পিপীলিকা পিপীলিকা— ছয় পায়ে পিলপিল চলি…
তন্ময়ের মন কিছুটা দমে গিয়েছিল যখন বৃষ্টি থামার নামগন্ধ নেই। ভেবেছিল ছুটির কয়দিন আনন্দের সাথে বেড়াবে, মাঠে-ঘাটে ছুটে বেড়াবে, তা নয়, একটানা বৃষ্টি শুরু হল।
কিন্তু এই মুহূর্ত্তে তন্ময়ের মন ভাল হওয়া শুরু হয়েছে, কারণ ভাল লাগার অনেক কারণ সে খুঁজে পাচ্ছে চারপাশে। পিঁপড়েগুলো সারিবদ্ধ হয়ে চলেছে, ওদের টিনের চালের লম্বা ঘরটার বেড়াগুলো বাঁশের চাটাইয়ের, তার উপর মাটি দিয়ে আস্তর দেওয়া। বারান্দাও মাটির। লম্বা বারান্দার এককোনায় তন্ময় একা দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই বিষয়টা খেয়াল করল। দলের আগে যে পিঁপড়ে সে আকারে অন্যগুলোর চেয়ে একটু বড়। প্রত্যেকটি পিঁপড়ের মুখে সাদা সাদা দানার মত কী যেন।
আবার পিঁপড়েগুলোর কোনটি পিছনে আসছে, আরেক পিঁপড়ের কানে কানে যেন কিছু বলছে। তন্ময় পিঁপড়ের চলার পথে কিছু বৃষ্টির জল মুঠো ভর্ত্তি করে ঢেলে দিল। কিছু চঞ্চলতা যেন ওদের মাঝে, ঘন ঘন একটি আরেকটির পাশে যাচ্ছে, জলের সামনে পড়া পিঁপড়ে পিছিয়ে এসে তার পিছনেরটিকে কী যেন বলল, শুরু হয়ে গেল চঞ্চলতা, চঞ্চল কিন্তু এক ধরণের স্থিরতাও আছে, কারণ তারা চলা থামিয়ে দিয়েছে। একটু পরই জলের পাশ কেটে তারা চলতে শুরু করল, চলার পথটা কিছুটা বদলে দিল।
তন্ময় অবাক হয়ে তাই দেখছিল।
পিঁপড়ের মধ্যে বড় বড় পিঁপড়ে আছে, যাকে ওরা বাঘাডাইয়া বলে। কামড় দিলে খুব জ্বলে, একবার তন্ময় কামড় খেয়েছিল, হাতের যেখানটায় কামড়ে দিয়েছিল, ওখানটা বেশ ফুলেছিল। সাথে সাথে মা ওখানে চুন লাগিয়ে দেয়।
কালো আর লাল পিঁপড়ে আছে, কালো পিঁপড়ে ভাল আর লাল পিঁপড়ে খারাপ, ভাতের হাঁড়িতে কালো পিঁপড়া হাঁটাহাঁটি করে। মা মাঝে মাঝে বলে ভাতে পিঁপড়া, সে পিঁপড়ে কালো, উড়তে পারে, যেহেতু ওটা ভাল পিঁপড়ে কাজেই ভাত ফেলে দেয় না মা, খাওয়া যায়। আবার দুধের পাতিলে, চিনির রসেও পিঁপড়ে দেখেছে তন্ময়, ওগুলো একদম পিচ্চি, ছাকনি দিয়ে তখন ছেঁকে নেয় মা।
পিঁপড়েগুলোর দিকে তাকিয়ে তন্ময় কত ধরনের পিঁপড়ে দুনিয়াতে আছে, তাই ভাবছিল। তন্ময়ের কিছু নিজস্ব ভাবনা আছে, যার বেশিরভাগ সে কাউকে বলতে পারে না, উদ্ভট চিন্তাভাবনায় সবাই হাসে। তন্ময় লোভাতুর চোখে তাদের বাড়ির পরের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওই বাড়িটার প্রতি তন্ময়ের আজন্ম আকর্ষণ, কী যেন রহস্যময়তা আছে ওখানে, তন্ময় ঠিক ধরতে পারে না।
ওই বাড়িটায় এখনি যেতে মন চাইছে। কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে যাওয়া যাবে না। তন্ময় আবার পিঁপড়ার সারিতে চোখ রাখে। সে আপনমনে প্রিয় কবিতা ভাজতে থাকে—
পিপীলিকা, পিপীলিকা
দলবল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।
শীতের সঞ্চয় চাই
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই
ছয় পায়ে পিলপিল চলি।
পিপীলিকা পিলপিল করে চলে কেন?
