গল্প সুফিকণিকা : পর্ব্ব দুই

[শত শত বছর ধরে সুফী সাধকরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ছোট ছোট গল্প ব্যবহার করতেন। অল্প কথায় সহজ ভাষায় সুফী সাধকরা তাদের অর্জ্জিত জ্ঞান ও উপলব্ধির কথা জানাতে পারতেন যা হাযার হাযার পৃষ্ঠার বর্ণনায়ও হয়ত দুঃসাধ্য। আমার সংগ্রহের সেইসব জ্ঞান ও উপলব্ধির কয়েকটা এখানে আপনাদের কাছে হাযির করছি।]

১০.
বিখ্যাত সুফী সাধক রাবিয়া তার ছোট্ট কুঁড়েঘরের বাহিরে রাস্তায় কিছু খুঁজছিলেন। সূর্য্য তক্ষণ অস্তাচলে। আঁধার ঘনিয়ে আসছিল। কিছু কৌতূহলী লোক রাবিয়াকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছিল “তুমি কী হারিয়েছ?” তুমি কী খুঁজছ?” “আমরা তোমাকে কি কোন সাহায্য করতে পারি”?

রাবিয়া বললেন, “আমি আমার সুঁচটা হারিয়েছি।”

লোকদের মধ্যে একজন বলল, “ঠিক আছে, এক্ষণ সূর্য্য অস্ত যাচ্ছে এবং আঁধার ঘনিয়ে আসছে। সূঁচ পাওয়া খুব কঠিন হবে। দিনের আলোয় খুঁজতে সুবিধে হবে।

রাবিয়া তাদের বললেন, “আমাকে এ পরামর্শ দিও না। কারণ সুঁচটা মোটেই রাস্তায় পড়েনি। ওটা আমার বাড়ীর ভেতরে হারিয়েছে।”

তক্ষণ লোকগুলো ভাবল রাবিয়া তাদের সাথে ঠাট্টা করছেন। তাদের মধ্যে একজন খেপে উঠে বলল “আমরা সবসময় জানতাম যে আপনি কিছুটা উন্মাদ! সুঁচটা যদি বাড়ীর ভিতরে পড়ে থাকে তাহলে রাস্তায় খুঁজছেন কেন?”

রাবিয়া উত্তরে বললেন । “বাড়ীর ভিতরে কোন আলো নেই, বাইরে এক্ষণো কিছুটা আলো আছে, তাই রাস্তায় খুঁজছি।”

লোকেরা হাসতে হাসতে যে যার পথে ফিরে যাচ্ছিল। রাবিয়া আবার তাদের ডেকে বললেন, “শোন! আমরা নিজেকে প্রশ্ন না করে, অন্যের কাছে জানতে চাই, “আমি কোথায় হারিয়েছি?”

১১.
একদিন রাবিয়া বসরী এক হাতে জলন্ত মশাল আর অন্য হাতে এক বালতী পাণি হাতে রাস্তায় ছুটে যাচ্ছিলেন। লোকেরা তাকে থামিয়ে জানতে চাহিল তিনি কেন এমন করছেন? তিনি বললেন, “আমি জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দিতে চাই আর জান্নাতের সব পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি পুড়িয়ে দিতে চাই, যেন কেউ জাহান্নামের ভয়ে কিংবা জান্নাতের আশায় আল্লাহর ইবাদত না করে। সকলে যেন নিঃশর্তভাবে আল্লাহকে ভলোবাসে।

১২.
একবার এক ব্যাক্তি মহান সাধক চিস্তি নিযামুদ্দিন আউলিয়ার কাছে এসে বললেন, তিনি সহরে তার সম্পত্তির কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছেন এবং রাজার কেরাণী তাঁর পক্ষে অধিকার প্রমাণ করে এমন কোন বিকল্প কাগজপত্র তৈয়ার করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

সাধক চিস্তি নিযামুদ্দিন মুচকি হেসে রসিকতাচ্ছলে তাকে কিছু হালুয়া পরিবেশন করতে বললেন। লোকটা একমুহূর্ত্ত বিলম্ব না করে বাজার থেকে কিছু হালুয়া আনতে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে এক হাতে হালুয়া এবং অন্য হাতে কিছু কাগজের টুকরা নিয়ে ফিরে এল।

হালুয়া ও কাগজের টুকরা সাধক চিস্তি নিযামুদ্দিন আউলিয়ার সামনে রেখে রুদ্ধশ্বাসে বলতে লাগল “আমি হালুয়া কিনার কথা দোকাণীকে বললাম, দোকাণী হালুয়া মোড়ানোর জন্য কিছু কাগজ তুলল, আমি অবাক হলাম কাগজগুলা আমার হারানো সম্পত্তির প্রমাণপত্র। আমি দোকাণীকে অন্য একটা কাগজে হালুয়া মুড়ে দিয়ে তার হাতের কাগজগুলা আমাকে দিতে বললাম। হযরত আমার সম্পত্তির হারানো কাগজগুলো এক্ষণ আপনার সামনে।”

১৩.
একবার এক নারী স্বর্গীয় ফলের বর্ণনা শুনে শুনে ফলটার প্রতি লোভাতুর হয়ে ওঠলেন। তিনি একজন দরবিশের কারছে জানতে চাইলেন, ‘‘আমি কীভাবে এই ফলটা পেতে পারি, কীভাবে আমি তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞানী হতে পারি?”

