রাতুল তার আম্মুর কাছে ‘গ’ ও ‘ঘ’-এর পরিচয় জানতে চাইলে তার আম্মু তাকে বলল, এ জন্য তোমাকে কিছু উদাহরণের সাহায্য নিতে হবে। আর আমিও তোমাকে উদাহরণসহযোগে বুঝিয়ে বলব। যেমন: কোথাও যেতে হলে একপা উঠালে আরেক পা থামাতে হয়। অর্থাৎ এক পা যখন সম্মুখে যাওয়ার জন্য সক্রিয় গতিশীল হবে তক্ষন অন্য পা স্থিতিশীল থাকবে। এইভাবে ধাপে ধাপে গমন হয়। এই দুটা পর্য্যায়কে একত্রে গ ধারণ করে আছে। সুতরাং বলা যেতে পারে গ বর্ণটা গমন ক্রিয়ার ধারক।
মজার বিষয় হল, গমন করা আর যাওয়া দুটা কিন্তু এক না।
রাতুল তার আম্মুর কাছে পুনরায় জানতে চাইল, যাওয়া আর গমন এককথা নয় কেন আম্মু?
তার আম্মু তাকে বলল, বাংলায় ‘গ’ দিয়ে যেমন গমন ক্রিয়া বোঝায় ঠিক তেমনই ইংরেজীতেও গো দিয়ে গমন ক্রিয়া বোঝায়। ‘গ’ শব্দটা পৃথিবীর সকল ভাষাতেই আছে। তবে বাংলা বর্ণমালার ‘য’ বর্ণে যাওয়া হয়। ‘য’ বর্ণটা ‘ই’ এবং ‘অ’ দিয়ে সৃষ্ট। ই-তে সক্রিয়ন আর অ-তে অস্তিত্বন। ঐ যে বললাম, এক পা সক্রিয় হলে আরেকটা পা অস্তিত্বে অবস্থান করে। গমন ও দাঁড়ানো, পুনরায় গমন ও দাঁড়ানো, এইভাবে ক্রমান্বয়ে গমন। ধর, রফিক শফিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। কোথাও গেলে যাওয়া ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু যদি বলি রফিক শফিকের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। যক্ষন যাচ্ছে তক্ষন তো এক পা তুলছে আর আরেক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। পুনরায় স্থির পাকে গতিশীল করছে আর গতিশীল পাকে স্থিতিশীল করছে। তক্ষন যাওয়া ক্রিয়া চলছে। সুতরাং তুমি ‘ই’ ও ‘অ’ সম্পর্কে যদি বুঝে থাক তবে য দিয়ে যাওয়া ক্রিয়ার বিষয়টিও বুঝতে পারবে। তবে আমরা মনে রাখব, গ-তে গমন বোঝায়। যেখানে গ সেখানেই গমন ক্রিয়া আছে।
আচ্ছা আম্মু, গটগট করে হাঁটলে গ-এর সাথে ট কেন যুক্ত হয়? রাতুল পুনরায় তার মায়ের কাছে জানতে চাইল।
তার আম্মু তাকে বলল, যক্ষন কেউ গটগট করে হাঁটবে তক্ষন গামীর গমনে একটা টঙ্কারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আমরা তো জানি যে, ‘ট’ বর্ণে টঙ্কারণ। ‘ট’ সম্পর্কে পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে। এক্ষন শুধু জানব, পাকা রাস্তায় দ্রুত গমনে জুতার গোড়ালী থেকে এই গটগট শব্দটা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু গট শব্দটা আলাদা করে ব্যবহৃত হয় না। যোতা পরে পাকা মেঝেতে বা পাকা রাস্তায় চলার শব্দ বুঝাতে এই গটগট শব্দটা ব্যবহার হয়।
রাতুলের মাথায় প্রশ্ন এল গ-তে যদি গমন হয় তাহেল ‘গ’ কোথায় গমন করে? গ-এর বসতবাড়ী কোথায়? সে যক্ষন কোথাও গিয়ে স্থিতিশীলতা লাভ করে তক্ষন তার অবস্থা কেমন হয়?
