চারবাক : বাংলা সাহিত্যে সত্যিকার লিটল ম্যাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯১৪ সালে ‘সবুজপত্র’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আর আমরা জানি, ম্যাগাজিন শব্দের অর্থ অস্ত্রাগার, বন্দুক/রাইফেলের গুলি রাখার খাপ বিশেষ, ক্যামেরা কিংবা প্রজেক্টারে ফিল্ম রাখার স্থান এবং সাময়িকী। ‘সাময়িকী’ অর্থে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন জেন্টলম্যান’স (লণ্ডন ১৭৩১) সম্পাদক এডোয়ার্ড কেভ। কিন্তু ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নামের উৎস নিয়ে একাধিক অনুমান প্রচলিত। কেউ বলেন নামটি এসেছে লিটল থিয়েটার থেকে; কেউ বলেন মার্গারেট এন্ডারসন সম্পাদিত লিটল রিভিউ (শিকাগো ১৯১৪) থেকে। ১৮৪০ সালে র্যালফ ওয়ান্ডো ইমারসন ও মার্গারেট ফুলার সম্পাদিত ‘দি ডায়াল’ প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হিসাবে গণ্য। সত্যিকার লিটল ম্যাগ চর্চা শুরু হয় ১৮৮০ সালের পর ফ্রান্সে প্রতিকবাদি সাহিত্য আর যুক্তরাষ্ট্রের রূপবাদি সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র হিসাবে। ১৯২০ সাল থেকে জার্মানিতে এর ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য লিটল ম্যাগ হল হ্যারিয়েট মনরোর ‘পোয়েট্রি’ (১৯১২), মার্গারেট এন্ডারসনের কাঁপন তোলা লিটল রিভিউ (১৯১৪-২৯), ইগোইস্ট (১৯১৪-১৯), ব্লাস্ট (১৯১৪-১৫), ইউলিস জোলার ট্রানজিশান (১৯২৭-৩৮)। এজরা পাউন্ড, টিএস এলিয়ট, জেমস জয়েস, হেমিংওয়ে এসব কাগজে লিখতেন। জয়েসের চেতনাপ্রবাহি উপন্যাস ‘ইউলিসিসের প্রথম ১১ অধ্যায় ছাপা হয় ‘লিটল রিভিউ’র পাতায়। এলিয়টের বিশ্বনন্দিত ‘ওয়েস্টল্যান্ড’ ছাপা হয় ‘ডায়াল’-এ। তো লিটল ম্যাগ সম্পর্কে আমরা আপনার কাছে কিছু জানতে চাই।
মীজানুর রহমান : তোমাদের লিটল ম্যাগাজিনের গা ভরে ওঠা টোকফর্দে যে বিদেশি নামগুলো রয়েছে ওতে কিছু যোগ করব। আসলে কি জানো, এই ম্যাগাজিন শব্দটি প্রথম চালু হয়েছিল এডোয়ার্ড কেভ সম্পাদিত ‘দি জেন্টলম্যান’স ম্যাগাজিন’ (The Gentleman’s Magazine) সূত্রে। কেভ ছিলেন মূলত একজন ব্রিটিশ মুদ্রক (Printer)। প্রথমে বিভিন্ন গ্রন্থ ও পুস্তিকা থেকে রচনা সংগ্রহ করে বের করতেন। পরবর্তীকালে মৌলিক রচনা দিয়েই পত্রিকাটি প্রকাশিত হত। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও সমালোচক স্যামুয়েল জনসন এর অন্যতম লেখক ছিলেন। কাগজটি দীর্ঘজীবী ছিল। ১৭৩১ সালে স্থাপিত জেন্টলম্যান’স ম্যাগাজিন ১৯১৪ সন পর্যন্ত টিকে ছিল। ম্যাগাজিনের প্রথম ধারণার সূত্রপাত ঘটে হয় সংবাদপত্র থেকে নতুবা গ্রন্থবিক্রেতাদের ক্যাটালগ থেকে। ষোড়শ শতাব্দিতে প্রথমে ফ্রান্সে এবং পরে অন্যান্য দেশে বিভিন্ন গ্রন্থের সমালোচনা নিয়ে বেরোত এই ক্যাটালগ। সপ্তদশ শতাব্দিতে সাহিত্যকেন্দ্রিক পুস্তিকা (Pamphlet) ইংল্যান্ড ও আমেরিকা থেকে নিয়মিত বেরোত। এ প্রসঙ্গে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ‘দি ট্যাটলার’ (The Tatler) এবং ‘দি স্পেকটেটর’ (The Spectater)-এর নাম উল্লেখ করা যায়। আমি যতদূর জানি প্রধানত অতিন্দ্রিয়তাবাদিদের দ্বারা চালিত নিউ ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবীদের এই ‘ডায়াল’ (The Dial) পত্রিকাটি এককভাবে মার্গারেট ফুলার-ই সম্পাদনা করতেন। শুনে খুশি হবে ‘পোয়েট্রি’র একটা দলছুট সংখ্যা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার যত আপত্তি ‘সবুজপত্র’-কে নিয়ে। আমার তো মনে হয় আরো পিছিয়ে বঙ্কিম বাবুর ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২)-কেই জায়গাটা দিতে হয়। রবীন্দ্রনাথের কথাই ধরো, ‘বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙ্গালির হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল’।
এই হৃদয় লুটেরা বঙ্গদর্শন-কে কেন এই আঢ্য জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে সে ব্যাপারে আমার নিজের কিছু চিকন কথা আছে।
