ডমরু > বাদ্যযন্ত্রবিশেষ।
সঙ্গ ও সঙ্গীতে… রাগে ও পরাগে এর কী ভূমিকা, সে ভাব ও ভাবনা সুর সাধক ও রসিকের!
আমাদের ভাব ও ভাবনা
‘ডমরু’ শব্দের অর্থ কী? এবং তাহার ক্রিয়ার, অর্থের ব্যবচ্ছেদ।
চলুন, গবেষনাগারে… গো এষনায় বা অন্বেষনে… শব্দের ভেতরে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে (অর্থময়) গো বা গামী এবং গন্তব্য!(কী অর্থ ধারণ করিলা গো? বা, কী কহিলা গো?)— এরই আলোকে
প্রথমেই খোঁজা যাক, ‘ডমরু’ শব্দের গঠনে কয়টি ধ্বনির ব্যাবহার হয়েছে—
ড + ম + র + উ = ডমরু!
এবার দেখা যাক,
…ধ্বনিকে বরণ করা (ড + ম + র + উ) বর্ণগুলো ক্রিয়ার কাজলে কী অর্থ বরণ করেছে, বর্ণে…
বর্ণার্থঃ
ড = ডয়ন
ম = সীমায়ন/মিতকরণ
র = রহন/রহে
উ = (নবরূপে) উত্তীর্ণন[সূত্র: বর্ণার্থ— ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুসারে।]
বর্ণার্থগুলো পরপর যোগ করলে দাঁড়ায়— ডয়ন + সীমায়ন + রহন/রহে + (নবরূপে) উত্তীর্ণন…
অর্থাৎ
যাহাতে ডয়ন সীমায়ন রহে বা সীমাবদ্ধ থাকে (নবরূপে) উত্তীর্ণনে… তাহা ডমরু…
আরও বিশদভাবে বললে—
যখন
বাদ্যযন্ত্র ডমরু বাজানো হয় তখন ডমরুর দুই পাশের দুই কাঠীর উঠানামায় (উড্)ডয়ন হয় এবং কাঠী সুতায় বাঁধা থাকার কারণে তার ডয়ন সীমায়ন রহে বা সীমাবদ্ধ থাকে ঢোলের দুই পাশে… আর তাহা নৃত্যপর হাতের দোলায় (নবরূপে) উত্তীর্ণন হয়… ঝঙ্কারে… ডঙ্কায়…
ক্রিয়ামূল কী বলছে, জেনে নেওয়া যাক, রুবি বিনতে মনোয়ারের বয়ানে—
ডমরু, ক্রিয়ামূল ঋ
ডমরু, ক্রিয়ামূল ডং (ডম্ব্, ডয়নের সীমায়ন বহন করে যে)।
ডং এর মধ্যে বিন্দুরূপিণী রয়েছে।
ডং = ডয়নের (গড়ান-উড়ান) রহস্যরূপ যাহাতে।
উড় শব্দের ভেতর আবর্ত্তন রয়েছে, এই আবর্ত্তন ঋ-মূলক। ঋ হল পুনরাবৃত্তিমূলক ঘূর্ণন। ডমরু (ডমোর) [ ডম্ (ড > ডম্ শব্দ) + অর (ব, গমন করা, প্রাপ্ত হওয়া ) + উ)।] [সূত্র: বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ]
ডমরু > যে ডম ডম শব্দ করতে করতে যায় বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ডম ডম শব্দ করে।“মেঘেরও ডমরু ঘন বাজে” — নজরুল।
হিন্দুদের অতি প্রাচীন আনদ্ধ যন্ত্র-বিশেষ। এটি ইংরেজী x অক্ষর বা বসার মোড়ার মত। মাঝখান সরু ও দুই প্রান্ত স্থুল এবং চামড়া দ্বারা আচ্ছাদিত। দুইপ্রান্তে সূত্রবদ্ধ সীসার গুলি সংযুক্ত, মাঝখান ধরে নাড়া দিলে গুলি দুটি চামড়ায় আঘাত করে আর ডম ডম শব্দ করে। শিবের বাদ্যযন্ত্র। ডমরু-কে ডম্বরু, ডম্বুর, ডম্বুরু, ডুব্ ডুবি এবং ডুগডুগিও বলে। “ডম্বরু বাজায়ে ভিক্ষা করে ঘরে ঘরে” — কৃত্তিবাস। উক্ত আছে ডমরুর ভিন্ন ভিন্ন ধ্বনি হতে শিব শব্দশাস্ত্রের সৃষ্টি করেছেন। মাল ও সাপুড়ের বাদ্যযন্ত্র। “ডমরুধ্বনি শুনি কালফনী কভু কি অলসভাবে নিবসে বিবরে” — মেঘনাদ। ক্ষীণকটির উপমা হিসেবে কাব্যে ডমরু শব্দটি ব্যবহৃত হয়। [সূত্র: বাঙ্গালা ভাষার অভিধান।]
জানা গেল, ডমরুর আরেক নাম, ডুগডুগি।
এই ডুগডুগির সাথে জড়িয়ে আছে মহাদেব শিবের পৌরাণিক গাথা।
তাহার সন্ধানে কাব্যিক আভায় পাঠ করা যাক—
নটরাজ
…………………………………………………
নাচে নটরাজ, নাচে নাচে…
ত-র-ঙ্গা-য়ি-ত
কণায় কণায় বাঁকে বাঁকে
নাচে ইলেকট্রনে…
নাচে ফোটনে…
নাচে পসিট্রণে…
— নাচে সৃজনে… নাচে বিনাশে…
নাচায় ত্রিশূল, নাচায় নাচায়!…
বয়ে চলার
শব্দসুন্দরমে (বাজায় ডুগডুগি, বাজায়!…)
নৃত্যপরায়ণ
এ নিখিল বিশ্বে
গতিময়
সাপের আলেখ্যে
(গ্রীবায় দুলছে রূপের বিভঙ্গ)
এই
জীবনপুরাণ!…
নাচে নটরাজ, নাচে নাচে…
ত-র-ঙ্গা-য়ি-ত
কণায় কণায় বাঁকে বাঁকে,
জাগিছে নৃত্যজ পদে অর্থের বাগান…
নাচে সত্যম্
শিবম্
সুন্দরমে…
জটায়ু চূড়ায় হাসে
পার্ব্বতীর
চিকন ঠোটের হাসিময় একফালি বাঁকা চাঁদ!
নাচে নটরাজ, নাচে নাচে…
[সূত্র: নটরাজ // আরণ্যক টিটো (‘ফুলেরা পোষাক পরে না’ গ্রন্থ থেকে)]
ডমরুর অর্থ জানা শেষ, শব্দম্ শিবম্ সুন্দরমে…
(মহাবিশ্বের কসমিক ড্যান্সে) এবার বাজিয়ে দেখা যাক, সঙ্গ ও সঙ্গীতে… রাগে ও পরাগে… (সুর সাধক ও রসিকের) ভাব ও ভাবনায়…
আরণ্যক টিটো রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত বটতলার বয়ান, ডমরু শব্দের সন্ধানে — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।