ব্যাপারটা সাহিত্যের নয়, ব্যাপারটা জনপ্রিয় হওয়ার:
‘পুরস্কারপ্রদান’-এর উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে পলিটিক্স, আর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে যদি স্যাবোটাজ টু দ্যাট ক্রিয়েটিভিটি, তবে বলা যায় প্রতিষ্ঠান কতটা ক্রিয়েটিভিটির জন্য ‘পুরস্কারপ্রদান’ করে, আর কতটা পাঠকের সঙ্গে পলিটিক্স করে। অথবা এভাবেও বলা যায়— ‘ট্রাপিজ থেকে স্ট্রিপটিজ’ যা যা করলে প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রিয় করা যায় তারা তাই করে থাকে। ক্ষুব্ধতার উত্তপ্ত আচরণে এই কথাগুলি বলতে হচ্ছে, কেননা— বাংলাদেশে এখন পুরস্কার-সচেতন অনেক লেখকগোষ্টিদের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা সম্পূর্ণ নিষ্ফলা লেখাকে ‘সুফলা’ ট্যাগ লাগিয়ে সাহিত্যের ‘পুরস্কার’ অনেকের হাতে তুলে দিয়ে ‘জনপ্রিয় লেখক’-এর ছাড়পত্র দিয়ে যাচ্ছে, যত্রতত্র, যেখানে সেখানে এবং এলাকায় এলাকায়। তারা সাহিত্যকে খাদের কিনারায় টেনে নিয়ে, পতনকে সুনিশ্চিত করে সাহিত্যের নামে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাবসায়িদের মতন ফাটকাবাজি। তারা মননশীল সাহিত্য সৃজনকে ফাঁকি দিয়ে হঠাৎ পুরস্কারবোধে উদ্দীপ্ত হয়েছেন এই কারণে যে, নিজেদেরকে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানকে সংবাদ মিডিয়াতে শিরোনাম করতে ও নিজেদেরকে জনপ্রিয় করতে। ধরণ-ধারণ-উদগীরণ থেকে জনপ্রিয়তার জন্য এমন আস্ফালন করার অর্থ হচ্ছে মিডিয়া এবং সমাজ থেকে নিজেদের ‘নাম-কামানো’। জনপ্রিয়তার তকমা লাগিয়ে এরা সমাজকে বুঝাতে চায় যে, পুরস্কার হচ্ছে একটা পবিত্র ব্যাপার। কিন্তু সাহিত্যের নামে এসব পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান— সাহিত্যসমাজে শুধু সমেবেত প্রতিদ্বন্দ্বী-ই তৈরি করে, কোন মানবিকবোধে কাউকে উদ্বুদ্ধ করে না। এসব পুরস্কার-সচেতন লেখকগোষ্টিদের দ্বারা পুরস্কার প্রদানের অর্থ হচ্ছে, তাদের কাছে সাহিত্যের মূল্য থেকে শুধু সাহিত্যিকের গুরুত্ব অনেক বেশী। তাদের সেই ‘পুরস্কার প্রদান’ উদ্দীপনার ফারেনহাইট উত্তাপের তখন ‘সাহিত্যের মূল্য’ পুড়ে যায়। পুরস্কার-সচেতন লেখকগোষ্ঠী এখন আর উপলব্ধিই করেন না, তাদের সাহিত্যের বাজারে এখন দহনমাত্রা কত চলছে। এসব পুরস্কার-সচেতন লেখকগোষ্টির অপ্রাপ্তির বেদনা এত বেশী যে, অবদমনের বিক্রিয়াতে তাদের লোভের যেই উত্তাপ বাড়ে, তা থেকে দহনের তাপমাত্রায় ফারেনহাইটের উচ্চতা বেড়ে চলছে। সাহিত্যের বাজারে এসব গোষ্টির অনুভূতিতে তখন তোলপাড় করে— ‘কে তুমি তন্দ্রাহরণী’…. পুরস্কারের লিষ্টে নাম দেখে এদের লোভের রক্তে পারদ ওঠানামা করে। তারা মনে-মনে ভেবে-ভেবে সাহিত্যের যেই সন্দেশ খায়, আফসোস, বাস্তবের চোখ দিয়ে দেখে না যে, সেখানে প্লেট খালি। এসব গোষ্টির বা সংগঠনের সদস্যদের এবং তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ন্ত্রণের পথে রাখার জন্য এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে— ঘন-ঘন পুরস্কার প্রদানের মুগ্ধ প্রকল্প চালু রাখা। ফেসবুকে