জায়েদা বেওয়া স্বপ্ন দেখছিল। তার নয়নেরমণি কলিজার ধন তাদের তিন শতাংশ ভিটামাটির জমিন ছেড়ে সাত আসমানের উপরে উড়ে যাচ্ছে।

তিনি স্বপ্নের ভেতরেও অবাক হন, ও মুরাদ তুই কেমনে উড়তিছিস বাপ?

মুরাদের চোখ ভেজা ভেজা। ছায়া মাখা। শরীর ছুঁয়ে মেঘ ঘিরে যাচ্ছে। কত রঙের মেঘ। যেন মেঘের বাগানে বসে নানা রঙের মেঘফুল নিয়ে খেলা করছে তার ছেলে। সেই যে একবার ছোটবেলায়চালের গুড়োর হাঁড়ি উলটে দিয়ে ছোট্ট মুরাদ মুখে মাথায় হাতে সাদাগুঁড়ো মেখে ফিকফিক করে হেসেছিল। ঘুমের ভেতর জায়েদা বেওয়া সুখ স্মৃতিতে হেসে উঠেন।

হাসতে হাসতেই তিনি দেখেন ছেলের শরীরলাল মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। রক্তরাঙা লাল মেঘ। এই মেঘ জায়েদা বেওয়ার খুব চেনা।

সূর্য ডোবার সময় পশ্চিম আকাশ লাল লাল মেঘে ঢেকে যায়। কোনো কোনো দিন এইমেঘগুলো ফুলেফেঁপে গলগল করে ভেসে আসে সন্ধ্যা আকাশে। যেন কেউ ঘড়া ঘড়া রক্ত ঢেলে দিয়েছে রক্ত সাগরে সূর্যকে ডুবিয়ে দেবে বলে।

সেই সব সন্ধ্যায় নিজেকে খুব দুঃখী আতুর আর মনমরা লাগে। মন লাগে না কোনো কাজে। কেবলই উতল পাতাল দুঃখে মন ডুবে যায়। কান্না পায় অবুঝের মতো। মনে হয় কোথাও কেউ নাই, কিছু নাই, দু’পয়সার এই ফেলাছাড়া জীবন জুড়ে কেবল হাহা শূন্যতা চেপে বসে আছে। তখন মন থেকে আপনা-আপনি ভেসে আসে, ইয়া মাবুদ রহমাতুল্লাহ! আর কেনো এই বেঁচে থাকা! হে আল্লাহ পরওয়ারদেগার তুমি তুলে নাও। তুলে নাও আমাকে। ঠাঁই দাও তোমার করুণার পাশে।

গ্রামের হুজুর মুরুব্বীরা রক্তরাঙ্গা মেঘ দেখলে বলেন এই হচ্ছে আমাদের পেয়ারের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এরদিল কা টুকরা নাতি হাসান হোসেনের বুকের রক্ত।  জায়েদা বেওয়া ঘুমের ভেতরে সালাম দেন, আস্সালামু আলাইকুম হে প্রিয় নবীর শেষ বংশধর। আল্লাহর দেওয়া বেহেশ্তের শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠ বেহেশ্ত আপনাদের জন্যে। আমিন। ছুম্মা আমিন।

সালাম ফিরিয়ে জায়েদা বেওয়া দেখেন, উড়তে উড়তে মুরাদ কেমন শিউরে শিউরে ওঠছে। চমকে চমকে তাকাচ্ছে এদিক সেদিক। একটু যেন কাঁপছেও।  অ বাপ তোর ঠা-া লাগিচ্ছে মনে হয়! লাল মেঘগুলো ঠা-া নাকি রে অ মুরাদ?