দরবিশ বললেন, “আপনাকে আমার সাথে সাধনা করার পরামর্শ দেব, তবে আপনি যদি তা করতে ব্যার্থ হন, তাহলে আপনাকে বিরামহীনভাবে বিশ্ব ভ্রমন করতে হবে”।

তিনি দরবিশকে ছেড়ে অন্যদের কাছে স্বর্গীয় ফলের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, প্রথম তিনি গেলেন একজন জ্ঞানতাপসের কাছে, তারপর একজন হাকিম, একজন সাধক, একজন দিওয়ানা, একজন বিজ্ঞানী এবং আরও অনেকের কাছে গেলেন …।

এভাবেই র্স্বগীয় ফলের সন্ধানে তার ত্রিশ বছর কেটে গেল। শেষে তিনি একটা বাগানে পৌঁছলেন। সেখানে ছিল আকাশ ছোঁয়া সেই স্বর্গীয় ফলের বৃক্ষ। বৃক্ষটার শাখায় শাখায় ঝুলছিল স্বর্গীয় উজ্জ্বল ফলটা। আর বৃক্ষটার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন যিনি, সাবার প্রথম দরবিশের কাছে নারীটা স্বর্গীয় ফলের সন্ধানে গিয়েছিলেন তিনিই সেই দরবিশ।

নারীটা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘‘প্রথম সাক্ষাতেই আপনি কেন বলেননি, আপনিই হলেন হলেন স্বর্গীয় ফলটার সংরক্ষক” দরবিশ বললেন, “কারণ, আপনি তক্ষণ আমাকে বিশ্বাস করতেন না। বৃক্ষটা ত্রিশ বছর ত্রিশ দিনের মধ্যে একবার মাত্র ফল দেয়”।

১৪.
চার জনকে একটা মূদ্রা দেয়া হল—

প্রথমজন ছিলেন ফারসী। তিনি বললেন, ‘আমি এ’টা দিয়ে কিছু আঙ্গুর কিনব।’

দ্বিতীজন ছিলেন আরব। তিনি বললেন,’না, আমি inab (পাণীয়) কিনতে চাই।’

তৃতীয়জন ছিলেন তুর্কী। তিনি বললেন, ‘আমি ইনাব চাই না, আমি uzum (পাণীয়) কিনতে চাই।’

চতুর্থজন ছিলেন গ্রীক। তিনি বললেন, ‘আমি stafil (পাণীয়) কিনতে চাই।’

কারণ নামগুলির পিছনে কী রয়েছে তা তারা জানত না, এই চারজন লড়াই শুরু করল। তাদের কাছে তথ্য ছিল, কিন্তু কোন জ্ঞান ছিল না।

উপস্থিত বুদ্ধিমান এক ব্যক্তি এই সমস্তের সমাধান করার জন্যে বললেন, আমি এক টাকা দিয়ে আপনাদের সকলের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

আপনি যদি সত্যই আমাকে বিশ্বাস করেন, আপনাদের একটা মুদ্রা চারটা হয়ে যাবে; আর আপনাদের মতবিরোধের সমাধান হয়ে যাবে।’

এই লোক জানতেন যে তারা সকলেই নিজের ভাষায় একই জিনিস চায়, যা আঙ্গুর দিয়ে তৈয়ার করা সম্ভব।

১৫.
তিনটা মাছের গল্প, একটা অসাধারণ বুদ্ধিমান, অন্যটা মধ্যমমানের বুদ্ধিসম্পন্ন, আর তৃতীয়টা ছিল নেহায়েত বোকা।

কিছু জেলে জাল নিয়ে হ্রদে মাছ ধরতে এসেছিল। মাছ তিনটা তাদের দেখতে পেল।

বুদ্ধিমান মাছটা দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে ভাবল, তার সিদ্ধান্ত বাকী দুইটা মাছকে জানাবে না। কারণ তারা এই জায়গাটাকে ভীষণ ভালবাসে। সে যদি তার সংকল্পের কথা বলে তাহলে তারা তাকে কেবলমাত্র দুর্ব্বল করবে, গভীর সাগরে যেতে বারণ করবে। বুদ্ধিমান মাছটা জেলেদের দিকে তাকিয়ে কেবল বলল, “আমি যাচ্ছি”।