পুরস্কার সংক্রান্ত তাদের পোষ্টগুলি পড়লে এটা স্পষ্ট হয় যে, তাদের সংগঠনে সাহিত্য না থাকলেও সাহিত্যিক অনেক থাকবেই। এসব সাহিত্যিকদের পুরস্কারের দানব চিৎকারে উধাও নিবিড় সাহিত্য চেতনা। তারা সাহিত্যকে মননের আলোর নিরিখে দেখে না, তাদের লেখাকে তথাকথিত প্রতিযোগিতার মৌতাতে তুলে ধরে। তাদের সাহিত্যচর্চার ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যাবে— পুরস্কারের আয়নায় তাদের আত্মমুখ আবিস্কারের বৃত্তান্ত। যখন থেকে সাহিত্য স্বাতন্ত্র্যচর্চা থেকে পুরস্কারলোভীদের গোষ্ঠী-বদ্ধতায় কুক্ষিগত হয়ে পড়ল, তারপর থেকে অনশ্বর অন্ধকারে সাহিত্যের বিবর্তন থেমে গেল। সাহিত্য হচ্ছে গভীর অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন দ্রষ্টা, আর পুরস্কার হচ্ছে সন্তুষ্ট করার দ্রষ্টব্য। এসব গোষ্টিরা শুধু তাদের পুরস্কার-প্রত্যাশার প্রতিক্রিয়ায় পরিচালিত হোন, গভীর কোন সাহিত্যক্রিয়ার অনুগামীতে নয়। পুরস্কার-প্রদান অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাশা জাগানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলেই এখন এসব অনুষ্ঠানে জমায়েতেও বেশী হয়। এমন পুরস্কার প্রথার কার্যক্রম চালিয়ে সমাজ-সংঘকে সাহিত্য-সচেতন করা যায় না, শুধু সমাজে সম্প্রদায়ে মনোরঞ্জন দেওয়া যায়। পুরস্কার প্রথার চরিত্র-ই হল সমাজে ভিন্নমতের জিজ্ঞাসাকে জাগিয়ে তোলা নয়, একে দাবিয়ে রাখা। যেকোন স্বাধীন অভিব্যক্তির মুখ বিভিন্নভাবে বন্ধ করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে রুচিহীন পুরস্কারদাম্ভিকতার স্বার্থ বজায় রাখা। যখন কেউ কেউ এসব পুরস্কারপ্রদান ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে অনবরত প্রতিবাদ করে অথবা লেখালেখির মাধ্যমে এসব বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখন পুরস্কারপ্রদান গোষ্টিরা এমন জাগরণের প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এমন মানুষদের নিরন্তর জিজ্ঞাসা ও তাদের নির্ভীক প্রকাশকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। তাদের অনুভূতির গন্ডারীয় চামড়ার ওপরে ‘পুরস্কারপ্রদান’ একটা পোশাকের অলঙ্কার বিশেষ।
‘পুরস্কার‘ নামক কষ্টিপাথর দিয়ে সাহিত্যিক তৈরি করা হয়:
পুরস্কারপ্রত্যাশিরা হচ্ছে সাহিত্যসমাজে পরজীবী প্রাণীর মতন, তারা পরাশ্রয়ী হয়ে কোন গোষ্টির বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে পোষিত থাকতে চায়। তারা সৃজনশীল-মননশীল ধারণাতে নয়, এখানে তাদের কাছে প্রধান হয় পুরস্কারের অনুভূতি। পুরস্কারপ্রত্যাশী, পুরস্কারপ্রদান গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং পুরস্কার-সচেতন লেখকগোষ্ঠী— এরা সকলে আচরণে, চিন্তায়, সৃজনে এবং কার্যক্রমে পরজীবী প্রাণীর মতন, এরা সকলে অবক্ষয়ী সমাজ-সন্ধিগুলির স্বভাবপ্রকৃতি। এদের আচরণে এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহিত্যের অন্বিষ্ট আদর্শের যত বাঁধন আছে এর সব-ই এরা শিথিল করে ফেলে। এদের সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য হল গণপ্রিয় হয়ে উঠার নানা স্বরূপ অন্বেষণ। এদের ইচ্ছাপ্রসূত কার্যক্রমের সূচিগুলিই এদেরকে পরজীবী বানিয়ে ফেলে এবং এদের সৃজনের সম্ভাবনা ও সামর্থ্যের নিরিখ এদেরকে প্রতিষ্ঠান-পোষিত বানিয়ে ফেলে।