যথার্থ লিটল ম্যাগাজিন যারা বের করেন, তাদের মধ্যে একটা অন্তরটিপুনি থাকে— বাজারে যে কাগজগুলো আছে ওগুলো থেকে আলাদা কিছু করার লক্ষ্যে, কিংবা নেহাৎই সম্পাদনার স্বতঃস্ফূর্ত সরল তাগিদ থেকে কাগজগুলো বেরোয়— এর পেছনে কোনো অর্থলিপ্সা থাকে না, থাকে না কোনো পুঁজি— একরকম দিগম্বর হয়েই অধিকাংশের এ পথে পা বাড়ানো। তবে একঢরে হলেও এদের চেহারা একরকম নয় মোটে— এদের কেউ কেউ খোশপোশাকি আরামতলবি, এই যেমন সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘পরিচয়’; আবার কেউ-বা চাকুরে কিংবা টিউশনির টাকাটাই পুঁজি এমন কোনো অধ্যাপক, যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’, নির্মাল্য আচার্য্যরে ‘এক্ষণ’; আবার নিজের গাঁটের পয়সা খরচা করে বা এখান থেকে ওখান থেকে ধারকর্জ করে বারোয়ারি কাগজ বের করবার উৎসাহও কম নয়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’, কিংবা কমলকুমার মজুমদারের ‘অঙ্কভাবনা’ তারই ফসল। আমার নিজের কথাই ধর, বাবা-মা থেকে শুরু করে ঢাকা শহর চষে বেড়িয়ে চাঁদা তুলে তবে না বের করেছি শিশুতোষ ‘ঝংকার’ (১৯৪৯), বিনোদন ও সাহিত্যের মিশেলে জন্ম নেয়া ‘রূপছায়া’ (১৯৫০-১৯৬০)। আর সবশেষে, জীবনধারণের সবকিছু খুইয়ে ভার্যার গহনাগুলো একে একে সোনারুদের হাতে তুলে দিয়ে, তাতেও খাঁই না মেটায় ঋণের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে সেই কবে থেকে রোদ-ঝড়-জল তুচ্ছ করে ব্যাগ হাতে তোলবলে দেহে শরীরে নিটিশ নিটিশ পথ ভেঙে চলেছি আমার পত্রিকাটির হাত ধরে ধরে, খেয়ালি পোলাও পকিয়ে। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সুদামা শুভানুধ্যায়ির সান্দ্র দলটি। আর এসব কারণেই বোধ করি, অর্থাৎ বড় বা মাঝারি, কোনো পুঁজি নিয়েই যাদের পথ চলা নয়, নিজের আনন্দে বা অন্যের আনন্দকে আহ্বান জানিয়ে যারা ‘ছোটো পুঁজি’ (যদি একে পুঁজি বলা যায়) নিয়ে কাগজ বের করেন, সেই কাগজই ছোট কাগজ তথা লিটল ম্যাগাজিন।
কাজেই প্রথম হওয়ার কৃতিত্বটা বঙ্কিম বাবুকে দিতেই হয় যে।
চারবাক : বিভিন্ন উৎস থেকে জানতে পারি যে, পৃথিবী একদিন ঘোর শূন্য এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল। ঈশ্বরের অবস্থান ছিল ঐ জলেরই উপরে। একদিন ঈশ্বর বলে উঠলেন, ‘দীপ্তি আসুক’— তাতে পৃথিবীতে দীপ্তি এসে গেল, এবং তিনি দীপ্তি উত্তম দেখলেন। পরে ঈশ্বর রাত-দিন, ভূ-ভাগ, ভূ-তল ইত্যাদি সৃষ্টি করে দেখলেন ‘তাহা উত্তম’। এভাবেই তিনি পৃথিবীর যাবতিয় কিছু সৃষ্টি করেও দেখলেন, সে সকল উত্তম। তারপর ঈশ্বর যাই-ই সৃষ্টি করলেন সবকিছুই হয়ে উঠল ‘অতি উত্তম’। কেননা, তার সৃষ্টিকর্মে কেউ বাধাও দিচ্ছে না বা ‘অন্যরকম’ করবার শর্তও জুড়ে দিচ্ছে না। লিটল ম্যাগাজিন এরূপ একটি সৃষ্টি প্রক্রিয়া। আমাদের ধারণা, লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে এজন্যই তারুণ্যের কৌতুক, ব্যতিক্রম, যুগভাঙা, প্রথাবিরুদ্ধ ইত্যাদি শ্লোগানগুলো বেশ জোরেসোরে উচ্চারিত হয়। আপনি কি বলেন?
মীজানুর রহমান : যথার্থ বঙ্কিম বাবু, সুধীন বাবু, প্রমথ বাবু (সবুজপত্র) কিংবা বুদ্ধদেব বসু (কবিতা), সিকান্দার আবু জাফর (সমকাল) আর এই অধম কাপের হাতে যে লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম সেখানে কোনো শর্তই ধোপে টেকে না, সেখানে কেবলই সৃষ্টির আনন্দ। তবে ইদানিং লিটল ম্যাগাজিনের রাজ্যে তরুণদের আনাগোনা যথেষ্ট একথা মানতেই হয়। আবার একথাও ঠিক, সব কবিই যেমন কবি নয়, কেউ কেউ কবি, একইভাবে সব লিটল ম্যাগাজিনই ছোট কাগজ নয়, কোনো কোনো কাগজ লিটল ম্যাগাজিন। কারণ, আজকাল এমন দাঁড়িয়েছে যে লিটল ম্যাগাজিনকে হতে হবে ‘কৃশকায় রোগাপটকা, তার সম্পাদককে হতে হবে বাপ-মা খেদানো চুল উস্কোখুস্কো চালচুলোহীন যত্নহীন, কাগজে থাকবে নিছক গতানুগতিক বালখিল্যসুলভ ‘পদ্যসম্ভার’ অথবা হতে হবে তাকে যুগভাঙা ‘প্রথাবিরুদ্ধ’। এই আন্দোলনটা ফরাসি দেশে ‘নো’ আন্দোলন মারফত ঘটেছিল। কিন্তু সেখানে গিওম অ্যাপলিন্যার-এর মতো মেধা ছিল, এটা মাথায় রাখতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে হাংরি জেনারেশনের কবিরা বা লেখকেরা প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে কতটা অবদান রেখেছিলেন তা আজ বিতর্কের বিষয়।
চারবাক : চেক ঔপন্যাসিক মিলান কুন্ডেরা তাঁর জেরুজালেম বক্তৃতায় আধুনিকতার একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘অতি সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত আধুনিকতার ধারণা গৃহিত ধারণাবলির বিরোধিতা করাকেই বোঝানো হত, কিন্তু আজ আধুনিকতার ধারণা প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে মিশে গেছে। আধুনিকতা এখন মেনে চলা, মেনে নেয়া, পুরোপুরি স্রোতে মিশে যাওয়াকে বোঝায়। আধুনিকতা অধিকাংশকে খুশি করার পোশাক পরেছে’। আমাদের দাবি, লিটল ম্যাগাজিন একটি বিপক্ষ-স্রোত। এখন প্রশ্ন, লিটল ম্যাগাজিন এ ধারণাকে এড়িয়ে যেতে পারছে?