অজস্র লাললাল মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে ছেলের শরীর। মুখচোখ দেখা যাচ্ছে না। আবছা শরীরে ছায়ার মতো আরো উপরে উড়ে যাচ্ছে তার ছেলে। পাক্সক্ষা নাই তবু উড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।

তিনি বোঝেন সব আল্লাহর ইশারা। তার চেয়ে বড় কারবারি আর কে আছে এই আসমান জমিনের ভূখ-ে! এসবই তার কেরামতি। তার মর্জিতেই ফেরেশ্তারা অদৃশ্যে থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার আদরের ছেলেকে।

তবু কেমন যেনো একটু ভয় ধরে তার অন্তরে। মুরাদ যদি পড়ে যায়! অত উঁচু থেকে পড়লে তার ছেলে কি আর আস্ত থাকবে? ও মুরাদ বাপধন আমার, পড়ি যাবিনি যে! অনেক উড়িছিস। এবার ফিরি আয় বাপ!

মুরাদ শোনে না। নাকি শুনতে পায় না কে জানে! মায়ের মন আতংকে ছেয়ে যায়। ছেলেকে নিচে ফেরাবেন বলে যখন তিনি আবার ডাকতে যাবেন, তখনই তার পুরানো টিনের জং ধরা চালে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে শিশির। অজস্র গাছগাছালির পাতা দুলিয়ে ভেসে আসে ফজরের আজান। ঘুঘুর বুকের ওমের মতো মায়া ফেলে নেমে আসছে ভোর।

জায়েদা বেওয়ার ঘুম কেটে যায়। তিনি একবার চোখ মেলে আবার চোখ বন্ধ করে মিষ্টি করে হাসি দেন। তারপর আড়মোড়া ভেঙ্গে ওঠে বসেন বিছানার উপর। সুখি সুখি মুখে  হাই ছেড়ে বোঝেন এতক্ষণ তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। তার একমাত্র সন্তান মুরাদকে নিয়ে কি সব আতালিপাতালি অলৌকিক স্বপ্ন দেখছিলেন। ঢাকায় থাকে তার একমাত্র ছেলে। চাকরী করে কোন জামাপ্যান্ট বানানোর কারখানায়। মুরাদের আব্বা মারা গেছেন অনেকদিন হলো। মুরাদও কজের জন্যে ঢাকা থাকে বছরের বেশি সময়। ফাঁকা বাড়িতে তার বড় একা একা লাগে। বাড়িঘর নিঝুম পাষাণ প্রায়। তিনি কাকবন্ধ্যানারী। একটি সন্তানই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ভাগ্যে লিখেছিলেন।

ছেলে কামাই সুদ বলে বয়েস চব্বিশ পেরুতেই গেল বর্ষায়  ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ঘরে শিশু আসুক, কথা বাড়ুক। শিশুরা হচ্ছে আল্লাহর ফেরেশতার লাহান না পাপী সুন্দর।

নতুন বউয়ের টানজব্বরটান। মুরাদ এখন প্রায়ই বাড়ি আসে। জায়েদা বেওয়া নাবুঝ নন। তিনি ছেলের আনা জিনিসপত্র সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেন আর হাসেন। যাক ছেলে ঘরমুখো হয়েছে তাহলে।

কত কিছু যে নিয়ে আসে মুরাদ। ওর কোন ভাই বোন না থাকায় খরচ তেমন টেনশন ছিল না। ফলে কুড়ি বছর বয়েসেই চাকরি করে টাকা উড়ানো স্বভাব হয়ে গেছিল। গ্রামে আসতেই চাইত না। ইয়ারদোস্তিদের সাথে হেথাহোথা ঘুরে বেড়াত। এই জন্যেই আরো সাততাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া। আয়ের টাকা ঘরে থাকুক।

