ভাঙ্গন
আপনার রক্ত কণা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়,
আহ্… ভাঙ্গন কি আজকের? সৎ ভেঙ্গে ভেঙ্গে সতীদাহ,
গুণে গুণে একান্ন পীঠ,
চিৎ ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিকার, ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আনন্দ
পায় নাই ভয়ের আকার?
সাংখ্য ভেঙ্গে ভেঙ্গে স্মৃতি।
বৃক্ষ ভেঙ্গে ভেঙ্গে হিজল কাঠের চিতা,
সমুদ্র ভেঙ্গে ভেঙ্গে সেই সে শঙ্খের আর্দ্রতা করুণ,
কত কত নিষেক ব্যর্থ রাত; তাহাদের কথা
কেবল রঘু ডোম জানে।
রক্ত যাদের জমকালো, তারা তো প্রচার করিবে মহিমা রাষ্ট্রের
দেশভাগ নিয়ে রচিবে অভিসন্দর্ভ জবরদস্ত।
কিন্তু হে আমার রক্তের অধিকারী, তুমিও কি ভাঙ্গছ নিজেকে?
কৈও
সাংখ্য কৈও তুমি তারে!
কতটা উদাসীন হৈলে তুমি,
আমার ত্রিগুণে
রহ আগুনরহিত, মোহ মোহে প্রতিবিম্বিত
হে কূটস্থ কূট! নিজেরে জানার তরে ‘হ্ ও’
বলিলেই ‘হৈ’— কিছুকাল লীলারত!
মিলনই মৌলিক এ আপ্তবাক্য
শেষতক নির্ব্বাণ কামে চুর চুর
চিরকাল
বিরহৈ ভালবাস।।
আহ্… আমিই আমার লীলা…
তুমি? দেখে যেতে পার শুধু!
বরং
নিওনা বিরতি
বিপরীত রীতে বরং
ওলট
টানটান মিলনরেখা আঁক
চল চলি
যেমন অর্জ্জুনের তীর
মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে থির গতির গর্ভে!
হৈতে চাইলে পাথর
হ্ও; তবে
জলকে চলে দেখ কেমন
প্রচণ্ড গর্জ্জন শেষে
কোষে কোষে সংশ্লেষে এই শরীর
ছুঁয়ে নিজ ভাষা চিনে নাও সখা।
হৈতে চাইলে পাথর
পাহাড়ের ইতিহাস নিও জেনে
জল জমে জমে জন্মাও নাই সখা?
মাঝে মাঝে তব সুষুপ্তি হোক
আমাদের মনের বিন্যাসে
তুরীয়’ই যে প্রধান সখা!
জানি বন্ধু জানি তোমার।।।
থাক
অথচ হৃদয় আজও সম্প্রসারণশীল
ছায়াপথের মত অগ্নিবিন্দু জমে জমে
শূন্যে হঠাৎ নয় এই হঠাৎ দেখা
কিংবদন্তী ভাষার স্বভাব ঠিকৈ জানে।।।।
সখা থাক… তুমি থাক বর্ত্তমানে…
ডাক
যথার্য্য নাম ধরে
ডাকলেই
মেলে সাড়া
তবে
নাম নিলেই কি হয়
ক্ষণ লাগে না!
প্রয়োজনে জন কি থাকে?
উপাসনা?
সাঁইজী কহেন
মিলন মানেই তো কর্ম্মবাসনা!
যতদিন উচ্চারিত না হবে ঐ নাম
না হৈবে দম বিনিময়
না শুনি সহায়ক স্বর
রচিত না সময়
ততদিন
সকল আঙ্গুল
কর্ত্তিত চলন হৈতে
চুম্বন হৈতে তোলা থাক
লবণের দানা
জ্যামিতির ভাষা বিশ্রুত
মথ প্রজাপতির আকার পাবে না।
আছ?
বলে আর বিভ্রান্ত কর না।
থাকব না কোথাও বস্তুভাবনা
বলবো না কক্ষণো
মুখ খসে গেছে
চেহারা হৈতে
স্বাদে নিলে আপেল
যেমন
খ’সে পড়ে
দেহ …আকাশ তারে আর করে না গণনা।।।।
উচ্চারণ যোগ্য হ্ও
হে নাম!