মীজানুর রহমান : ‘আধুনিক’ শব্দটা নেহাৎই আপেক্ষিক। আজ যা আধুনিক তাই কাল অনাধুনিক হয়ে পড়ছে। আবার আধুনিক থাকতে থাকতেই অধুনান্তিক (Post-modern)-এর ধারণা আসছে। সাহিত্যে এ ধারণাটির জনক ইহাব হাসান। হাসানের মতে এই ধারণাটিতে রয়েছে বহু বুদ্ধিজীবীর চিন্তা। দেরিদা, ফুকো, বেকেট, বোর্হেস, নবোকব, মার্কেজ-এমনি আরো অনেকের। আমাদের আলোচ্য আধুনিকতা নিয়ে আর এই আধুনিকতার সঙ্গে অধুনান্তিকতার ঝগড়া নিয়ত চলছেই। টয়েনবি তো বলেই দিয়েছেন, ‘আধুনিকতার যুগটি শেষ হয়ে গেছে ১ম মহাযুদ্ধের সময়ে (১৯১৪-১৮) এবং অধুনান্তিকতার জন্ম নিতে দেখা গেছে ১৯১৮-৩৯-এর মাঝে। মিলান কুন্ডেরা ঠাট্টা করে হলেও যথার্থই বলেছেন-আপেক্ষিক এই ধারণাটি চলমান, তাই চলমান সত্যকে মেনে চলা, মেনে নেয়া এবং পুরোপুরি গড্ডালিকা স্রোতে মিশে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তবে তিনি যখন বিদ্রুপ করে আরো বলেন আধুনিকতা অধিকাংশকে খুশি করার পোশাক পরেছে— সর্বাংশে তা মেনে নেয়া যায় না। বর্তমানকে বুঝতে হলে একটু পিছু হটতেই হয় যে— একটা চিত্রকর্মকে তার স্বরূপে দেখতে হলে যেমন পিছু হটতে হয়। আবার একজন যদি আগ বাড়িয়ে আধুনিক কোনো ধারণার জন্ম দেন, মজা না কি আরেকজন যে অধুনান্তিকতার জন্ম দেবেন কি করে বলি। আধুনিকতার ধারণা বদলেছে, বদলাবে— মোদ্দা কথা, আমরা সেই অনুপাতে বদলাচ্ছি কি-না সেটাই আসল কথা। যেকোনো সৃষ্টিশিল কাজ কখনো বসে থাকতে পারে না, সে সতত সঞ্চরণশিল। যেমন, এখনকার উপন্যাসগুলোর শিল্পগত চাহিদা সময়কে উদ্ভাবন করা, সময়ের ধারণাই তৈরি করা, সময়ের প্রতি মনোভাব গড়ে তোলা কারণ ফিডলারের মতে তা নান্দনিক জগৎ ও রাজনৈতিক হালচালের প্রতি মনোভাবের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে জন্মায়। আপনি কিংবা আপনার লিটল ম্যাগাজিন বিপক্ষ স্রোতে আছে কি-না, সেটা আপনার কাজই বলে দেবে। প্রতিষ্ঠানবিরোধি শব্দটাই আপেক্ষিক, একেক জনের কাছে তার রূপ একেকরকম। এই যেমন, তসলিমা নাসরিন যখন মহিলাদের পুরুষদের মতো আদুল গায়ে চলাফেরার দাবি তোলেন বা কথা বলেন কিংবা পুরুষদের মতো খোলা স্থানে মুত্র নিঃসারণ— এই আচরণ কতটা আধুনিক বা প্রতিষ্ঠানবিরোধি হল, তা মানুষ ভেদে বিচার্য। পোস্টমডার্ন ধারণা সম্পর্কে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ : এ ব্যাপারটা আমি বুঝি না। একজন কবি বা শিল্পীর প্রধান কাজ হল তার কাজটি করে যাওয়া-তা আধুনিক হল না অধুনান্তিক, এই ধারণাটি মাথায় রাখাই হাস্যকর। ওটা হয়ে যাওয়ার জিনিস।
চারবাক : সুবিমল মিশ্র— একজন লিটল ম্যাগকর্মী এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধি লেখক। সে আনন্দবাজার পত্রিকা দিয়ে না-কি ‘ইয়ে’ও করে না। তাঁর মতে, সব লিটল ম্যাগই লিটল ম্যাগাজিন নয়। কারণ, কিছু কিছু পত্রিকা কারো কাছে স্রেফ ‘করে খাওয়া’র কর্ম, উপরে ওঠার ‘সিঁড়ি’ এবং কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির সোল এজেন্সি হিসাবে ব্যবহৃত। এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
মীজানুর রহমান : সব লিটল ম্যাগই লিটল ম্যাগাজিন নয়— এ কথা তো আমি আগেই বলেছি। কিছু কিছু পত্রিকা স্রেফ ‘করে খাওয়ার কর্ম’, ‘ওপরে ওঠার সিঁড়ি’ এবং ‘কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির সোল এজেন্ট’— এ বিষয়ে সুবিমল মিশ্রের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আর ‘ইয়ে’ না করলেই যে সুবিমল বাবু প্রতিষ্ঠানবিরোধি হয়ে গেলেন এ সার্টিফিকেট তাকে কে দিল?