পুরস্কারের কারসাজিতে সমাজের সামনে যাদেরকে লেখক বানিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে সমাজ তাদেরকেই মননশীল লেখক হিসাবে ধরে নিচ্ছে। ঠিক যেভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারের জোরে গুড়া মশলা জনপ্রিয় করে তোলা হয়, যেভাবে মাথার শ্যাম্পু অথবা স্যানিটারী ন্যাপকিন জনপ্রিয় করা হয়, তেমনিভাবে কায়দা-কসরৎ করে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এদের তৈরী ১নং খাঁটি লেখক বাজারে চালু করা হয়। সাহিত্য নিয়ে যারা ব্যবসা করে তারাও আদর্শগতভাবে পুরস্কারপ্রদান গোষ্টিদের প্রতি উচ্ছ্বাস ও আবেগের তরল রূপে অনেক বেশী কৃতজ্ঞ থাকে। এরা তৈরি করা ১নং খাঁটি লেখকদের সত্যিকারের সাহিত্যমূল্য কত তা না বুঝলেও, এদের বাজারমূল্য কত তা তারা ঠিক-ই নির্ধারণ করে দিতে পারে। এসব চিন্তাভাবনা এসেছে অবক্ষয়ের পরিণতি হিসাবে। অথচ মননশীল মেধাবী লেখকরা এত-ই প্রচারচ্যুত এবং এত-ই নিভৃত যে, সাধারণ পাঠকের পক্ষে তাঁদের নাম শোনাটাও একটা অসম্ভব ব্যাপার। পুরস্কারপ্রাপ্তির দ্বারা যেকোন লেখককে যেভাবে কমার্সিয়াল ভ্যালু তৈরি করে দেওয়া হয়, তা এতটায় গা ঘিন ঘিনে ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, সত্যিকারের ক্রিয়েটিভ লেখকরা এসব রুচিহীন ও ইতরোচিত বাজারচালিত ব্যবসাপাতি থেকে সযত্নে এবং সংযমে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখেন। প্রকাশকেরাও এসব মেধাবিদের প্রতিও আগ্রহ দেখায় না। পুরস্কারপ্রদানের সামগ্রিক ভাবমূর্তিটিই হচ্ছে সাহিত্যিকের জন্য কমার্সিয়াল ভ্যালু তৈরি করা। স্তুতির নিক্তিতে এসব সাহিত্যিকদের পাল্লায় ওজন করা হয় বলে প্রকৃত প্রতিভাবানরা সাহিত্যের মূল্যায়ন থেকে থেকে যান অনেক দূরে। সমাজে শিক্ষিত পাঠকগোষ্ঠী গড়ে উঠুক এসব পুরস্কার-সচেতন লেখকগোষ্টিরা তা কখনো চায় না। তারা জানে এই ধরণের পাঠক যদি বেশিমাত্রায় বেড়ে ওঠে তা হলে সনাজে তাদের গ্রহণীয়তা কমে যাবে। সাহিত্যিকদের পুরস্কার দিয়ে পাঠকের বোধে সুড়সুড়ি জাগিয়ে লেখাকে জনপ্রিয় করা, আর উন্নতমানের লেখার মাধ্যমে পাঠকপ্রিয়তা পাওয়া— তুল্যমূল্যে এই ধরণের লেখার মধ্যে মহাসাগরীয় পার্থক্য আছে। পুরস্কার হচ্ছে বাজার ব্যবস্থার বিকৃতিপথে পরস্পরের পিটচাপড়ানি, আর প্রকৃত সাহিত্যচর্চা হচ্ছে মননের আদর্শবৃত্তি। তারা প্রতিবার যাদেরকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন সেই লিষ্টে মননশীল এবং আপোষহীন লেখকগোষ্টিদের বাছাই করেন না। এসব গোষ্টিরা কখনোই সমাজে কোন কালোত্তীর্ণ প্রতিভাকে তুলে আনতে পারে না। পুরস্কারের নামে তারা মেধাবিদের সরিয়ে রাখে, কখনো প্রত্যক্ষভাবে, কখনো পরোক্ষভাবে। বাদ হয়ে যাওয়া তাঁদের সমস্ত লেখাই সমাজের বিরাম চিহ্নের মতো নীরবে পড়ে থাকে। এসব সংগঠনের আধিপত্য যেই সমস্ত সম্পর্ককে শাসন