পুনঃপঠন মৌলবাদ : তত্ত্ব

[মূল প্রবন্ধটির নাম ‘মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে’ যা চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত – প্রথম অধ্যায়ের নাম (১) “মৌলাব্দঃ তত্ত্ব” এবং যা আলোচ্য নিবন্ধের বিষয়বস্তু। বাকী তিনটি অধ্যায়ের নাম যথাক্রমে – (২) মৌলবাদঃ তথ্য, (৩) মৌলবাদঃ প্রেক্ষাপট, এবং (৪) উপসংহার। প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ “মৌলবাদঃ তত্ত্ব” ছয়ভাগে বিভক্ত যথা – (ক) অর্থোৎপত্তি, (খ) উৎপত্তি, (গ) প্রতিপত্তি, (ঘ) সম্পত্তি, (ঙ) বিপত্তি ও (চ) নিষ্পত্তি]

“…এখানে ছাড়তে হবে সকল অবিশ্বাস; / এখানে ধ্বংস হবে সমস্ত ভীরু ভাবনার” – দান্তে / ডিভাইন কমেডি। (বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বারে দান্তের এই কথা কয়টি লিখে রাখবার দাবী তুলেছিলেন মার্ক্‌স।)

(ক) অর্থোৎপত্তি

মৌলবাদ একটি বিকৃত মানবিক জীবননীতি। আগে যেভাবে সফল হওয়া গিয়েছিল, পরে ঠিক তেমনটি করবার যে নীতি তাকে মৌলবাদ বলে। এ হল, রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘একই কর্ম্মের পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি’র নীতি। একে ‘পুরাতনের পুনরাবৃত্তি’, ‘আচারের পুনরাবৃত্তি’, ‘একই কর্ম্মের পুনরাবৃত্তি’ ইত্যাদিও বলা হয়ে থাকে। মূলের অনুগামী বলে, অর্থাৎ মূলানুগ বলেই এর নাম মৌলবাদ।

মৌলবাদ পূর্ব্ববিধানের সদাচারে বিশ্বাসী, আর সদাচার সর্ব্বদা সত্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে। যা ইতোপূর্ব্বে ঘটেনি তা সত্য নয়, যা ঘটে গেছে তাই সত্য। সত্য অতীত বলেই সে ‘পূর্ব্ববিধান’-এ পরিণত হবার যোগ্যতা ধরে। পূর্ব্বের ন্যায় করবার যে বিধান, তাই পূর্ব্ববিধান। সেইহেতু পূর্ব্ববিধান সব সময় ‘ন্যায়-সম্মত’। আর, মৌলবাদ পূর্ব্ববিধানের সদাচারে বিশ্বাসী বলে সেও ‘ন্যায়’-সঙ্গত বা ‘ন্যায়’শাস্ত্র-সম্মত। তাই মৌলবাদ আইনসঙ্গতও বটে।

ন্যায় ও সত্যের জোর থাকে অতীত ঘটনায়। তাই আইন অতীত দ্বারা শাসিত বা ভূতশাসিত। যা আগে ঘটেনি, তা কোনও কিছুর ‘ন্যায়’ নয় বলেই অ-ন্যায়। আর, আবিষ্কার নতুন বলেই কোনও কিছুর ‘ন্যায়’ নয়। তাই আবিষ্কার মাত্রেই অ-ন্যায়। মৌলবাদ অন্যায়কে মেনে নিতে পারে না। নতুনকে মেনে নিতে তার আপত্তি, কেননা নতুন ‘ন্যায়’-সঙ্গত নয়। কোনওরকম ঝুঁকি নিতে মৌলবাদ রাজি নয়। পূর্ব্ববিধানকে হুবহু মেনে চলাই তার নীতি। তাকে আংশিক বা সম্পূর্ণ অমান্য করবার স্বধীনতা সে কাউকে দিতে পারে না। যে খেলা ‘অব-লীলায়’ খেলা যাবে, সেই নিশ্চিত খেলাটাই মৌলবাদ খেলতে চায়। লীলাতে তার বড় ভয়।

