বর্ষণতিথি
বর্ষণতিথি; এ আষাঢ়েও তোমার আসা হৈল না!
বেজেছ সংযমে— দূরত্বের স্বাদে ও সুগন্ধে;
সম্পর্ক নিহত হবে বিষ্মরণে?
হারিয়েছি প্রশান্তির পরিচয়পত্র
শুস্কতার লংমার্চ্চে
অতৃপ্ত আত্মায়
মফস্বলী ধুলা
নেচে নেচে আনে স্বৈরিণী বিরহ
বর্ষণতিথি; এবেলা আরো উষ্ণ হোক
তোমার রুপালী ব্যার্থতার সংহতি;
স্তব্ধতার দীর্ঘশ্বাস
হাওয়ায় ভেসে ভেসে কিছু বয়স বাড়াক
নিঙড়ে আনতে;
শ্রমতপ্ত মানুষের ভেতরের সুগন্ধ ও ভাপ?
ছলচাতুরী
বিরচিত লগ্নিপুঁজি
মনোমৈথুনে তোমাকে ছোঁয়ার স্পর্শ বুঝি
দারুণ বাতাসে
শোন ক্ষরণ উচ্ছ্বাস…
রক্তকণিকায় আজ
ছড়িয়েছে যে ঝিনুকসুখ
নিদ্রার গহীনতলে
দেখো তাকে—
কী আশ্লেষে
মুলধন ভেবে জড়িয়ে ধরেছে প্রকৃত অধর!
বিরচিত লগ্নিপুঁজি
রাঙ্গা স্বপ্নে আস অমৃতমন্থনে নামি
মনুষ্যশাসিত জলে হোক উল্লম্ফন
প্রবাস
কোথায় এসেছি আমি? কোন্ দেশ?
কোন্ গ্রহ… আলো অন্ধকার?
মাটীতে পা ফেলতেই ঠান্ডা
মধ্যরাতে নীলজলে চাঁদ
ঝাঁপিয়ে লাফিয়ে পড়ে প্রিয়মুখ
দেখি না কাউকে দূরে কাছে
চমকে উঠে দেখি যে
সে-ই পথ একৈ ত আছে রোদে-জলে-প্রেমে…
চালহীন চুলা, তলাবিহীন ঝুড়ীর
দেশের ছেলেরা মাথা নীচু করে দুর্দ্দশা মাপে!
দেবী সর্ব্বমঙ্গলা
ভেঙ্গেছি তোমার দু’টা ডানা
পায়ের পাতায় আজ রাত
রেখেছি ওষ্ঠ; লিখব কাম ও করুণা?
জেন অস্পষ্ঠ অবশ ঘুমে আমিও প্রান্তিক চাষা
ধাতু-বিভ্রমের আগে পেয়েছি তোমাকে
ইউরেকা! ইউরেকা!
গভীরে কেবল গভীরতা মেলে
আমি অনার্য্য দ্রাবিড়
নীলাম ডাকে পেয়েছি কন্যা;
জ্বলে স্নায়ুরন্ধ্র
জিহ্বায় লোহিত লালা
তুমি খুব ভাল
বাড়ীতে তোমার আলোচনা
ভোরের শিশির লাগে পায়ে
জাগে বসুন্ধরা?
মা
মাথার ওপর বিশাল শূন্যতা নাম তার আকাশ
রং যার নীল
বসতভিটায় আঁচল ভিজিয়ে ছলছল বয়ে চলে
এক নদীর শরীর…
সাতটী ঘোড়ার রথে চড়ে
আমার শৈশব ফিরে ফিরে আসে সুর-তাল-ছন্দে
যেখানে আমার মা বসে আছেন—
ধোঁয়া আর আগুনের মাঝে উনুনে হাঁড়ী চাপিয়ে!
অভিমানী খোকা বাড়ী ফিরে
ভাত খাবে; হাড়িভর্ত্তি শাদা শাদা ভাত!
চক্ষুষ্মান
বর্তমান এক মুখোশজড়ানো ভূত
ভবিষ্যত-এর পায়ে নেই সোনার নূপুর
হাতড়ে নেতিয়ে নিঃশেষ না হয়ে দেখি—
নয়নাভ ধোঁয়াশায় ক্রীড়ারত রক্তস্নাত গ্ল্যাডিয়েটর
শুকনা মরুর মত বুক …
কাঁধে নিয়েছি অযুত আকাঙ্ক্ষার দায়ভার
বেদনায় শরীর ভেজালে পাব অন্য আকাশের খোঁজ; চক্ষুষ্মান?
অচেনা আলোর গোলকধাঁধায়
চাঁদের ওপিঠে জড়ায় আরেক চাঁদ
ভাবি এই রাত্রি যাবে সুবহে সাদেকে
এই লোনা জল জমে জমে
বরফ হয়েই ছুঁয়ে দিবে জীবরাইলের ছয়শত ডানা
আমার ভেতর তোলপাড় করে
অন্যগ্রহ
এবং এর উপমাপ্রবণ মুখরতা!
শরবন
জীবন জয়ের মেঘ
তাড়িয়ে তাড়িয়ে তুমি যাকে ভাব— আশা;
মধ্যমায় প্রতিটী তুড়িতে
আমার নিকট সে-ই রাজা!
ডিমের ভেতরে খুঁজি হলুদ কুসুম
মাছের শরীরে নয় কাঁটা
শৈশব দিনের ইচ্ছেগুলা প্রয়াত ঈশ্বর…
আত্মা চূর্ণ করে
সে-ই কবে বেরিয়ে পড়েছে বখতিয়ারের সাদা ঘোড়া!