চারবাক : অনেকের ধারণা, লিটল ম্যাগাজিনের প্রধান অন্তরায় ‘অর্থাভাব’। এই অর্থাভাব ঘুচিয়ে সাজসজ্জা, মুদ্রণ পরিপাট্য করার সামর্থ্য ‘কণ্ঠস্বর’ সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ছিল ঠিকই কিন্তু পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে সম্পাদক ‘স্বতঃস্ফূর্ততা’র অভাবকে চিহ্নিত করেছেন। আবার, সব ধরনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মুস্তফা নূরউল ইসলামের ‘সুন্দরম’ পেটফোলা রোগির মতো আজও ধুঁকছে। আমরা বিশ্বাস করি, লিটল ম্যাগাজিন আসলেই হয়ে ওঠার জিনিস। এখন প্রশ্ন হল, এই হয়ে ওঠাটা মূলত কিভাবে হয়ে উঠতে পারে?
মীজানুর রহমান : লিটল ম্যাগাজিনের প্রধান অন্তরায় অর্থাভাব নয়-স্বতঃস্ফূর্ততা, আন্তরিকতা এবং বিষয় বৈভবের প্রতি নিরাবেগ নির্লিপ্ততা আর একটু ‘পাগল’ হওয়ার মধ্যেই এর সফলতা নির্ভর করছে। এটা ঠিক বুঝিয়ে বলার মতো নয়, তোমার কথাটাই সত্যি— লিটল ম্যাগাজিন আসলেই হয়ে ওঠার জিনিস। একটু অহংকারের মতো শোনালেও বলব— আমার পত্রিকাটাও, আসলেই, হয়ে উঠেছে।
চারবাক : একজন নবীন লিখিয়ে যখন দেখেন, তার সহযোগি বন্ধুরা শুরু করেন পূর্ণোদ্যমে, স্বাতন্ত্র্য প্রদর্শনের বাড়াবাড়ি আর জগৎ-সংসারের প্রতি উদ্ভট আচরণের গতি ধীরে-ধীরে কমিয়ে দিয়ে একসময় দপ করে নিভে যায়, তখন তিনি হতোদ্যম হয়ে পড়েন। সেই তিনি যখন উপলব্ধি করেন, আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও লিটল ম্যাগাজিন তাকে বা তার সৃষ্টিকর্মকে ভরণপোষণে অক্ষম, তখন তিনি আপোসে বাধ্য হন, কিংবা লেখালেখি ব্যতীত কোনো যোগ্যতাই যার নেই, এটাই যার রুটি-রোজগারের একমাত্র উপায়— তিনি, সেই আপাদমস্তক লেখকটি যদি কোন বাজারি কাগজে লিখতে শুরু করেন তখন তাকে কতটা দোষ দেয়া যুক্তিসঙ্গত?
মীজানুর রহমান : মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। বাজারি কাগজে বাজারি লেখক হওয়ার চেয়ে লেখক না হওয়াই ভাল। তবে যার অন্য কোনো যোগ্যতা নেই তার ‘পেশাদার লেখক’ হওয়ার মধ্যে দোষের কিছু দেখি নে। অন্যান্য অপকর্ম করার চেয়ে এ অনেক ভব্য পেশা। তবে বাজারি বলতে আমি কিন্তু হলুদ কাগজের লেখক হতে বলছি নে। সেক্ষেত্রে রুটি-রোজগারের জন্যে পত্রিকার হকার হওয়া অনেক ভাল।
চারবাক : ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ আবিষ্কারের পরে বিজ্ঞানি আইনস্টাইনকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তবে কি নিউটন মিথ্যে হয়ে গেল’। আইনস্টাইন উত্তরে বলেছিলেন, ‘না, তা নয়। নিউটন তার মতো করে সেই সময়ের জন্য সত্য। আর নিউটন সত্য বলেই আজ আইনস্টাইন সত্য’। অথচ বাংলা সাহিত্যে ত্রিশের দশকের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত রবীন্দ্রবিরোধিতা করতে পেরেছেন, মিডিয়ার কল্যাণে বলা যায় সে তত ‘প্রখ্যাত’। সমালোচকগণ মনে করেছেন, এর সূত্র ধরেই রবীন্দ্র-লালন-পদাবলি-দর্শন-শিল্পকলা’র পরিবর্তে আমাদের কাছে দেরিদা-ফুকো তথাকথিত আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ইত্যাদি মুখ্য হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
মীজানুর রহমান : কোনো কিছুই মিথ্যে হয়ে যায় না— এ কতকটা রিলে রেসের মতো— একজন আরেকজনের আইডিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান মাত্র। এ বিশ্বে ‘সম্পূর্ণ সত্য’ বলে কোনো কিছুই নেই— সবই অসম্পূর্ণ। যুগে যুগে চিন্তার লীলাখেলা চলেছে, চলবে। রবীন্দ্রবিরোধি যাঁরা, তাঁরা ভাল করেই জানেন, রবীন্দ্রনাথের রিলের ঐ ব্যাটন হাতে করেই আজ আমরা এতটা পথ ভেঙে আসতে পেরেছি— তবে কতটা আধুনিক বা অধুনান্তিক হতে পেরেছি তা গবেষকরাই বলতে পারবেন ভাল।
চারবাক : বৃটিশ শাসনামলে ভারতে কমবেশি তিন শতাধিক আঞ্চলিক এবং কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সবগুলো আন্দোলনই নিজেদের সংযোগহীনতা, পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে, ইতিহাসে একের পর এক জন্ম নেয় ‘ট্রাজেডির জগৎ’। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে এখানে যে ‘জগৎ’টির কথা বলা হয়েছে তার বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়— এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
মীজানুর রহমান : বড় ছোট ট্রাজেডিগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করলে ভুল হবে। এই আপাত ট্রাজেডিগুলোই বৃহত্তর অন্যান্য সফল সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে কমবেশি প্রভাব ফেলেছে, এই যেমন ১৮৭২-৭৩ সালের পাবনা জেলার সফল প্রজা তথা কৃষকবিদ্রোহ। লিটল ম্যাগাজিনকে কোনো আন্দোলন হিসেবে আমি বিবেচনা করি নে। বঙ্গদর্শন, সবুজপত্র, এক্ষণ, কৃত্তিবাস, কল্লোল, কালিকলম, সমকাল, কবিতা, কণ্ঠস্বর, কবিকণ্ঠ প্রভৃতি লিটল ম্যাগগুলো ভারতবর্ষ, বসুমতী, প্রবাসী, মোহাম্মদী, বেগম, সওগাত, দেশ ইত্যাদি বাণিজ্যসফল পত্রিকাগুলিকে কম ইন্ধন জোগায়নি।
চারবাক : ‘এরকম লেখা উচিত’ এমন কোনো আরোপিত দায় নিয়ে এখানে কেউ লেখে না, বরং ‘এরকম লিখতে চাই’ এ স্বাধীন আকাঙ্ক্ষা থেকেই যে কেউ লিখে থাকেন। হয়ত এজন্যেই এখানে আত্মসমালোচনাহীন আত্মম্ভরিতা, অহংকার, উল্লম্ফন কিংবা আস্ফালনের বাড়াবাড়ি লক্ষ করা যায়। কবি অসীম সাহার ভাষায় যা ‘উদ্ভটত্ব’। তিনি নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যুবা বয়সে ‘সাহিত্যের বিলাস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। এ লেখায় সম্ভবত অভিধান ঘেঁটে ঘেঁটে এমন কিছু শব্দ জড়ো করেছিলাম, যা আজও আমার আয়ত্তের বাইরেই রয়ে গেছে। অথচ সেদিন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ কেঁপে কেঁপে উঠেছিলাম নিঃসন্দেহে’। লিটল ম্যাগাজিন অনেকদূর এসেও কি এ অভিযোগটি খণ্ডাতে পেরেছে?