‘পুরাতনের পুনরাবৃত্তি’র এই নীতি জীবনকে এক নিশ্চিত প্রবাহে প্রবাহিত করে, তা গড্ডলিকা প্রবাহ হলেও। জীবন প্রবাহকে কোনওভাবে বাধাগ্রস্ত হতে দিতে মৌলবাদ রাজি নয়। প্রবহমানতা বজায় রাখার ব্যাপারে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে তার ঘোরতর আপত্তি। তাই সে একই কর্ম্মের পুনরাবৃত্তির নীতিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে। এই কট্টরতায় তার জিত, এতেই তার হার। জিত এইজন্য যে, প্রবাহকে অজানা ভবিষ্যতের কোনও মরুবালুরাশির ভিতর হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে সে বাঁচায়। হার এইজন্য যে, কালের প্রকোপে ও জগতের পরিবর্ত্তনশীলতার কারণে পরিবর্ত্তনহীন প্রবাহ একদিন ক্রমে গড্ডলিকা প্রবাহে পরিণত হয়ে নিজেই শুকোতে থাকে। থাকে না তাতে প্রাণের জোয়ার। নিষ্প্রাণ ভাটার টানে উবে যাওয়া তার ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ায়।

আগের কোনও কিছুই মানব না, এই গোঁয়ার্তুমিও একপ্রকার কট্টরতা এবং আর এক প্রকারের বিকৃত মানবিক জীবননীতি। এই নীতি কেবল জীবন বিরোধীই নয়, অবাস্তবও বটে। স্মৃতিবাহক জীব বলেই মানুষ অতীতকে সম্পূর্ণ ভুলে যেতে পারে না। এই নীতি মানলে প্রত্যেক মানুষকে পুনরায় সেই আগুন আবিষ্কার থেকে শুরু করতে হয়। তাই এ নীতি অবাস্তব। অনন্ত অন্ধকারের মধ্যে ঝাঁপ দেবার বাধাবন্ধহীন এই অসীম স্বাধীনতাকে নৈরাজ্যবাদ বলে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘একেবারে বুঁদ হয়ে যাবে, ভোঁ হয়ে যাবে, তারপর না হয়ে যাবে’।

অনন্ত অসীম স্বাধীনতা মানুষের দেহকেও অস্বীকার করে। কিন্তু মানুষ মাত্রেই তো দেহী। দেহহীন মানুষের অস্তিত্ব নেই। দেহী বলেই তাকে প্রকৃতিসিদ্ধ হতে হয়। নিয়ম ভাঙতে গেলেও তাকে নিয়মেরই সাহায্য নিতে হয়। নিয়মহীনতায় তার জীবনে ছেদ পড়ে, প্রবাহ নিশ্চিতরূপে ব্যাহত হয়। এইরূপ ছেদ, বিপরীতে গড্ডলিকা প্রবাহকে সমর্থন জোগায়। এ হল ‘নিন্দার ছলে কৃষ্ণভজনা’। তাই, মৌলবাদের নিন্দার ছলে মৌলবাদকে সমর্থন করার কৃতিত্ব শেষমেষ নৈরাজ্যবাদের কপালে জুটে যায়। বিশৃঙ্খলা যেমন শৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলে পরিণত করবার প্ররোচনা দেয়, নৈরাজ্যবাদও তদ্রূপ মৌলবাদকে আরও কঠোর এবং প্রতিশোধাত্মক হবার যুক্তি সরবরাহ করে থাকে। জীবনপ্রবাহে ছেদ পড়বার ভয়, প্রায়শই একই চালে চলবার গড্ডলিকা প্রবাহকে আদ্যোপান্ত গ্রহণ করবার মন্ত্রণা জোগায়। যুক্তি এই যে – তবুও প্রবাহ তো; ছেদ তো নয়। সুতরাং নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। এই কারণে নৈরাজ্যবাদকে আপাতদৃষ্টিতে মৌলবাদের বিপরীত পক্ষ মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে সে তা নয়। সে আর এক প্রকারের কট্টরতা এবং মৌলবাদের নামান্তর।