প্রবল ঘুর্নির বাস্পোচ্ছ্বাসে
রোদে মেলে দিই স্নায়বিক দুর্ব্বলতা
আর অপলক চেয়ে দেখি
আমার শহরে জীবন জয়ের বাধা
তাড়িয়ে তাড়িয়ে কখন যে তুমি— কিশোরী মালালা
গডফাদারের দীক্ষায় ভুলেছ টাটকা-বাসির স্বাদ; আহা দেশাল রেজালা!
শিকার হবার আগে
শেষবার কর্পোরেট শোকেসে তোমার মুখ
চোখের কার্নিশে দেখি ভুলেরই শরবন
যে পথে হারায় কীর্ত্তি
ধূলিঝড় ডেকে আনে ধনতন্ত্র।
বালিশিরা
ডিজিট্যাল ক্যামেরায় তোমার চেহারা ভাসলেই
চোখ হয়ে যায় প্রজাপতি
বালিশিরা ভ্যালিক্লাবে: আজ নিয়মভাঙ্গার বর্ষপূর্ত্তি
আকাশবিস্তৃত প্রশান্তিতে শরীরের জড়তা ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাক তুমি…
নিসর্গ কাঁপায় এফ এম রেডিও তরঙ্গ থেকে ভাসা বার্ণিশ টিলার গীত …
ধোঁয়া ধোঁয়া ভাবনাসমূহ… চক্রাকারে বয়ে নিয়ে যায় বহুগামী মিথ…
এই ভরদুপুরের গ্রীষ্মে সুষমাকে জড়িয়ে ধরায়
রিক্ততার নেই কোন খেদ;
ভিতরে ভীষণ গোলযোগ
উদ্বেগে উন্নত জেদ।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি
যুগপৎ ধাক্কায়, কী অক্লেশে
ছুঁইনি যদিও
তোমাকে; অথবা
প্রাত্যহিক ভীড় ঠেলে তুমিই প্রথম ছুঁয়েছ আমাকে
সে তো কৌশলী মুখের ইতস্তত হাসির ঝলক জানে
স্পর্শে ছিল এক লহমার সুখ
সুখের সে অসুখে হৈল রক্ত ছলচ্ছল
সুন্দরীতমার ভীড়ে
কোট-গাউনের স্বপ্নবাজি…
সূর্য্যচনমনে দিন সাথে লুকোচুরি, আমাকে টেনেই নিল—
সি.এম.এম কোর্টের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি?
জনারণ্যে আলোড়ন
নীরব আড়ালে প্রতি আনন্দকণায় মিশি
প্রণয়তাড়িত মনসুখ…
তলিয়ে গেলে… তুমি ও লৌহমানবী?
সুন্দর কিছু না, যৌবন কিছু না, প্রাণের উত্থান
আমাকে নিকটে রাখ, আমাকে নিকটে রাখ
কলঙ্ক তোমাকে শেখাবে না অসময়ে মেঘের সাঁতার!
ধান্যেশ্বরী
নতুন অস্তিত্বে শূন্য আর আমি মুখোমখি বসি
টিকটিকি থার্ড আম্পায়ার: শূন্য আর আমি প্রতিদ্বন্দ্বী!
শেষমেশ শূন্যতার বাউন্সারে আমি হেরে যাই
পাটিগণিতের সমাধানে বেঁচে থাকে এক চিলতে শূন্যতা…
বোধিবৃক্ষতলে শূন্যতাই অনিঃশেষ ধ্যান
ধ্যানের অতলে মৃত্যুর মতো মহান যৌনসুখ
প্রাণভরে সুখ পান করি… আমি সুখ বড় ভালবাসি!
পুনশ্চ শারদীয় রোদের দুপুরে দেবীদুর্গার
মর্ত্য-আগমনে শূন্য আর আমি কাটাকুটি খেলি
পরাজয়ে দুঃখ নেই রৌদ্রতপ্ত দাহে
চোখে তবু স্বপ্ন, আরো গান, আরো ধানশিষ…
লাল পতাকার ঘ্রাণ
পরিবর্ত্তনের অক্ষর বিদ্রোহে
সাজিয়েছি ঋতু বদলের পোস্টার…
ডানাকাটা জটায়ুর শেষ প্রতিরোধ
ভেসে যেতে যেতে হাওয়ার বন্ধুত্বেও ছিল ঐকতান
অথচ আবিশ্বে
কবির কোন বন্ধু নেই
যেমন প্রতিযোগিতাহীন বেঁচে থেকেও সূর্য্যের কোন বন্ধু নেই!
আজ বিকল্প শক্তির উৎসে জুটে স্বপ্নের খোরাকী
ফুল দিয়ে কি ভুলের পূজা কক্ষণো করেছি?
দু’হাত তোলে দাঁড়িয়ে থেকে পরম উচ্ছ্বাসে শুকেছি লাল পতাকার ঘ্রাণ
দু’হাত তোলা মানেই নিঃশর্ত্ত সমর্থন: কে বলেছে জনাব?
উড়ুক্কু
চাঁদের হ্যাজাক-জ্বলা রাতে অরণ্যের পথ ধরে
তুমি হেঁটে যাও পাতালের গল্প শুনে
বুকের ভেতর লবণাক্ত খনির ধুকপুক
শব্দে অনাঘ্রাত যৌবন হাঁটে যাযাবর ভ্রমণে
প্রমিত বিশ্বাস ছুঁয়ে নদী হয় কথার লহর!
বিনিদ্র রাতের সখারাও অশরীরী তামাশায়
ড্যাবড্যাবে চোখে দেবদূত!
মোস্তফা মহসীন রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত কবিতা, বর্ষণতিথি ও অন্যান্য কবিতা — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।