তন্ময় ক্লাস সেভেনে পড়ে, ছাত্র সে ভাল, মা বাবার কথা শোনে। তার তন্ময় নাম রাখা স্বার্থক, কারণ সে বেশিরভাগ তন্ময় হয়ে থাকে, প্রতিটা বিষয়ে তার ঘোর লাগা ভাবনা। ঠিক এই মুহূর্ত্তে পিঁপড়া, পিপীলিকা নিয়ে সে ভাবছে।
দুপুরের পর বৃষ্টি ধরে এল। তার দাদিমা ঘর থেকে জোরে জোরে বলছেন— কই গো তোমরা, বৃষ্টি ছিদ্রি ধরছে। তন্ময় বুঝতে পারে বৃষ্টি থামার কথাই দাদিমা বলছে, কিন্তু এটাকে ছিদ্রি ধরছে কেন বলে দাদিমা! বৃষ্টির জলে উঠান একটু পিছল হয়েছে, তন্ময় পা টিপে টিপে গল্পদাদুর বারান্দায় পা রাখে।
ছোটবেলা থেকেই গল্পদাদুর সাথে ভাব, কত যে গল্প উনি শুনিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নাই, সেজন্য সে এই দাদুকে গল্পদাদু বলে। গল্পদাদু বই পড়েন, ভ্রমণ করেন, দেশ-বিদেশের অনেক গল্প তাঁর কাছে জমা আছে। তন্ময় সেই গল্পগুলো শুনতে ভালবাসে, গল্পের পাত্র-পাত্রীর সাথে তন্ময়ও কাল থেকে কালান্তরে, দেশ হতে দেশান্তরে চড়ে বেড়ায়।
গল্পদাদু তাঁর পুরনো আমলের শৌখিন ডিজাইনে তৈরী জমকালো চেয়ারটায় বসে আপনমনে বই পড়ছেন। এই ঘরটা দাদুর, এখানে শুধু আলমিরা ভর্ত্তি বই আর বই। বইয়ের গন্ধে সারাটা ঘর মৌ মৌ করতে থাকে। এই গন্ধ তন্ময়ের ভাল লাগে। তন্ময়দের বাসায় তাঁর আব্বুরও একটা বইয়ের আলমিরা আছে, ওখান থেকে তন্ময় সেই ছোটবেলা থেকেই বই পড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে। কিন্তু দাদুর ঘরে সারি সারি আলমিরা ভর্তি বই। আলমিরা থেকে পুরনো দিনের গন্ধ ভেসে আসে, যেমনটা নানাবাড়ির কাঠের সিন্ধুক থেকেও আসে। সেই গন্ধে থাকে পুরনো দিনের কত গল্প, তন্ময় সেই গল্পগুলো ঠিকঠাক ধরতে পারে না। তেমনি এই বইগুলোর মধ্যেও কত কথা জমা হয়ে আছে, না পড়লে সেগুলো ধরবে কী করে সে!
হঠাৎ গল্পদাদুর নজরে পড়ল তন্ময়।
“কী দাদু! খবর কী! ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? আসো, ভেতরে আসো।”
দাদু ছোট্ট একটা টুল এগিয়ে দেন “বস।”
তন্ময় বসতে বসতে দাদুর হাতের বইটি দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু দাদু বই একপাশে সরিয়ে রেখে বলেন, “খুব বৃষ্টি হয়েছে, দেখেছ? একে বলে মুষলধারে বৃষ্টি, rain cats and dogs.”