মৌলবাদের বিপরীত মতবাদ কী? আধুনিক বিশ্ব মৌলবাদের বিরোধিতায় মুখর হলেও মৌলবাদের বিপরীত শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। মৌলবাদের বিকৃত জীবননীতির বিপরীতে যে চিরন্তন মানবিক জীবননীতি বিদ্যমান, তাকে ‘ন্যাচারাল পারফেকশান’ বা ‘স্বাভাবিক বিশুদ্ধি’ (শিবতা)-র নীতি বলে। এই পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গে বিশুদ্ধির এই নীতি ওতপ্রোত। এই নীতি অনুসরণ করেই এ জড়জগৎ বিকাশ লাভ করে চলেছে; চিন্তকজীবরূপে মানুষের উদ্ভব যার অন্যতম প্রকাশ। এই বিশুদ্ধিবাদ বা শিবম্‌-নীতির প্রতি মনীষীদের সাধারণ পক্ষপাতিত্ব দেখতে পাওয়া যায়; যাকে ডারুইনদের আলোড়ন সৃষ্টিকারী তথ্যসমূহ ক্রমান্বয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি সরবরাহ করে চলেছে। আর, মানুষ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিধায় তার স্বভাবের মধ্যেই এই নীতি অনুসরণের স্বাভাবিক প্রবণতাও বিদ্যমান। অর্থাৎ বিশুদ্ধিবাদ বিষয়ে অচেতন থেকেও জন্মলগ্ন থেকে মানুষ তার জীবনসংগ্রামে এই মতবাদ বা নীতি অনুসরণ করে আসছে, জ্ঞানজগতে আরও অনেক তত্ত্বোৎপত্তির ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা যায়। কর্ম্ম থেকে এ জ্ঞান বিচ্ছিন্ন হয়নি।

স্বাভাবিক বিশুদ্ধির নীতিতে পূর্ব্ববিধান অস্বীকার্য নয়, কিন্তু স্বাধীনতার দাবিও স্বীকার্য্য। এই নীতি অনুসরণ করলে কর্ম্মক্ষেত্রে ‘পূর্ব্ববিধান ও স্বাধীনতার দ্বৈরাজ্য’ (-রবীন্দ্রনাথ) চলে। পূর্ব্ববিধান যেখানে যতখানি অক্ষম, স্বাধীনতা সেখানে ততখানি নববিধানের উদ্ভাবন করে বসে। উভয়ে মিলে মিশে নতুন বিধান প্রসূত হয়, পরবর্ত্তী কার্য্যক্ষেত্রে সেটাই পূর্ব্ববিধানের ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। স্বাধীনতার সুযোগে, প্রয়োজনে, পুনরায় নববিধানের জন্ম হয়; চক্রটি চলতে থাকে। ফলত কর্ম্মনীতি ও কর্ম্মফলে নিত্যবিশুদ্ধিও চলতে থাকে। মানুষ আরও সঠিক, আরও নিখুঁত, আরও সুন্দরের টানে এগোতে থাকে।