রাতুলের আম্মু তাকে বলল, হ্যাঁ, গ গিয়ে ঘ-তে স্থিতিশীল হয়। গ-এ গমন, আর ঘ-এ গমনস্থিতি। গমনস্থিতি যাতে তাকে ‘ঘ’ বলে। গ-এর দৌড় ‘ঘ’ পর্য্যন্ত।
আচ্ছা আম্মু, আমাকে একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও না। রাতুল তার মায়ের কাছে ‘গ’ ও ‘ঘ’-এর পারস্পারিক সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে চাইল।
রাতুলের আম্মু বলল, তাহলে আমরা ঘর শব্দটার ব্যবচ্ছেদ করে ঘরে ‘ঘ’ কেন তা বুঝার চেষ্টা করতে পারি। তাতে হয়ত বিষয়টী তোমার কাছে পরিষ্কার হবে। ঘরে একটা ‘ঘ’ আর একটা ‘র’ আছে। ঘ-তে গমনস্থিতি আর র-তে রহন-ভক্ষণ-রক্ষণ বোঝায়। সুতরাং ঘরে গমনস্থিতি রহে যাতে। অর্থাৎ গমন করে যেখানে গিয়ে স্থিত হয়ে রহে তাকে ঘর বলে। এক্ষন আমরা বলতে পারি গ-এর আশ্রয়স্থলকে ঘ বলে। কিংবা গমনের আধারকে ঘর বলে। এক্ষন বুঝতেই পারছ, আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ আমাদের থাকার যায়গাটাকে ঘর নাম দিয়ে ভুল করেনি কিংবা তাঁরা অনুমানেও কোন বস্তুর নামকরণ করেনি।
এবার যদি আমরা ঘন শব্দটা ভেঙ্গে দেখি তাহলেও দেখতে পাব ঘ (গমনস্থিত) অনকৃত যাতে। ন-এ নাকরণ বা অনকরণ বোঝায় বিধায় ঘনতে ন অনকরণ। সুতরাং ঘ যেখানে অনকৃত অথবা গিয়ে স্থিত হয়েও চলতে থাকে। যদিও আমরা এক্ষন ঘন বলতে বুঝি যার ভিতর আর ফাঁক থাকে না।
আমরা এক্ষন গবেষণা শব্দটা নিয়ে গবেষণা করে দেখব। তাহলে ‘গ’ সম্পর্কে তোমার আরো পরিষ্কার ধারণা সৃষ্টি হবে। যেমন গবেষণাকে সন্ধিবিচ্ছেদ করলে দেখতে পাব সেখানে গবেষণার ভিতরে একটা গো আছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে গবেষণাতে গো কেন? তার উত্তর হল, গবেষণা: গো + এষণা। গো এর অর্থ গতিশীল বিষয় ও বস্তুর অনুসন্ধান বা কিরণ। সুতরাং গো + এষণা অর্থ গতিশীল বিষয় ও বস্তু সম্পর্কে দিশাগ্রস্ত জ্ঞানের আহরণ যাতে থাকে। অনুসরণ, অনুসন্ধান, অন্বেষণ, তর্কাদি দ্বারা যথাবোধিত ধর্মাদির অন্বেষণ, বিচারণা, বিষয়বিশেষের তত্ত্বান্বেষণ।
রাতুল তার আম্মুকে বলল, এটা আমার কাছে খুব কঠিন মনে হচ্ছে। তার চেয়ে গাধাকে গাধা বলে কেন বুঝিয়ে বলুন।
তার আম্মু তাকে বলল, গাধা শব্দটা এসেছে গাধ থেকে। অগাধ মানে অনেক আর গাধ মানে অল্প। গাধ-এ একটা আকার দেওয়াতে গাধ + আ-কার = গাধা অর্থাৎ গাধের আধার। সুতরাং অল্পজ্ঞানের আধার হলেই তাকে গাধা বলা হয়।
রাতুলের এক্ষন ঘুম পাচ্ছে। সে তার আম্মুর কাছে ছুটী চাইল। কিন্তু তার আম্মু তাকে বলল, শুধু ঘুমাতে চাইলে তো হবে না, ঘুম সম্পর্কেও জানতে হবে। ঘুম শব্দটা ব্যবচ্ছেদ করলে পাব একটা ঘ একটা হ্রস্ব উ-কার এবং একটা ম। তাহলে ঘ-এ গমনস্থিতি। হ্রস্ব উ-কারে নবরূপে উত্তীর্ণন এবং ম-এ সীমায়িত/মিত যাতে। তাহলে আমাদের ক্রিয়াশীল দেহের গতিক্রিয়া যেখানে স্থিতিশীল অবস্থা প্রাপ্ত হয়েও নবরূপে উত্তীর্ণন হয়ে মিত থাকে। অর্থাৎ গমনস্থিতিশীল অবস্থা যক্ষন হ্রস্ব উ-কার দ্বারা নবরূপে উত্তীর্ণন হয়ে একটা কল্পিত খুটীতে ঘুরতে ঘুরতে পূর্ব্বোক্ত অবস্থানে আসতে চায়। কিন্তু তাকে ম এসে সীমায়িত করে। সুতরাং আমাদের দেহের গমনক্রিয়া স্থিতিশীল হলেও আত্মার ক্রিয়া সক্রিয় থাকে। এই ঘুম ক্রিয়া অবিরাম চলতে থাকলে তাকে ঘুমন্ত বলে। মানুষ এভাবে ঘুমায় বলেই সে দীর্ঘায়ূ হয় কিংবা বেঁচে থাকে। রাতুলের আম্মু দেখল, এরই মধ্যে রাতুল ঘুমিয়ে পড়েছে। সুতারং বিষয়টী নিয়ে প্রয়োজনে পরবর্ত্তীতে আলোচনা করতে হবে।…
খোন্দকার শাহিদুল হক রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গল্প, ‘গ’ ও ‘ঘ’ পরিচিতি — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।