এমন সময় কড়াৎ করে বাজ পড়ল দূরে কোথাও।
তন্ময় চমকে ওঠে।
দাদু হাসেন, “দেখেছ! কেমন পিলে চমকানো বাজ পড়ছে!”
তন্ময় আবারও চমকে ওঠে, পিপীলিকা পিলপিল চলে, আবার বাজ পড়লে পিলে চমকে যায়।
শব্দগুলোর কোথায় যেন মিল আছে।
গল্পদাদু কী তাকে বুঝিয়ে বলতে পারবে সব!
“দাদু, আমি এই বৃষ্টিতে অনেক পিঁপড়া দেখলাম, ওরা দল বেঁধে চলেছে। পিঁপড়া আর পিপীলিকা তো এক তাই না দাদু? আর পিঁপড়েদের মধ্যেও ভাল আর মন্দ আছে, ঠিক না দাদু!”
গল্পদাদু মাথা নাড়েন।
তন্ময় বলতে থাকে “দাদু, পিপীলিকা পিলপিল চলে, বাজ পড়লে পিলে চমকে যায়, আবার মাকে বলতে শুনি ছেলে পিলে মানুষ করতে হবে। এই এত এত পিল, পিলে— দাদু এগুলোর মানে কী! তুমি জানো?”
দাদু মৃদু হাসেন, “দাদু, এই জন্য তোমাকে ভাল লাগে এত। এই যে তোমার ভেতরে শব্দ নিয়ে এত প্রশ্ন জাগে এরকমটা ঠিক দেখা যায় না। আমি তোমাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি।”
দাদু বলতে শুরু করেন, তন্ময়— তন্ময় হয়ে শুনতে থাকে।
গল্পদাদু বলতে থাকেন—
“তন্ময় তুমি নিশ্চয়ই জানো যে পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তার আমাদের শরীরে আছে। আর পৃথিবীতে যতকিছু আছে, তার সবটাই মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।
আদিতে মানুষ সবকিছু প্রকৃতি থেকে শিখে নিত। আমাদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক ছিল। সমাজ, সংসার নারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মানুষের তখন অনেক কষ্ট ছিল, খাবার সংগ্রহের কষ্ট, থাকার জায়গার কষ্ট। মানুষ ঘুরে বেড়াত যাযাবরদের মত। কিন্তু মানুষ তখন দল বেঁধে থাকত।”
তন্ময়ের চোখের সামনে হাজার হাজার বছর আগের কাল্পনিক দৃশ্য ভাসতে থাকে। সে একটি বইতে আদিম মানুষেরা যে গুহায় থাকত, তার ছবি দেখেছে। তারা যে শিকার করত, সেই হাতিয়ারের ছবি দেখেছে। এমনকি শিল্পীর আঁকা আদিম মানুষের ছবিও দেখেছে। আজ যে তারা কত আরাম করে কত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে – এটুকু পেতেও মানুষকে কত হাজার হাজার বছর কষ্ট করে পাড়ি দিতে হয়েছে।
“বুঝলে তন্ময় দাদু, মানুষ যখন হিংস্র জীবজন্তুর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, মেয়েরা তখন তাদের সন্তান পালন করত। তারপর মানুষ একটু একটু করে কৃষিকাজ শুরু করল। কৃষিকাজের সাথে সাথে তারা যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করল। শুরুতে যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল, তা ভেঙে যেতে থাকল, সমাজের শাসনভার পুরুষের হাতে যেতে শুরু করল। তখনও কিন্তু সমাজের মানুষগুলো যৌথসমাজেই বাস করত। তখন যারা জ্ঞানী ছিল, দক্ষ ছিল তারাই নেতৃত্ব দিত। তারা ছিল পরিচালক, আর তাদের অধীনে সমাজের লোকেরা কাজ করত, এই কাজ করে তারা যা উৎপন্ন করত সেগুলো একজায়গায় জড়ো করত, সমাজের পরিচালক বা নেতারা তা সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দিত, নিজেও নিত।”
তন্ময়ের খুবই ভাল লাগছে গল্পদাদুর বলা এই পুরনো দিনের গল্প। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না পিপীলিকার সাথে এই গল্পের কী সম্পর্ক।
সে এবার বলে, “দাদু, এই গল্পের সাথে পিপীলিকার কী সম্পর্ক?”