করে, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তখন তারা অপপ্রচার চালায় এভাবে যে তাদেরকে হিংসা করেই বিরোধিতার বীজ সমাজে বপণ করা হচ্ছে। সমাজের চারপাশে ঘিরে রয়েছে গড়পড়তা রুচির পাঠক, সঠিকভাবে বললে বলা হবে যাদেরকে ওভাবে করেই রাখা হয়েছে, তারাই পুরস্কারপ্রদান গোষ্টিদের আসল খদ্দের। বহুশক্তিশালী স্বল্প সংখ্যক লেখকদের দিন পুরস্কারের অবক্ষয়ে ঢেকে গিয়ে স্বল্প শক্তিশালী বহুসংখ্যক লেখকের দিন চলে এসেছে বাজার-সাহিত্যে।
পুরস্কারের শাঁস চুষে ছিবড়ে ফেলা অনুসারিরা:
যেই অঞ্চলের অথবা যেই গোষ্টির সাহিত্য সৃজনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়ে খ্যাতিমান হওয়া, সেই অঞ্চলের বা সেই গোষ্ঠী-বদ্ধদের সাহিত্যে কোন সৃজনশীলতা এবং মননশীলতার বৈশিষ্ট্য নাই— তারা আসলে সৃজনে মননে আর প্রজ্ঞার বিস্তারে আর বাঁচিয়া নাই। ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা হলে পুরস্কার প্রত্যাশিরা সমাজ এবং দেশের অচলায়তন ভাঙ্গার গুরুত্ব আর অনুভব করবে না। প্রতিযোগিতাবোধ-ই যদি সাহিত্যসৃজনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে, তখন মস্তিষ্ক-ই নিরন্তর স্থির করে দিবে পুরস্কারের গন্ডিতে চর্চাকারিদের লোভের দৃষ্টিপাত। ‘পুরস্কার’ হচ্ছে একটা বিনোদন, আর এই বিনোদনকে সমৃদ্ধ করে লোভিদের হাততালি। ‘পুরস্কার’ হচ্ছে সাহিত্যের গড়পড়তা চেয়ারে এক নিশ্চিত আরাম। সৃজনের ঘাটতি থাকলেই সাহিত্যে তখন বিনোদন আবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। এই আরামে আজ আবদ্ধ হয়ে পড়েছে সৃজনশীলতার মেধা। এধরণের পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠানমালা সাহিত্যজগতে কুৎসিত চেহারার এক অহং তৈরি করে চলছে সাহিত্য চর্চাকারীদের অন্তরে এবং অঙ্গভঙ্গির বাহিরে। এখন সমাজে ও দেশে পুরস্কারদাতারা অর্বাচীন অভিভাবক হয়ে উঠছে এবং তাদের আধিপত্যের বিস্তারে সাহিত্যে তীব্র আগ্রাসনের অন্ধকারে ঢেকে পড়ছে। এসব অর্বাচীনদের পুরস্কারের কাঙ্ক্ষিত স্বাদগন্ধ দিয়ে সকলকেই লেখক বা কবি তৈরি করিয়ে দেয়, কিন্তু সকলকেই সাহিত্যের মানে গড়িয়ে দেয় না। দার্শনিক নীৎসে বলেছিলেন, ”অন্ধদের দেশে একচক্ষু মানুষ-ই রাজা।” তাই নিয়মিত চিন্তাশক্তির চর্চা দিয়ে সৃজনশীল হতে পারলে তা থেকে সাহিত্যজগতে আবির্ভাব হবে চক্ষুষ্মান মানুষের— অন্ধ-উইপোকার মতন যাঁরা পুরস্কারের অগ্নিকুণ্ডে অযথা ঝাঁপ দিবে না। আমাদের চিন্তাজগতের মধ্যে ভাঙ্গন ও গঠনের প্রক্রিয়া হওয়া দরকার এবং তা অবশ্যই হওয়া দরকার নিয়মিত পাঠের অনুশীলনে এবং পাঠচক্রের মাধ্যমে। এমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সাহিত্যের জগৎকে অধিক আলোকিত করা সম্ভব। ‘সাহিত্যবোধ’ বা ‘সাহিত্যমনস্কতা’ মূলত সাহিত্যের পাঠক যেমন তৈরি করে তেমনি বিশুদ্ধ সাহিত্যিক সমাজ গঠনেও প্রগাঢ় ভূমিকা রাখে। সাহিত্যে সেই অঞ্চলের বা সেই গোষ্ঠীবদ্ধদের মধ্যে যত আদর্শবাদির, সংস্কারবাদির, দ্রোহবাদিদের আগমন হবে তত-ই সেই অঞ্চলের বা সেই গোষ্ঠীবদ্ধদের ঠিকানা সৃষ্টিপ্রবাহে এবং মেদুর বিচ্ছুরণে উর্বর হয়ে উঠবে। তাঁরাই মেধার আলোয় একান্ত আত্মগত অনুভূতি ও ভাবনার বিচ্ছুরণে সাহিত্য জগৎকে আলোকিত করবেন। তাঁরাই জানেন মেধাকে চৈতন্য আর সৃজনকে প্রকৃতি হিসাবে সাজিয়ে দিতে হয় সাহিত্যে। সাহিত্য সৃজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথাভাঙ্গা স্পর্ধার ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ এবং ঘনত্ব, সৃজনের দ্বান্দ্বিকতায় নতুন চিন্তা তৈরির অতিক্রান্তি।