বিয়ের পর অবশ্য মুরাদ বেশ সংসারি হয়েছে। কত কিছু করবে বলে বুদ্ধি করে দিনরাত। সব কিছুতেই মায়ের সুখের কথা চিন্তা করে। ঘরের টিন পাল্টাতে হবে। ছেলের সখ হয়েছে মাটির মেঝে বদলে পাকা মেঝে করার। কাঁচা মাটির ঘরে মায়ের বড় কষ্ট হয় বর্ষা বাদলায়। মা তার জনম দুখী। বাপ মা ভাই বেরাদর বলতে আপনজন কেউ নেই। সম্পর্কের চাচার কাছে পেট যোগানি হিসেবে থাকত। সেই চাচা তার এক ভাগ রাখালের সাথে বিয়ে দিয়ে বিড়াল  পার করেছে। আর কোনদিন খোঁজ রাখেনি এতিম ভাইঝির। রাখালি ছেড়ে বহু কষ্টে একটি দোকান দিতে পেরেছিল মুরাদের বাপ। বড় ইচ্ছা ছিল মুরাদকে লেখাপড়া শেখানোর। কিন্তু ক্লাশ নাইনের টেস্টের আগে মুরাদের বাপটাও মরে গেল ডেংগু জ্বরে। তারপর আর পড়াশোনা হয়নি মুরাদের। দোকানদারি বোঝে না বলে দোকান বিক্রি করে ক বছর এদিক সেদিক কাজ করে মসজিদ পাড়ার লোকমানের সাথে ঢাকায় চলে যায় মুরাদ।

বুঝলি মা, টাকা থাকলি ঢাকার মার্কেটে বাঘের দুধও পাওয়া যায়। ব্যাগের চেন খুলতে খুলতে ছেলে হাসে আর বলে।

কত কিছু যে নিয়ে আসে তার জন্যে। ভারি মা ভক্ত পাগল ছেলে জায়েদা বেওয়ার। বেতনের টাকা দিয়ে প্রথম বছরেই, রাস্তার তার টেনে ঘরে ইলেকট্রিক আলো এনেছে। অনেক টাকা খসে গেছে তাতে। তা খসুক প্রায় এক বছর ধরে সেই ধার শুধতে হয়েছে। মুরাদের এক কথা, মা যেন আলোতে থাকে।
একটি ঢাউস বিরাট বাক্সের মতো পুরানো টেলিভিশন কিনে এনেছে, ওমা তুই খাটে শুয়ি বসি নাটক দেকপি। অই দ্যাখ মা মক্কা শরীফ। অই যে সেই কালাপাথর। টাকা জমায়ে তোরে হজ্জ্বে পাঠাবো মা। দোয়া করিস তুই।”

প্রাণ ভরে দোয়া করে জায়েদা বেওয়া। মুরাদ তাকে মোবাইলে কথা বলা শিখিয়ে দিয়েছে, বুঝলি মা  আমি যত দূরে যাই না কেন এখন তুই আমার সাথে কথা বলতে পারবি।”

শীতে খুব কষ্ট পায় জায়েদা বেওয়া। অজু করতে গেলে ঠা-া জলে যেন হাত পা মুখ অবশ হয়ে যেত। দুইবছর আগে পানি গরম করার মেশিন এনে দিয়েছে মুরাদ। খাবার গরম রাখার কত রকমের পাত্র। শীতকালে  এখন আরামেই থাকে জায়েদা বেওয়া। শাশুড়ি বউ চা খাওয়ার অভ্যাস করেছে। বিকেল হলে আশপাশের মহিলারাও আসে চা খেতে। তারা টিভি দেখে চা বিস্কুট খেয়ে কত সুখ্যাতি করে তার ছেলের। বড় আশ্চর্য ছেলে মুরাদ। হাত খোলা দিলদার।

মাঝে মাঝে অবশ্য এমন জিনিসপত্র আনে তা সংসারের কোন কাজে লাগে না। আবার বাড়তি জিনিসও নিয়ে আসে কখনো সখনো। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে দেয় মুরাদ। এই তো গেল সপ্তাহে দুটি দামি মোবাইল এনেছিল। তারা তিনজন মানুষ। তিনটে মোবাইল। আবার কেন ও মুরাদ? ছেলে বলেছিল, সস্তায় পেয়ে গেলাম তাই! বিক্রি করে লাভ তুলে নেবো। তুই চিন্তা করিস না মা।”