দ্বিতীয় মাছটা ভাবল বুদ্ধিমান মাছটা চলে গেছে। আমি তাকে অনুসরণ করে দূর সমুদ্রে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি। কিছুক্ষণের জন্য সে বুদ্ধিমান মাছটা চলে যাওয়ার জন্য আফসোস করতে করতে ভাবছিল, কেমন করে সে জেলেদের কবল থেকে রক্ষা পেতে পারে। যদি মরে যাওয়ার ভান করে থাকে! তাহলে হয় ত এই যাত্রা রক্ষা পাবে। সে তাই করল।

জেলেদেদের একজন এইটা দেখে বলল, দেখ! সবচেয়ে বড় মাছটা মরে গেছে। “একজন তাহাকে লেজ ধরে তুলে এনে মাটীতে ফেলে দিল।

তৃতীয় মাছটা, জালে আটকা পড়ে ভাবছিল, আমি যদি এখান থেকে বের হতে পারি তবে আর কক্ষণো হ্রদের সীমায় আসব না। গভীর সাগরে সাঁতার কাটব! আর অসীমকে আমার ঠিকানা করে নেব।

১৬.
সেখানে চারটা সহর ছিল। প্রতিটা সহরেই মানুষ মারা যাচ্ছিল অনাহারে। প্রত্যেকটা সহরের ছিল এক বস্তা বীজ। প্রথম সহরটাতে কারো-ই বীজ রোপণ করার কৌশল জানা ছিল না। তারা অনাহরেই রহিল। দ্বিতীয় সহরে, একজন মাত্র ব্যাক্তি জানতেন কীভাবে বীজ রোপণ করতে হয়। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তিনি বীজ রোপণ করা থেকে বিরত ছিলেন। তারাও অনাহরেই রহিল। তৃতীয় সহরের একজনের জানা ছিল বস্তাটাতে কী ধরণের বীজ রয়েছে এবং কীভাবে সেগুলি রোপণ করা যায়। তিনি নিজেকে রাজা কিংবা বা শাসক হিসাবে ঘোষণার বিনিময়ে বীজ রোপণের প্রস্তাব করলেন। এ সহরের সবাই বছর শেষে খাদ্য পেল, কিন্তু ঐ ব্যাক্তির দ্বারা শাসিত হল। চতুর্থ সহরটাতেও, একজন ব্যাক্তি জানতেন বীজ রোপণ করার কৌশল এবং বস্তাটাতে কী ধরণের বীজ রয়েছে। তিনি কেবল বীজ রোপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন না, সবাইকে চাষাবাদের বিদ্যা শেখালেন। এ সহরের সবাই খাবার পেল এবং সকলেই সমান মাত্রায় ক্ষমতায়িত হল।

১৭.
হযরত বাহাউদ্দিন যাকারিয়া। মহান এক সাধক। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। হযরত বাহাউদ্দিন যাকারিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হন পুত্র শায়েখ সদরউদ্দিন আরিফ।

তিনি নিজেও ছিলেন একজন মহান সাধক। তিনি তাঁর পিতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত বিলাস সামগ্রী দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং নিজে দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন শুরু করেন।

একদিন এক শিষ্য এসে তাঁর কাছে পিতা এবং পুত্রের মধ্যে জীবনযাপনের বৈপরীত্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে শায়েখ সদরউদ্দিন আরিফ বললেন, “আমার বাবা বিলাসিতার মধ্যে জীবনযাপন করতেন। কারণ বিলাস-বৈভব তাঁকে মোটেও প্রভাবিত করত না। আমি দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করি। কারণ, দারিদ্র্য আমাকে মোটেই প্রভাবিত করে না।”

১৮.
সহরের প্রান্তে এক বালক থাকত। কোত্থেকে সে এক ঢোল যোগাড় করেছিল। তারপর থেকে সারাদিন বিরামহীন ঢোল বাজাত।

সহরতলীর সবারই কান ঝালাপলা। কেউ কিছু বললে সে আমলেই নিত না। লোকজন তাকে নানানভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিল।

কেউ কেউ তাকে ডেকে এনে পড়াশুনার পরামর্শ দিয়েছিল। কেউ কেউ তাকে আত্মমগ্ন হওয়ার বুদ্ধি দিল। কেউ কেউ তাকে ধ্যানস্থ হতে বলেছিল। কিন্তু তাতে বালকের অবিরাম ঢোলের বাজনা থামাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

অতপর এলাকার লোকজন কাণে তুলা গুঁজে নিজের নিজের কাজে মনোযোগী হতে চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কানে তুলা গুঁজে কি আর সব কাজ সারা যায়?