নতুবা যাও…
গ্রন্থগত পরিণতি
নাও বেছে।।
ক্ষমায়
রেখা খা খা করে, বিনীত নিয়ত সরে, বাক ছুটে গেলে ফেরত তাহাকে আনা ভব্যতার কব্জায়, যে চেহারা হারিয়েছে, যাহা জন্মে নাই… অ-ক্রিয়ার নিয়মে তারে অজ বলা যায়। নিয়ম নিত্য হলেও তাতে রক্তপাত আছে, নামের পতনে তন্ জ্বলে গেলে কী করে থাকে আশ্রয় ক্রিয়াপদে! উত্তাপ হৈতে উৎ সরে গেলে, আগুনের ধরম, নেভানো বারণ, বার বার মাতরিশ্বা মায়া, চরণ ধরে আসে, তবুও বাজারে যাওয়া হাতে করে বিষয়-আশয়।। সভ্যতা গড়েছে, সভ্যতা ভেঙ্গেছে শব্দমরুৎ, পায়রা উড়েছে জ্যামিতিক হারে, আকাশ খুলে কি আসে বাস্পীয় ক্ষমায়, দেখি নাই, দেখা হয় নাই, দেখিব কি …শস্য-স্বভাব কক্ষণো তোমায়।।। আমার সোনার বাঙ্গালা আমি তোমায় ভালবাসি। গগনের গান না জেনে কি আর সমুদ্রবচন… অন্নের কোষে কোষে ভাব জনম লয়।।
কী করে হবে বল প্রেম
কী করে রুখবে বল?
ছিল ত ক্ষেতি
গমরঙ্গা শালিক তুমি খুঁটে খেতে
মেঘে মেঘে নামত দানাদার পয়ার
অগ্রহায়ণ বস ত এসে মৃদু
কার্ত্তিকের শেষসঙ্গে লোবান
চৈতীচিহ্ন ধরে
বলেছিলে আগুন-ই ত!
কান্দাহার হতে রুহবাব কাঁখে করে
এসেছিলে সখা, নাকে নোলক পড়েছিলে
কেশে কেশে দীপক রাগের শ্রী
বেজেছিলাম
কলিঙ্গ নদী— কুলকুল…
তারপর
প্রগলভ ঘুম
শাদা বক উঠল নড়ে
কুয়াশারা রূপসী নয় আর
ঠোঁটে তাহার জীয়ল মাছের মতন
কুরুক্ষেত্র প্রথম কাঁপে
মৎস্যগন্ধার বাঁকে
নিয়োগের নাম নিলে গাঙ্গেয় দম হারাবেই
সেতুদম্ভ উঠে গেল সভ্যতালোলুপ
এরেই ধর্ষণ বলে
নর নারা নারী নারায়ণ
জখমী সহজের ভাষা
পুরুষার্থ হয়ে গেছে নামপরায়ণ
ক্ষেত্র কী করে বাঁচাবে বল আর নিজ সম্ভ্রম
ক্ষেত্রজ্ঞ মন্বন্তর বোঝে অতি
পুঁজিপতি পতিত পতন
তনুর দেহ ছিন্নভিন্ন করেনি?
কি করে হবে বল প্রেম
ভয়হীন?
ভয় পেয়ে দেবতার দল
তমিস্রা ভাঙ্গেনি?
মহাসুরতের রীত
বর্জ্জনে কী করে জন্মাবে প্রেম
বল
হাবিল কাবিল
হননের ডাক শুনে আবাবিল
উড়ে গেছে বাকবন্দী
চঞ্চুতে ধ্বনির বদলে প্রস্তর
কাহার তৈয়ারী? কাহার লোভে পুড়েছে ইট
উদ্ধত পিরামিড আঁশে আঁশে
ক্ষমতার পসার জমায়নি?
তাম্রযুগ এলে
ত্রিশূলে ত্রিশূলে গুমরে কাঁদেনি প্রজনন?
দমের ভেতর অন্ন ছিল
ক্ষুধ জানা ছিলনা ত
ব্যাধের নিয়তি প্রবল
তুনের নিপূণ তীর
বিঁধল কার গোড়ালীতে
সাপ নির্ব্বিষ কী করে হবে বলো বিশ্বরূপ?
বংশ-ঐ যদি
চাহ একমাত্র
কী করে করবে রোধ ধর্ষণের প্রাদুর্ভাব বল?
সকল জঙ্গলে
তুমি বিদ্যুৎপ্রবণ
নদীস্রোত দাদনে বেঁধে
শস্যভাণ্ডার খুবলে জ্বালানী’র লোল
বীজের ভেতর বীজাণুর পুর
শুশুকের বুক দেগে বন্দর
সড়ক হৈলে পরে বাস্তুভূক
জুমভূমী উপড়ে পর্য্যটনপ্রবণ তুমি
মান্দি মেয়ের তরে বড় প্রসাধণ-পরায়ণ তুমি
স্খলনে আহ্লাদ তোমার
সম্পর্ক পিষে পিষে তত্ত্বপ্রবণ তুমি
সন্দর্ভপ্রবণ, যংশনে যংশনে রাষ্ট্রপ্রবণ তুমি
বহু বহুদিন পর মুখোমুখী বসিবার ক্ষণে
বিশুষ্ক হয়ে আসে যদি কথোপকোথন।।।
কী করে রুখবে ধর্ষণ বল
শব্দবিমুখ তুমি দৃশ্যপ্রবণ
নগ্নতা থুয়ে পোষাকপ্রবণ তুমি!
শেখ মাহমুদা সুলতানা রোমা রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, শেখ মাহমুদা সুলতানা রোমা’র কবিতা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।