বিছানা থেকে নামতে নামতে রাতে দেখা স্বপ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করেন জায়েদা বেওয়া। আজানের আগে স্বপ্ন দেখেছেন! তিনি বোঝেন এই স্বপ্নে খারাপি কিছু নেই। তবে বড় আজব স্বপ্ন। ভয় লাগে তার অন্তরে। সকাল হোক ছোট হুজুরের কাছে গিয়ে স্বপ্নের মাজেজা জেনে আসবে। মা ভক্ত ছেলে তার। এই ছেলে তো ফেরেশতাদের সাথে সাত আসমানের উপরে উড়বেই। বিপদ কেন হবে? তওবা তওবা! সর্বক্ষণ মায়ের দোয়া আছে ছেলের সাথে! তিনি বাসিমুখে কুলি করে তিনবার আয়তুল কুরছি পড়ে বাতাসে ফুঁ দেন,  দূর হ আলাই বালাই, দূর হ খবিস শয়তান।”

উঠোনের কোনায় শান বাঁধানো চাপকল। মন দিয়ে আজ কোরান শরীফ পড়বেন। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলে কোরান শরীফ না পড়লে তার ভালো লাগে না। বউমা ছেলেমানুষ তায় সন্তান সম্ভাবা। ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। লাইট জ্বেলে রেহেল পেতে দুলে দুলে নিচু স্বরে তেলাওয়াত করতে করতে কেমন যেন কিছু শব্দ ভেসে আসে। দূরে অনেক লোকের কথা শোনা যাচ্ছে। জায়েদা বেওয়ার মন একটু বেচাল হয়। তিনি মনকে শাসন করতে সুরা বাকারার আয়াতগুলো জোরে জোরে পড়েন। নাহ শব্দটি এবার বেশ কাছেই। মানুষের কোলাহল মনে হচ্ছে।

কে যেন ডাকছে, চাচি ও চাচি শিগগির বারায়ে আসেন।”

জায়েদা বেওয়া দ্রুত উঠে পড়েন। হাতেম কেন এত ভোরে ডাকছে তাকে?  গ্রামের রাত পাহারাদার হাতেম আলি। বউমার দূর সূত্রে আত্মীয়। বউমার বাবার বাড়ির কোন খারাপ খবর নয় তো! একবার ভাবেন বউমাকে কি ডেকে তুলবেন? পরমুহূর্তে ভাবেন ছেলেমানুষ। ঘুমুচ্ছে… থাক ঘুমোক। তিনি নিজেই এগিয়ে আসেন। কি হইছে বাবা হাতেম?”

হাতেম কোন কথা বলে সময় নষ্ট করে না। জায়েদা বেওয়ার হাত ধরে টেনে নিতে থাকে ইশকুল ঘরের দিকে, চলেন চলেন চাচি।”

কোরআন শরীফ পড়ে থাকে খোলা রেহেলের উপর। হাতেমের সাথে কয়েকজন গ্রামের মানুষ। তারা কেমন যেন হতভম্ব। কেউ কোন কথা বলছে না।
ভোরের আবছা আলোয় ইশকুল ঘরের মাঠে বেশ ভীড় । ব্যাপার কি? এত লোক কেনো? কুতুব চেয়ারম্যানও আছে দেখছি। “কই মুরাদের মা এদিকে আইস।”

জায়েদা বেওয়ার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে। মাথার ঘোমটা বড় করে টেনে বাঁধো বাঁধো পায়ে এগিয়ে আসেন সামনে। ভিড় সরে যায় দু’পাশে। কে একজন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মাঠে। হাতপা ন্যাতানো। ভেংগেচুরে এলিয়ে পড়ে আছে। শরীরে জ্যান্ত মানুষের কোন সাড় নেই। হাতেম চিত করে দেয় দেহটি। মুরাদ! আমার মুরাদ! চিল চীৎকারে ছুটে আসেন জায়েদা বেওয়া। ছেলের মাথা তুলে নিতে গিয়ে দেখেন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। ঘাড় ভাঙ্গা। শরীরের প্রতিটি হাড় ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। মুরাদ একদলা মাংস মাত্র। কে কইরলো চেয়ারম্যান সাব। আমার মুরাদে কি দোষ কইরছিলো গো। ও আমার আল্লারে! কি কইরলা তুমি। এই ছিলো তোমার মনে? ওরে আমার মুরাদ বাপধন আমার!”