পুরস্কার–সংস্কৃতির দাপটের মুখে:
নতুন লেখকদের নিঃশেষিত করার এসব পুরস্কার ঘোষণা হচ্ছে সৃজনশীলতার ডি-এন-এ নষ্ট করার প্রক্রিয়া। এসব উগ্র-ইভেন্টের সামনে আদর্শ, সংস্কারবাদ এবং দ্রোহ বন্ধ্যা হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পুরস্কার ঘোষণা’ পোষ্টে হাজারো অন্তঃসারশূন্য মন্তব্যে আত্মপ্রসাদ অনুভব করে নতুন লেখকরা আকন্ঠ তৃপ্ত হচ্ছেন। এমন পুরস্কারের লোভে প্রবাহে তখন নিজেরাই নিজেদের লেখকসত্তার সমাধি খুঁড়তে শুরু করে। ভোগবাদী মনোবৃত্তির এমন চমৎকার পরিস্ফুটনে ঘটে সাহিত্যের নামে ঘন ঘন পুরস্কারের আয়োজন। পৃথিবীর সমস্ত বিনোদন-ই ভোগবাদী, তাই পুরস্কারমুখী প্রত্যাশা লেখকদের এবং কবিদের অতল ভোগবাদী করে তোলে। নতুন লেখকদের মধ্যে তখন এমন একমুখী বোধ তৈরী হয়— নিজের মননের সৃজনের কাজ থেকে সংগঠনের কাজকে নিজের চেয়ে প্রবল শক্তিশালী মনে হয়, তখন তার লেখাচর্চার বিষয়কে মুখোমুখী করে দেয় প্রতিযোগিতার এবং পুরস্কারের প্রতিদ্বন্দ্বী। তখন সৃজনশীলতা থেকে অনুভব হয় যন্ত্রণা, মেধাকে মনে হয় সীমাবদ্ধতা, মননশীলতাকে মনে হয় প্রাণঘাতী এবং চর্চাকে মনে হয় অনিবার্য এক পণ্ডশ্রম। তখন সৃজনের চেতনা দুর্বল হয়ে নিজের কাছে অনুভুত হয়— তার নিজের কাজ-ই তার বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে এবং যার ওপর তার কোন কর্তৃত্ব নেই। সে তখন চারপাশকে দেখে দেখে উপলব্ধি করে যে, সাহিত্যে মেধার নয়, সমাজে শুধু পুরস্কারের মূল্য-ই আছে, সেখানে মননশীল হয়েও সে অগ্রহণনীয়। অবক্ষয়ের প্রহেলিকায় সাহিত্যশিল্প এখন পুরস্কারের জন্য নির্লজ্জভাবে আলিপ্ত। বাংলাদেশের সাহিত্য এখন ‘ব্যঙ্গের ছাতার মতন’ গজিয়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ। নতুন লেখকরা এসব আধিপত্যকামী চিন্তার তীব্র বিরোধিতা করতে পারলে সাহিত্যে তখন নতুন অভিমুখ সৃষ্টি হবে। শিল্পে সাহিত্যে এই পরমাশ্চর্য কল্পনাশক্তিতে তাঁদের সৃজনের জন্ম দিবে, তখন সমাজে শৃঙ্খলাতার জন্ম নিবে। অবক্ষয়ী সাহিত্যিকরা পুরস্কারপ্রদান গোষ্টিদের পক্ষাবলম্বন করে তারাই সৃজনশীলতার মৌলিকত্বকে নিষ্ক্রিয় করার পরিবেশ তৈরি করছে। পুরস্কারের জন্য সরাসরি এভাবে তাদের আত্মসমর্পণ সাহিত্য থেকে পশ্চাদপসরণের সুস্পষ্ট লক্ষণ। তাদের চিন্তার ছাপ থেকে এই বিষয়গুলি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের সাহিত্যের উদ্দেশ্য সংগ্রাম নয়, নতুন পথ নয়, অগ্রগতি নয়। উজ্জ্বল জীবনের জন্য উচ্চ সাহিত্য নয়, পুরস্কারের এক তীব্র আকাঙ্ক্ষাই তাদের সুতীব্র জীবনবোধ। পুরস্কার প্রাপ্তিতে অপূর্ণতাজনিত হতাশাই তাদের লেখার উপজীব্য হয়ে উঠেছে। বহির্বাস্তবে পুরস্কারের যেই উপযোগিতা তাদের ব্যক্তিসত্তার ওপর উৎক্ষিপ্ত। পুরস্কারের আগ্রাসী প্রভাব তাদের রচনায় এত সুলভ, এর কারণ আত্মঅবক্ষয়ে পুরস্কার-সচেতন গোষ্টির কাছে তাদের নতজানু ব্যক্তিত্ব। পুরস্কারের উজ্জ্বল মুখের সামনে তাদের প্রত্যাশার পূর্ণিমা ঢেউ খেলে। চারিদিকে পুরস্কার-চিৎকার, উধাও মেধাবিদের শস্যের মাঠ, মাঠ হয়ে আছে মননশীলতার কবর হয়ে।