শেষে একদিন এক সুফী সাধক এলেন সেই সহরতলীতে। তিনি বালকটা এবং তার ঢোল বাজানোর বিড়ম্বনার কথা শুনলেন। এলকাবাসীকে আশ্বস্ত করলেন, ‘আপনারা দ্রুতই বালকটার ঢোলের অবিরাম বাজনা থেকে রেহাই পাবেন’।

সুফী সাধক বালকটাকে আদর করে কাছে ডাকলেন। তার কাছে জানতে চাইলেন, ‘তুমি যে ঢোলটা সারাদিন বাজাও, তার ভেতর থেকে কেমন করে বিরামহীন শব্দ হয়. তা জানতে তোমার ইচ্ছে হয় না’? বালক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।

তারপর তিনি বালকের হাতে তুলে দিলেন একটা মজবুত হাতুড়ী।

১৯.
নিজেদের যাত্রাপথে দু’জন দরবিশ একটা নদীর তীরে পৌঁছলেন। সেখানে তাদের সাথে দেখা এক যুবতীর। তিনিও নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। নদীটা ছিল খরস্রোতা। যুবতী সাঁতরে নদী পার হতে ভয় পাচ্ছিলেন।

দরবিশদের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি খনিক আশ্বস্ত হলেন। খরস্রোতা নদীটা পার হতে তিনি দরবিশদের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। দরবিশদের একজন যুবতীর এ প্রস্তাবে দ্বিধান্বিত হলেন।

অন্যজন কোন দ্বিধা না করেই তাকে কাঁধে তুলে নিলেন। তারপর তাকে নিয়ে সাঁতরে নদী পার হলেন। নদীর অপর পারে পৌঁছে যুবতী দরবিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে যাত্রা করলেন।

দরবিশ দু’জন নিজেদের পথের দিকে এগুলেন। এর মধ্যে যে দরবিশ যুবতীকে নদী পার করানোর প্রস্তাবে দ্বিধান্বিত ছিলেন, তনি তার হতাশা হজম করতে না পেরে অন্যজনের কাছে জানতে চাইলেন।

“ভাই, আমাদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ নারীদের সাথে সকল সংস্পর্শ এড়াতে শেখায়, কিন্তু আপনি যুবতীকে আপনার কাঁধে তুলে নিয়ে নদী পার করালেন”!

দ্বিতীয় দরবিশ খুব শান্ত স্বরে উত্তর দিলেন, “ভাই আমি তাকে কাঁধে তুলে নদী পার করিয়ে দিয়েছি। আর আপনি তাকে এক্ষণো আপনার ভাবনায় বহন করে চলেছেন।”

২০.
কথিত রয়েছে, ঘটনাটা হযরত নিযামুদ্দিন আউলিয়ার কাছে শুনেছিলেন তাঁর অনুসারীরা।

একবার এক দরবিশ শায়েখ জুনায়েদ বাগদাদীর শরণাপন্ন হলেন। আকাশে তক্ষণ রমযানের বরকতময় মাসের নতুন চাঁদ উঁকি দিচ্ছিল। এসময় দরবিশের আগমন যেন রহস্যময় পবিত্রতার ইঙ্গিত নিয়ে এসেছিল।

আগন্তুক দরবিশ শায়েখকে অনুরোধ করলেন, তিনি যেন তাকে ‘তারাবীহ্’ নমাযের ইমমতির অনুমতি দান করেন। শায়খ তাঁর অনুরোধ মঞ্জুর করলেন। প্রতি সন্ধ্যায় তিনি ‘তারাবীহ্’ নমাযে পুরা কোরাণ তিলাওয়াত করতেন।

শায়েখ দরবিশের থাকার জন্য একটা কক্ষ এবং প্রতি রাতের খাবারের জন্য এক টুকরা রুটী আর এক ঘটী পাণি বরাদ্দ করলেন। শায়েখের হুকুম মত দরবিশের কক্ষে এক টুকরা রুটী আর এক যগ পাণি পৌঁছে দেয়া হত।

দরবিশ রমযানের তিরিশ সন্ধ্যা তারাবীহ্ নমায পড়ালেন। তারপর ঈদের দিন সকালে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের গন্তব্যের পথে রওয়ানা করলেন। দরবিশ চলে যাওয়ার পর তার কক্ষে না খাওয়া তিরিশ টুকরা রুটী পাওয় গেল। পুরা তিরিশ রোজাই এক যগ পাণি ছাড়া আর কিছুই খাননি।

রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত গল্প, সুফিকণিকা : পর্ব্ব দুই — তে সম্পাদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *