জোয়ার
(আরুকে)
শিউরে ওঠা তরল অন্ধকারে
অজস্র জোনাকির
হাওয়ায় ওড়ানো স্ফুলিঙ্গ!
সহস্র বাজপাখির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মতো
তোমাকে দেখে ফেলি নীলাঞ্জনা—
সেখানে করুণ মিনতি ভেঙে পড়ে
আচ্ছন্ন পৃথিবীর অপূর্ব এক বেদনায়
সীমাহীন অভিমান উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে—
যেন তুমি অসহ্য প্রেমের প্রতাপে
দিশেহারা সমুদ্রের উত্তুঙ্গ ঢেউয়ের ঝাপটা
যেন কল্পনাবিধৌত ঋতুবতী ফসল!
জড়িত কণ্ঠে মূক সময়
চৈতালি মিথের স্কেচে
তোমাকে দুর্নিবার এঁকে ফেলে
অপার্থিব তুলির স্বতঃস্ফূর্ত আঁচড়ে …
বিষণ্ণ রুমাল
কোথাও পাহারাদার নেই
খোলা আকাশ
উদিত সূর্য ফণা তুলে তাকায়
অথচ রেখার অগুনতি নিনাদে
ভেসে যায় হাওয়া—
গারদের শিক ভেঙে
এসেছি প্রাচীন ভূখন্ডে
অতঃপর নিশানা উড়িয়ে
পরস্পরকে আলিঙ্গন করি
পুনরায় ফিরে এসে
সঞ্চারিত আত্মিক মিত্রতায়
দোল খায় প্রমত্ত বেদনা
অখন্ড শরীর ধীরে হয়ে ওঠে
মিছিলের প্রথম পতাকার মতো
বিষণ্ণ রুমাল
মুছে ফেলি
দীর্ঘ যাত্রার সব বাঁক…
অনুর্বরার প্রতি
কী এক বিপন্ন ঘোরে
কেটে যায় দিনরাত—
এই অচেনা গদ্যের সুর
চেনা পদ্যের মুহুর্মুহু করতালি
বিষাদ ছুঁয়ে দেয় প্রত্যহ!
তবুও করিডোর থেকে করিডোরে
হেঁটে যায় সংশয়ী আলাপ
কখনো বিলুপ্ত ডাক শুনে
ভর করে বিষয়ী দুঃখ—
দুঃখকে বলি বিদেয় হও
সে আর কী তা শুনে?
ফিরে বসে কাকতাড়ুয়ার কাঁধে
রাতের জলাঁধারে গুলিয়ে ওঠে সময়
অরক্ষিত হৃদয়ের কোণে ঘুরতে থাকে
প্রতিস্থাপিত কাঁটা—
জীবনের বাঁকে বাঁকে
তিনভাগ জলের সমান
চিরবঞ্চিত ফসল মৃত পড়ে থাকে
তবে কী অনুর্বরা, এই তোমার নিয়তি?
ফুরিয়ে যায় দীর্ঘ যাত্রা
ডান হাতের পাঁচটি আঙুল
কীভাবে এঁকে ফেলে
সমস্ত দুনিয়ার
লড়াইয়ের
কথা—
বুলেট কিংবা গোলাপে
প্রেমশূন্য ঘ্রাণে
আমৃত্যু—
কেবল আলিফের দিকে চেয়ে
চক্রাকার দ্বীপে তলিয়ে যায়
অথচ রেখার অগুনতি নিনাদ
কর ছুঁয়ে গুনতে গিয়ে
কেন জানি শূন্য হয়ে পড়ে!
বর্ণিল তাপে ফুরিয়ে যায় পৃথিবীর দীর্ঘ যাত্রা …
অপঠিত চিঠি
কতোকাল বুকে পুষে
রেখেছে পাহাড়—
অথচ
অর্গল লাভাস্রোতে
শুকিয়ে যাচ্ছে ধ্যানস্থ সবুজ!
শ্রাবণ—
এখানে রয়েছে মুগ্ধতা
নেই কোনো চিরায়ত মগ্নতা …
আমি চলে যাচ্ছি
এই গ্রাম-শহর-দেশ-কাল
সকল সীমানা পেরিয়ে …
বলছি শোনো—
নিরাপদ দূরত্বে আর থেকো না
থেকো না দ্বিধাময় স্বপ্নের আবডালে
এখানে অগুনতি মুন্ডুহীন শরীর
যেখানে স্বার্থের সন্দর্ভ
রয়েছে বিব্রত বাতাসের ফিসফাস—
এমনকী শব্দব্যবসায়ীর মোহে
দয়ার্দ কমনীয় জলে উজাড় করো না
নদীর কলতানের তানপুরা …
মৈথুনকামী মন
তোমারই ভেতর
অঙ্কুরিত অন্তঃসত্ত্বা!
ইতি,
অন্তর্বর্তীকালীন বিরহ।
সাজ্জাদ শাকিল রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, সাজ্জাদ শাকিলের কবিতা — লেখক নির্দ্ধারিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।