মীজানুর রহমান : ‘এরকম লেখা উচিত’ এমন দায়বদ্ধতা তো ক্রিতদাসের শামিল— ‘এরকম লিখতে চাই’—এ ধরনের স্বাধীন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে মোটেই আত্মম্ভরিতা বলা চলে না— বরং এটাই কাম্য। মুক্তবুদ্ধি মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, ‘উদ্ভটত্ব’ও নয়। যে সাহিত্যে প্রকৃত রস না থেকে থাকে আদিরসের প্রাবল্য, কিংবা অনাবশ্যক শব্দ ঢুঁড়ে লেখার মধ্যে কৃত্রিম গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা, তা সময়ের বিচারে টেকে না— আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। আমার মতে অধিকাংশ লিটল ম্যাগাজিনেই পাতে-না-পাওয়া লেখকদের ভিড়, বিশেষ করে পদ্য লেখকদের আনাগোনা। আর এসব কাগজে সম্পাদক নয়, সংকলকদের উপস্থিতিই চোখে পড়ে বেশি— অর্থাৎ বোবাজলে সবাই মাঝি। কিন্তু ঐ যে, এর মধ্যেও চোখে পড়ে আশ্চর্য সব উজ্জ্বল সারি সারি নাম—বগুড়ার ‘নিসর্গ’, চাটগাঁর ‘প্রসঙ্গ’, ‘লিরিক’, ‘কালধারা’, ‘কবিকৃতি’, ঢাকার ‘মাত্রিক’, ‘জীবনানন্দ’, ‘রোদ্দুর’, অধুনালুপ্ত ‘শ্রাবণ’— এমনি আরো কিছু পত্রিকা, ক্ষমা করতে হবে যাদের নাম আমি মনে করতে পারছি নে। তোমাদের ‘নান্দী’ সবে ভূমিষ্ঠ হল, দেখি দৌঁড়ে কতদূর যেতে পার।
চারবাক : অধুনালুপ্ত ‘দেশবন্ধু’ পত্রিকায় তৎকালিন প্রেসিডেন্ট কবিযশপ্রার্থী এরশাদের কবিতার প্রশংসা করেছিলেন আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট কবি। তার পূর্বে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় সেই তিনিই এরশাদের কয়েকটি কবিতা নির্বাচিত শিরোনামে ছেপেছিলেন। আপনার সম্পাদিত পত্রিকায় এই বিশিষ্ট কবিকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও বেরিয়েছে। ক্ষুদ্ধ তরুণদের মধ্যে অনেকেই অগোচরে তাকে ‘ক্যারিয়ারিস্ট’ কবি বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। অভিযোগ হিসেবে তারা এর সঙ্গে আরো যোগ করে বলে থাকেন, যে, তিনি ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে তৎকালিন সরকার পরিচালিত একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তার যথেষ্ট অবদানের কথা স্বীকার করেই বলছি, আপনি তাকে নিয়ে কেন বিশেষ সংখ্যা করতে গেলেন, দয়া করে বলবেন কি?
