আলিফের ভাষাজ্ঞান
তোমাকে আকারের ভিতরে নিরাকারে খুঁজি।
খুঁজে ফিরি নিরাকারের আকার।
তুমি কি শুধুই শব্দ, তুমি কি শুধুই অক্ষর?
তুমি কি শুধুই মুখের ভাষা? তুমি কি শুধুই উপলব্ধি?
মনে হয় তার থেকেও বহুগুণ বেশী।
ধরি, যদি না থাকত মানুষের ভাষা, থাকত মানুষ।
মানুষের স্মরণে মানুষের কর্ম্মে থাকতে কি তুমি?
জ্ঞানের পরিধিতে তা-ও তো হয় না মনে;
যদি থাকতেই তবে কেন এসেছিল অগণিত পয়গম্বর?
কী দরকার ছিল লাওহে মাহফুজের কিতাবাদি!
ভাষা ছাড়া তুমি একেবারে মুছে যেতে মানুষের থেকে।
ভাষাই তোমার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ, ভাষাই অগণিত পয়গম্বর,
ভাষাই অস্তিত্ব, ভাষাই লাওহে মাহফুজের কিতাবাদি।
আলিফের সিজদা
ইমামের পিছনে মুত্তাকি হইয়া দেখছি,
এত অল্প সময়ে মিটে না আমার সিজদার তৃষ্ণা।
পাখী উইড়া উইড়াও সর্ব্বক্ষণ দেয় সিজদা,
আশরাফুল মাখলুকাত দিব দিনে পাঁচবার!
কেমনে করি এমন বে-ইনসাফী কাম!
আমার রগরগে তোমার বিস্তর আনাগোনা,
উপস্থিতি টের পাইয়া লুটাইয়া পড়ি সিজদায়।
এ কেমন বিপতে আমারে ফালাইলা,
যেখানেই তাকাই দেখি শুধু তোমার ছায়া।
সিজদা না দিয়া কেমনে থাকি কও!
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে জপি তোমার গুণধর নাম।
নাম জইপা জইপা ফু দেই সিদরাতুল মুনতাহায়!
যে গাছ আটকায়া রাখে তোমার দিদার,
তারে আমি তাবৎ সৃষ্টি থেইকা নাই কইরা দিব।
আমার দেহটারে বানাইয়া ফেলতেছি মসজিদ।
আত্মারে সিজদায় লুটাইয়া রাখব সূর্য্যের মত।
সর্ব্বদা জইপা যাইব তোমার গুণধর নাম,
যতবার অন্তরে জপব ততবারই পাইবা সিজদা।
ভাষার তফাৎ
ভাষা পারমাণবিক বোমার মত একটা প্রলোভন,
মানুষ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে এ প্রয়াস।
শব্দের ভাষা ছাড়া মানুষ আসে না মানুষের কাছে।
ভাষা শহরের সম্পত্তির মত একটা প্রলোভন,
মানুষে মানুষে অন্তরঙ্গ সৃষ্টির তরে এ প্রয়াস।
ভাষা ছাড়া মানুষ মানুষের কাছে এক খুঁত জীব।
বন্ধ করি ঠোঁটের ভাষা নিয়ে দার্শনিক আলাপ।
ঠোঁট একটা বিভ্রম, ঠিক শব্দের ভাষার মত।
খোদা আছেন কি নেই, এ যেন এক ফাও তর্ক!
খোদার ভাষা আছে, হযরত মুসারা বুঝে সে ভাষা।
খোদার শব্দও আছে, অন্তত হলেও ‘কুন ফায়া কুন’!
মানুষ আর খোদার ভাষার মইধ্যে কী সে তফাৎ?
মানুষ শব্দকথা কয় ঠোঁটে, হৃদকথা কয় চোখে।
খোদা সৃষ্টির তরে সব কথাই কয় সিনায় সিনায়।
মানুষের ভাষা তার জ্ঞানের সমান, খোদা সর্ব্বভাষী।
মুরাদ হাসান রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, আলিফ কাব্য