ডেরেক এ্যালটন ওয়ালকট(জানুয়ারি ২৩, ১৯৩০ — মার্চ ১৭, ২০১৭) একজন সেন্ট লুসিয়ান কবি, নাট্যকার, ও লেখক। ক্যারিবিয়ান ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং উপনিবেশবাদ তাঁর কবিতার অন্যতম বিষয়বস্তু। ব্যক্তিমানুষের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতাও ওয়ালকটের কবিতায় ব্যঞ্জনা পেয়েছে। হোমারীয় মহাকাব্য ওমেরস কবির অনবদ্য সৃষ্টি। তিনি ১৯৯২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান।
ভূমিকা : ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা
কবিতা এক ধরনের প্রার্থনা— নিজেকে জানার আরতি। কবিতা এক ধরনের খনন— নিজেকে আবিষ্কারের প্রক্রিয়া। কবির আরতিতে, অভিজ্ঞতায়, খননে, এবং আবিষ্কারে যা পান তা-ই পাঠকের বোধের সাথে একাত্ম হয়ে ওঠে কবিতায়। কবির থেমে যাওয়া শব্দের পর যে আলোকের শুরুয়াৎ পাঠক সেই আলোয় নিজেকে দেখেন; ক্রমশঃ নিজের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেন; আর শব্দের প্রতিবেশিতার ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে নিতে পারেন নিজস্ব অসুখ ও নিরাময়। ক্যারিবীয় কবি ডেরেক ওয়ালকট (১৯৩০—২০১৭) পৃথিবীব্যাপী তাঁর কবিতায় ক্যারিবীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি, উপনিবেশবাদ, এবং ভাষার সাথে মানুষের সম্পর্কের বিষয়ের জন্য পরিচিত হলেও তাঁর অনেক কবিতা ব্যক্তিমানুষের অভিজ্ঞতার, বোধের, এবং অনুপ্রেরণার। প্রেরণা জাগানিয়া একটা কবিতার উদাহরণ হিসেবে কবির Love after Love (প্রেমের পর প্রেম) এর কথা বলা যায়। কবিতাটা ওয়ালকটের Sea Grapes কাব্যগ্রন্থে ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই একদল বিশেষ শ্রেণীর মানুষের খুব পছন্দের তালিকায় স্থান পায় যারা আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্য্যাদা হারানো মানুষের ভেতর ইতিবাচক পরিবর্ত্তন আনার জন্য কবিতাটাকে ব্যাবহার করেন। একটি ভালবাসার পরে— ভাঙ্গনের পর— প্রেমের পর প্রেম কবিতাটা নিজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার, নিজেকে ভালবাসার এবং জীবনের উৎসব করার কথা বলে। সবকিছু আসলে শেষ হয় যায় না। নিজেকে খনন করেই নিজেকে জানতে হয়, ভালোবাসতে হয়।
ওয়ালকট নিজেও স্বীকার করেন ‘the process of poetry is one of excavation and one of self-discovery’। এই আবিষ্কারের বৃত্ত তখনই পূর্ণ হয় যখন কবির নিজস্ব অভিজ্ঞতা কবিতার মধ্যে দিয়ে অন্য পাঠকের অনুভব ও অভিজ্ঞতার ভেতর আলো ছড়ায়। ডেরেক ওয়ালকটের Sea Grapes কাব্যগ্রন্থের এমন তিনটা কবিতার অনুবাদে আপনাদের স্বাগত জানাই।
প্রেমের পর প্রেম
সময় আসবে যখন, তখন সানন্দে তুমিই তোমাকে স্বাগত জানাবে
তোমার নিজেরই দরজায় এসে,
তোমার নিজস্ব আয়নায় একজন আরেকজনের মুখে চেয়ে হাসবে
সেই স্বাগত অনুষ্ঠানে,আর বলবে, বস এখানে। খাও।
তুমি আবার ভালবাসবে তোমার আগন্তুক সত্তাকে।
মদ দাও। রুটি দাও। হৃদয় ফিরিয়ে দাও তোমার আগত হৃদয়কে,
সেই আগুন্তুককে যে তোমায় ভালবেসেছেসারাটা জীবন, আরেকজনের জন্য যাকে তুমি দূরে ঠেলেছিলে,
যে তোমাকে মর্ম্মে মর্ম্মে চেনে।
বইয়ের তাক থেকে পেড়ে আন সমস্ত প্রেমের চিঠি,সমস্ত আলোকচিত্র, সমস্ত বেপরোয়া চিরকুটগুলো,
আয়না থেকে ছিলে ফেল তোমার নিজস্ব ছবি। বস। উৎসব কর জীবন।
সমাপ্তী সমূহ
সব সমাপ্তী সশব্দে বিস্ফোরণে হয় না,
ব্যর্থ হয়, বিবর্ণ হয়ে যায়,যেরকম সূর্য্যালোক ক্রমশঃ ম্রিয়মান দিনের শরীর থেকে,
যেরকম পাণি চুষে নেয় তৃষিত বালুকাবেলায়,এমনকি প্রেমের বিজলী চমকেরও
থাকে না বজ্রনিনাদ,সে শব্দে প্রেমেরও অবসান
যে শব্দে ফুলেরা মলিন কামনার মত মরে যায়,পোড়া পাথরের কান্না থেকে
সবকিছু সে অবধি এমনই হয়যে অবধি আমাদের ফেলে যায়
নীরবতায় তাকে ঘিরে থাকে বিটোফেন নিষণ্ন ব্যথায়।
মুঠোবন্দী
আমার হৃদয় মুঠো করে আঁকড়ে ধরা
একটু আলগা হয়, আর আমি খাবি খাই
উজ্জ্বলতায়; কিন্তু মুঠো কষে ধরে
আবার। আমি কি কখনো ভালবাসিনি
প্রেমের বেদনাকে? তবু এই বেদনা
ভালবাসা ছাপিয়েউন্মাদনা হয়েছে। তার উন্মাদের কঠিন
মুষ্টি আছে, আছে যুক্তিহীন আঁকড়ে ধরার
আকর, আর নরকে ঝাপ দেওয়ার
পূর্ব্বমুহুর্ত্তের আর্ত্তনাদ।অতএব অটল অবিচল থাক, হে হৃদয়। অন্তত এভাবেই বেঁচে থাক।
হাসিব উল ইসলাম রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত অনুবাদ, অনুবাদ : তিনটা কবিতা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।