প্রাপ্তমনস্কতা এমন একটা ব্যাপার যা লিখেও বুঝাতে পারবেন না:
রুচির নান্দনিকতাবোধ সাহিত্যের অবক্ষয়ী পরিস্থিতিকে মানবিক পরিস্থিতি তৈরিতে ভাবনা সঞ্চারিত করে। যতদিন সমাজে অবক্ষয়ী পরিস্থিতিকে মানবিক পরিস্থিতিতে রূপান্তরের ইচ্ছা প্রবল না-হবে, ততদিন পর্যন্ত সমাজে নান্দনিকতাবোধ বিকাশধারার জন্য কাউকে বা কোন গোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু সাহিত্যের নন্দনতত্ত্বের ওপর পুরস্কারতত্ত্বের অব্যাহতি সংঘাতের কারণে সাহিত্যচর্চায় এখন ‘পুরস্কারপ্রদান’ গণপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তাই পাঠককে চিন্তনে মননে এবং সৃজনের অসীমতায় নিয়ে যেতে হলে পুরস্কার বিরোধিতার পথে চলতে চলতে সাহিত্যে প্রাপ্তমনস্কতাকে উজ্জীবিত করতে হবে এবং অবশ্যই তা করতে হবে। লেখকদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা একটা বিষয়, আবার কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার অর্থ হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম এবং শর্ত মেনেই তাদের কাছে নত হয়েই পদক ও সনদ গ্রহণ করা। এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বে লেগে থাকে ঔপনিবেশিক চেতনার ছাপ। তাদের ঔপনিবেশিক চেতনাকে শিল্প, সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির মূলস্রোত বা মেইনষ্ট্রিমের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে। এসব প্রতিষ্ঠান পুরস্কারপ্রদানের মাধ্যমে কোন ট্যালেণ্ট হাণ্ট করে না, তাদের তীব্র সমর্থককেই শুধু পুরস্কৃত করে। পুরস্কারপ্রাপ্ত এসব লেখকরা তখন ‘মৌলিক’ বা ‘অরিজিনাল’ এই সম্বোধনে আর অভিভাষিত হন না। তারা তখন প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখক হিসাবে সমাজে চিহ্নিত হয়ে থাকে। ছলাকলার আশ্রয়ে প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখকেরা পুরস্কার গ্রহণ করে বোকা পাঠকদের সাথে চালাকি করে থাকে। প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখকেরা যেমন লেখালেখি-কে শুধু লিখেফেলা একটা টেক্সট বলে, তেমনি বইকেও শুধু একটা রিডিং অবজেক্ট মনে করে। প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখকদের মধ্যে পুরস্কার প্রথা প্রয়োগের ফলে ইতি-নেতির দ্বান্দ্বিকতায় সাহিত্যসমাজে জন্ম নিচ্ছে এখন বন্ধ্যাত্বের অনুভব। সাহিত্যে মেধানির্ভর যেই ধারা, সেই নিবিড় ধারা থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখকরা তাদের লেখালেখি দিয়ে সাহিত্যসমাজে একটা বিভাজন রেখা তৈরি করে দিয়েছে। সেই বিভাজনের বলিরেখার নীচে সাহিত্যের বন্ধ্যাত্ব আরো তীব্রভাবে