মীজানুর রহমান : এই প্রশ্নটিতে তোমরা যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছ, তাঁর নামটি প্রকাশ করার সৎসাহস তোমাদের নেই দেখে বেশ অবাক হলাম। তোমাদের মতো তরুণ-যুবাদের মধ্যে এই ডোরকো ভাবটা আমাদের মতো প্রাচীনদের ভাবিয়ে তুলেছে।
যাই হোক যাঁকে নিয়ে তোমাদের এই আড়েপাতালে যাওয়া, সেই ঘেরাটোপের শামসুর রাহমানকে ঘিরে যে বিশেষ সংখ্যাটি বেরিয়েছিল আমার পত্রিকায়, তার পাতা থেকে মারুফ রায়হান কর্তৃক গৃহিত ‘একটি অপ্রিয় সাক্ষাৎকার’ থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দেব। হাটে-মাঠে-ঘাটে শামসুর রাহমানকে স্তুতি, ব্যাজস্তুতি ও ব্যাজোক্তির ভিড়ে ছিদ্রান্বেষি মহলের কটুক্তিও কম শুনতে হয় না, যাঁরা তাঁর গুণগ্রাহি, তাঁদেরও। কোনো উক্তি তা যত অসত্যই হোক-না কেন, কানে তা যত কটুই শোনাক না কেন, বারবার উচ্চারণের গুণে তা যেন ধন্দের ঘোরে ফেলে এবং একসময় কানে সত্যও ঠেকে। এসব অসত্যভাষণ কবির হয়ে খণ্ডাতে হয় অনুরক্ত ভক্তজনকে। কিন্তু এই বিচ্ছিন্ন উচ্চারণ সবসময় অসত্য উদ্ঘাটনে তেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। এ ব্যাপারে কবির মুখোমুখি হওয়াই শ্রেয় জ্ঞানে তোমাদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব মারুফ রায়হানের সাক্ষাৎকারে শামসুর রাহমানের জবানিতে দাঁড়ায় এরকম : ‘যখন আমি ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ‘বিচিত্রা’র সম্পাদক ছিলাম, তখন হঠাৎ একদিন ‘বিচিত্রা’র কয়েকজন সহকর্মী প্রস্তাব করলেন যে, ‘শামসুর রাহমান মনোনীত’ শিরোনামায় উক্ত সাপ্তাহিকে কবিতা ছাপা হবে, যদিও পরিকল্পনাটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কেননা ‘বিচিত্রা’য় প্রকাশিত সব লেখাই সম্পাদক মনোনীত, তা না হলে সেগুলো মুদ্রিত হতে পারে না। আমি দৈবক্রমে কবি বলেই হয়তো আমার অত্যুৎসাহি তরুণ সহকর্মীরা এরকম একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তাবিত শিরোনামায় বেশ কিছু কবিতা প্রকাশিত হবার পর এই বিভাগের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল।
‘যা হোক, পরবর্তীকালে ‘বিচিত্রা’র নির্বাহি সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী এবং মাহফুজউল্লাহ (তখন তিনি এই সাপ্তাহিকে কর্মরত ছিলেন) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় রাষ্ট্রপতি এরশাদ স্বরচিত একটি কবিতা শাহাদাত চৌধুরীর হাতে দেন ‘বিচিত্রা’য় প্রকাশের অভিলাষে। ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ‘বিচিত্রা’ সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যম। তাই আমাদের কবিতাটি ছাপতে হয়েছিল। পরে তো প্রত্যেক দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় রাষ্ট্রপতি এরশাদের কবিতা ছাপা হয়েছে লাগাতার।
‘যে কোনো মানুষেরই কবিতা লেখার অধিকার আছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অনেক দুষ্কর্ম করেছেন, কিন্তু কবিতা রচনা, তার মান যাই হোক না কেন, দুষ্কর্মের অন্তর্গত নয়। আমি কাব্যক্ষেত্রে তাঁর প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছি, এ-কথা স্বীকার করি না। তিনি কি আদৌ প্রতিষ্ঠিত কবি? বরং তাঁর কবিতা বিভিন্ন সময়ে উপহাসিত হয়েছে। তাছাড়া কেউ কারো কবি খ্যাতি বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে না। একজন কবিকর্মী নিজেই তার পথ করে নেন।’ (মী.র.ত্রৈ. পত্রিকা, শামসুর রাহমান সংখ্যা, ১৯৯১, পৃ. ১৬৭-১৬৮)
তোমাদের আরেকটি অভিযোগ তিনি ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে, তৎকালিন সরকার পরিচালিত একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এর জবাবে আমি বলব, না তিনি কোনো সরকারি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন না। ঐ কালে অর্থাৎ ’৭১ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ (যা পরে দৈনিক বাংলা)-এর সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত আবুল কালাম শামসুদ্দীন। তোমাদের ইঙ্গিতটা তখনি আমি ধরতে পেরেছি। তাহলে এব্যাপারে ওঁর জবানিতেই শোনা যাক : মুক্তিযুদ্ধকালিন ন’মাসের প্রথম দু’মাস গ্রামে ছিলাম। জুন মাসে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ এ আবার কাজ শুরু করি বাধ্য হয়ে। ইচ্ছা করলে কলকাতায় চলে যেতে পারতাম পরিবারের সবাইকে দুর্গতির মধ্যে ফেলে রেখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতে পারিনি। আমরা যারা তখন ঢাকায় ছিলাম তখন কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউই পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম না। পঁচিশে মার্চের গণহত্যার পর কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই পাকিস্তান সরকারের পক্ষে থাকতে পারে না। ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এ সাত মাস চাকরি করেছি সত্যি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিনি কস্মিনকালেও। একথা আমার তখনকার সহকর্মীরা জানেন। যদি করতাম তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। ন’মাসে লেখা আমার কবিতা তাঁরা নিয়ে যেতেন না ক্যাম্পে, বিদেশে। আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য যাদের জিভ সবসময় অস্থির তারা তো অনেক কিছুই রটাবে।… আমি বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসি। যতক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, তখনও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রেখেছি মনে প্রাণে। যতদিন বেঁচে আছি এই আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশিল থাকব।… আমার চিন্তা-চেতনা-আদর্শ আমার কবিতাতেই রইল। বস্তুত আমার প্রমাণ করার কিছুই নেই। সত্যকে পাশ কাটিয়ে আত্মপ্রতারণার শিক্ষা পাইনি।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৯-১৭১)
আর তাই তো দেখি, অভিযোগের নানা ফানুস যখন সবার মনে, এরশাদের জরুরি আইন জারি হল সারা দেশে, যে আইন তাঁর ওপর বহু আগে থেকেই জারি হয়েই ছিল— সম্পাদকের সম্মানজনক চেয়ারটাকে কেমন ঘেন্না হয়েছিল তাঁর— যে চেয়ারে বসে কোনো কিছুই করার উপায় নেই তাঁর, বরং আছে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার গ্লানি, চাটুকারের অপবাদ। এরপর পরই শামসুর রাহমান ঠিক কাজটিই করেছিলেন— ইস্তফা দিলেন সম্পাদকের পদ থেকে। বেকার হয়ে গিয়েছিলেন বিরাট সংসার কাঁধে নিয়ে। ‘ক্যারিয়ারিস্ট’ হিসেবে তরুণদের কেউ কেউ শামসুর রাহমানকে আখ্যায়িত করে থাকেন। শামসুর রাহমান কি কচি খোকা যে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে এরশাদের মোসাহেবি করতে হবে? তাহলে তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও ‘ক্যারিয়ারিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হয়— কারণ তাঁর বিতর্কিত গান ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ না-কি দিল্লির দরবারে উপস্থিত ভারতেশ্বর ব্রিটিশ রাজার উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল!
