‘দ্’ যেই ক্ষণে পূর্ণ হয় তেই ক্ষণে সে ‘দ’, ‘দ’ যেই ক্ষণে স্থিত হয় তেই ক্ষণে সেই ‘ধ’ রূপ পায়।
বাঙ্গালা বর্ণমালায় দ্-এর ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক মান হৈল দান, দ-এর মান দাতা, ধ-এর মান দানস্থিত।
দানস্থিত-মানবাহী বর্ণ ধ-এর সাথে ‘ন’ বর্ণের যোগসাধনে সৃজন হয় ‘ধন’ শব্দের। ‘ন’ বর্ণের ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক মান হৈল নাকৃত-অনকৃত।
দানস্থিতের নাকৃত-অনকৃত হৈল ধন। যেমন: দানস্থিত + নাকৃত-অনকৃত = ধ + ন = ধন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে আহরিত গোরু, ছাগল, হরিণ… এইসব প্রাচুর্য্য/সম্পৎ কী ভাবে ধন হয় তাহা দেখা যাক—
প্রকৃতির দান স্বরূপ যে হরিণটা বনেবাদাড়ে জীবনধারণ করিতেছিল, আপনি তাহাকে ধরে আনিলেন গৃহে।
ফলে প্রকৃতির দান হরিণটা দানস্থিত ‘ধ’ হয়ে গেল, কারণ হরিণটা ধরেছেন, হরিণটা দিয়েই জীবন ধারণ করিবেন আপনি।
হরিণটা এই ক্ষণে ধ, যাহা ধরা ও ধারণ, এই ধরা ও ধারণ নাকৃত-অনকৃত হচ্ছে—
প্রথমতঃ
হরিণটা এই ক্ষণে আর প্রকৃতির দানে বনের হরিণ নেই। বনের হরিণ নাকৃতে এই ক্ষণে সেই মনের হরিণে অনকৃত।
আবার
দানস্থিত হরিন (ধ) নাকৃত হয় আপনার প্রতিদিনের শিকারের ফলে দানস্থিত হরিণের বৃদ্ধির কারণে, যাহা অনকৃত।
সহজ কথায়
আপনার (দান মারা) ‘ধ’-এর নাকৃত আর অনকৃত হৈল ধন।
যাহা দেখে অন্যরা বলাবলি করিবে, আপনি ভালৈ দান মেরেছেন।
এই দানমারা ধন বৃদ্ধি পাচ্ছে—
গানিতিক পরিভাষায়
যাহা হৈল (দানস্থিত) ৫ টাকার সাথে (দানস্থিত) ১ টাকা যুক্ত হয়ে ৬ টাকায় অনকৃত হয় (দানস্থিত) ৫ টাকার ধারণাকে নাকৃত করে।
ধনের কারবারে ধন (নবরূপে) উত্তীর্ণন করে যাহা, তাহা ধনুক!
ধন হৈল প্রাচুর্য্য/সম্পৎ।
ধনুক শব্দটীর উৎপত্তি শিকার যুগে। যেই ক্ষণে শিকার করেই জীবিকা নির্ব্বাহ করিত মানুষ।
তাহার শিকারের তালিকায় ছিল বন্যপ্রাণী। যেমন— গোরু, ছাগল, হরিণ …
এইসব বন্যপ্রাণী ছিল মানুষের কাছে প্রাচুর্য্য/সম্পৎ, অর্থাৎ ধন।
এই ধন (জীবন জীবিকার প্রয়োজনে) যেই ক্ষণে শিকার করিতে হয় তেই ক্ষণে প্রয়োজন হৈল অস্ত্রের।
পাঁজরের হাড়ের মতন কিংবা উদয়কালের চাঁদের প্রথম কলার মতন বাঁকানো যে অস্ত্র বানানো হৈল তাহার নামকরণ হৈল ধনুক।
কারণ
এই অস্ত্রটী বানানো হয়েছে ধন (নবরূপে) উত্তীর্ণন করণে,
তাই
এই ধনের সাথে (নবরূপে) উত্তীর্ণনের ‘উ’ এবং করণকারীর ‘ক’ যুক্ত করে ধনুক শব্দটী নির্ম্মাণ করা হয়! শব্দ বানানোর এই পদ্ধতির নাম, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ বিধি।
ধনুকের ব্যাবহারিক ইতিহাসে আছে অনেক মহারথীর নামকীর্ত্তন। মানুষের ইতিহাসে ধনুকের ব্যাবহার (প্রাথমিকভাবে) ছিল বন্যপ্রাণী শিকারে।
তেই ক্ষণে মানুষ ছিল ঝাঁকবদ্ধ জীব, হিংস্র প্রাণীর ভয়ে সদা বিচলিত, তাই সবাই ছিল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যেইহেতু তাহার প্রতিপক্ষ ছিল হিংস্র প্রাণিকুল।
সময়ের পরিক্রমায় হিংস্রতাকে জয় করে মানুষ নিজেই যেই ক্ষণে হিংস্র হয়ে একক একক ঈশ্বর হয়ে ওঠিল। ক্রমাগত ভেঙ্গে পড়িল ঝাঁকতত্ত্ব, তেই ক্ষণে তাহার প্রতিপক্ষেরো পরিবর্ত্তন হয়ে গেল, শিকারের পরিধি বিস্তৃত হয়ে মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠল মানুষ, মানুষ মানুষের ধন নবরূপে উত্তীর্ণনে মানুষকে শিকার করে, করিতেছে …
যাহার ইতিহাস কিছুটা জানে অর্জ্জুন, কর্ণ, একলব্য, সিধু, কানু…-এর ধনুক, যাহা রুপান্তরিত হয়েছে আজকের ক্ষেপনাস্ত্রে— মিসাইল, রকটে লাঞ্চারে …
দ্রোনাচার্য্য দেখিতেছে,
ধন ও ধনুকের ব্যাবহারিক আবর্ত্তনে
এই মূহুর্ত্তে
ক্ষেপনাস্ত্র— মিসাইল, রকটে লাঞ্চার … এইসবের কার্য্যকারিতা কী, তাহা দেখছে, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন …
আমরাও দেখছি, দূর থেকে … দূরে দূরে সুরে সুরে …
আরণ্যক টিটো রচিত ও প্রকৃতিপুরুষ কর্ত্তৃক প্রকাশিত বটতলার বয়ান, ধন ও ধনুক — প্রকৃতিপুরুষ বানান রীতিতে সম্পাদিত।