গল্পদাদু বলেন, “বলছি… তার আগে তুমি আমাকে বলত ফুল ফল ভেদে উদ্ভিদ কয় প্রকার?”
তন্ময় ঠিক বুঝে ওঠতে পারে না গল্পদাদু কী বুঝাতে চাইছেন।
সে তো পিপীলিকা, পিলপিল, পিলে এসবের মানে জানতে চেয়েছিল— দাদু তো সেগুলোর উত্তর দিচ্ছেন না। এখন আবার উদ্ভিদের প্রকারভেদ জানতে চাইছেন।
গল্পদাদুকে আড়ালে লোকজন পাগলবুড়ো ডাকে, তন্ময় সেটা জানে। এজন্যই কি!
“কী তন্ময় দাদু, উত্তর দাও।”
তন্ময় এবার বলে, “দাদু, ফুল ফল ভেদে উদ্ভিদ দুই প্রকার। সপুষ্পক উদ্ভিদ, অপুষ্পক উদ্ভিদ। সপুষ্পক উদ্ভিদে ফুল, ফল হয়। অপুষ্পক উদ্ভিদে ফুল ফল হয় না।”
গল্পদাদু হাসতে থাকেন এবার।
“শোন তন্ময়দাদু, যে উদ্ভিদে ফুল ফল হয় না, কিন্তু সে আকারে বিরাট হয়। ওই যৌথসমাজ যারা চালাতো, যারা পরিচালক বা নেতা ছিল— তাদের মত।
তাদের অধীনে লোকজন কাজ করতো মনের আনন্দে, কারণ তারা কাজ করতো বটে কিন্তু কী কাজ, কীভাবে কাজ করতে হবে, সে বুদ্ধি তাদের ছিল না। সেই বুদ্ধি ছিল জ্ঞানীদের, যারা পরিচালক ছিল। পিপীলিকা বা পিঁপড়া যেমন তাদের দলনেতার পিছু পিছু সারি বেঁধে চলে পিলপিল করে, প্রাচীন কাজের মানুষগুলোও সেরকম পরিচালকের নির্দ্দেশ মেনে দল বেঁধে চলত।
সেজন্য সেই সমাজ ব্যবস্থার নাম ছিল পিপ্পল বৃক্ষ বা অশ্বত্থ বৃক্ষ। অশ্বত্থ বৃক্ষেরও কিন্তু ফুল ফল হয় না, অর্থাৎ উৎপাদন করে না। প্রাণীজগতে পিঁপড়ার মধ্যেও এরকম দেখতে পেয়ে তাঁরা পিঁপড়ার নাম দিয়েছিলেন পিপীলিকা।”
গল্পদাদু গ্লাসে পানি ঢেলে আস্তে আস্তে পান করতে থাকেন।
তন্ময় অধীর আগ্রহে বাকিটুকু শোনার অপেক্ষায়।
গল্পদাদু আবার শুরু করেন, “পিপ্পল গাছ বিরাটাকার, তার ছায়ায় অনেক প্রাণী আশ্রয় নেয়। যৌথসমাজের যারা নেতা ছিলেন তাদের ছায়াতলে লোকজন আশ্রয় নিত, তাদের নেতারা বিপদাপদ থেকে রক্ষা করতেন বুদ্ধি দিয়ে, বিভিন্ন রকম সাহায্য দিয়ে।
তোমার বাবা-মা তোমাকে রক্ষা করেন, পালন করেন। তাদের ছায়াতলে তুমি বেড়ে ওঠছ। ছায়ার কাজ ছায়া দেওয়া, আচ্ছাদন করাও বলতে পার। সেজন্য তুমি ছাওয়াল, তারপর সেখান থেকে ছেলে। তোমার বাবা-মা তোমার খাইয়ে দাইয়ে রক্ষা করেন, পালন করে লালন করেন, সেজন্য তুমি তাদের কাছে পিলে।