চারবাক : লিটল ম্যাগাজিন কি?— এ প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন লিটল ম্যাগকর্মী লিটল ম্যাগাজিনের একটি ডিজাইন করেছিলেন। তার মতে লিটল ম্যাগ = আদর্শ + সংকট + চর্চা + বাজার + পাঠক … = পণ্য। কাজল শাহনেওয়াজ (বিকল্প কবিতা : ১৯৮৯, ফৃ স্কুল স্ট্রিট, ১৯৯৫/৯৬) অবশ্য ঐ পণ্য শব্দটি তুলে দিতে চান।— এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
মীজানুর রহমান : লিটল ম্যাগ কোনো ব্যক্তির সুন্দরিভবন থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসা অন্তরটিপুনির ফসল। এ ফসল তেমনি এক পণ্য যা বিকিয়ে দু’বেলার অন্নও ঠিকমতো জোটে না।
চারবাক : ‘একবিংশ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে আপনি পত্রিকা করছেন কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, পত্রিকা কেন করি, এর আগে আপনি আমাকে ‘বেঁচে আছি কেন, কেন এখনও মরে যাইনি’ ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে পারতেন। এ প্রশ্নটি যদি আপনাকে করা হত কিংবা এ মুহূর্তে করি, আপনি তাহলে কি বলবেন?
মীজানুর রহমান : আমার জবাব হবে— ‘বেঁচে থাকার জন্যেই পত্রিকা করি’। ছেলেবেলা থেকেই আমার যত চিত্তভোগ তা তো সব এই পত্রিকাকে ঘিরেই। তোমরা বলবে এ আমার বাড়িয়ে বলা। কিন্তু ধর কলকাতার মিত্র স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়োর হাতে যদি হাতেলেখা শিশুবোধ পত্রিকার জন্ম হতে পারে (১৯৪৬) এবং সেই পত্রিকাই যদি দশম শ্রেণিতে পড়াকালিন ‘ঝংকার’ নামে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, হবিবুল্লাহ বাহার ও শামসুননাহার মাহমুদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ঢাকা থেকে ছাপা হয়ে প্রকাশিত হতে পারে (১৯৪৯, ফেব্র“য়ারি), এবং আরো নানা পত্রপত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত হয়ে জীবনসায়াহ্নে এসেও এই একাত্তুরে বুড়োকাপের যদি ছুটি না মেলে, এরপরেও কি বলবে এটা আমার বাড়িয়ে বলা?
চারবাক : সরু কিন্তু লম্বা জাতীয় গাছ ধাবমান বাতাসের ধাক্কায় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ দৃশ্যের সাথে যাদের পরিচয় নেই, তাদের অনুমান গাছটি বুঝি দু’এক মিনিটের মধ্যেই মড়মড় করে ভেঙে পড়বে। মজার ব্যাপার হল খুব কম গাছের ভাগ্যেই এরূপ ঘটে। গাছটি সামনের দিকে একেবেঁকে হেলে পড়ে ঠিকই কিন্তু সাথে সাথেই তা যথাস্থানেই ফিরে আসে। তবে কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও ঘটে অর্থাৎ গাছটি সমূলে উৎপাটিত হয়। স্যাড জেনারেশন (রফিক আজাদ), কণ্ঠস্বর (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) পত্রিকার ভূমিকার কথা স্মরণ রেখেও বলছি যে, বাংলাদেশের সাহিত্য আন্দোলনে কোনো লিটল ম্যাগই ‘গাছটির সমূলে উৎপাটিত’ হওয়া বলতে যা বুঝায়, তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেনি। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন কি?
মীজানুর রহমান : তোমাদের প্রশ্নটা ঠিক বোঝা গেল না। যেটুকু বুঝতে পেরেছি তাতে বলা যায় প্রায় সব লিটল ম্যাগই, তা বিখ্যাত হোক, অখ্যাত হোক বা কুখ্যাতই হোক, বাংলাদেশের সাহিত্য আন্দোলনে কিছু-না-কিছু অবদান রেখেই সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। ‘সমকাল’ (১৯৫৬), ‘অগত্যা’ (১৩৫৬), ‘ঝংকার’ (১৯৪৯-৫০), ‘হুল্লোড়’ (১৯৫১), ‘মিনার’ (১৩৫৫), ‘খেলাঘর’ (১৩৬২), ‘অনন্যা’ (মহিলাদের সাহিত্য পত্রিকা), ‘পূর্বমেঘ’ (১৩৬৭), ‘কণ্ঠস্বর’, ‘কবিকণ্ঠ’, ‘না’ (১৯৬৪), ‘স্বাক্ষর’ ইত্যাদি পত্র-পত্রিকা আজ সমূলে উৎপাটিত, কিন্তু এসব পত্রিকার হাত ধরেই তো পরবর্তীকালের প্রজন্ম নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে উৎসাহবোধ করেছে এবং আজও করে চলেছে। আর যে দু’টি লিটল ম্যাগ সামনের দিকে এঁকেবেঁকে হেলেপড়েও আজও টিকে আছে, সে তো অধমের ‘ত্রৈমাসিক পত্রিকা’ এবং মুস্তফা নূরউল ইসলামের ‘সুন্দরম’।
চারবাক : ‘শীতের বরফ গলে অগভীর ছোট একটা পুকুর হয়েছিল, তাতে গাছপালার, আকাশের, মেঘের, সূর্যের, চাঁদের, ছায়া পড়ত। সেই উত্তেজনায়, ঝড় হলে তার জল সাড়া দিত। তারপর, একদিন খুব খরা এল এবং অপ্রতিহত রোদে ধীরে ধীরে সবকিছু শুকিয়ে গেল। চারপাশের বড় বড় গাছগুলো যে যতটা পারে পুকুরের জল শুষে নিতে লাগল’। এটি রবার্ট ফ্রস্টের একটি কবিতার ভাববিশেষ। কবিতায় তিনি পুকুর বলতে ‘সৃজনশিল তুমি-আমি’ এবং খরা বলতে ‘চাপিয়ে দেওয়া’ শক্তিকে ইঙ্গিত করেছেন। সেই সাথে তুলেছেন, পুকুরটা এমন কি অন্যায় করেছিল? অনেকের ধারণা, শিল্পীকে কোনো কিছু অমন করে চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কেবল প্রতিষ্ঠানেরই আছে। বাজারি কাগজ তার একটি— এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