সত্যম-শিবম্‌-সুন্দরমের এই চক্রটিকে মৌলবাদ চলতে দেয় না। নববিধান উদ্ভবের সুযোগ স্বরূপ যে স্বাধীনতা, তাকে সে খর্ব্ব করে। নিত্য নতুন উপায় আবিষ্কারের পথ সে রুদ্ধ করে। তখন জীবনপ্রবাহ আর দুর্ব্বার বেগবতী থাকতে পারে না, ওঠে না তাতে আর প্রাণের জোয়ার। বস্তুত বিশুদ্ধিবাদ পূর্ব্ববিধানকে প্রয়োজন মতো অমান্য করবার স্বাধীনতা দেওয়ার ঝুঁকি না নেওয়ার মধ্যে হিতাকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। তাই সে ‘গৃহছাড়া-লক্ষ্মীছাড়া’ করার ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। স্বাভাবিক বিশুদ্ধি ঐরূপ হিতাকাঙ্ক্ষার মধ্যে প্রীতির অভাব ও কৃপা দ্যাখে, যা অনুগ্রহের নামান্তর। বিশুদ্ধিবাদের যুক্তি হল, ‘যেখানেই অনুগ্রহ আসিয়া সকলের চেয়ে বড় আসনটা লয়, সেইখান হইতে কল্যাণ বিদায় গ্রহণ করে’, তাছাড়া ‘হিত করা অথচ প্রীতি না-করা – মানুষকে সকলের চেয়ে নত করবার সেই তো উপায়।’ – (রবীন্দ্রনাথ)। এর কারণ হল, অনুগ্রহ মাত্রই অনুগ্রহকারী ও অনুগৃহিত উভয়কে পরস্পরের বিপরীতে সমান অনুপাতে অহঙ্কারী ও গ্লানিযুক্ত করে থাকে। কেননা মানবিক মূল্যবোধও অজ্ঞাত কারণে নিউটনের তত্ত্বকেই অনুসরণ করে থাকে।

‘চিরদিন যা চলে আসছে’ তার সঙ্গে মৌলবাদ আপনাকে জুড়ে দেয়। ‘প্রচলিতের স্রোতের টানে সে হালছাড়া ভাবে আত্মসমর্পণ করে, তাই সে পরাসক্ত’। ‘চিরাভ্যাসের গণ্ডী’র বাইরে সে চলে না, চলতে দিতেও রাজি নয়। কিন্তু ‘পরাসক্তি থেকে আত্মকর্তৃত্বে’ যাওয়ার যে ‘স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি’, তাকে ‘চিরাভ্যাসের গণ্ডী’র মধ্যে আবদ্ধ করলে, মানুষের ‘মনুষ্যত্বের একেবারে মূলে ঘা লাগে’। নিত্য নতুন জ্ঞানের সংযুক্তিকে এইভাবে আটকে রাখলে, মানুষের জ্ঞানের দিকের গোড়াটা কাটা পড়ে। আর ‘জ্ঞানের দিকের গোড়াটা কাটা পড়িলেই কর্ম্মের দিকের ডালপালা আপনিই শুকাইয়া যায়, তখন আর বেশী কিছু করিতে হয় না, শূদ্রের (মানুষের) মাথা আপনিই নত হইয়া ব্রাহ্মণের (মৌলবাদীর) পদব্রজে আসিয়া ঠেকে’। – (রবীন্দ্রনাথ / কালান্তর)।

আত্মাভিমান-মদমত্ত মৌলবাদ চিরাভ্যাসের গণ্ডীতে আবদ্ধ করে মানুষকে ‘পশু’-তে পরিণত করে এবং সেই ‘পশুর কানে গায়ত্রীমন্ত্র’ জপ করতে থাকে। তখন সে মানুষ আর প্রশ্ন করে না, কেবল ‘অবিশেষে দেখে’। ক্রমে সে ‘উত্তম পশু’ [‘যে নিত্য নিত্য দুর্গাপূজা শিবপূজা বিষ্ণুপূজা অবশ্যই করিয়া থাকে তাহাকে উত্তম পশু কহে’। (‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ – হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়)] -তে পরিণত হয়, যে একই রুটিনে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। সে তখন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্যন্ত একটা রুটিন ও Job-Chart ভক্তি সহকারে রূপায়ণ করতে থাকে। যেন দু-হাজার বছর আগে যিশু অথবা দেড় হাজার বছর আগে হজরত কিংবা কোনও অত্যাধুনিক ফ্রেণ্ড-ফিলজভার-গাইডের নামে মৌলবাদ ওই Chart ছকে দিয়ে রাখে। সেই ছকে মানুষ মাত্রকেই জীবন কাটাতে হবে। জন্মলগ্ন থেকেই সে ওই ছকের নিকট দায়বদ্ধ। মানুষের জীবনটা তার নিজের নয়। ছিনতাই হওয়া ট্যাক্সির মতো তার ‘জীবন-যাত্রা’ হিতাকাঙ্ক্ষী মৌলবাদের ইচ্ছানুসারে চলে, বিনা ভাড়ায়। বর্ত্তমান ভুতের (=অতীতের) বেগার খাটতে থাকে। তখনও নিজের জীবনটা মানুষ নিজেই কাটায় বটে, কিন্তু নিজের ইচ্ছানুসারে নয়, নিজের বুদ্ধিতেও নয়; তার জীবনরথে অধিষ্ঠিত মৌলবাদের ইচ্ছানুসারে। সেই মৌলবাদ নির্দ্দেশ দেয় – ‘শক্তি চালিয়ো না, বুদ্ধি চালিয়ো না, কেবল ঘানি চালাও। …প্রবুদ্ধমিব সুপ্ত…’। যে শুয়ে আছে সেই বুদ্ধিমান।