অনুভব হচ্ছে। সেই বন্ধ্যাত্বের অনুভবে পুরস্কার প্রথা কতটা অর্থহীন সমাজের জন্য, কতটা প্রতিষ্ঠানের ভন্ডামী— সেই কাঠামো ভাঙ্গার ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদের টেক্সট পোষ্ট হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিন, বিভিন্ন লেখক-পাঠক থেকে। এই যে যারা এমন কাঠামো ভাঙ্গার জন্য প্রায় প্রতিদিন স্যোশাল মিডিয়ায় লেখার মাধ্যমে নিয়মিত পোষ্ট দিচ্ছেন, বোধের আলোকে এরা সবাই হচ্ছে উত্তর-রেঁনেসা চিন্তক। উত্তর-রেঁনেসা চিন্তকরা হচ্ছেন তারাই, যারা একটা নতুন বিষয়কে যুক্তির কাঠামো দিয়ে নির্মাণ করেন এবং দ্বান্দ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিত দিয়ে সেই বিষয়টি এমনভাবে বিশ্লেষণ করা হয় যাতে নতুন বোধে ওই বিষয়টি অনেকের কাছে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে। যেমন: পুরস্কার বিরোধিতা হচ্ছে উত্তর-রেঁনেসা চিন্তকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ পুরস্কারপ্রদান বিষয়টি সাহিত্যসমাজে মননশীলতার বন্ধ্যাত্ব তৈরি করে। ‘পুরস্কার’ আবার বস্তুবাদী চেতনাও তৈরি করে। কিন্তু উত্তর-রেঁনেসা চিন্তকরা আবার তাদের যুক্তির কাঠামো এবং দ্বান্দ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করে ‘পুরস্কারপ্রদান’ বিষয়টিকে তারা কাউন্টার দিয়ে বিলীন করার চেষ্টা করে। তাই উত্তর-রেঁনেসা নির্ভর চিন্তার চর্চা সাহিত্যের ভেতরে কাউণ্টার-লিটেরেচার তৈরি করে। সাহিত্যসমাজে কাউণ্টার-লিটেরেচারের চর্চা যত বেশী সম্প্রসারিত হবে, উত্তর-রেঁনেসা চিন্তার আলোকে প্রতিষ্ঠান-পোষিত লেখকরা তত বেশী সংকোচিত হবে। উত্তর-রেঁনেসা সাহিত্যের জন্য, সমাজের জন্য এবং স্যোশাল মিডিয়ার জন্য একটা নান্দনিক অভিজ্ঞতা। নান্দনিক এই অর্থে এখানে প্রয়োগ কর হয়েছে, উত্তর-রেঁনেসা একটা নতুন বিষয়কে যেভাবে যৌক্তিকতা দিয়ে এবং দ্বান্দ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করে নান্দনিকভাবে বিষয়টিকে আবৃত করে রাখতে পারে, উত্তর-আধুনিকতা ততদূর পৌঁছাতে পারে না।
উপায় নেই গোলাম হোসেন, এদেরকে উপেক্ষা করা ছাড়া:
চারপাশে এভাবে চাতুরির জাল ছড়ানো যে পুরস্কারের ইতিহাস, তা তো ফাইল-সাজানো পুরস্কারের বিন্যাসে শিল্পসাহিত্যের মৌলিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলবেই। এই গ্রাস হচ্ছে সেই সরল দোলক, যা চেতনার দুই প্রান্তের প্রতিহত ধাক্কায় লোভের সম্পৃক্তিতে বেজে উঠে। কোন লেখক বিদ্বান এবং মেধাবী, তা পাঠে ও মননে যেই পাঠকেরা অনেক বেশী পরিণত, সেই বোদ্ধা পাঠকরা তা পড়ামাত্রই বুঝতে পারেন। হলুদ সাংবাদিকতার মতন পুরস্কারের অন্তরালে এখন শিল্পসাহিত্যেও পীতবর্ণের বিস্তার ঘটছে। শিল্পসাহিত্যের সাথে ক্ষমতাকাঠামোর সম্পর্কটি এখন ক্রমশঃই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদার হয়ে উঠে যেকোন সংগঠন তখন, যখন তারা ঘোষণা দিয়ে শিল্পসাহিত্যের বিষয়ে টাকা, ক্রেষ্ট ও সনদ দেওয়া শুরু করে। শিল্পসাহিত্যে যারা ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদার