পইড়া গেছিল।
এত বড় একটা স্যাড নিউজ, অথচ বুয়াটাকে একটুও বিষণœ লাগছে না, বরং ছেনালি আর লজ্জা মিশিয়ে মাখো মাখো মুখটা এরইমধ্যে সে আরো লাল করে ফেলেছে, কুতায় ছিলেন মেঞা, বিয়াশাদি করছেইন? বুড়া অইয়া বিয়া কইরা বউর ধমক খাওন কি বালা? আসেন, ভেতরে আসেন। আসেন আসেন বলছে ঠিকই কিন্তু জায়গা দিচ্ছে না, আসলে সে এখন যেভাবে পজিশন নিয়ে আছে, তাতে ভেতরে যেতে সেলিমিঞার কিছুটা ভয়ই লাগছে, চিৎকার ঠিৎকার দিয়া বইব না তো আবার? আমার গায়ে হাত দিছে গো, আমার সব্বোনাশ কইরা ফালাইছে গো…। দীপু চৌধুরী খবর পাইলে তো আরও গুরুতর, লাখখানি গোন, নয়তো ড্রেনে মইরা-পঁইচা চিৎ হইয়া ভাইসা ভাইসা গন্ধ ছড়াও।
কি দাঁড়ায়ে আসেন ক্যা, আসেন ভেতরে আসেন।
ভেতরে ঢুকে এলোমেলো সোফাটায় বসতে বসতে সেলিমিঞা এবার দেখতে পেল ঘামে বুয়াটার বগলের নিচের ব্লাউজের একটুখানি তেরছাভাবে ভিজে গেছে। ফাঁক গলিয়ে হাতটা ঢুকিয়ে দিলে কেমন হয়? আশ্চর্য, মেয়েটা দেখছি ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। ব্যাপারটা আগে সে লক্ষই করেনি? ভেরি ব্যাড। দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বুয়াটা দেখছি এদিকেই আসছে। সত্যিই তো সে নিয়মভিত্তিক হাঁটতে পারছে না। দুপায়ের গোড়ালি স্যান্ডেলের ভেতর মাঝামাঝি জায়গায় পড়ছে না তার। এ কারণেই কি না কে জানে, বাম পায়ের স্যান্ডেলের পেছনের ডানপাশটা একটু বেশিই ক্ষয়ে গেছে, ডানপায়ের পেছনের সোলটা ঝুঁকে গেছে থ্যাবড়া হয়ে বাঁয়ের দিকে। সোফা গোছানোর নামে বুয়াটা কি তাকে নাড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা নিতে চায়, না হয় এমনভাবে ঝুঁকে আছে কেন সে? উফ! বারান্দা, ঝোল-বারান্দা সবটাই দেখা যাচ্ছে বুয়াটার। দিন-দুনিয়া ভুলে গিয়ে সেলিমিঞা এখন মনে মনে ধার দেখছে, চাক ভাঙছে, চাক ভাঙছে, আর ধার দেখছে। এসব করতে করতে অচিরেই সে পুলকিতও বোধ করতে থাকে, কল্পনায় সে এখন মেয়েটার পশ্চাৎদেশ তার কোলের ভেতর নিয়ে নিয়েছে। তারপর শুরু করেছে কচলানো, আসলে কচলানোও না, ইনিয়ে-বিনিয়ে ন্যাংটো করে ফেলা। সোফার উপর তাকে শুইয়ে দিয়ে, ইলাস্টিকের হুক দুটো খুলে ফেলার কল্পিত চিত্রনাট্যে হঠাৎই পানি ঢেলে দিল সেই গলা-লম্বা পিওনটা, হালিমা, অ হালিমা, ঝালপুরি লইয়া আইছি, চা-নাস্তা দে ছারেরে।
হালিমার ভূমিকা এবার ঠিক গৃহকর্ত্রির মতোই, এ্যাই লম্বু, ঘুরঘুর করতাছস ক্যান, দোকানে কেডা থাকব? দোকানে যা—
বকবক করছস তো, ঐদিনের কথা কিন্তু ফাঁস কইরা দিমু। ম্যামসাব! ভাবঠাব ছাড়, জানোস তো মাইনউদ্দিন আবার কাউরো ঠাপায় না। বলেই জিভে কামড় দিল মাইনউদ্দিন, ছরি ছার, ছরি।
কি এক রহস্যময় কারণে হালিমা আর মাইনউদ্দিনের ওপর রাগ ঝাড়ল না, বরং পুরি নিয়ে ভেতরে চলে গেল। মেয়েটির রক্ত-মজ্জায়, বসনে-শোভনে অনেককিছু বোধহয় গেঁথে দিয়েছে এ বাড়ির লোকজন। কিন্তু ব্যর্থই তা। সাদা ছাপের শাড়ির সংগে ম্যাচিং করে ব্লাউজ, এ পর্যন্ত ঠিকই আছে কিন্তু ব্লাউজটার ভেতরে পরেছে সে লালরঙের একটা ব্রা, চাঁদের মতো বড় করে টিপও দিয়েছে কুচকুচে কপালটায় কিন্তু যুতসই হয়নি, নাহ… তবুও মেয়েটাকে পাওয়ার একটা নেশা ধরে গেছে সেলিমিঞার।
বাইরে এশার আযান হচ্ছে।
মজিব মহমমদ রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গল্প, আসাদের শার্ট — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।