টীকাঃ তথ্যসূত্র ও অন্যান্য

‘শিবের শিবত্ব কী? মুনিগণের এই প্রশ্নের উত্তরে বায়ু কহিলেন – “স্বাভাবিক বিশুদ্ধির নাম শিবতা”। -(দ্রষ্টব্য – শিবপুরাণ / বায়বীয় সংহিতা / ৪-র্থ অধ্যায় / শ্লোক-২০)।

একই রক্তসম্পর্কে বিয়ে করলে ক্ষতি হয়, একথা আধুনিক বিজ্ঞান জেনেছে সম্প্রতি। কিন্তু মানুষের সভ্যতা সেকথা বুঝে গিয়েছিল বহু আগেই।

‘পশু’ শব্দের অর্থ জানার জন্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ খুললে অবাক হতে হয়। কেননা তাতে ‘পশু’ শব্দে ‘অ্যানিম্যাল’ বোঝানো হয়নি। বলা হয়েছে ‘যে অবিশেষে দেখে’ সেই-ই ‘পশু’। এই ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি বর্ত্তমানে বিস্মৃত। সে বিধি কী্রূপ, সেকথা পরে। এখন প্রশ্ন, ‘অবিশেষে দেখা’ কেমন দেখা? ইংরেজিতে vide শব্দটি গেছে আমাদের ‘বিদ্‌’ থেকে, যদর্থ ‘বিদিত হওয়া’। (ল্যাটিনে videre=দেখা, to see। videre-এর imperative ‘vide’ অর্থাৎ ‘দেখ’।) এই ‘বিদ’ই ‘বেদ’-শব্দের ভিত্তি। vide থেকে vision হয়। বেদ বিভাজন বা জ্ঞান বিভাজন করে দিলে মানুষ ‘অবিশেষে দেখে’। এ একপ্রকার অন্ধত্ব। তাই de-vision আর visionless একই ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ক্যামেরা অন্ধ হইয়া দেখে’। এইরূপ অবিশেষে দেখতে বাধ্য করা হয় শ্রম-বিভাজন করে। তাতে জ্ঞানও বিভাজিত হয়ে যায়। আধুনিক যুগের অস্ত্র কারখানায় অস্ত্র বানানোর এই পদ্ধতিটি খুব স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। যাতে গোটা অস্ত্রটি কেউ বানিয়ে ফেলতে না পারে, তাই প্রত্যেক কর্ম্মচারীকে কেবল নির্দিষ্ট অংশবিশেষ বানাতে কাজে লাগানো হয়।

(খ) উৎপত্তি

(গ) প্রতিপত্তি

(ঘ) সম্পত্তি

(ঙ) বিপত্তি

(চ) নিষ্পত্তি

রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত পুনঃপঠন, মৌলবাদ : তত্ত্ব — তে সম্পাদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *