শূন্য ও জীবন
যোগফল শূন্য জেনে যে জীবন বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যায়
আয়নায় তার প্রতিবিম্ব ওজনহীন হয়ে
ভঙ্গিটুকু ফেলে রাখে
জননী মৃত্তিকার মতন পাতাভরা অরণ্যে নির্জনতা প্রসব করে
পলাশের ছায়ার পাশে একটা শূন্য ঝুলে পড়ে বেশ
জরাযু খালি দেখে সে শূন্য আবার
নিষেকের ব্যঞ্জনা তোলে
বেদনায় আঁকা জীবনরেখা একদিন থেমে যদি যায়
ফলাফল মেনে নিয়ে সে শূন্যটা কি
মৃত্তিকার মায়া ছেড়ে ফের
আকাশের পথে পা বাড়ায়?
প্রণয় বিভ্রম
যতবার তর্জমা করি পতনমুখী নির্জনতার শ্লোক
ময়ুরাক্ষী আত্মা এসে আড়াল করে রাতের কুহকডাক
জমাট কান্নায় জরায়ু বুঝে নেয় তার গোপন-পাতাল
দ্বিপ্রহর রাতের দ্যুতিহীন আলো
অনাগত ভোরের কটাক্ষ ভুলে
বিভ্রান্ত এক ওয়ারিশনামায় সারে সইসাবুদ।
অন্ধকারের পর্যটকমেঘ এসব উৎসমুখের অকাট্য
সাক্ষী হয়ে রয়।
অস্পৃশ্য প্রচার থাকে—
ঘৃণার গোবরে বেড়ে ওঠা শিমফুলে
পরাগ বসায় নেশাগ্রস্ত কোন পতঙ্গ এক।
কোমল রমণীরাতে উত্তরাধিকার আয়ুর তালিম নিয়ে
কোন কোন প্রণয় ঢের আটকে থাকে বিভ্রমের ভাগাড়ে।
সূর্য মাঝে মাঝে রোদকে বিক্রি করে দেয় লীলামোদি শীতের কাছে
১.
ভাড়াটে আলোতে রোদ পোহাতে গিয়ে যারা জেনেছিল
নাগরিক ঔদ্ধত্যকে মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন নক্ষত্র-ই
সূর্যকে একাকী কিংবা গোপন করার সাহাস পায়না;
অনর্থই তারা ফিরে এসে মিস করার গল্প ফাঁদে কবোষ্ণ আরামের নামে।
পৃথিবীর মগডালে বসে সূর্য-ই রক্তাভ বিটশাকের পাতায়
বিবিধ ভিটামিন সিরিজ গুজে দেয় সালোকের মন্ত্রে।
২.
শরতের জোনাক-আলো যুবতি বৌয়ের পা ছুঁতে গিয়ে
ফিরে আসে শহরের লিচু বাগান সড়কের ওপাশে, যেখানে
চাঁদ এসে ভেঙে পড়ে আছে বহুকাল ধরে।
বিগত শীতের রাতে যারা হাঙ্গেরীয় মদের উষ্ণতা নিয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছিল তারা আর
রাতের আড়ালে বাতাসের মুগ্ধতা প্রচার করেতে পারেনি।
ঘোরের শব্দে তারা ধার করা এক মৃৎপ্রদীপে ঘি ঢেলে
লেলিহান আগুনকে কম্পেয়ার করতে চেয়েছিল
আসমান ভেদ করা সোনালী রশ্মির সাথে।
কোন একদিন তারা জেনে যাবে—
রাতের আলোর দূতাবাস হয়ে পৃথিবীর মুখোমুখী বসতি গড়েছে
সূর্যের সান্নিধ্য পাওয়া এক সাদা পারাবত।
৩.
মহামান্য কার্ল স্যাগান ব্লু-ডট তত্ত্বে বয়ান করেন এক বিস্ময়কর জ্যোতির্বিদ্যা;
পৃথিবীর অগণন দূরত্বে থাকা প্রতিবেশী কোন কোন নক্ষত্র পরাজিত হয়ে
ব্ল্যাকহোলে যাত্রা করে। মহাকাশে লটকে থাকে
শুধু এক নির্ঘুম জ্বলতে থাকা সূর্য, প্রকাশ্য আলোর লন্ঠন হয়ে।
যদিও আমাদের কোন এক গোলার্ধে সূর্য নেহায়েত
রোদকেই বিক্রি করে দেয় লীলামোদি শীতের কাছে।
অক্ষর
কেন মুছতে যাও নিরালার অক্ষর
তুমি বরং খসড়া খাতাটার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেল
পাতাহীন অরণ্য যেভাবে হাহাকারের বিপ্লব প্রচার করে
যেভাবে মধ্যসমুদ্র ঝড়ের ধকল সামলাতে গিয়ে
নাবিকের হুইসেলে বাজায় করুণ সর্বনাশ
সে কথা বলেনি কেউ
সব আলাপ ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে খসড়া খাতার
সমূহঅক্ষরের সাথে
ইন্দ্রিয়ের গভীরের বিষন্ন উৎকন্ঠা যেন
দূর প্রভাতের শিশির
রোদ কড়া হয়ে এলে সব ফ্যান্টাসী ক্রমশ চুপসে পড়ে
আমাদের হাঁটাপথের সাথে যত চিহ্ন
উড়ে গেছে ধূলোর সাথে
তা হয়ত লেগে আছে কোন অদৃশ্য শব্দের পিঠে
প্রকৃতপক্ষে সব অক্ষর নিরালায় বসে
লিখে দিয়ে যান এক ঈশ্বর।
ঘাসফড়িং এক লাফানো কৃষি বিজ্ঞান
সবুজ ধানক্ষেতের সরু আইলমুখে
ভেজাব্যাঙের যত উজান-চিৎকার
আকসার আনন্দে ঘাসফড়িঙের দল
যেন অতিক্রম করে দিগন্ত-বেড়াতার
প্রতিযোগের লংজাম্প বালখিল্যে
কাকতাড়— য়ার অলস অস্তিন বাজায়
উল্লাসমুখর হাততালি এক
বন্দিত্ব না মেনে সেচের জল জমায়
মন্থর অধিগামীমুদ্রার মেঘ
আগাছাগর্জনের শব্দে ক্ষেত-বুক
মুছে দিক সব গুপ্তনদীর অন্তরাল
লাফানো ঘাসফড়িং না ছিঁড়ুক
কখনো কোন মরা কুয়াশার জাল
গুমাইবিল ডেকে নেয় রোদ, দেখায়—
মেঠোপথ ধরে বিস্তৃত সোনারঙ ধান
সুগন্ধী নাড়ার খাতায় লিখে রাখে
ঘাসফড়িং এক লাফানো কৃষিবিজ্ঞান
সোহেল ইয়াসিন রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, সোহেল ইয়াসিনের কবিতা — প্রমিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।