পিলপিল করা হল সারি বেঁধে চলা, সন্তানেরাও বাবা-মার পিছনে পিলপিল করে চলে। কাজেই পিল হল শিশু, বালক, শাবক।”
গল্পদাদু এবার ওঠে গিয়ে দাবার বোর্ডটা নিয়ে আসেন। তন্ময়ের সাথে দাবা খেলতে খুব ভাল লাগে দাদুর।
দাদু দাবার একটি ঘুটি দেখিয়ে বলেন, “এটা হচ্ছে গজ বা হাতি। এটাকে আমরা পিল বলি, আবার আমরা যে ওষুধের বড়ি খাই সেটাও পিল।
এবার আসো আবার পিলে-তে।
পিলে হল ছেলে, আবার পেটের ভেতর পিলীহা বলে একটি বস্তু আছে, যা আসলে প্লীহা বা যকৃত। এটাকেই লোকজন পিলে বলে।
আবার দেখ পিল কীভাবে হয়—
পি = (প + ই) + ল, এখানে প বর্ণ হচ্ছে পালন, পায়ী; কিছু পাওয়ার জন্য যে সুযোগ লাগে, তাকে ধরে রাখে, এবং যাকে পায় তাকে পালন করে। ‘ই’ বর্ণটি সক্রিয়তা বা চলমানতা বা গতিশীলতা বোঝায়, তাহলে ‘পি’ হল গতিশীল পালন বা গতিশীল পায়ী। আর ল বর্ণটি লালন করা বোঝায়— গতিশীল পায়ী/পালনের লালন— তাহলে পিল হল যাকে পালন করে লালন করতে হয়।”
তন্ময়ের এবার সত্যি সত্যি পিলে চমকে যাবার পালা। গল্পদাদু কোথা থেকে তাকে কোথায় নিয়ে গেলেন আর পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন।
গল্পদাদু দাবার ঘুটিগুলো সাজাতে সাজাতে বলতে থাকেন,” দাদু, ওইযে তুমি বললে ভাল পিঁপড়ে, মন্দ পিঁপড়ে— সেটা যার যার স্বভাব অনুযায়ী সব জীবের মধ্যেই আছে। আবার তোমার জন্য যা ভাল, সেটা অন্যের জন্য মন্দও হতে পারে, তাই না!”
“কী রকম দাদু?” — তন্ময় বিস্মিত হয়।
“যেমন দৌড়-প্রতিযোগিতায় দৌড়ে তুমি প্রথম হলে, আরেকজন দ্বিতীয় হল, সে তোমার জন্য প্রথম হতে পারল না। তাহলে তোমার ভালটা তার জন্য মন্দ। এরকম সববিষয়েই একজনের ভাল আরেকজনের জন্য ভাল না হয়ে মন্দও হতে পারে। তবে কালো পিঁপড়ে ভাল, লাল পিঁপড়ে মন্দ— এসব মনগড়া কথা। তুমি বড় হলে নিজেই বুঝতে পারবে।”
গল্পদাদু একটু থেমে মৃদু হাসেন, তারপর বলেন—
“কী তন্ময়দাদু, হয়ে যাক এক দান!”
তন্ময় আস্তে করে মাথা নাড়ে, সে তো চায় আর পায়।
রুবি বিনতে মনোয়ার রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গল্প, সম্প্রদানে সপ্তমী — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।