তারাই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদারিত্ব করে যেসব লেখক, তাদের মেধার পীতবর্ণের বিস্তারের কারণে ‘প্রচারহীন সিরিয়াস লেখালেখি’ ক্রমশ পাঠকহীন হয়ে পড়ছে। এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরিয়াস লেখকদের ইগনোর করে করে পাঠকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদারিত্ব করা লেখকরাই কমার্সিয়াল লেখালেখির বাজারে একেককজন সফল লেখক। পুরানো ধ্যান-চিন্তার চর্চা থেকেই লেখালেখি জগতে সফলতা আনা সম্ভব এবং এমন সফলতা দিয়েই পুরস্কারপ্রাপ্তি ঘটানোও সম্ভব। কিন্তু ‘প্রচারহীন সিরিয়াস লেখালেখি’ যাঁরা করেন তাঁরা কখনো সফল লেখক হন না, কারণ তাঁরা নতুন চিন্তার পথ তৈরি করেন। আর যাঁরা নতুন চিন্তার পথ তৈরি করেন তাঁরা প্রথাবিরোধী লেখক, তাঁরা সহজেই সফলতা প্রত্যাশাও করেন না। সফলতা আসে সস্তা জনপ্রিয় চর্চা থেকেই এবং সফল লেখকেরাই পুরস্কারের ক্রীতদাসত্ব করতে করতে আজীবন ব্যর্থতায় নিমজ্জিত থাকে। এই এক প্রগাঢ় অভিলাষে ঢাকা অন্ধকার সময়। অধিকাংশ কবিসাহিত্যিক আজ পুরস্কার-আনন্দের ক্রীতদাসত্বে লিপ্ত। এদের না আছে প্রথাবিরোধিতার চর্চা, না আছে গদ্য আর থিম নিয়ে অবিরত ভাঙ্গচুর অথবা অভ্যস্ত পাঠাভ্যাসে নিমজ্জিত মানসিকতাকে অবিরাম আক্রমণ করা। যাঁরা সাহিত্যকে প্রথাবিরোধিতার আলোকে অ্যাটাক করে, তাঁরাই লেখালেখিকে নতুন মোড়ে নিয়ে গিয়ে সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখে। পুরস্কার সংস্কৃতির ঠিকাদারেরা ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদারিত্ব লাভের জন্য সাহিত্যে প্রথাবিরোধিতার চর্চা থাকাটা যে আবশ্যক, সেই প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তারা খ্যাতির অভিলাষের অন্ধকার দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইছে। লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক, লেখক এবং পাঠকের এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকা দরকার। লিটল ম্যাগাজিনের কর্মীদের স্পিরিট-ই পারবে সাহিত্যের মূলস্রোতটা চিনিয়ে দিতে। রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বিশাল উল্লেখযোগ্যতা হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনের স্রোত। আর পুরস্কার সম্বন্ধীয় সংস্কার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে না পারলে এই লেখাকে সমর্থন করা প্রায় অসম্ভব। পুরস্কারের সংস্কার ভেঙ্গে তারাই বেরিয়ে আসতে পারবে না, যারা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন পুরস্কারের জন্য, যারা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান, যারা রোষানলে পড়তে ভয় পান, যারা নিরপেক্ষ-নিরপেক্ষ ভাব দেখান— কিন্তু একটা ডাক আসলেই কেটে পড়বেন, আর যারা পা বাড়িয়ে আছেন তোষামোদের দিকে। সংস্কার ভাঙ্গতে না পারাটা হচ্ছে মহা-অপূর্ণতার এক মহা-সম্পূর্ণতা।
শোয়েব নাঈম রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত প্রবন্ধ, এই লেখাটি সতর্কীকরণ চিহ্নের মত — লেখক নির্দ্ধারিত বানান রীতিতে সম্পাদিত।