মীজানুর রহমান : রবার্ট ফ্রস্ট কি বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনি বোঝেন ভাল, তবে এটা ঠিক পুকুরটা কোনো অন্যায় করেনি— প্রকৃতির চাপিয়ে দেয়া খরাই যত নষ্টের গোড়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাগজ হলেই যে সবসময় লেখকদের ওপর তাদের খড়গ চেপে বসবে এমন কোনো কথা নেই। তাহলে তো ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘সচিত্র ভারত’, ‘দেশ’, ‘মোহাম্মদী’, ‘সওগাত’, ‘মাহেনও’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় যে সমস্ত খ্যাতনামা কবি ও সাহিত্যিকেরা লেখালেখি করেছেন বা আজও করছেন— তাঁরা সবাই একাট্টা হয়ে বর্জন করেননি তো কোনো কাগজ। সস্তা ‘বাজারি’ ‘প্রতিষ্ঠান’ শব্দগুলো সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়— কোনো কোনো বিশেষ কাগজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
চারবাক : হোর্হে লুইস বোর্হেস-এর ‘অনধিকার প্রবেশকারি’ গল্পটি চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছেন পরিচালক ক্রিস্টেনসেন। মূল গল্পে, একই নারীকে দুই ভাই উপভোগ করে। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যাপারটি ঘটে আলাদা আলাদাভাবে। কিন্তু পরিচালক ঘটনাটি বিকৃত করে অন্যভাবে দেখিয়েছেন। সিনেমায় দেখা যায় একজন নায়িকা বস্ত্রহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বাম দিক থেকে এক ভাই এবং ডানদিক থেকে অপর ভাই মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এরপর, তারা একই সাথে যৌনকর্মে মিলিত হয়। গল্পকার বোর্হেস এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ব্যাপারটিকে ‘ভয়াবহ হাস্যকর’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, চলচ্চিত্রকার এক্ষেত্রে যা ইচ্ছে তাই-ই করতে পারেন, তবে গল্পের শিরোনাম এবং লেখকের নাম ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই ক্ষেত্রে সমন্বয় কিভাবে করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মীজানুর রহমান : লেখক জীবিত থাকলে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেই কোনো কাহিনির চিত্রায়ণ করা উচিত। তাঁর গল্পে বোর্হেস যা বোঝাতে চেয়েছেন তার ঠিক উল্টোটাই বুঝেছেন পরিচালক, ফলে চলচ্চিত্রায়িত গল্পটির বারটা বাজিয়েছেন তিনি, যার পরিণতিতে সমস্ত ব্যাপারটিকে তাঁর ‘ভয়াবহ হাস্যকর’ ঠেকেছে। অনেক সময় সিনেমার ভাষায় রূপান্তরিত করতে গিয়ে পরিচালকেরা কাহিনির কিছু পরিবর্তন, পরিবর্জন করে থাকেন-কিন্তু একাজটা করতে গিয়ে দেখতে হবে এতে যেন কাহিনিকারের মূল-বক্তব্যের কোনো হানি না ঘটে। কাজেই চিত্রনাট্যটি ক্যামেরায় বন্দি করার আগে কাহিনিকারের দ্বারস্থ হওয়া খুবই বাঞ্ছনিয়। অন্যদিকে, কাহিনিকার মৃত হলে, গল্পটির ভেতরের নির্যাসটুকু বোঝার অভাব ঘটলে পরিচালককে বোদ্ধা সমালোচক-গবেষকের দ্বারস্থ হওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করি।
চারবাক : আপনি সময় করে, বিশেষ অসুস্থতা সত্ত্বেও, আমাদের জন্য সময় বের করে আনতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদ।
মীজানুর রহমান : তোমাদেরও ধন্যবাদ আমাকে এরকম কতগুলো জটিল ও কুটিল প্রশ্নের সম্মুখিন করবার জন্য। তবে আমার শেষ কথা কি জান, বাংলাদেশে সাহিত্যকর্মটা ষাটের যুগে যতটা উঠেছিল, তারপর আর উঠতে পারল না। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানির মতো কিছু তারকার উপস্থিতি টের পেলেও, বেশি দিন তা স্থায়ী হতে দেখি নে। তাই বলছি কি, পশ্চিমে পোস্ট-মডার্ন পোস্ট-মডার্ন করে যত চেঁচামি করুক, ওরা ওটা ওদের একটা সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে করছে, ওদের সাহিত্যের ভিতটা ভারি শক্ত— ওরা ওরকম ভাবনা করতেই পারে। কিন্তু আমরা? ভিতটাই যেখানে নড়বড়ে সেখানে অধুনান্তিক প্রশ্নে চেঁচামেচি করে সময় নষ্ট না করে বরং পথিকৃতেরা যা দিয়ে গেছেন, রিলে রেসের মতো তাঁদের ভাবনাগুলো আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করি নে কেন। বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে সাহিত্যে, চিত্রশিল্পে, সংগীতে আগে কিছু একটা দাঁড় করাও তো। আর এই দাঁড় করার জন্য প্রচুর পড়ার বিকল্প নেই— যে ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে একেবারে নেই। নিজের লেখার গন্ধ শুকেই কাজ হল বলে মনে করে। তাই বলি, রেসের উল্টো দিকে দৌঁড়লে কোনো লাভ নেই। তরুণেরা যদি কাজটা করতে পারে তাহলে ভাবি গবেষকরাই বলবেন এই রেসে তোমরা হেরেছ না জিতেছ।
** লিখিত প্রশ্নের ভিত্তিতে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন চারবাক সম্পাদকমণ্ডলির অন্যতম সদস্য মজিব মহমমদ, সহায়তা করেন আরণ্যক টিটো।
বর্ষ ১, সংখ্যা ১, ফেব্রুয়ারি ২০০২
চারবাক রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, মীজানুর রহমানের সাক্ষাৎকার — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।