কুতুব চেয়ারম্যান ফোন করে দিয়েছিল থানায়। দুজন গ্রাম পুলিশ এসে গেছে। তারা জানতে পেরেছে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসছিলো মুরাদ। চুরি করাই ছিলো মুরাদের পেশা। ওদের একটি দল ছিলো। পাঁচজনের দলটি ট্রেনে, বাসে, প্ল্যাটফরমে, বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের মালামাল চুরি করতো। গেল রাতে ওর দলের তিনজন ধরা পড়েছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। মুরাদ আর একজন পালিয়ে চলন্ত বাসে ওঠে পড়তে পেরেছিলো। কিছুদিন গা ঢাকা দেবে বলে বাড়ি ফিরছিলো হয়তো। কিন্তু বাজারের কাছে বাস থামতেই অভ্যাসের বশে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় মুরাদ। জনতার মার বড় কঠিন মার। একজন ছুট দিতে পেরেছিলো। কিন্তু মুরাদকে মেরে হাতের সুখ মিটিয়ে নিয়েছে বাসযাত্রীরা। তাদের চোর চোর চীৎকারে বাজারের জেগে থাকা লোকেরাও মুরাদকে আচ্ছা করে মার দেয়। মুরাদের আর বাঁচার কোনো উপায় ছিলো না।

কি করে যেন হাতেম সেই সময় উপস্থিত হয়। সেই উদ্ধার করে মুরাদকে। কিন্তু ততক্ষণে মুরাদ আর মুরাদ নাই। মুরাদের জান জমিন ছেড়ে সাত আসমান পেরিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে গেছে।

কোলের উপর শুয়ে আছে মুরাদের বউ। হাতেম চৌকিদার সামলে নিয়েছে সবকিছু। থানা পুলিশ করে মুরাদের লাশ দাফন হয়ে গেছে বাড়ির সীমানা আঁকা শালগাছের নিচে। লোকজনেরাও চলে গেছে। যাওয়ার আগে চকচকে চোখে ঘরের সব জিনিস দেখে ফিসফিস করেছে, তাই তো, তাই তো! এতো এতো দামি দামি জিনিস কেমনে আসে এবার বোঝা গেলো!

বউমার বাবা চাচারা মুখভার করে বসে আছে উঠোনে। তারা বউমাকে নিয়ে যেতে চায়। জায়েদা বেওয়া বোঝেন বউমা গেলে আর ফিরতে দেবে না ওরা। গ্রামে নাকি রটে গেছে এটা চোরের বাড়ি। থমথম করছে আত্মীয় কুটুম্বের মুখ। তিনি হাতেম আলীকে বলেন, বাবা হাতেম উনাদের বলো বউমা যাবে।
মুরাদের বউ কেঁদে ওঠে, আপনি একা থাকবেন আম্মা? কেউ যদি কিছু—

জায়েদা বেওয়া চমকে ওঠেন। শাল গাছের মাথার উপর শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। কিছুটা সময়ে নিজেকে সামলে নিয়ে জায়েদা বেওয়া বলেন, চোরের মার আবার লজ্জা কিসের বউমা? কুতুব চেয়ারম্যানের বাপও গমচুরির মামলায় জেল খাটিল ছয়মাস। কই কুতুবের মা তো লজ্জা পায় নাই! কেউ অভাবে চুরি করে কেউ স্বভাবে চোর হয়। তুমি যাও গো মাইয়ে। আমার জন্যি কোনো চিন্তা রাইখো না মনে। ভালো থাইকো… আল্লাহ রাসূলের নামে ভালো থাইকো মা…

রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গল্প, মা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *