পরমোত্তীর্ণ ঢেউ

শরীর থেকে ঘষেমেজে তুলে ফেলি সকল ঢেউ
আমার সম্পূর্ণ শরীর-সমুদ্র, দীর্ঘকাল ভেজা
আরক্ত গাঙ্গেয়, এইখানে উত্থান-পতন, রক্তজীব
জ্বলন্ত আমার কোষ, বংশগতির লতিকা ধরে
আমার সমুদ্রে লেখা আমার জীবন, ভেসে আছে
জলের ওপরে বিচিত্র গাঙেয় রক্ত, অববাহিকায়
আমার মেধার কুহক পুরুষ, শরীরের কুহক প্রকৃতি
সকল অভিযোজন আত্মস্থ করে সমুদ্র হয়েছে
পরমোত্তীর্ণ ধ্বনি— ঢেউ, আমার শরীর থেকে লেখা

ধানপাতা কাঁপছে পপসংগীতে

একটা পথ ত আমি পাব
যে’টা নূতন ও অভিসন্ধিপূর্ণ!
হেক্টরের পর হেক্টর জমীতে চাষবাস
ফসলের বৈচিত্র্যপূর্ণ বানান
তরকারীর ঝোলের রসালো ইমেজ
ঈষৎ বাঁকানো লাঙ্গল
সতত বিরাজমান গরু
বন্ধুত্ত্ব পাতে— ট্রাক্টর, শ্যালো মেশিন,
ঘাড় ফেরানো কোদাল,
কাদামাখা আনুপূর্ব্বিক স্মৃতি
যা লিখেছিল— একৈ জমীতে
বারবার বছর বছর
বিয়ানো ফসল, আপোষনামা রফা করে।
হেলেদুলে জগৎ ঘুরে গেছে
পঠিত-ও হৈয়েছে একৈ লেখা
বিভিন্ন রোদে, বিভিন্ন আলো
পথের রেখায় গিয়ে
পাতার বর্ষণ দেখে,
যাঞ্চা করে— পথ বুঝি ঢেকে দেবে
আলোর জোয়ারে;
তক্ষণ দীঘল প্রেমের অনুভূ্তি হয়,
পাতার সাথে কেলি করে করে,
আহা, শরীর এক বঙ্গোপসাগর!
কামের প্রবল প্রতাপে কামড় দিলে
মাটী ফেটে যায়,
ফাটা উদ্যানে জলের বীজ ঢেলে
কর্দমাক্ত করে ঢলঢলে গিঁট খুলে
কী কোমল তনুমনপ্রাণ
উদার সাংগীতিক দেহ
ভরে রাখে বীজ কোষে কোষে।
আস্ত সূর্য্যথালা হাতে খেতে বসে
দিনের পেয়ালা জমা রাখে
যতসব পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ,
এবং রাতের কাঁধের শূন্যতা
পরিবহণ করে যতসব চাঁদ ও তারা।
ফসল, এই প্রধান বক্তব্য
আমি লিখে গেছি আবহমানকাল…
ধানপাতা বাতাসে কাঁপছে
পপসংগীতের সুরে, গণবাজনাদার দল
মার্চপাস্ট করে বলছে— পেকেছে ধান,
গিট্টু ঢিলা, আবরু আলগা
সোনালী, সোনালী তা’রে দেখে জেগে ওঠে কাম
পূর্ণ যৌবন, যেন শোষণ করে নিই রস
যেন পিষে তুলি ছাল বের করে আনি মূল!
টুপটাপ ঝরে পড়ে, ঝরার এই কৌশল অবিনত
যেন-বা রক-আঙ্গিক,
পূর্ণধ্যানে তা’রেই পেতে চেয়েছি নূতনে নূতন
আর ভরিয়ে দিতে চেয়েছি র‍্যাপ-গীতিতে।
পাতার অবিস্মরণীয় সন্ধ্যায়
খেলা শুরু হয় যক্ষণ পাড়াগাঁ জুড়ে
নূতন গন্ধ হেমন্তে,
শরীর ঢলঢল যক্ষণ মাতোয়ারা
কৃষকের আগ্রাসী শরীর নাড়ার বেদনা ভুলে
ঝাঁপিয়ে পড়ে পাতার ওপর,
পাতাও প্রভাবিত বন্য
বিচ্ছিন্ন করে ধান, পাকা ফলের
টইটুম্বুর রসে আওয়াজ তোলে জ্যাজের
এ অপ্রতিহত সুর শুনতে শুনতে
দক্ষিণের বাতাস উত্তরে চলে যায়
এ-কোণের বাতাস ঐ-কোণে…
অপার প্রেমের জালে বেঁধেছে সে
তুলি তারে কী করে মাঠ থেকে—
আমার দেহ মিশেছে স্রোতের ব্যাখ্যায়
তা’র নিজস্ব গতি ও জ্ঞান
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে কোথায়…

ফসলের মাঠে এসব ঘটছে
ধানপাতা কাঁপছে পপসঙ্গীতে
আমার আত্মার ধান
নূতন সুরে রোপিত হচ্ছে

পরাবাস্তব কবিতা

এক.

কী চেনাও আমাকে
সন্ধ্যার পাশে শুয়ে থাকা ওই সাগর!
আমার মেয়েই বলতে পারবে ভাল
তা’র কাছ থেকে পরাবাস্তব কবিতা শিখি
আমি মাঝেমধ্যে…
একদিন কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে—
তা’র এক স্যান্ডেলের ছবি অন্য স্যাণ্ডেলের
ছবিকে কামড়ে ব্যথা দিয়েছে
বিপন্ন ছবিটির ভেতর খুঁজে দেখি
কোথাও কোন আঁচ লেগেছে কি-না
প্রশ্ন তো সংক্রামক এক ব্যাধির মতৈ
যক্ষণ উত্তর খুঁজেও পাইনা— কেন
আকাশ কামড়ে ব্যথা দিল তা’র নাকে

দুই.

‘মা ঐখানে দূরে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে’
বিগ বাজেটের ছবির দৃশ্যের মত
মেয়ের মুখনিঃসৃত ঐ কথার সাথে
আমার ভাব-ভাবনার যে ফারাক
উহাকে কী পরাবাস্তব বলা যায়!
শব্দের বিন্যাস ও প্রয়োগ, বাক্যের
গঠন ও অর্থের মধ্যে যে বৈচিত্র্য আনে
আমার ও মেয়ের পার্থক্য ঠিক সেই,
এই সন্ধ্যা আসি আসি বিকালে নিকেল
চুড়ি পরা মেয়েটার কাছে ‘মহামারী’
শব্দটা ঠিক ততটাই দূরের যতটা
পরাবাস্তব শব্দের সাথে আমার…

তিন.

নূতন শব্দের ভোর কে এনেছে
কে এনেছে আমার মেয়েটি ছাড়া
শব্দের সংকটকালে ভরসা রেখেছি
দু’চারটা খুনে শব্দের সাক্ষী হৈতে
যাতে আত্মার অবিকল ধ্বনি
যাতে এমনসব আত্মীয় শব্দের
আড়াল ভেঙ্গে দূর্মর হয়ে ওঠে
নিজেরে খুব শিক্ষানবিশ মনে হয়,
নূতন শব্দের ভোর দেখেছি মেয়ের চোখে
ওখানে যন্ত্রস্থ পাণ্ডুলিপি
ওখানে পৃথিবীর নূতন ভাষার উদ্ভব

ট্রাম্পেট

বাজাচ্ছি ট্রাম্পেট
সুরের ভেতর রক্ত রক্ত অনুভূতি
আমার মা, প্রকৃতি— সংস্কৃতি
আমার মা, প্রবহমান সৃষ্টি
বাজাচ্ছি ট্রাম্পেট
আমি বিশ্ব অবতার
মা আর আমি মিলে ব্রহ্মাণ্ড!
আমার চোখ তো লাল
আর হৃদয় রক্তাক্ত
বাজাচ্ছি ট্রাম্পেট
ভীড় করে বাবার উজ্জ্বল চোখ
আমার বাবা, পদাবলী কীর্ত্তন
আমার বাবা, পথের রাজা
বাবা ও আমি মিলে নভোতল ভূখণ্ড!

প্রগাঢ় পাহাড়

কোন প্রত্যাখান নেই
যতবার গিয়েছি পাহাড়।
যত ঢুকেছি প্রগাঢ়
বহিরাগত আবেগ লুপ্ত।
যত হেঁটেছি মাতাল
আত্মার সকল ধ্বনি চুপ।
গেয়েছি যতটা গান
সূর্য্য বিলিয়েছে তত আলো।
কেন শুনবো না বলো
স্তুপের মাটী গানের গাছ,
আমার সকল ক্লান্তি
আরক্ত রঙ্গীন উছল বয়ান
মৃদু মৃদু ঝরে পড়ে…

কোথায় পাব তা’রে

সমুদ্রেই সম্ভবত। জলের ভেতর? সবুজ বর্শাফলক গেঁথে দাঁড়িয়েছে যে গাছটা,
তা’র আয়ু? নিবিড় সান্নিধ্য। আমাদের পরস্পর। খোলা খাতা। আঁকা স্কেচে
ভরে যাচ্ছে দিনলিপি। কমে যাচ্ছে কথা। মৌন মৌ্ন লাগে। খুঁজি, খুঁজি তা’র।
সে কোথায়?
হাতে বল্লম খুঁজি শিকার। মানুষের মত। কোথায় পাব তা’রে? না চাইতে চাইতে
তোমার কাছে এসেছি, না পাইতে পাইতে তোমারে পাব বলে। তোমারে পাব বলে
স্মৃতির দক্ষিণ জানালায় হু হু বাতাস নিয়া বসে থাকি। আমার দীর্ঘশ্রম ঘাম।
আরক্ত দরোজায় ভেজানো আমন্ত্রণ খোলো… ঢুকো… এবং নেমে পড়ো…