স্বরবর্ণের উৎপত্তি:
যে কোন সৃষ্টির মূলে শক্তি বিদ্যমান। আমাদের তন্ত্রশাস্ত্র মতে পরমাপ্রকৃতির আদি মূল শক্তি বিভাজিত হয়ে “সপ্তশক্তি’’র সৃষ্টি। তাহাই সপ্তরূপে, সপ্তসুরে, সপ্তবর্ণে ইত্যাদিতে ক্রমবিকশিত হয়।
তাদেরই প্রতিনিধিত্বকারী আমাদের সাতটি মূল স্বরবর্ণ—
ঃ > অব্যক্ত শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
ং > জ্ঞানশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
অ > ইচ্ছাশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
ই > বিজ্ঞানশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
উ > শান্তিশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
ঋ > কর্ম্মশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
৯ > প্রাণশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী
বাকি স্বরবর্ণগুলি এই সাতটি মূল স্বরবর্ণের বিভিন্ন শঙ্কর। যেমন অ + অ = আ, ই + ই = ঈ, উ + উ = ঊ, অ + ই = এ, অ + ঈ = ঐ, অ + উ = ও, অ + ঊ = ঔ
স্বরবর্ণ স্বরেই সীমাবদ্ধ অর্থাৎ প্রকৃতি তথা পশু, পাখী এবং মানবশিশু স্বরবর্ণের মাধ্যমেই যোগাযোগ করে।
ব্যঞ্জনবর্ণের উৎপত্তি:
মানবশিশু যখন কথা বলতে চায় অর্থাৎ যখন সে অব্যক্ত থেকে ব্যক্তিতে (ব্যক্তি— যে নিজেকে ব্যক্ত করে) পরিণত হতে চায় তখনই ব্যঞ্জনবর্ণের প্রয়োজন হয়। সেভাবেই আদিম মানবের কণ্ঠে বা স্বরযন্ত্রে ব্যঞ্জনবর্ণের সৃষ্টি হয়। আবারও সেই আমাদের তন্ত্রশাস্ত্র মতে, আদিমানব (Homo Sapiens) যখন আদিজ্ঞান লাভ করে তখনই “পঞ্চতন্মাত্র”র উদ্ভব হয়। এই পঞ্চতত্ব মতে মানবের এই পঞ্চজ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে পঞ্চবর্গীয় ব্যঞ্জনবর্ণ অর্থাৎ ক-বর্গ, চ-বর্গ, ট-বর্গ, ত-বর্গ ও প-বর্গ। এভাবেই ৫ x ৫ = ২৫ টি মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সৃষ্টি।
বাকি ব্যঞ্জনবর্ণগুলি শঙ্কর।
তাই মূলতঃ বলা চলে স্বরবর্ণগুলি পরমা-প্রকৃতিতে সদা বিরাজমান শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী কর্ত্তা আর ব্যঞ্জনবর্ণগুলি প্রকৃতি-লব্ধ জ্ঞান দিয়ে মানব আবিষ্কৃত বা কৃত/ক্রিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিয়া। তাই স্বরবর্ণ ব্যতীত ব্যঞ্জনবর্ণ অস্তিত্বহীন যেহেতু কর্ত্তা ছাড়া ক্রিয়া অসম্ভব। তাই “ক” বলতে আমরা বুঝি ক্ + অ = ক। শুধুমাত্র ‘ক্’ অর্থ করণ (একটি ক্রিয়া) আর ‘ক’ অর্থ কারক (ক্রিয়াকারী)। মানবের সমস্ত অর্জনই তার বর্ণ, শব্দ ও ভাষার আবিষ্কারেরই ফসল।।
Sources: “Bangio Shabdartho-kosh” by Kalim Khan and Rabi Chakraborty; “Paroma-bhashar sangket” by Kalim Khan.
হারুনুর রশিদ রাজা রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গদ্য, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের উৎপত্তি