১১.
মায়াবতী, তোমার ঠোঁটের লোনা জলে
পাক খায় অগণন ঢেউ; কাদার ভাঁজে
পুঁতে ফেলো আমাকে আপাতমস্তক; ফুঁসে ওঠা
চরের চিহ্ন ধরে… ঠিকই লালদাগ পার হয়ে যাব
শরীরের প্রতিটি আলপথ; এই যেমন জ্ঞানকে
পায়ের নূপুর আর চন্দ্রসমূহ করেছি কানের মাকড়ি
রিপু রে, তুই পুড়ে ছাই না হওয়া পর্যন্ত
আমার যে মুক্তি নাই
মায়া; শূন্যতার পাহারাদার
তুই আমারে করলি দেওয়ানা
১২.
মন দিয়েছি দাবা খেলায়
জিতবই জিতব গুরু দোয়ায়
রাজা কুপোকাত দু’মুখো চালে
সুখের বাতাস বইছে পালে
খেলার শুরুতেই সৈন্য খতম
হাতীর শুড়ে পঞ্চ অধম
মন্ত্রীর কুটচালে রাজাকে খাই
সংসার থেকে আনন্দ কুড়াই
কানুর চালের খ্যাতি জগৎজোড়া
নিমিষেই বুঝে নেয় চৌষট্টি কোঠা
১৩.
ত্রিশরণ নাও এবং তার আটকুমারীতে
ভাসিয়েছি এ দেহভার
নিজের শূন্যকরুণা নিজেরই অংগে
মিলেমিশে একাকার
ভবের নদী পাড়ি দিয়েছি
সম্বল শুধু স্বপ্ন ও মায়া
মাঝামাঝি এসেছি যেই
দেখি, ডাকে যেন কার ছায়া
পঞ্চইন্দ্রিয় বৈঠা বানাই
নৌকা ছোটে ছলৎছল
সামনে যদি যেতেই চাই
ছিন্নভিন্ন মায়ার জাল
চোখ জুড়ে স্বপ্ন
আছে গন্ধ, স্পর্শ ও রস
শূন্যতার নৌকামার্গে
সুখের সঙ্গমে কানু বিবশ
১৪.
গঙ্গা যমুনায়, ঐ যে যায়, যায়, নৌকা যায়
ফুঁসছে নদী, ডুুবে যায় যদি
মাতঙ্গী পুত্রকে পার করে দেয়, দেয়
পথে হয়েছে দেরী, হোক
বাও ডোম্নী, বাও, নৌকা বাইতে থাকো
গুরুর কৃপায় জিনপুরে যাবো, আবার যাবো
কাছি বান্ধা আছে, আছে শক্ত হাতে
সেঁচ নৗকার যত জল, সেঁচতে থাকো
জোড়ার ফাঁকে ফাঁকে যেন না ঢোকে জল
চন্দ্র আর সূর্য দুই দাঁড়, নৌকার দুই দাঁড়
ঝড়ে কাঁপছে মাস্তুল, কাঁপছে
চাদ্দিক ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসছে
বাও, নির্ভুল হাতে বাইতে থাকো
বুড়ি ফুটো পয়সাও নেয় না
করে দেয় পার, স্বাচ্ছন্দে পার?
পথে নেমেছো, বাইতে জানো না
এত সাধ কেন মরবার?
১৫.
দৃশ্যের বাইরে আছে যা; তার
কিছুই যায় না বোঝা অনুভবে
সহজ পথে ছুটছে যারা
ফিরে এসেছে তাদের কে কবে
তোমাকে সভয়ে ডাকছে
লাল গালিচার রাজপথ
মূর্খ, যেয়ো না নিতে তিলার্ধ
সংসারের মতামত
এই যে ধুধু করছে সমুদ্র
অন্তহীন এর জল
ঘাটে নৌকা নেই, ভেলাও নেই
সম্বল শুধু সদগুরুর বল
শূন্য প্রান্তর, এখনও অদৃশ্য
তাতে কি, যাও দ্বিধাহীন
ঐখানেই অষ্ট মহাসিদ্ধ
ঝলমলে রঙিন
বাম ডান ছেড়ে এবার
সোজা পথ ধরো
গুল্ম, দুর্বা ও আগাছা মাড়িয়ে
সহজ কিছু করো
মজিব মহমমদ রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, চর্যাপদের কবিতা (তৃতীয় কিস্তি) — লেখক নির্দ্ধারিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।